1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে নারীদের জন্য কাজের পরিবেশ কেমন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ মার্চ ২০১৯

নারী এগোচ্ছে৷ বিভিন্ন পেশা, ব্যবসা, রাজনীতি সবখানেই অংশগ্রহণ বাড়ছে৷ কিন্তু কর্মক্ষেত্রে নারীকে কোন দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে৷ তার কাজের পরিবেশ এবং নিরাপত্তাই বা কেমন?

Bangladesch Textilarbeiterinnen
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/S.K. Das

ড. নাজনীন আহমেদ৷ দেশের খ্যাতিমান তরুণ অর্থনীতিবিদ৷ কাজ করছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিআইডিএস-এ৷ তিনি নিজেও কর্মক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক হয়রানির শিকার৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘একটি ফরমাল মিটিং-এ বসে আমাকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছ থেকে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শুনতে হয়েছে৷ তিনি বলেছেন মেয়েদের বিবাহের বয়স ১৬ বছর করাটা খুব ভালো হয়েছে৷ তাতে মেয়েদের অল্পবয়সে বিয়ে হবে৷ তারা সন্তানের জন্ম দেবে৷ তাতে আমাদের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট ভালো হবে৷ আমি তার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেছিলাম৷ এছাড়া সাজ পোশাক নিয়ে তো নানা ধরনের মন্তব্য শুনতেই হয়৷''

কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি আচরণ কেমন?

একজন উচ্চশিক্ষিত নারীর প্রতি যখন এই মনোভাব তাহলে বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সার্বিক আচরণ কেমন? গত বছর ‘কর্মজীবী নারী' নামে একটি সংগঠন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কেয়ারের সহায়তায় পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের নিয়ে একটি গবেষণা করে৷ তাতে দেখা যায়, পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকদের ৮৪ দশমিক ৭ ভাগ মৌখিক হয়রানির শিকার হন৷ ৭১ দশমিক ৩ ভাগ শিকার হন মানসিক নির্যাতনের৷ ২০ ভাগ শারীরিক নির্যাতনের কথা বলেছেন৷ আর যৌন নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হন ১২ দশমিক ৭ ভাগ৷ আর এই নির্যাতনের শতকরা ৫২ ভাগ দায়ী করেছেন পোশাক কারখানার সুপারভাইজারদের৷ নির্যাতনের শিকার ৩২ ভাগই জানেন না, কোথায় অভিযোগ করতে হবে৷

এদিকে, পরিসংখ্যান ব্যুরো তাদের জরিপে দেখিয়েছে যে, ২২ শতাংশ নারী বলেছে, তারা কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার৷

‘তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেছিলাম’

This browser does not support the audio element.

নারীর অবস্থান

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশের ৫ কোটি ৪১ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী৷ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৯৭ জন৷ বিদেশে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ৭৬ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৮২ হাজার ৫৫৮ জন নারী৷ আর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ৮০ ভাগ কর্মীই নারী৷ দেশের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবহারকারীও নারী৷

বাংলাদেশে সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩৪টি৷

এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৮৩ হাজার ১৩৩, অর্থাৎ শতকরা ৭.৬ ভাগ৷ উপসচিব পদ থেকে সচিব পদ পর্যন্ত নারীদের সংখ্যা মাত্র ১ শতাংশ বা তারও কম৷ জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিচার বিভাগে বিচারক পদের ১০ শতাংশ হলো নারী৷ তবে হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি পদে এখনো নারীকে দেখা যায়নি৷

বাংলাদেশে নারীরা রাজনীতিতেও অবস্থান করে নিচ্ছেন৷ তারা দায়িত্ব নিচ্ছেন বিমান চালনার মতো চ্যালেঞ্জিং কাজেরও৷

সমস্যা কোথায়?

সম্প্রতি বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের একটি ঘটনা বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন হয়রানি যে কোন মাত্রায় পৌঁছেছে তা প্রমাণ করে৷ ওই প্রতিষ্ঠানের চিফ রিপোর্টার এম এম সেকান্দার তাঁর এক নারী সহকর্মীকে চাপ ও ভয়ের মুখে কয়েক মাস ধরে যৌন হয়রানি করে আসছিলেন৷ অফিসে এর প্রতিকার চেয়েও পাননি ঐ নারী সাংবাদিক৷ এমনকি ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা সেকান্দারের পক্ষেই অবস্থান নেন৷ শেষ পর্যন্ত ওই নারী সাংবাদিক মামলা করেন৷ তাঁর মামলায় সেকান্দার এখন কারাগারে আছেন৷

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে কর্মরত নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে৷ নারীরা এখন সংবাদমাধ্যমে আগের চেয়ে সংখ্যায় বেশি সত্য, কিন্তু এখন আমরা যৌন হয়রানির অনেক অভিযোগও পাচ্ছি৷ কিন্তু অনেকেই প্রকাশ্যে অভিযোগ করতে চান না নানা কারণে৷ এরমধ্যে চাকরি হারানোর ভয় এবং পদোন্নতির বিষয়টি প্রধান৷ তারপরও নারীরা সাহসি হচ্ছেন৷ কেউ কেউ প্রকাশ্যে অভিযোগ করছেন৷''

কিন্তু এই পরিস্থিতি এখন সবখানে৷ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘কর্পোরেট নারী, ব্যবসায়ী নারী, কর্মজীবী নারী , শ্রমজীবী নারী কেউই যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের হয়রানির বাইরে নয়৷ উচ্চ পর্যায়ে এটা অনেক বেশি৷ কিন্তু প্রকাশ হয়না বা প্রকাশ করতে দেয়া হয়না৷''

আরো অনেকের সঙ্গে কথা বলে যা জানা গেলো তা হলো নারীকে কয়েকভাবে নির্যাতন বা বৈষম্যের শিকার হতে হয়৷ এরমধ্যে রয়েছে ১. যৌন হয়রানি ২. শারীরিক নির্যাতন ৩. মানসিক নির্যাতন ৪. মজুরি বৈষম্য ৫. পদ বৈষম্য৷

‘আইনগুলো নারীবন্ধব করতে হবে’

This browser does not support the audio element.

জাতীয় শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, পুরুষের সমান কাজ করলেও নারী শ্রমিক মজুরি পান কম৷ উদাহরণস্বরূপ, গ্রামাঞ্চলে একই কাজ করে পুরুষ শ্রমিকরা গড়ে ১৮৪ টাকা পেলেও নারী শ্রমিকরা পান ১৭০ টাকা৷

এছাড়া নারীকে প্রায়ই ‘দায়ী' করা হয়৷ বলা হয়, তারা নারীত্ব ব্যবহার করে পদ-পদোন্নতি নেন৷ তাদের যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করা হয়না৷ এমনকি তাদের যোগ্যতা থাকার পরও অনেক কাজের যোগ্য মনে করা হয়না৷ নারীকে সবচেয়ে বেশি ভাষাগত লিঙ্গ সন্ত্রাসের শিকার হতে হয়৷

ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘একজন নারী প্রশাসনে আছেন না শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন সেটা বিষয় না৷ বিষয়টি হলো তিনি নারী৷ নারী যে অবস্থানেই থাকুন না কেন সেই অবস্থান থেকেই তিনি যৌন হয়রানি থেকে নানা ধরনের হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন৷ শ্রম আইনে শ্রমজীবী নারীদের জন্য তবু কিছু বলা আছে৷ কিন্তু অন্যপদে যে নারীরা কাজ করেন তাদের হয়রানি প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট কোনো আইনও নেই৷''

নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ‘‘শুধু বৈষম্য নয়, এখন সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো নারী কর্মক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে৷ সেটা মাটিকাটা শ্রমিক যেমন হচ্ছে কর্পোরেট হাউজেও হচ্ছে৷ সংবাদমাধ্যমে হচ্ছে, পুলিশ ও প্রশাসনে হচ্ছে৷ সবখানেই হচ্ছে৷''

করণীয় কী?

কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে৷ ২০০৯ সালে হাইকোর্ট কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি রোধে নির্দেশনা দেয়৷ তাতে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে৷ অভিযোগ দেয়ার ব্যবস্থা এবং তার নিস্পত্তির ব্যবস্থার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়৷ কিন্তু তা অনুসরণ করছেনা প্রতিষ্ঠানগুলো৷ অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ওই কমিটির ব্যাপারেই জানেনা৷

নাসিমুন আরা হক মিনু মনে করেন, ‘‘আমাদের আইনগুলো নারীবন্ধব করতে হবে৷ আর মানসিকতায় পরিবর্তন দরকার৷''

ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘নারীর কাজের স্বীকৃতি এবং সমতার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি৷''

নারীবান্ধব কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার উপায় কী বলে আপনার মনে হয়? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ