২০১৫ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং বিরোধী ও মানবাধিকারকর্মীদের কার্যক্রমে বিধি-নিষেধের কারণে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের অবনতি হয়েছে বাংলাদেশে৷ ইইউ-র সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বার্ষিক মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ক এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে৷ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত৷ চারজন ‘নাস্তিক' ব্লগার এবং একজন প্রকাশকের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এটাই প্রমাণ হয়েছে যে, বাংলাদেশ ধর্মীয় জঙ্গিবাদের হুমকি থেকে মুক্ত নয়৷ এছাড়া দু'জন বিদেশি নাগরিকের হত্যাকাণ্ড নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি তুলে ধরেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷
মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সব মানবাধিকার সংগঠনই এই ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে৷ মানবাধিকারের যে বিষয়গুলো নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, আমরা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে গত বছর ঐ একই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি৷ সেখানে গুমের কথা বলা আছে, বলা আছে ক্রসফায়ারের কথাও৷ তাছাড়া নাগরিক অধিকার সংকুচিত হচ্ছে – এ ধরনের কথা কিন্তু আমরা আগে থেকেই বলে আসছি৷ আজকে ইইউ যে মানবাধিকার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে যারা কাজ করে, তারা সকলেই এ বিষয়ে একমত হবে৷
নূর খান
তবে ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি: ইইউ অ্যানুয়াল রিপোর্ট-২০১৫' শীর্ষক এই প্রতিবেদনে ২০১৫ সালের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতির মতো ইতিবাচক দিকও আছে৷ ইইউ-র ওয়েবসাইটে দেওয়া এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে আরো বলা হয় যে, সাংবাদিক ও সম্পাদকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা বেড়ে গেছে বাংলাদেশে৷ একইসঙ্গে কিছু সংবাদপত্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করার ব্যাপারে পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুশাসন, মানবাধিকার, অভিবাসন ইত্যাদি বিষয়গুলোকে সামনে রেখে গত বছরের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বরে অনুষ্ঠিত যৌথ কমিশনের বৈঠকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে ইইউ৷ এ সব বৈঠকে মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, বিরোধী ও মানবাধিকারকর্মীদের কার্যক্রমে বিধিনিষেধ, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর পরিস্থিতি এবং নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷
এই পরিস্থিতির ব্যাখা করতে গিয়ে নূর খান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে আরেকটা নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ একদিকে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের কারণে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে৷ অন্যদিকে রাষ্ট্রের তরফ থেকে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, সেটাও এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে৷ এ অবস্থা সামগ্রিকভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷''
নিরাপত্তা নিয়ে যা ভাবছে দেশের মানুষ
বাংলাদেশে একের পর এক মুক্তমনা, ধর্মনিরপেক্ষ লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও ভিন্ন ধর্মের মানুষ খুন হচ্ছে৷ পুলিশ এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বললেও, দেশের মানুষ খুব উদ্বিগ্ন৷ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে রিকশা চালক – আজ কতটা নিরাপদ আমরা?
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
আব্দুল্লাহ রিফাত, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ রিফাত৷ তার মতে, বাড়ি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় – কোথাও তেমন নিরাপদ না কেউই৷ তবে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে তিনি ভাবছেন না এই মুহূর্তে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
নাফিউল হাসান, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিউল হাসান মনে করেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউই নিরাপদ নয়৷ আমরা একরকম ভয়ের মধ্যেই বসবাস করছি৷ যতক্ষণ বাইরে থাকি, বাসায় অভিভাবকরা চিন্তায় থাকেন৷ অনেক সময় তো স্বাভাবিক ঘোরাফেরাও বন্ধ করতে হচ্ছে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
প্যারিস তালুকদার, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের ছাত্র
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্যারিস তালুকদার মনে করেন, গত দুই বছরের আগ পর্যন্ত নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কখনো ভাবিনি, গভীর রাত পর্যন্তও ঘুরে বেড়াতাম বিভিন্ন জায়গায়৷ তবে গত দিনগুলোর নানান ঘটনায় আমার নিজেরই খুব ভয় হয়৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
ফারিয়া রিফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী
বেশ নির্ভিক টাইপের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ফারিয়া রিফাত৷ কিন্তু দেশের বর্তামান পরিস্থিতিটা তার কাছে খুবই ঘোলাটে মনে হচ্ছে৷ প্রত্যেক দিনই বড় কোনো অঘটন ঘটছে৷ পত্রিকা খুললেই খুন-খারাবির খবর, মনে হচ্ছে ‘মার্ডার’ করাটা এখন সহজ ক্রাইম৷ আমরা প্রত্যেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি৷ ঘর থেকে বেড়িয়ে আবার যে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারব, এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আরিফ জেবতিক, ব্লগার
ব্লগার আরিফ জেবতিক বললেন, ‘‘নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই আছি৷ ব্যক্তিগতভাবে যে যেভাবে পারছি সাবধানে থাকার চেষ্টা করছি৷ জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে৷ এই যেমন, ‘পাবলিক প্লেসে’ যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি৷ সিনেমা দেখতাম, নাটক দেখতাম, জগিং করতাম৷ এখন এগুলো আর করতে পারি না৷ যেহেতু পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই, তাই এভাবেই সাবধানে থাকতে হচ্ছে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
হযরত আলী, ব্যবসায়ী
পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ী হযরত আলী৷ তাঁর মতে, দেশের কোনো শ্রেণির মানুষেরই নিরাপত্তা নেই৷ দিনে-দুপুরে খুন-খারাবি চলছে৷ তাই দিন কিংবা রাত – কখনোই নিরাপদ নই আমরা৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
হারিছ মিয়া, ফল ব্যবসায়ী
মাদারীপুরের হারিছ মিয়া গত প্রায় ১৭ বছর ধরে ঢাকায় ফলের ব্যবসা করেন৷ গত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে খুন-খারাবি বেড়ে যাওয়ায় খুবই চিন্তিত তিনি৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আক্কাস আলী, দিনমজুর
পুরনো ঢাকায় ঠেলাগাড়ি চালান আক্কাস মিয়া৷ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় নেই তাঁর৷ আপাতত সন্তানদের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দিতে পালেই সন্তুষ্ট তিনি৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আব্দুর রহমান, রিকশা চালক
লালমনির হাটের আব্দুর রহমান ঢাকায় রিকশা চালান গত প্রায় ছ’বছর ধরে৷ জীবনের নিরাপত্তার চেয়েও তাঁর কাছে বেশি চিন্তার বিষয় ছিনতাই৷ রাস্তায় থাকা হয় বলে প্রতিনিয়ত অনেক ছিনতাইয়ের সাক্ষী তিনি্৷ কিন্তু জীবনের ভয়ে সেগুলোর প্রতিবাদ না করে নিরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করতে হয় তাঁকে৷ কিন্তু এতে খুবই মনোকষ্টে ভোগেন বিদ্যালয়ের প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে না পারা এই রিকশা চালক৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আবুল কালাম, অটোরিকশা চালক
শেরপুরের আবুল কালাম অটোরিকশা চালান ঢাকা শহরে৷ তাঁর কথায়, দেশে কোনো নিরাপত্তা নেই৷ যে যেভাবে পারছে খুন-খারাবি করে যাচ্ছে৷ অপরাধীরা থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে৷ অনেকে ধরা পড়ার খবর শুনলেও তাদের বিচারের আর কোনো খবর পান না বলে জানালেন এই অটোরিকশা চালক৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
10 ছবি1 | 10
প্রশ্ন হলো, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কী? জবাবে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের বিকল্প কিছু নেই৷ দেশে গণতন্ত্রের চর্চা করা আর সমাজে ও রাজনীতিতে যে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে, সেটা থেকে বের হতে সমঝোতার ভিত্তিতে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করা এবং জনগণকে সমস্ত বিষয়ে যুক্ত করা৷''
ইইউ-র প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক সংলাপ, উন্নয়ন সহায়তা ও কর্মসূচি, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ও মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে কিংবা মাঠপর্যায়ে ঘুরে ইইউ এবং তার সদস্যদেশগুলো নিয়মিতভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে৷ ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ইইউ-র মিশন প্রধানেরা রাজনৈতিক সংঘাত এবং এর ফলে হতাহতের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন৷
বাংলাদেশে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ইইউ কড়া নিন্দা জানিয়ে কয়েকবার বিবৃতিও দিয়েছিল৷ একইসঙ্গে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে আহ্বান জানিয়েছিল এবং তা আবারো পুনর্ব্যক্ত করেছে তারা৷ গত বছরের পরপর তিনটি নির্বাচন (ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন, যাতে ইইউ-র পর্যবেক্ষকেরা ব্যাপক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছন) পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার জন্য ইইউ অন্য দাতাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে৷ শ্রম অধিকার রক্ষা, কারখানায় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘সাসটেনেবিলিটি কম্প্যাক্ট'-এর আওতায় সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
বাংলাদেশে নাগরিক অধিকার কি সত্যিই সংকুচিত হচ্ছে? লিখুন নীচের ঘরে৷
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার শিকার যারা
চলতি বছর ইসলামপন্থিরা একের পর এক হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ চলুন জানা যাক ২০১৫ সালের কবে, কারা হামলার শিকার হয়েছেন...৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্লগার খুন
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়৷ কমপক্ষে দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ এসময় তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন৷ বাংলাদেশি মার্কিন এই দুই নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’৷ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বাড়ির সামনে খুন
ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় ঢাকায়, গত ৩০ মার্চ৷ তিন দুর্বৃত্ত মাংস কাটার চাপাতি দিতে তাঁকে কোপায়৷ সেসেময় কয়েকজন হিজরে সন্দেহভাজন দুই খুনিকে ধরে ফেলে, তৃতীয়জন পালিয়ে যায়৷ আটকরা জানায়, তারা মাদ্রাসার ছাত্র ছিল এবং বাবুকে হত্যার নির্দেশ পেয়েছিল৷ কে বা কারা এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে জানা যায়নি৷ বাবু ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সিলেটে আক্রান্ত মুক্তমনা ব্লগার
শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ গত ১২ মে সিলেটে নিজের বাসার কাছে খুন হন নাস্তিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস৷ ভারত উপমহাদেশের আল-কায়েদা, যাদের সঙ্গে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সম্পর্ক আছে ধারণা করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ দাস ডয়চে ভেলের দ্য বব্স জয়ী মুক্তমনা ব্লগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/EPA/Str
বাড়ির মধ্যে জবাই
ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি নিলয় নীল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, হত্যা করা হয় ঢাকায় তাঁর বাড়ির মধ্যে৷ একদল যুবক বাড়ি ভাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৮ আগস্ট তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ নিজের উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলেন নিলয়৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেনি৷ ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তবে তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জগিংয়ের সময় গুলিতে খুন বিদেশি
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জগিং করার সময় ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় খুন হন ইটালীয় এনজিও কর্মী সিজার তাবেলা৷ তাঁকে পেছন থেকে পরপর তিনবার গুলি করে দুর্বৃত্তরা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে জিহাদিদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা একটি সংস্থা৷ তবে বাংলাদেশে সরকার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে ‘এক বড় ভাইয়ের’ তাঁকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)
রংপুরে নিহত এক জাপানি
গত ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও৷ মুখোশধারী খুনিরা তাঁকে গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়৷ ইসলামিক স্টেট এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে, তবে সরকার তা অস্বীকার করেছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না যে তাঁর দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটির উপস্থিতি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোসনি দালানে বিস্ফোরণ, নিহত ১
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোসনি দালানে শিয়া মুসলমানদের আশুরার প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ বাংলাদেশে এর আগে কখনো শিয়াদের উপর এরকম হামলায় হয়নি৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট, তবে সরকার সে দাবি নাকোচ করে দিয়ে হামলাকারীরা সম্ভবত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি-র সদস্য৷ সন্দেহভাজনদের একজন ইতোমধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ঢাকায় প্রকাশক খুন
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দু’টি স্থানে কাছাকাছি সময়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়৷ এতে খুন হন এক ‘সেক্যুলার’ প্রকাশক এবং গুরুতর আহত হন আরেক প্রকাশক ও দুই ব্লগার৷ নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের সঙ্গে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার-আল-ইসলাম’ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
প্রার্থনারত শিয়াদের গুলি, নিহত ১
গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত একটি শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ তথকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা দাবি করা স্থানীয় একটি গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷