বাংলাদেশে নারীদের অগ্রযাত্রায় যোগ হলো আরেক সাফল্য
আরাফাতুল ইসলাম২১ নভেম্বর ২০১৪
বাংলাদেশে নারীর উন্নয়নের আরেক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে এই সাফল্যকে৷ এককভাবে একটি হেলিকপ্টার উড়িয়েছেন তামান্না-ই-লূৎফী৷ বিমানবাহিনীর প্রথম সামরিক নারী পাইলট তিনি৷
বিজ্ঞাপন
‘‘বাংলাদেশে নারীরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে না'' – গত সপ্তাহে বনে এক আলোচনায় এমনটাই বলছিলেন এক বিদেশি৷ আরো কয়েকজনের সঙ্গে আমারও সেকথা শুনতে হয়েছে৷ বিশ্বের কয়েকটি দেশে নারীদের দুরবস্থার সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের কথাও উল্লেখ করেন৷ এক পর্যায়ে আমি অবশ্য বলতে বাধ্য হয়েছিলাম, সময় অনেক বদলে গেছে৷ বাংলাদেশের নারীরা এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন৷ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কয়েক মিলিয়ন নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন৷
বাঙালি নারীর দশ গুণ
গরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ নারীর গুণ সম্পর্কে জানিয়েছেন ডয়চে ভেলের পাঠকরা৷ তাঁদের মতামত এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি বাঙালি নারীর দশগুণ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
আবেগী, স্বাধীনচেতা
গরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ আবেগ যেমন তাঁদের দ্রুত স্পর্শ করে, তেমনি স্বাধীনতার প্রশ্নে কিন্তু তাঁরা সত্যিকার অর্থে অনড়৷ নিজের সত্ত্বা নিয়ে অহংকার তাঁদের আছে বটে, তবে তার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মধ্যে রয়েছে অসীম ধৈর্য্য৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
শাড়িতে সবচেয়ে সুন্দর
বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে শাড়ি৷ সেই শাড়ি বাঙালি নারীর সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তোলে চমৎকারভাবে৷ বিভিন্নভাবে শাড়ি পরতে জানেনও তাঁরা৷ আর ‘উপহার হিসেবে শাড়ি’? – কোন বাঙালি মেয়ে না চায় বলুন?
ছবি: DW/A. Islam
উৎসব প্রেমী
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন৷ নববর্ষ, ঈদ কিংবা দুর্গা পূজা – সব উৎসবই যেন বাঙালি নারীর জন্য তৈরি৷ প্রতিটি উৎসবের সঙ্গে মানানসই পোশাক পরতে এবং সেই উৎসবের উপযুক্ত রান্নায় পারদর্শী তাঁরা৷ ডয়চে ভেলের পাঠক সুজন খানের কথায়, ‘‘বঙ্গের নারী লাজুক প্রকৃতির, কিন্তু যে কোনো উপলক্ষ্যেই প্রাণ খোলা হাসি উপচে পড়ে তাঁদের৷’’
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
‘নো ডায়েট’
বাঙালি নারী ‘ডায়েট’ করছেন, এমনটা বেশ বিরল৷ তাই খাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা বেশ উদার৷ কথায় বলে না, মাছে-ভাতে বাঙালি? অবশ্য মাছ-ভাতের পাশাপাশি ফুসকা কিংবা চটপটি পেলে তো আর কথাই নেই৷ আসলে টক, ঝাল, নোনতা, মিষ্টি, এমনকি তেতোও পছন্দ এই নারীদের৷
ছবি: Debarati Mukherji
রান্নার শখ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাই ধরুন৷ দেশ সামলানোর কঠিন দায়িত্ব পালনের মাঝেও রান্না ঘরে যেতে ভোলেন না তিনি৷ গত বছর ছেলের জন্য রান্না করার সময় তোলা তাঁর এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছিল৷ বাঙালি মেয়েরা রাঁধতে যে ভীষণ ভালোবাসেন!
ছবি: Sajeeb Wazed
অল্পতেই সন্তুষ্ট
বাঙালি মেয়েদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা কি খুব কঠিন? না৷ সকলেই জানেন যে, কাজটা সহজই৷ একটি লাল গোলাপ পেলে কিংবা প্রিয় রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলেই তাঁরা সন্তুষ্ট৷ ডয়চে ভেলের পাঠক রন্জু খালেদের মতে, বাঙালি নারীর মধ্যে ‘একইসাথে দৃঢ়তা ও নমনীয়তা এবং প্রজাপতির চপলতা’ রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
কাজল কালো চোখ
জীবনানন্দ দাসের ‘বনলতা সেন’ কিংবা রবি ঠাকুরের ‘কৃষ্ণকলি’ – বাঙালি নারীর কাজল কালো চোখের প্রশংসা পাবেন অনেক কবির কবিতাতেই৷ সত্যি বলতে কি, বাঙালি নারীর চোখ পুরুষকে টানে সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: N.Seelam/AFP/GettyImages
বাকপটু
বাংলাদেশের কিংবা ভারতের মেয়েরা চুপ করে বসে আছেন – এমন দৃশ্য কল্পনা করাও কঠিন৷ তাঁরা কথা বলতে ভালোবাসেন৷ রান্না থেকে রাজনীতি – সব বিষয়েই একটা মতামত আছে তাঁদের৷ ডয়চে ভেলের পাঠক জিএনএস নয়নের কথায়, ‘‘নারী পুরুষের যে কোনো কষ্ট অতি সহজে ভুলিয়ে দিতে পারে৷ এই গুণই আমাকে মুগ্ধ করে, আবার সাথে অবাকও করে৷’’
ছবি: DW/A. Islam
নারীবাদী
বাঙালি মেয়েরা নারীবাদী৷ বিতর্কিত বাঙালি লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁদের অনেকেরই প্রিয়৷ নাসরিনের ‘আমার মেয়েবেলা’ পড়েনি এমন নারী পাওয়া মুশকিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
ভ্রমণপ্রিয়
বাংলাদেশি কিংবা ভারতীয় বাঙালি নারীর গুণ কি আর অল্পতে জানানো যায়, বলুন? কিছু গুণ না হয় অজানাই থাক৷ তবে একটির কথা বলে শেষ করি, বাঙালি মেয়েরা কিন্তু ঘুরতে খুব ভালোবাসেন৷ তথ্য সহায়তা: ডয়চে ভেলে ফেসবুক পাতা, ইন্ডিয়াওপাইন্স, স্কুপহুপ
ছবি: DW/A. Islam
10 ছবি1 | 10
বাংলাদেশে নারীদের অগ্রযাত্রা নিয়ে নানাজনের নানা মত রয়েছে৷ অনেকে এখনো মনে করেন রক্ষণশীল সমাজের কারণে বাংলাদেশে নারীরা আগাতে পারছেন না৷ কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি কি সেরকম? পরিসংখ্যান কিন্তু সেটা বলছে না৷ ইউনিসেফের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি মেয়েদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার ৮০ দশমিক চার শতাংশ৷ ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গড়ে ৮১ দশমিক দুই শতাংশ মেয়ে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেছে৷
প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণের এই হার অবশ্য মাধ্যমিক পর্যায়ে গিয়ে অনেক কমে যাচ্ছে৷ তবুও কয়েক দশক আগের তুলনায় এটা বেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি৷ আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণারত বাংলাদেশি নারী খুঁজে পাওয়া এখন আর দুষ্কর নয়৷ জার্মানির বন শহরেই বেশ কয়েকজন রয়েছেন যাঁরা এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন৷
বাংলাদেশের রয়েছে দু'জন এভারেস্টজয়ী নারী৷ নিশাত মজুমদার এবং ওয়াসফিয়া নাজরীন৷ এঁদের মধ্যে ওয়াসফিয়া শুধু এভারেস্ট জয় করেই থেমে নেই৷ তিনি বরং সাতটি মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারীদের ভিন্ন এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ সম্প্রতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফির বর্ষসেরা অভিযাত্রীর খেতাব পেয়েছেন ওয়াসফিয়া৷ আর বাংলাদেশের জাতীয় নারী ক্রিকেট দলতো মাঝেমাঝে পুরুষদের চেয়েও এগিয়ে যাচ্ছেন সাফল্যের বিচারে৷
নারীদের এই সাফল্যের তালিকায় এবার যোগ হলেন তামান্না-ই-লূৎফী৷ সামরিক বাহিনীর প্রথম পাইলট হিসেবে সফলভাবে হেলিকপ্টার উড্ডয়ন সম্পন্ন করেন তিনি৷ সামরিক বাহিনীতে নিঃসন্দেহে নারীদের জন্য এক বিরাট সাফল্য৷
ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রশ্নেও নারীরা এখন অনেক এগিয়ে৷ স্বামীর নির্যাতন কিংবা অপছন্দের বিষয়গুলো মুখ বুজে সহ্য করে সংসার করার মতো মানসিকতা এখন অনেকের নেই বলেই মনে হচ্ছে৷ যে কারণে ঢাকায় বিবাহ বিচ্ছেদের হার বাড়ছে৷ নারীর তরফ থেকে বিচ্ছেদ নেয়ার প্রবণতাও বাড়তির দিকে৷
এতসব সাফল্যের গল্প দিয়ে আমি নারী নির্যাতনের বিষয়টা আড়াল করতে চাচ্ছি না৷ কয়েক বছর আগে দোররার আঘাতে শরিয়তপুরে প্রাণ হারিয়েছে হেনা আক্তার৷ যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন কিংবা হত্যার মতো ঘটনাও গণমাধ্যমে আসে মাঝেমাঝেই৷ এ সব বন্ধে আরো উদ্যোগ প্রয়োজন৷ তবে আমার মনে হয়, বাংলাদেশে মেয়েদের অগ্রযাত্রার খবরও আরো প্রকাশ হওয়া উচিত৷ বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ সব উন্নয়ন বড় করে তুলে ধরা জরুরি৷