1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বাংলাদেশে ধর্মীয় আইন মেনে শুধু বিয়েটাই হয়’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সংবিধান এবং ধর্মীয় আইন দু’টো কি সাংঘর্ষিক? না একে অন্যের পরিপূরক? সংবিধান বিশেষজ্ঞ প্রবীণ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক জানান, সারা বিশ্বেই সব ধর্মের মানুষ ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী বিয়ে করেন৷ বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়৷

Ein Paar in Dhaka
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Abdullah

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতা কতটুকু দেওয়া হয়েছে?

ড. শাহদীন মালিক: সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা পুরোপুরি আছে৷ সব সংবিধানে যেটা থাকে – সেটা হলো একটা শর্ত থাকে আইনসাপেক্ষে৷ এই আইনসাপেক্ষে ধর্মীয় স্বাধীনতা পুরোটাই দেয়া থাকে৷ ধর্মের নামে কেউ যদি হানাহানি করে বা রায়ট করে, সেক্ষেত্রে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রয়োগের ফলে এটা যাতে না হয়, সরকার আইন করে সেটা নিষিদ্ধ করতে পারবে৷

Interview of Advocate Dr. Shahdeen Malik dwAlaap - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

সংবিধানের সঙ্গে ধর্মীয় আইন কি সাংঘর্ষিক?

ধর্মীয় আইন আমাদের নেই৷ আমাদের সামাজিক জীবনে বা রাজনৈতিক জীবনে শুধু মাত্র বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, বাচ্চার ভরণপোষণ – এই ক'টা জিনিস শুধুমাত্র ধর্মীয় আইন দিয়ে চলে৷ আর পুরো ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা, কোনটা অপরাধ, সম্পত্তি কেনার আইন, চুক্তি আইন এমন হাজারো আইন আছে, যার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই৷ শুধুমাত্র বিয়ে এবং বিয়ে সংক্রান্ত বিধানগুলো ধর্মীয় আইন দ্বারা পরিচালিত হয়৷ এখন অবশ্য ওখানেও অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ 

বাংলাদেশে কি নির্দিষ্ট কোনো ধর্মীয় আইন আছে?

বাংলাদেশে মুসলিমদের বিয়ে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী হয়৷ হিন্দুদের বিয়ে হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী হয়৷ বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব ধর্ম অনুযায়ী মানা হয়৷ শুধুমাত্র এই বিয়ের জায়গায় ধর্ম মানা হয়৷ এটা যার যে ধর্ম তা অনুযায়ী হয়৷ এটা ইউরোপেও হয়৷ যেমন ধরুন ক্যাথলিসিজমে বলে বিবাহবিচ্ছেদ হবে না৷ তার মানে কি সেখানে বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে না, হচ্ছে৷ এক অর্থে এই ছোট্ট জায়গাটা ধর্মীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷ অ্যামেরিকায় গর্ভপাতে নিষেধাজ্ঞা আছে৷ এটা তো ধর্ম থেকে এসেছে৷

আমাদের দেশের ধর্মীয় দলগুলো শরিয়া আইনের কথা বলে৷ সংবিধান মেনে এর কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব?

এগুলো আমাদের দেশ থেকে একশ' বছর আগে উঠে গেছে৷ আমাদের যে ফৌজদারি আইন, তাতে খুন, ডাকাতি, চুরি এ সব থেকে দেড়শ' বছর আগেই ধর্ম চলে গেছে৷ আমাদের জমি কেনার যে আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর করা, চুক্তি করার যে আইন সেটা শরিয়াতে যা বলা ছিল, তার সঙ্গে এখন এই আইনের কোনো সম্পর্ক নেই৷

ধর্মীয় আইন বলতে কী বোঝায়? এটা কি নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের নাকি সব ধর্মের আইন?

মুসলমান যাঁরা তাঁরা শুধু বিয়েটা করে ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী বা ধর্মীয় আইন মেনে৷ হিন্দুরা বিয়ে করে তাঁদের ধর্মীয় আইন মেনে৷ বাংলাদেশে যাঁরা বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান, তাঁরাও বিয়ে করে তাঁদের ধর্মীয় আইন মেনে৷ অর্থাৎ, শুধু বিয়েটা হচ্ছে ধর্মীয় আইন মেনে৷ এর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর বাচ্চা কার কাছে থাকবে সেটা শুধু ধর্মীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷ আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক জীবনে বিয়েটা তো হলো একটা ছোট্ট জায়গা৷ যে কারণেই হোক কোনো ব্যক্তি যদি বিয়ে না করেন, তাহলে তিনি সারা জীবনেও ধর্মীয় আইনের মধ্যে আসবেন না৷ সারা বিশ্বেই বিয়েতে যিনি যে ধর্মের তার একটা প্রভাব থাকে৷ 

সংবিধানে বাকস্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে৷ তাহলে ধর্মীয় নেতারা যেসব বক্তব্য রাখেন, সেটা তো অন্যায় কিছু নয়?

বাকস্বাধীনতা মানে তো ওটাই৷ বক্তব্য তো আপনি দিতে পারবেন৷ বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে দুনিয়ার সব দেশেই একটা সীমাবদ্ধতা থাকে? যেটা হলো আপনার বক্তব্যের কারণে যেন কোনো সহিংসতা, অপরাধ, আগুন জ্বালানো বা রায়ট না হয়৷ এটা সব দেশেই আছে, আমাদের দেশেও আছে৷ এছাড়া বাকস্বাধীনতার ওপর অস্বাভাবিক কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷ 

ধর্মীয় উসকানির বিষয়ে কি সংবিধানে কিছু বলা আছে?

এই ধরনের ছোট-খাট বিষয়ে কোনো দেশের সংবিধানেই কিছু বলা থাকে না৷ অ্যামেরিকার সংবিধানে সাতটি মাত্র অনুচ্ছেদ আর ১০ পাতা৷ সংবিধানে বড় দাগে কিছু নীতির কথা বলা থাকে৷ এ সব ছোট-খাট বিষয়ে থাকে না৷ বড় দাগে বলা থাকে যে রাষ্ট্রপতি থাকবে, পার্লামেন্ট থাকবে, বিচার বিভাগ থাকবে৷ আপনি বিয়ে কীভাবে করবেন সংবিধানে সেটা বলা থাকে না৷ উসকানিটা অপরাধ৷ কিন্তু সেটা থাকে অপরাধ আইনে৷ আপনি উসকানি দিলেন – অমুক লোককে মেরে ফেল, তার বাড়ি জ্বালিয়ে দাও বা তার গাড়ি ভেঙে ফেলো –  এটা যে কারণেই আপনি বলেন, সেটা অপরাধ৷ আমাদের অপরাধ আইনেও এমনটা বলা আছে৷ সেটা ধর্মীয় কারণে হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক, সেটা অপরাধ৷ 

সংবিধান অনুযায়ী ধর্ম চলবে নাকি ধর্মীয় আইন অনুযায়ী সংবিধান তৈরি হওয়া উচিত?

আমাদের কোনো আইনের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক নেই৷ শুধুমাত্র বিয়ে বা বিবাহবিচ্ছেদ ছাড়া৷ আমাদের কোনো আইনই দেড়শ' বছর ধরে নেই৷ আমাদের ধর্মের সঙ্গে সংবিধানের সম্পর্ক থাকবে – দেড়শ' বছর পর এ ধরনের প্রশ্ন অবাস্তব৷ 

আমাদের সংবিধানে তো ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' বলে একটা বিষয় আছে, তাই না?

এটা খুব ‘সিম্বলিক'৷ এটা দুনিয়ার অনেক দেশে আছে৷ অ্যামেরিকায় সবকিছু শুরু হয় ‘ইন গড উই ট্রাস্ট' বলে৷ আমরা যেমন বিসমিল্লাহ বলে সবকিছু শুরু করি, তেমনি ওরা ‘ইন গড উই ট্রাস্ট' বলে শুরু করে৷ এটা সবদেশেই আছে, এটা সিম্বলিক অর্থে ব্যবহার করা হয়৷ অন্য অনেক দেশের মতো আমাদের সংবিধানেও এটা আছে৷

ফতোয়ার বিষয়ে কি সংবিধানে কিছু আছে?

ফতোয়া মানে কী? মানে হলো – একটা বিষয়ে মতামত৷ আপনার যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে আপনি কোনো আত্মীয় বা বড় ভাইয়ের কাছ থেকে মতামত নেন না? এটা তেমনই মতামত নেয়া৷ এছাড়া ধর্মীয় ব্যাপারে যেটা বলা হয় – যেমন ধরুন আমার নামাজ পড়তে দেরি হয়ে গেছে বা কোনো সমস্যা হয়েছে, তার জন্য আমাকে রোজা রাখতে হবে কিনা – এ সব বিষয়ে লোকে মৌলভী সাহেবদের কাছে যায়৷ মৌলভী সাহেবরা তখন এ সম্পর্কে তাঁর মতামত কী হবে সেটা বলে দেন৷ এটাকেই বলা হয় ফতোয়া৷ ফতোয়া হলো ধর্মীয় ব্যাপারে একজনের কী করা উচিত, তা সম্পর্কে পরামর্শ নেয়া৷ এর সঙ্গে আইনের কোনো সম্পর্ক নেই৷  

ধর্মীয় রীতি মেনে এখনো গ্রামে কিছু বিচার হয়৷ এর সাংবিধানিক কোনো ব্যাখা আছে?

দেশের আইন অনুযায়ী যে বিচার হয়, সেটা কোর্টে হয়৷ এ ব্যাপারে দেশের আইনে কিছু বলা নেই৷ এটাকে আমরা বলি সালিশ৷ যেমন মহল্লায় কোনো বিরোধ তৈরি হয়েছে৷ তখন সরাসরি কোর্টে না গিয়ে মহল্লার মুরুব্বিদের নিয়ে সালিশের মাধ্যমে সমস্যার নিষ্পত্তি করা হয়৷ এটা শুধু আমাদের দেশে না, সারা বিশ্বেই হয়৷ কিন্তু আমাদের দেশে যেটা হয়, সেটা পশ্চিমা গণমাধ্যমে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রকাশ করা হয়৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ