সরকার আরো ৩২৬ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে৷ কিন্তু এই পদোন্নতির বিপরীতে পদ খালি নেই৷ আগে সরকার একই পদমর্যাদার এর প্রায় দ্বিগুণ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
৩২৬ জন উপ সচিবকে যুগ্ম সচিব করা হল বৃহস্পতিবার৷ এর আগে গত ৮ই ফেব্রুয়ারি ৬৪৯ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়৷ তাদের মধ্যে ১২৭ জনকে যুগ্ম সচিব পদ থেকে অতিরিক্ত সচিব, ২৬৪ জনকে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব এবং ২৫৮ জনকে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপ সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়৷
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, এবার যাঁরা পদোন্নতি পেলেন তাঁদের সরকার পদোন্নতি দিতে বাধ্য হয়েছে৷ কারণ এর আগেরবার তাঁদের ডিঙিয়ে তাদের চেয়ে জুনিয়রদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আগের বারই পদোন্নতির ফলে পদের চেয়ে যুগ্ম সচিব দ্বিগুণ হয়ে যান৷ আরেক দফা পদোন্নতি দেয়ায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়লো৷ তাঁর মতে, এতে প্রশাসনে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হবে৷
গোলাম আযমের শাস্তি, প্রাণহানি
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ তবে এই রায়ে সন্তুষ্ট নয় সাধারণ জনতা৷ এই নিয়ে সংঘর্ষে কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছে৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
আমৃত্যু কারাদণ্ড
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে – একথা উল্লেখ করে সোমবার (১৫.০৭.১৩) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলেছে, ‘‘তার অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের৷ তবে আযমের বয়স এবং অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে তাকে আমৃত্যু কারাগারে রাখার জন্য ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ আন্তর্জাতিক মহল মনে করে, সেই যুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ লাখ প্রাণহানি হয়৷ তবে বাংলাদেশের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ এবং সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই লাখের মতো বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণ করেছিল৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসী সংগঠন ‘‘জামায়াতে ইসলামী’’
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সোমবার দেওয়া রায়ে তার দল জামায়াতে ইসলামীকে ‘‘সন্ত্রাসী সংগঠন’’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আদালত৷ রায়ে বলা হয়েছে, ‘‘গোলাম আযম একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই সংগঠনের প্রধান ছিলেন৷ তার নির্দেশে এবং পরিকল্পনাতেই একাত্তরে বাংলাদেশে হত্যা, ধর্ষণ এবং লুটতরাজসহ মানবতাবিরোধী অপরাধগুলি সংঘটিত হয়৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
‘‘তার মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য ছিল’’
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আদালত বলেছে তার অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের৷ তাই তার মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য ছিল৷’’ অন্যদিকে বীরাঙ্গনা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনী রায় শুনে পুরোপুরি হতাশ৷ তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোনো শাস্তি নেই গোলাম আযমের জন্য৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
নিহত কমপক্ষে তিন
সোমবার (১৫.০৭.১৩) গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন স্থানীয় সময় বিকেল ছয়টা পর্যন্ত কমপক্ষে তিন ব্যক্তি নিহত হয়েছে৷ বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের বরাতে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ‘‘কুষ্টিয়ায় রাস্তা ব্লক করার চেষ্টার সময় গণপিটুনিতে প্রাণ হারায় দুই জামায়াতে ইসলামী কর্মী৷ এছাড়া চাপাইনবাবগঞ্জে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারায় আরেক ব্যক্তি৷’’ (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
সন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ
গোলাম আযমের ৯০ বছর কারাদণ্ড হওয়ায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকার এই রায়ে সন্তুষ্ট৷ আদালত স্বাধীনভাবে রায় দিয়েছে৷’’
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
আপিলের ঘোষণা
তবে গোলাম আযমের আইনজীবীদের একজন তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, এই রায় ন্যায়ভ্রষ্ট এবং আবেগতাড়িত৷ তাই এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন৷ আদালতের রায়ে একাত্তরে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলারও সমালোচনা করেছেন তাজুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘আদালত তার আওতার বাইরে গিয়ে এই মন্তব্য করেছে৷’’
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
সজাগ গণজাগরণ মঞ্চ
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ গোলাম আযমের বিপক্ষে দেওয়া আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান করেছে৷ তাদের দাবি, গোলাম আযমকে ফাঁসি দিতে হবে৷ এই দাবি নিয়ে সোমবার আবারো শাহবাগে সমাবেত হয়েছেন অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড়
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে৷ প্রতিবাদ গোলাম আযমের শাস্তি হওয়ায় নয়, বরং তার ফাঁসির আদেশ না হওয়ায়৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আহসান টিটু লিখেছেন, ‘‘এক কথায় খুশি না! ফাঁসি চাই৷’’
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
আলী ইমাম মজুমদার আরও বলেন, প্রশাসনে ভারসাম্যহীনতা চলছে আগে থেকেই৷ এই অবস্থায় তা আরো চরম আকার ধারণ করল৷ এর ফলে প্রশাসন গতি হারিয়ে স্থবির হয়ে পড়তে পারে৷ বাড়তে পারে অভ্যন্তরীণ চাপ৷ বাড়বে পদায়ন নিয়ে গ্রপিং-লবিং৷
তিনি জানান, এই পর্যায়ের ৩০০ কর্মকর্তা আগে থেকেই ওএসডি হয়ে আছেন৷ তাঁদের কাজে লাগানো হচ্ছেনা৷ পদোন্নতি পাওয়া নতুন কর্মকর্তারা এখন তাঁদের পদমর্যাদার চেয়ে নিচু পদে কাজ করতে বাধ্য হবেন৷ তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দেয়াও সম্ভব হবেনা৷ আবার অনেককে বিনা কাজে বসিয়ে রাখা হবে৷ যা প্রশাসনে এক ধরনের বিশৃঙ্খল এবং অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে৷ তিনি মনে করেন, আগে রাজনৈতিক বিবেচেনায় পদোন্নতি দেয়ায় এখন সবাইকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷
প্রশাসনে এখন শীর্ষ পদে বদলিও করা হচ্ছে৷ জানা গেছে, এবার একযোগে বদলি না করে ধারাবহিকভাবে ১০-১২ জন করে বদলি করা হচ্ছে৷ গত ৪-৫ মাস ধরে এই প্রক্রিয়া চলছে৷ আলী ইমাম মজুমদার বলেন, নির্বাচনের আগে এখন নিয়মিত বদলির বাইরে অন্য কোনো বদলি ঠিক নয়৷ বিশেষ করে ডিসি, এডিসি, এসপি এবং ইউএনও পদে বদলি অবশ্যই রাজনৈতিক সমালোচনার মুখে পড়বে৷