1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে পাওয়ার ও এনার্জি সেক্টরে বিনিয়োগ বেশি জার্মানির

সমীর কুমার দে ঢাকা
৭ মে ২০১৯

বাংলাদেশে উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার জার্মানি৷ বিদ্যুৎ ও এনার্জি সেক্টরে বড় ধরনের বিনিয়োগ আছে তাদের৷ বাংলাদেশে জার্মান বিনিয়োগ ও তার সংকট নিয়ে কথা বলেছেন জার্মান-বাংলা চেম্বারের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম৷

ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে জার্মানির পক্ষ থেকে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে, নাকি কমছে?

সাইফুল ইসলাম: বাংলাদেশ ইদানীং বেশ কিছু ট্রেড মিশন এসেছে৷ গতবছর ৫৬০টির মতো এসেছিল৷ আর এ বছরের প্রথম তিন মাসেই ১২০টি ছাড়িয়ে গেছে৷ এতে করে বোঝা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির ‘বাইল্যাটারাল রিলেশনশিপ', বিশেষ করে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আগ্রহ বেড়েছে৷

তো, বাংলাদেশে জার্মানির সেই বিনিয়োগটা আসলে কেমন?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের ‘ম্যানুফ্যাকচারিং' সেক্টরের উপরে জার্মানির আগ্রহ বেড়েছে৷ আগে তারা শুধু ‘ট্রেড' করত৷ তবে এখন জার্মানরা ‘ইনভেস্টমেন্ট'-এর দিকে যেতে চাইছে৷ তাদের আগ্রহ বাড়ছে বড় বড় প্রজেক্ট, যেমন পাওয়ার, এনার্জি এ সমস্ত সেক্টরগুলোতে৷

‘‘কখনো শুনিনি যে জার্মানির কোনো বিনিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে’’

This browser does not support the audio element.

কোন খাতে বিনিয়োগে তারা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী?

তাদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ হলো আমাদের ‘পাওয়ার সেক্টর' এবং ‘রিনিউয়েবল এনার্জি' নিয়ে৷ আপনি জানেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে জার্মানির অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী৷ ‘ম্যানুফ্যাকচারিং'-এর ব্যাপারটা আসলে চীনে চলে যাচ্ছিল৷ কিন্তু চীন আস্তে আস্তে এখন ‘বেসিক ম্যানুফ্যাকচারিং' থেকে সরে গিয়ে ‘হাইটেক'-এর দিকে যাচ্ছে৷ একই সময়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও কিন্তু ‘হাইটেক'-এর দিকে যাচ্ছে৷ যার কারণে, ‘বেসিক ম্যানুফ্যাকচারিং'-এ একটা ‘গ্যাপ' দেখা যাচ্ছে৷ সেখানে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব' হতে চলেছে৷ এর জন্য জার্মান ইনভেস্টররা রিসার্চ স্টেজে থাকলেও, সেখান থেকে আমরা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ‘ইনকোয়ারি' পাচ্ছি যে, তারা এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী৷

প্রযুক্তি খাতে তাদের আগ্রহ কেমন?

প্রযুক্তি, বিশেষ করে সফটওয়ারে, জার্মান কোম্পানিগুলো এতদিন ‘আউটসোর্স' করত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে৷ এখন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে প্রযুক্তি খাতেও, বিশেষ করে আইটি সেক্টরে, তাদের আগ্রহ বাড়ছে৷

বাংলাদেশের কোন প্রকল্পে তাদের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ আছে?

আমার মনে হয় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি জার্মান বিনিয়োগ আছে পাওয়ার সেক্টরে৷

‘বাংলাদেশে জার্মান বিনিয়োগ দ্রুত বাড়ছে’

02:49

This browser does not support the video element.

জার্মান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তো আপনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, এখানে কী ধরনের সমস্যায় পড়েন তারা?

প্রথমত, বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই তাঁদের সঠিক কোনো ধারণা ছিল না৷ তেমনি বাংলাদেশের যে একটা ‘ব্র্যান্ড ইমেজ', এই ‘ইমেজ' নিয়েও নানা সমস্যা ছিল৷ তাঁদের একটা খারাপ ধারণা ছিল৷ আবার সঠিক ধারণাও ছিল না৷ কিন্তু যাঁরা বাংলাদেশে এসেছেন এবং যাঁরা বাংলাদেশের সঙ্গে ‘ট্রেড' করেছেন, তাঁদের কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা পাল্টে গেছে৷ এক্ষেত্রে সরকারও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে৷ যেমন ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস'-এর মাধ্যমে সরকার যেটা করতে যাচ্ছে৷ তারপরও ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস' নিয়ে তাঁদের একটা সংশয় রয়ে গেছে৷ কিন্তু যাঁরা প্র্যাকটিক্যালি বিজনেসে আছেন, তাঁদের কিন্তু এটা নিয়ে খুব একটা সমস্যা নেই৷ যাঁরা নতুন আসবেন শুধুমাত্র তাঁদের কিছু সমস্যা আছে৷ সেই জিনিসগুলো আমার মনে হচ্ছে সরকার ভীষণভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে৷ আমাদের ‘কস্ট অফ ফান্ড' অনেক বেশি হলেও, দেশে মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংক এবং অন্যান্য ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউট যা আছে এবং ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক যেগুলো রয়ে গেছে, সেখানে জার্মানরা স্বল্প সুদে ব্যবসা করার চেষ্টা করছেন৷

জার্মান ব্যবসায়ী যাঁরা বাংলাদেশে আসেন, তাঁদের যে সমস্যাগুলো হয় সেগুলো কি আপনাদের সঙ্গে তাঁরা শেয়ার করেন?

হ্যাঁ, তাঁরা সমস্যার কথাগুলো শেয়ার করেন৷ বিশেষ করে একটা কোম্পানি শুরু করতে কত সময় লাগে? পার্টিকুলার একটা বিজনেস করতে কীভাবে লাইসেন্স পাওয়া যায়৷ যেমন তাঁরা বলেন যে, আমাদের যদি ‘এনভায়রনমেন্ট লাইসেন্স' লাগে, তবে সেই লাইসেন্স দিতে কতদিন সময় লাগতে পারে? ফায়ার লাইসেন্স-এর জন্য কতদিন সময় লাগবে? এখন সুবিধা হলো যে আমাদের বেশ কিছু ‘কনসাল্টিং ফার্ম' আছে, যাদের কাছ থেকে এই সার্ভিসটা পাওয়া যায়৷ তাঁদের যে প্রবলেমগুলো আছে সেগুলো তাঁরা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন

প্রতিবছর কী পরিমাণ জার্মান ব্যবসায়ী বাংলাদেশে আসেন?

গত বছরের তুলনায় এ বছর এ ট্রেন্ডটা ভীষণ পজেটিভ৷ সবচেয়ে বেশি পজেটিভ হলো, ‘কন্টিনুয়েশন অফ গভর্নমেন্ট'৷ আগে ঘন ঘন হরতাল হতো৷ ‘পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি' ছিল না৷ সেটা এখন এসেছে৷ যেটা জার্মানরা ভীষণভাবে ‘একসেপ্ট' করছে৷ ব্যবসার জন্য এটা তাঁরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে৷ এটা ভালো ‘সাইন'৷ আর আমরা যদি মনে করি কালকে থেকেই বিনিয়োগ চালু হয়ে যাবে, সেটা কিন্তু সম্ভব না৷ কারণ একটা বিনিয়োগ আসতে অনেক দিন সময় লাগে৷ ঢাকা থেকে চিটাগং পোর্টে যাওয়া, তার জন্য কেমন সময় লাগে – এগুলো তাঁরা জানতে চান৷ এখানে ‘কানেক্টিভিটি'-র ব্যাপারটা রয়ে গেছে৷ আর বিদ্যুতের যে সমস্যা ছিল, সেটাও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে৷

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন বিষয়টিকে তাঁরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন?

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ‘ম্যানুফ্যাকচারিং' খাতে৷ তাঁরা দেখছেন ‘সিকিউরিটি অফ দেয়ার ইনভেস্টমেন্ট', আমাদের ‘রুল অফ ল' আর তার সঙ্গে আমাদের ‘স্টেবিলিটি'৷ বিশেষ করে যেখানে জার্মানরা ‘ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট' করছেন, সেখানে তাঁরা এই গুরুত্বটা দিচ্ছেন৷ আর যেখানে ‘জয়েন্ট ভেঞ্চার' করছেন, অর্থাৎ ‘পার্টনারশিপ'-এর যে ‘রিলায়েবিলিট', সেটার উপরও ভীষণভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা৷ 

দুই দেশের বাণিজ্য ব্যবধান কেমন?

৬.৫ বিলিয়ন ডলারের মতো৷ আমাদের তো ‘বাইল্যাটারাল ট্রেড' আছে৷ সেখানে জার্মানির সাথে ফেভারে প্রায় সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমাদের আছে৷ সেখানে জার্মানির অংশ হলো প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার৷ এক্ষেত্রে আমাদের ‘ডিফারেন্স' প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের মতো রয়ে গেছে৷

বাংলাদেশে জার্মান বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কি কখনো দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে?

দুর্নীতি নিয়ে আমি তো বলবো, জার্মানরা যত বেশি না বলে তার চেয়ে বেশি আমরা বলি৷ দুর্নীতি যেখানে মনে করুন ১০ পার্সেন্ট বা ২০ পার্সেন্ট হতে পারে, সেখানে আমরা বলি ১০০ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে৷ আমি মনে করি না যে, তাদের বিনিয়োগে কখনো দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো শুনিনি যে জার্মানির কোনো বিনিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ যদিও তাঁরা এগুলো নিয়ে প্রশ্ন করেন, তারপরও তাঁদের সবচেয়ে বেশি ‘কনসার্ন' থাকে যে দেশে আইনের শাসন আছে কিনা, তাঁদের ইনভেস্টমেন্ট সুরক্ষিত থাকবে কিনা – এগুলোর উপর তারা বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন৷

বাংলাদেশ জার্মানির কোনো বিনিয়োগ ফিরে যাওয়ার ঘটনা আছে কি?

আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনো শুনিনি যে, জার্মানির কোনো ‘ইনভেস্টমেন্ট' এখানে এসেছে কিন্তু এখান থেকে চলে গেছে৷ আমার জানা নেই৷ আরেকটা জিনিস – এ বছরের প্রথম তিন মাসে বেশ কিছু জার্মান ব্যবসায়ী বাংলাদেশে এসেছেন৷ আমাদের দূতাবাসের কাছে যে ফিগারটা আছে, সেটা কিন্তু একটা হিসাব৷ কিন্তু অনেকেই ‘থার্ড কান্ট্রি' থেকে ভিসা নিয়ে আসেন৷ এম্ব্যাসি যেটা জানে না৷ যাঁরা সরাসরি ভিসা নিয়ে আসেন, তাঁদের সংখ্যাটা দূতাবাসের কাছে থাকে৷ কিন্তু জার্মানরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার কারণে তাঁদের ‘অন অ্যারাইভেল' ভিসাও দেয়া হয়৷ ফলে দূতাবাসে যে ফিগারটা আছে, তা চেয়ে কিন্তু অনেক বেশি ব্যবসায়ী বাংলাদেশে আসছেন৷ পাশাপাশি দু'টো দেশেরই বাংলাদেশের উপর ‘ইন্টারেস্ট' রয়েছে৷ এর একটা জার্মানি এবং আরেকটা জাপান৷ জাপান তাদের বিনিয়োগগুলো চীন থেকে বাংলাদেশের দিকে নিয়ে আসছে৷ জার্মানিও তাদের অনেক ‘ইনভেস্টমেন্ট' বাংলাদেশে নিয়ে আসছে৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ