1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাটিবিহীন চাষাবাদ

৭ অক্টোবর ২০১২

বাংলাদেশে দিনদিন চাষাবাদের উপযোগী জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে৷ নানান কারণেই সেটা হচ্ছে৷ নিয়মিত বন্যার কারণে অনেক জমি এখন সারা বছরই পানির নীচে থাকছে৷ আর জীবিকার তাগিদে সেসব জমিতেই চাষাবাদ করছেন অনেকে৷

ছবি: dapd

গোপালগঞ্জের একটি গ্রাম বৈকান্তপুর৷ একসময় সেখানকার উন্নতমানের ধানের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে যেতেন সেখানে৷

কিন্তু এখন দিন বদলেছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক বছর ধরে বন্যার কারণে ঐ গ্রামটি এখন প্রায় সারা বছরই পানির নীচে থাকছে৷ ফলে সম্ভব হচ্ছে না ধান চাষ৷ তাই বিপদে পড়েছিলেন সেখানকার মানুষ৷

তবে সেই বিপদ এখন কেটে গেছে৷ কারণ চাষীরা পানির উপরেই চাষাবাদ শুরু করেছেন৷ তবে সেটা ধান নয়, সবজি আর মসলা৷ তবে তাতে কোনো সমস্যা অনুভব করছেন না সেখানকার কৃষকরা৷ কেননা ধান উৎপাদন করে যে রোজগার হতো তাদের সবজি আর মসলা চাষের কারণে তার চেয়ে বরং একটু বেশিই আয় করছেন তারা৷

অনেক এলাকা এখন স্থায়ীভাবে পানিতে তলিয়ে গেছেছবি: DIPTENDU DUTTA/AFP/Getty Images

এমন কথাই জানালেন প্রায় ৯০০ হিন্দু পরিবারের গ্রাম বৈকান্তপুরের দুই কৃষক ভাই বিজয় কুমার সেন আর ধীরেন চন্দ্র সেন৷ ঐ গ্রামের আরেক কৃষক কার্তিক মন্ডল সেন, যার বয়স এখন ৭৮, তিনি জানালেন আগে বৈকান্তপুরের যতদূর পর্যন্ত চোখ যেত শুধু ধানের খেত দেখা যেত৷ কিন্তু গত ৫০ বছর ধরে নিয়মিত বন্যার কারণে এখন শুধু পানি দেখা যায়৷

এই অবস্থায় গ্রামবাসীকে একটি নতুন ধরনের চাষাবাদ পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন বেসরকারি সংস্থা ‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ' বিসিএএস'এর কর্মীরা৷ সেটা হচ্ছে ‘মাটিবিহীন চাষাবাদ'৷ বিষয়টা এরকম - পানির উপর কচুরিপানা দিয়ে ‘বায়রা' বা ভাসমান বেড তৈরি করে সেখানে ফসল উৎপাদন৷ যেটাকে ‘হাইড্রোপনিক ফার্মিং' বলা হয়৷ অনেক অঞ্চলে স্থানীয় ভাষায় বায়রাকে ‘ধাপ'ও বলা হয়৷ পানিতে ভাসমান এই বায়রাতে কচুরিপানা ছাড়াও ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন জাতের জলজ লতা-গুল্ম৷

এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের সুবিধা হলো এতে কোনো সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন পড়ে না৷ ফলে কম খরচে ফসল উৎপাদন করা যায়৷ স্বরবতী সেন নামের এক কৃষক বলছেন, এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসল তারা গ্রামের হাটে বিক্রি করেন৷ উৎপাদন খরচ কম পড়ায় জমিতে চাষ করা ফসলের চেয়ে তারা নিজেদের উৎপাদিত ফসল কম দামে বিক্রি করতে পারেন৷

নতুন পদ্ধতিতে চাষ করে সুখ ফিরেছে বৈকান্তপুরেছবি: dapd

তবে শুরুতে যখন বিসিএএস সংস্থার কর্মীরা বৈকান্তপুরের কৃষকদের নতুন পদ্ধতির কথা জানিয়েছিলেন তখন তারা রাজি হচ্ছিলেন না৷ সংস্থার এক কর্মী প্রণব সাহা বার্তা সংস্থা আইপিএস'কে জানান, ‘‘শুরুতে কৃষকদের নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে বোঝাতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে৷ তবে এখন তারা সবাই খুশি৷''

সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান বলেন, ‘‘গত কয়েক শতক ধরেই আসলে এই পদ্ধতির অস্তিত্ব রয়েছে৷ আমরা যেটা করছি সেটা হচ্ছে কৃষকদের এ সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করা৷ এবং তাদেরকে এই পদ্ধতিতে উৎসাহিত করা৷''

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ প্ল্যান্ট ট্যাক্সোনোমিস্ট এর মহাসচিব হাসিব মো: ইরফানুল্লাহ বলছেন, ভাসমান চাষাবাদ পদ্ধতি বৈকান্তপুরের মানুষের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে৷ এর ফলে তারা এখন ভালভাবে জীবনধারণ করতে পারছেন৷

ভাসমান পদ্ধতিতে বৈকান্তপুরের কৃষকরা সিম, মুলা, গাজর, কুমড়া, পালং শাক ছাড়াও আদা, রসুন, হলুদ ইত্যাদি উৎপাদন করছে৷

জেডএইচ / এএইচ (আইপিএস)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ