সংবিধান এবং ধর্মীয় আইন দু’টো কি সাংঘর্ষিক? না একে অন্যের পরিপূরক? সংবিধান বিশেষজ্ঞ প্রবীণ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক জানান, সারা বিশ্বেই সব ধর্মের মানুষ ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী বিয়ে করেন৷ বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতা কতটুকু দেওয়া হয়েছে?
ড. শাহদীন মালিক: সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা পুরোপুরি আছে৷ সব সংবিধানে যেটা থাকে – সেটা হলো একটা শর্ত থাকে আইনসাপেক্ষে৷ এই আইনসাপেক্ষে ধর্মীয় স্বাধীনতা পুরোটাই দেয়া থাকে৷ ধর্মের নামে কেউ যদি হানাহানি করে বা রায়ট করে, সেক্ষেত্রে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রয়োগের ফলে এটা যাতে না হয়, সরকার আইন করে সেটা নিষিদ্ধ করতে পারবে৷
Interview of Advocate Dr. Shahdeen Malik dwAlaap - MP3-Stereo
সংবিধানের সঙ্গে ধর্মীয় আইন কি সাংঘর্ষিক?
ধর্মীয় আইন আমাদের নেই৷ আমাদের সামাজিক জীবনে বা রাজনৈতিক জীবনে শুধু মাত্র বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, বাচ্চার ভরণপোষণ – এই ক'টা জিনিস শুধুমাত্র ধর্মীয় আইন দিয়ে চলে৷ আর পুরো ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা, কোনটা অপরাধ, সম্পত্তি কেনার আইন, চুক্তি আইন এমন হাজারো আইন আছে, যার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই৷ শুধুমাত্র বিয়ে এবং বিয়ে সংক্রান্ত বিধানগুলো ধর্মীয় আইন দ্বারা পরিচালিত হয়৷ এখন অবশ্য ওখানেও অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে৷
বাংলাদেশে কি নির্দিষ্ট কোনো ধর্মীয় আইন আছে?
বাংলাদেশে মুসলিমদের বিয়ে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী হয়৷ হিন্দুদের বিয়ে হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী হয়৷ বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব ধর্ম অনুযায়ী মানা হয়৷ শুধুমাত্র এই বিয়ের জায়গায় ধর্ম মানা হয়৷ এটা যার যে ধর্ম তা অনুযায়ী হয়৷ এটা ইউরোপেও হয়৷ যেমন ধরুন ক্যাথলিসিজমে বলে বিবাহবিচ্ছেদ হবে না৷ তার মানে কি সেখানে বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে না, হচ্ছে৷ এক অর্থে এই ছোট্ট জায়গাটা ধর্মীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷ অ্যামেরিকায় গর্ভপাতে নিষেধাজ্ঞা আছে৷ এটা তো ধর্ম থেকে এসেছে৷
আমাদের দেশের ধর্মীয় দলগুলো শরিয়া আইনের কথা বলে৷ সংবিধান মেনে এর কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব?
এগুলো আমাদের দেশ থেকে একশ' বছর আগে উঠে গেছে৷ আমাদের যে ফৌজদারি আইন, তাতে খুন, ডাকাতি, চুরি এ সব থেকে দেড়শ' বছর আগেই ধর্ম চলে গেছে৷ আমাদের জমি কেনার যে আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর করা, চুক্তি করার যে আইন সেটা শরিয়াতে যা বলা ছিল, তার সঙ্গে এখন এই আইনের কোনো সম্পর্ক নেই৷
বিভিন্ন ধর্মে উত্তরাধিকার আইন
কারো সম্পত্তির উত্তরাধিকার কে হবেন, বা তা ভাগাভাগিই হবে কীভাবে, এ সব বিষয় এখনো একেবারেই পারিবারিক পরিমন্ডলেই বিচার হয়৷ তাই এর জন্য রয়েছে পারিবারিক আইন৷ তবে এই আইন একেক ধর্মের জন্য একেকরকম৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
উত্তরাধিকার আইন
কোনো নারী বা পুরুষের মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে মৃতের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের খরচ, দেনাশোধ বা মৃতব্যক্তি যদি কোন উইল সম্পাদন করে যান তবে তা হস্তান্তরের পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে তার উপর মৃতের সন্তান সন্তানাদি ও আত্মীয় স্বজনের যে অধিকার জন্মায়, তাকে উত্তরাধিকার বলে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
বিভিন্ন ধর্মে উত্তরাধিকার আইন
বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য প্রায় সব ধর্মাবলম্বীর, এমনকি আদিবাসীদেরও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধি-বিধান আছে৷ যেমন, মুসলিমদের জন্য আইনটি কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী তৈরি৷ আবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আইন আলাদা৷ সময়ে সময়ে কিছু কিছু আইন সংস্কারও করা হয়েছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে তিন শ্রেণির উত্তরাধিকার আছে৷ যেমন : অংশীদার, অবশিষ্টাংশ ভোগী, দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ৷ অংশীদারগণ সব উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অগ্রাধিকার পান৷ অংশীদারদের মধ্যে স্ত্রী অন্যতম৷ পিতা, মাতা, ছেলে, মেয়ে, স্বামী ও স্ত্রী – এঁরা কেউই উত্তরাধিকার সম্পত্তি হতে বাদ যান না৷ পুত্র, কন্যা, স্বামী, স্ত্রী কিংবা অন্য অংশীদাররা কে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন তা নির্ধারিত করা আছে৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন
এখানে দুই ধরনের উত্তরাধিকার পদ্ধতি চালু আছে – মিতক্ষরা ও দায়ভাগ পদ্ধতি৷ বাংলাদেশে দায়ভাগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়৷ এ আইন অনুযায়ী, যারা পিণ্ডদানের অধিকারী, তারাই যোগ্য উত্তরাধিকারী৷ পিণ্ডদানের অধিকারীদের তালিকায় থাকা ৫৩ জনের মধ্য পুত্র, পুত্রের পুত্র, পুত্রের পুত্রের পুত্র, স্ত্রী, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রীর পরে কন্যা আসেন৷ এই আইনের সংস্কারের দাবি বহুদিনের৷
ছবি: DW/M. Mamun
খ্রিষ্টান উত্তরাধিকার আইন
আমাদের দেশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রিত হয় সাকসেশন অ্যাক্ট ১৯২৫-এর মাধ্যমে৷ কোনো মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ে একই মর্যাদার অধিকারী, অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তারা সমান অংশ লাভ করে৷ তবে মৃত ব্যক্তি যদি সম্পত্তি অন্য কারো নামে উইল করে যান, তাহলে সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হবে না৷
ছবি: imago/Xinhua
বৌদ্ধ উত্তরাধিকার আইন
বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী হিন্দু আইন অনুযায়ী তাদের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Mia
নৃ-গোষ্ঠীদের উত্তরাধিকার আইন
বেশিরভাগ নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের প্রথা অনুযায়ী নারীদের পিতা-মাতা ও স্বামীর সম্পদের মালিকানায় উত্তরাধিকারের কোনো পদ্ধতি নেই৷ এ কারণে এ নারীরা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷ পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী পাস হওয়ার পরও নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা আদৌ কোনো সুফল পাবেন কিনা, তা নিয়ে তাদের মাঝে সংশয় আছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com
7 ছবি1 | 7
ধর্মীয় আইন বলতে কী বোঝায়? এটা কি নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের নাকি সব ধর্মের আইন?
মুসলমান যাঁরা তাঁরা শুধু বিয়েটা করে ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী বা ধর্মীয় আইন মেনে৷ হিন্দুরা বিয়ে করে তাঁদের ধর্মীয় আইন মেনে৷ বাংলাদেশে যাঁরা বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান, তাঁরাও বিয়ে করে তাঁদের ধর্মীয় আইন মেনে৷ অর্থাৎ, শুধু বিয়েটা হচ্ছে ধর্মীয় আইন মেনে৷ এর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর বাচ্চা কার কাছে থাকবে সেটা শুধু ধর্মীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷ আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক জীবনে বিয়েটা তো হলো একটা ছোট্ট জায়গা৷ যে কারণেই হোক কোনো ব্যক্তি যদি বিয়ে না করেন, তাহলে তিনি সারা জীবনেও ধর্মীয় আইনের মধ্যে আসবেন না৷ সারা বিশ্বেই বিয়েতে যিনি যে ধর্মের তার একটা প্রভাব থাকে৷
সংবিধানে বাকস্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে৷ তাহলে ধর্মীয় নেতারা যেসব বক্তব্য রাখেন, সেটা তো অন্যায় কিছু নয়?
বাকস্বাধীনতা মানে তো ওটাই৷ বক্তব্য তো আপনি দিতে পারবেন৷ বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে দুনিয়ার সব দেশেই একটা সীমাবদ্ধতা থাকে? যেটা হলো আপনার বক্তব্যের কারণে যেন কোনো সহিংসতা, অপরাধ, আগুন জ্বালানো বা রায়ট না হয়৷ এটা সব দেশেই আছে, আমাদের দেশেও আছে৷ এছাড়া বাকস্বাধীনতার ওপর অস্বাভাবিক কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷
ধর্মীয় উসকানির বিষয়ে কি সংবিধানে কিছু বলা আছে?
এই ধরনের ছোট-খাট বিষয়ে কোনো দেশের সংবিধানেই কিছু বলা থাকে না৷ অ্যামেরিকার সংবিধানে সাতটি মাত্র অনুচ্ছেদ আর ১০ পাতা৷ সংবিধানে বড় দাগে কিছু নীতির কথা বলা থাকে৷ এ সব ছোট-খাট বিষয়ে থাকে না৷ বড় দাগে বলা থাকে যে রাষ্ট্রপতি থাকবে, পার্লামেন্ট থাকবে, বিচার বিভাগ থাকবে৷ আপনি বিয়ে কীভাবে করবেন সংবিধানে সেটা বলা থাকে না৷ উসকানিটা অপরাধ৷ কিন্তু সেটা থাকে অপরাধ আইনে৷ আপনি উসকানি দিলেন – অমুক লোককে মেরে ফেল, তার বাড়ি জ্বালিয়ে দাও বা তার গাড়ি ভেঙে ফেলো – এটা যে কারণেই আপনি বলেন, সেটা অপরাধ৷ আমাদের অপরাধ আইনেও এমনটা বলা আছে৷ সেটা ধর্মীয় কারণে হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক, সেটা অপরাধ৷
জার্মানদের বিয়ের ঐতিহ্যবাহী রীতি-নীতি
অধিকাংশ মানুষের জীবনেই বিয়ের দিনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে৷ আর কেউ যদি ঐতিহ্য আর রীতি-নীতি মেনে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চান, তাহলে তো কথাই নেই৷ জার্মানদের সেরকমই কিছু বিয়ের ছবি দেখে নিন ছবিঘর থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/JCarstensen
ব্রাউটস্ট্রাউস বা নববধূর ফুলের তোড়া
জার্মানদের বিয়েতে পোশাকের সাথে মিল রেখে প্রতিটি কনের হাতেই থাকে সাদা রঙের একটি ফুলের তোড়া৷ গির্জায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নববধূ ফুলের তোড়াটি ছুড়ে দেন অতিথীদের লক্ষ্য করে৷ কে পাবে এই তোড়া? মনে করা হয়, এই বিশেষ তোড়াটি যে পাবেন, তারই নাকি সবচেয়ে তাড়িতাড়ি বিয়ে হবে৷ এই দৃশ্যটি দেখতে কিন্তু ভারি মজার, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের জন্য৷
ছবি: Colourbox
বিয়ের আগে নববধূর ড্রেস দেখা যাবে না!
বিয়ের আগেই বর যদি কনের পোশাক দেখে ফেলেন, তাহলে নাকি অমঙ্গল হয়৷ যদিও এ সব কথা আজকাল কেউ তেমন বিশ্বাস করেন না৷ তারপরও বিয়ের দিনের চমক হিসেবে কনে এই বিশেষ দিনের পোশাকটি হবু বরের কাছ থেকে আড়াল করে রাখেন৷ অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর তাঁর হবু স্ত্রীকে বিয়ের সাজ-পোশাকে দেখতে পান বিবাহ অনুষ্ঠানের ঠিক কয়েক মিনিট আগে৷
ছবি: Colourbox
সুখ আনতে বাসন ভাঙুন, মজা করুন!
এই রীতিটিকে বলে ‘পল্টারআবেন্ড’, যার আয়োজন করে বর-কনে, তাদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধব৷ এতে আমন্ত্রিত অতিথিরা পুরনো কাঁচের থালা-বাসন নিয়ে আসেন, সেগুলো মাটিতে ছুড়ে ভাঙার জন্য৷ বলা হয়, বাসন ভাঙার শব্দ নাকি ভাবি দম্পতিকে অশুভ শক্তি থেকে দূরে রাখে৷ শেষে বাসনের ভাঙা টুকরোগুলো পরিষ্কার করতে হয় বর-কনেকেই৷ দাম্পত্য জীবনে তাঁরা একে-অন্যকে কতটা সাহায্য করবে, সেটাই দেখা হয় এর মাধ্যমে৷
ছবি: Fotolia/Pixelacts
নতুন, পুরনো ও ধার করা জিনিস
সহ্যক্ষমতা, বিশ্বস্ততা ও দাম্পত্য সুখের চিহ্ন হিসেবে কুসংস্কারে বিশ্বাসী অনেক কনেই বিয়ের সময় নানা-দাদি, মা-খালা, ফুপু বা বান্ধবীর কাছ থেকে নীল রঙের কিছু, একটা নতুন ও একটা পুরোনো জিনিস ধার করে পরেন৷ জিনিসগুলো ছোটখাটোও হতে পারে৷ দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের অভিজ্ঞতা আছে, এমন কারো জিনিস পরলে নাকি কনের বিয়েও মজবুত হবে, টিকবে বহুদিন৷
ছবি: picture-alliance/ZB
বিয়েতে সাক্ষীদের দায়িত্ব
জার্মানির আইন অনুযায়ী, রেজিস্ট্রি অফিসে বিয়ে নথিভুক্ত করার সময় যাঁরা সাক্ষী থাকেন, তাঁদেরও কিছু দায়-দায়িত্ব থাকে৷ বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁদেরও নানা আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে হয়৷ যেমন ব্যাচেলার পার্টির আয়োজন করা, বিয়ের অনুষ্ঠানকে আরো আনন্দময় করে তোলার জন্য বিভিন্ন মজার খেলা পরিবেশন করা, বর-কনের ছোটবেলার ছবি দেখিয়ে তাঁদের প্রেমের গল্পটা সবাইকে বলা, আরো কত কী!
ছবি: privat
আংটি পরেন বাঁ হাতের আঙুলে
অধিকাংশ দেশেই বিয়ের আংটি পরানো হয় বাঁ হাতের অনামিকায়৷ কিন্তু জার্মানরা পরেন ডান হাতের অনামিকায়৷ এর আসল কারণটা যে কী, সেটা কিন্তু কেউ তেমন জানেন না৷ তবে অনেকে বলেন, ডান হাতেই নাকি ভালোবাসার শিরা থাকে৷ তাছাড়া বিয়ের আংটি হারিয়ে যাওয়া দুর্ভাগ্যের লক্ষণ – এমন একটা বিশ্বাস কাজ করে অনেকের মধ্যেই৷ তাই নিজের আংটিটি খুবই যত্ন করে পরেন জার্মানরা৷
ছবি: Colourbox/M.Standret
মজার প্রথা
নবদম্পতিকে পুরনো একটি চাদর থেকে হৃদয়ের আকারে খানিকটা কাটতে হয় এবং তারপর ঐ গর্ত বা কাটা জায়গার ভেতর দিয়ে নববধূকে কোলে নিয়ে যেতে হয় বরকে৷ বর যদি অনায়াশেই সেটা করতে পারেন, তবে মনে করা হয় আগামীতে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে গেলেও দু’জনে ঠিকই দাম্পত্য সুখকে জয় কতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
একসাথেই শক্তি!
আরো কঠিন পরীক্ষা! এবার গাছের একটা বিশাল টুকরোকে কাটতে হবে নতুন বর-কনেকে৷ এই কঠিন পরীক্ষায় পাশ করা, অর্থাৎ গাছের বড় টুকরোটির মাঝখানে করাত দিয়ে কাটতে পারার অর্থ হচ্ছে, সারাজীবন তাঁরা একসাথে থেকে সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে পারবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Schutt
স্বাগতম
বিয়ের পর প্রথমবার বাড়িতে ঢোকার সময় বরকে নববধূকে একেবারে কোলে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে তবে ঘরে ঢুকতে হয়৷ বলা হয়ে থাকে, এতে নাকি কোনো অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা পায় নববধূ৷ আর এভাবেই নতুন বউকে অভিবাদন করে শুরু হয় নবদম্পতির যুগল জীবন৷
ছবি: picture alliance/chromorange
যুগল জীবনের নেতৃত্ব কে দেবে?
সুখি দাম্পত্য জীবনের মূল শর্তই হচ্ছে দু’জনের মধ্যে ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ বা বোঝাপড়া, এক সাথে মিলেমিশে কাজ করা৷ জার্মান বিয়েতে নবদম্পতির একসাথে কেক কাটাটাও তাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ তবে মজার ব্যাপার হলো, কেক কাটার সময় অতিথিদের চোখ কিন্তু চলে যায় কার হাত ওপরে থাকে, তা দেখার জন্য৷ যাঁর হাত ওপরে থাকে, সংসার জীবনে তাঁর প্রভাব বা ভূমিকাই নাকি শক্তিশালী হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/JCarstensen
10 ছবি1 | 10
সংবিধান অনুযায়ী ধর্ম চলবে নাকি ধর্মীয় আইন অনুযায়ী সংবিধান তৈরি হওয়া উচিত?
আমাদের কোনো আইনের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক নেই৷ শুধুমাত্র বিয়ে বা বিবাহবিচ্ছেদ ছাড়া৷ আমাদের কোনো আইনই দেড়শ' বছর ধরে নেই৷ আমাদের ধর্মের সঙ্গে সংবিধানের সম্পর্ক থাকবে – দেড়শ' বছর পর এ ধরনের প্রশ্ন অবাস্তব৷
আমাদের সংবিধানে তো ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' বলে একটা বিষয় আছে, তাই না?
এটা খুব ‘সিম্বলিক'৷ এটা দুনিয়ার অনেক দেশে আছে৷ অ্যামেরিকায় সবকিছু শুরু হয় ‘ইন গড উই ট্রাস্ট' বলে৷ আমরা যেমন বিসমিল্লাহ বলে সবকিছু শুরু করি, তেমনি ওরা ‘ইন গড উই ট্রাস্ট' বলে শুরু করে৷ এটা সবদেশেই আছে, এটা সিম্বলিক অর্থে ব্যবহার করা হয়৷ অন্য অনেক দেশের মতো আমাদের সংবিধানেও এটা আছে৷
ফতোয়ার বিষয়ে কি সংবিধানে কিছু আছে?
ফতোয়া মানে কী? মানে হলো – একটা বিষয়ে মতামত৷ আপনার যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে আপনি কোনো আত্মীয় বা বড় ভাইয়ের কাছ থেকে মতামত নেন না? এটা তেমনই মতামত নেয়া৷ এছাড়া ধর্মীয় ব্যাপারে যেটা বলা হয় – যেমন ধরুন আমার নামাজ পড়তে দেরি হয়ে গেছে বা কোনো সমস্যা হয়েছে, তার জন্য আমাকে রোজা রাখতে হবে কিনা – এ সব বিষয়ে লোকে মৌলভী সাহেবদের কাছে যায়৷ মৌলভী সাহেবরা তখন এ সম্পর্কে তাঁর মতামত কী হবে সেটা বলে দেন৷ এটাকেই বলা হয় ফতোয়া৷ ফতোয়া হলো ধর্মীয় ব্যাপারে একজনের কী করা উচিত, তা সম্পর্কে পরামর্শ নেয়া৷ এর সঙ্গে আইনের কোনো সম্পর্ক নেই৷
ধর্মীয় রীতি মেনে এখনো গ্রামে কিছু বিচার হয়৷ এর সাংবিধানিক কোনো ব্যাখা আছে?
দেশের আইন অনুযায়ী যে বিচার হয়, সেটা কোর্টে হয়৷ এ ব্যাপারে দেশের আইনে কিছু বলা নেই৷ এটাকে আমরা বলি সালিশ৷ যেমন মহল্লায় কোনো বিরোধ তৈরি হয়েছে৷ তখন সরাসরি কোর্টে না গিয়ে মহল্লার মুরুব্বিদের নিয়ে সালিশের মাধ্যমে সমস্যার নিষ্পত্তি করা হয়৷ এটা শুধু আমাদের দেশে না, সারা বিশ্বেই হয়৷ কিন্তু আমাদের দেশে যেটা হয়, সেটা পশ্চিমা গণমাধ্যমে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রকাশ করা হয়৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷