1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে ধনকুবের বাড়ার নেপথ্যে কী?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অতি ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বের শীর্ষে৷ চীনকে হারিয়ে গত পাঁচ বছরে এই অবস্থানটি দখল করেছে বাংলাদেশ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ-এক্স এই তথ্য দিয়েছে৷ কিন্তু এর নেপথ্যে কী?

Bengalische Banknoten
ছবি: DW

ওয়েলথ এক্স তার  ‘ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনকুবেরের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান তাদের প্রতিবেদনে না থাকলেও ধনকুবের বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশে এখন শতকরা ১৭ দশমিক ৩ ভাগ হারে অতি ধনীর সংখ্যা বাড়ছে৷ আর এই হার বিশ্বে সর্বোচ্চ৷ বাংলাদেশের পরই চীনের অবস্থান৷ চীনে বাড়ছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ হারে৷ এরপর যথাক্রমে আছে ভিয়েতনাম, কেনিয়া, ভারত, হংকং এবং আয়ারল্যান্ড৷ ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ধনকুবের বাড়ার হার পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশের শীর্ষ অবস্থান নির্নয় করা হয়েছে৷

যাঁদের সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ডলার বা তার চেয়ে বেশি, তাঁদেরকেই অতি ধনী  বা ধনকুবের বলছে ওয়েলথ এক্স৷ বাংলাদেশি মূদ্রামানে যাঁদের সম্পদ আড়াইশ' কোটি টাকার বেশি, তাঁরাই অতি ধনী৷ বাংলাদেশে অতি ধনী বৃদ্ধির হারে শীর্ষে থাকলেও অতি ধনীর সংখ্যা কত তা বলা হয়নি৷ আর সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কত তা-ও নেই ওয়েলথ এক্স-এর প্রতিবেদনে৷

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে অতি ধনী মানুষ সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে৷ সেদেশে অতি ধনী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার৷ দ্বিতীয় স্থানে আছে জাপান৷ তাদের অতি ধনী মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার৷ আর প্রায় ১৭ হাজার অতি ধনী মানুষ নিয়ে চীন আছে তৃতীয় স্থানে৷ তালিকায় প্রথম দশটি দেশের তালিকায় আরো আছে জার্মানি, ক্যানাডা, ফ্রান্স, হংকং, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড এবং ইটালি৷

‘বিচারহীনতা এবং জবাবদিহিতা না থাকায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে’

This browser does not support the audio element.

সম্পদশালীর সংখ্যা কত?

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ২০১০ সালের তুলনায় বাংলাদেশে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের আয় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে৷ তাঁদের মাসিক আয় ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকা৷ একই সময়ে সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে ৫৯ শতাংশ৷ তাঁদের মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৭৩৩ টাকায়৷  ২০১০ সালে আয় ছিল ১ হাজার ৭৯১ টাকা৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত এক বছরের ব্যবধানে দেশের ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৫ হাজার ৮৩৪ জন৷ বর্তমানে মোট কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৬৭ হাজার ৮৭২ জন৷ এক বছর আগেও এ সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৩৮ জন৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৬২ হাজার ৩৮ জন৷ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৭ হাজার ৮৭২ জন৷ তবে ২০১৭ সালের জুনের শেষে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজার ৮৯১ জন৷

অর্থ কোথায় যায়?

সুইসব্যাংকেও বাংলাদেশি আমানকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আছে৷ ২০১৭ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ১৭ হাজার সুইস ফ্রাঁ৷ বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকা৷ ২০১৬ সাল শেষে এর পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ৬১ হাজার সুইস ফ্রাঁ বা ৫ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা৷ এইসব টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷

‘বাংলাদেশে অতি ধনী বাড়ছে, মানে উন্নয়নের সিংহভাগ একটি অংশের পকেটে চলে যাচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ থেকে ১০ বছরে দেশের বাইরে পাচার হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা৷ এই অর্থ বাংলাদেশের দু'টি বাজেটের সমান৷ স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশগুলোর মধ্যে অর্থ পাচার সবচেয়ে বেশি হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই৷ ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) এ তথ্য প্রকাশ করে ২০১৭ সালে৷

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখন সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীর তালিকায় রয়েছেন৷ তাঁদের নাম এসেছে পানামা পেপার্সে৷ তাঁদের ব্যাপারে দুদক তদন্তও করছে৷ ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এখন মালয়েশিয়াকে তাঁদের ‘সেকেন্ড হোম' হিসেবে বেছে নিচ্ছেন৷

ধনকুবের বাড়ার নেপথ্যে কী?

ওয়েলথ এক্স শুধু বাংলাদেশে ধনকুবের বৃদ্ধির হারের খবরই দেয়নি৷ তারা বলছে, ‘‘এটা আশ্চর্যজনক যে ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে চীন বিশ্বের এক নম্বর দেশ নয়, এ অবস্থান এখন বাংলাদেশের৷''

অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণ-এর চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এখন তিন ধরনের প্রবণতা দেখা যায়৷ রাষ্ট্রীয় বা প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট হচ্ছে৷ ব্যাংক খাতে এবং সরকারি ক্রয়-বিক্রয় খাতে সেটা লক্ষ্যনীয়৷ দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পুঁজি পাচার হচ্ছে দেশের বাইরে৷ তৃতীয়ত, বাংলাদেশে লুটপাটের সংস্কৃতি বহাল আছে৷ ফলে বৈষম্য বাড়ছে৷ একদিকে কিছু লোক সম্পদের পাহাড় গড়ছে, সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এর সাথে অর্থনেতিক উন্নয়নের কোনো সম্পর্ক নেই৷ এই অর্থ এখানে বিনিয়োগ হয় না, হলে এখানে শিল্প কারখানা হতো, কর্মসংস্থান বাড়ত৷''

তাঁর মতে, ‘‘বিচারহীনতা এবং জবাবদিহিতা না থাকায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷''

ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অতি ধনী বাড়ছে, এর মানে হলো উন্নয়নের সিংহভাগ একটি অংশের পকেটে চলে যাচ্ছে৷ জিডিপির হিসাব দিয়ে তো আর উন্নয়নের হিসাব হয় না৷ যাঁরা এই তালিকায় আছেন, তাঁদের নাম জানা যায়নি৷ তবে তারা যে ক্ষমতা ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে সম্পদ অর্জন করেছেন, তা বলাই যায়৷ এটা কোনো উন্নয়নের দৃষ্টান্ত নয়, বৈষম্যমূলক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত৷''

তিনি বলেন, ‘‘এইসব অর্থ সঠিকভাবে অর্জিত হয়েছে কিনা তা বলা যাবে না৷ তবে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়েছে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি আমানতকারী ও তাদের অর্থও বেড়েছে৷ এটা উদ্বেগের কারণ৷ একইসঙ্গে ধনকুবের বাড়ছে৷ এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ