এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের নারী উদ্যোক্তাদের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার শেষে৷ গত তিন দশকে নারী উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও এমনটা হয়েছে৷ মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড-এর এক জরিপে উঠে আসে এ তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব উদ্যোক্তা দিবসকে সামনে রেখে একটি দেশে নারী উদ্যোক্তাদের বাস্তব অবস্থা কেমন – তার ভিত্তিতেই এই সূচক বা ইনডেক্স তৈরি করে মাস্টারকার্ড৷ এতে সমাজে নারীর অগ্রগতি, কর্মক্ষেত্র-সরকার-ব্যবসায়িক উদ্যোগের প্রতি নারীর দৃষ্টিভঙ্গী এবং শিক্ষা-অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে নারীর অংশগ্রহণকে বিবেচনায় নেওয়া হয়৷
বিভিন্ন সূচকে পাওয়া পয়েন্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ ১০০-তে মাত্র ২৭ পয়েন্ট পেয়েছে, যেখানে ভারত পেয়েছে ৩৩.৩ এবং শ্রীলঙ্কা ৩২.৭ পয়েন্ট৷ তবে তালিকার শুরুতে রয়েছে নিউজিল্যান্ড৷ এছাড়া অস্ট্রেলিয়া রয়েছে দ্বিতীয় এবং থাইল্যান্ডের তৃতীয় স্থানে৷
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো তাদের নারী উদ্যোক্তাদের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে অপেক্ষাকৃত ভালো কাজের পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে৷ চেষ্টা করছে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তাঁদের জ্ঞান এবং যোগ্যতাকে মূলধারার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার পরিবেশ তৈরির৷
নাসরিন আওয়াল
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নারী উদ্যোক্তাদের এই ধারাক্রমে তারাই ভালো করেছে, যারা নারীদের উদ্যোগ নেওয়ার ‘সুযোগ' করে দিয়েছে৷ নারী উদ্যোক্তারা যেখানে অপরিহার্য, শুধু সেইসব খাতকে যারা প্রণোদনা দিয়েছে, তারা এই ধারাক্রমে পিছিয়ে পড়েছে৷
মালয়েশিয়া, ভারত ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এ সব দেশে নারী উদ্যোক্তা থাকলেও তাঁদের কাজের পরিবেশ অনুকূল নয়৷ ‘অপরিহার্যতার' বিবেচনাতেই তাঁরা উদ্যোক্তা৷ অর্থাৎ যেসব উদ্যোগ নারীদের অংশগ্রহণ ছাড়া সফল হয় না, একমাত্র সেসব খাতেই তাঁরা উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন৷ এ কারণে এই দেশগুলো ধারাক্রমে পিছিয়ে পড়েছে৷ উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পয়েন্ট ১০০-তে মাত্র ১১.৮৷ আর নারীর অগ্রগতি ও উদ্যোগ নেওয়ার প্রবণতায় বাংলাদেশের অর্জন ১০০-তে ১৫.৩ পয়েন্ট৷
বাংলাদেশ উইমেন চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাসরিন আউয়াল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসলেই নারী উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বৈষম্যের শিকার৷ তাঁদের ছাড়া যে শিল্প উদ্যোগ সম্ভব নয়, একমাত্র সেখানেই তাঁদের প্রণোদনা দেয়া হয়৷ অথচ সাধারণ উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁরা সহযোগিতা বা প্রণোদনা পান না৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এসএমই খাতে নারীরা নিজ উদ্যোগে অনেক এগিয়েছেন৷ তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করছেন, কিন্তু ব্যাংক তাঁদের ঋণ দিচ্ছে না৷ তাই তাঁরা যে তাঁদের পণ্য বাজারে দেখাবেন, তার জন্য শো রুমের ব্যবস্থা করতে পারছেন না তাঁরা৷ আবার দেশের বাইরে পণ্যের রাজার সৃষ্টি করতে বিদেশে গিয়ে ক্রেতা খোঁজার সামর্থও তাঁদের নেই৷ আসলে এ জন্য প্রয়োজন সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহয়তা৷ সেটা পেলে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান এত নীচে থাকত না৷''
বাঙালি নারীর দশ গুণ
গরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ নারীর গুণ সম্পর্কে জানিয়েছেন ডয়চে ভেলের পাঠকরা৷ তাঁদের মতামত এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি বাঙালি নারীর দশগুণ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
আবেগী, স্বাধীনচেতা
গরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ আবেগ যেমন তাঁদের দ্রুত স্পর্শ করে, তেমনি স্বাধীনতার প্রশ্নে কিন্তু তাঁরা সত্যিকার অর্থে অনড়৷ নিজের সত্ত্বা নিয়ে অহংকার তাঁদের আছে বটে, তবে তার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মধ্যে রয়েছে অসীম ধৈর্য্য৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
শাড়িতে সবচেয়ে সুন্দর
বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে শাড়ি৷ সেই শাড়ি বাঙালি নারীর সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তোলে চমৎকারভাবে৷ বিভিন্নভাবে শাড়ি পরতে জানেনও তাঁরা৷ আর ‘উপহার হিসেবে শাড়ি’? – কোন বাঙালি মেয়ে না চায় বলুন?
ছবি: DW/A. Islam
উৎসব প্রেমী
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন৷ নববর্ষ, ঈদ কিংবা দুর্গা পূজা – সব উৎসবই যেন বাঙালি নারীর জন্য তৈরি৷ প্রতিটি উৎসবের সঙ্গে মানানসই পোশাক পরতে এবং সেই উৎসবের উপযুক্ত রান্নায় পারদর্শী তাঁরা৷ ডয়চে ভেলের পাঠক সুজন খানের কথায়, ‘‘বঙ্গের নারী লাজুক প্রকৃতির, কিন্তু যে কোনো উপলক্ষ্যেই প্রাণ খোলা হাসি উপচে পড়ে তাঁদের৷’’
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
‘নো ডায়েট’
বাঙালি নারী ‘ডায়েট’ করছেন, এমনটা বেশ বিরল৷ তাই খাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা বেশ উদার৷ কথায় বলে না, মাছে-ভাতে বাঙালি? অবশ্য মাছ-ভাতের পাশাপাশি ফুসকা কিংবা চটপটি পেলে তো আর কথাই নেই৷ আসলে টক, ঝাল, নোনতা, মিষ্টি, এমনকি তেতোও পছন্দ এই নারীদের৷
ছবি: Debarati Mukherji
রান্নার শখ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাই ধরুন৷ দেশ সামলানোর কঠিন দায়িত্ব পালনের মাঝেও রান্না ঘরে যেতে ভোলেন না তিনি৷ গত বছর ছেলের জন্য রান্না করার সময় তোলা তাঁর এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছিল৷ বাঙালি মেয়েরা রাঁধতে যে ভীষণ ভালোবাসেন!
ছবি: Sajeeb Wazed
অল্পতেই সন্তুষ্ট
বাঙালি মেয়েদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা কি খুব কঠিন? না৷ সকলেই জানেন যে, কাজটা সহজই৷ একটি লাল গোলাপ পেলে কিংবা প্রিয় রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলেই তাঁরা সন্তুষ্ট৷ ডয়চে ভেলের পাঠক রন্জু খালেদের মতে, বাঙালি নারীর মধ্যে ‘একইসাথে দৃঢ়তা ও নমনীয়তা এবং প্রজাপতির চপলতা’ রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
কাজল কালো চোখ
জীবনানন্দ দাসের ‘বনলতা সেন’ কিংবা রবি ঠাকুরের ‘কৃষ্ণকলি’ – বাঙালি নারীর কাজল কালো চোখের প্রশংসা পাবেন অনেক কবির কবিতাতেই৷ সত্যি বলতে কি, বাঙালি নারীর চোখ পুরুষকে টানে সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: N.Seelam/AFP/GettyImages
বাকপটু
বাংলাদেশের কিংবা ভারতের মেয়েরা চুপ করে বসে আছেন – এমন দৃশ্য কল্পনা করাও কঠিন৷ তাঁরা কথা বলতে ভালোবাসেন৷ রান্না থেকে রাজনীতি – সব বিষয়েই একটা মতামত আছে তাঁদের৷ ডয়চে ভেলের পাঠক জিএনএস নয়নের কথায়, ‘‘নারী পুরুষের যে কোনো কষ্ট অতি সহজে ভুলিয়ে দিতে পারে৷ এই গুণই আমাকে মুগ্ধ করে, আবার সাথে অবাকও করে৷’’
ছবি: DW/A. Islam
নারীবাদী
বাঙালি মেয়েরা নারীবাদী৷ বিতর্কিত বাঙালি লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁদের অনেকেরই প্রিয়৷ নাসরিনের ‘আমার মেয়েবেলা’ পড়েনি এমন নারী পাওয়া মুশকিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
ভ্রমণপ্রিয়
বাংলাদেশি কিংবা ভারতীয় বাঙালি নারীর গুণ কি আর অল্পতে জানানো যায়, বলুন? কিছু গুণ না হয় অজানাই থাক৷ তবে একটির কথা বলে শেষ করি, বাঙালি মেয়েরা কিন্তু ঘুরতে খুব ভালোবাসেন৷ তথ্য সহায়তা: ডয়চে ভেলে ফেসবুক পাতা, ইন্ডিয়াওপাইন্স, স্কুপহুপ
ছবি: DW/A. Islam
10 ছবি1 | 10
নাসরিন আউয়াল আরো বলেন, ‘‘যতই বলা হোক না কেন, আমাদের কিন্তু প্রথমে ‘মাইন্ড সেট' পরিবর্তন করতে হবে৷ ব্যাংকগুলো এখনো নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে চায় না৷ আর প্রচলিত কোনো ভারী শিল্প স্থাপন করতে চাইলে তো কথাই নেই৷ সেক্ষেত্রে ঋণ পাওয়া নারীদের জন্য প্রায় অসম্ভব৷''
তাঁর কথায়, ‘‘এর বাইরে আইন-শৃঙ্খরা পরিস্থিতির অবনতিও নারী উদ্যোক্তাদের বাধাগ্রস্ত করছে প্রতিনিয়তই৷''