রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশে ২০০টিরও বেশি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে৷ সেই সঙ্গে বেকার হয়েছে ৮৪ হাজার পোশাক শ্রমিক৷ আরো অন্তত ২০০ কারখানা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে ২০ শতাংশ হচ্ছে শিফট হওয়া, ৪০ শতাংশ ‘শেয়ার্ড বিল্ডিং' কারখানা৷ বাকী কারখানাগুলো সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করা কারখানা৷ এর মধ্যে ভালো মানের কারখানা ৫ শতাংশেরও কম৷
সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বর মিরপুরে ‘ইমাকুলেট প্রাইভেট লিমিডেট' নামের গার্মেন্টসটি বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ৷ এর কয়েকদিন আগে একই মালিকের আরো একটি কারখানাও বন্ধ হয়ে যায়৷
বিজিএমইএ জানায়, গত ঈদের আগে বন্ধ হয়েছে ২০টি পোশাক কারখানা৷ যা বিজিএমইএ জানেনা বা বিজিএমইএকে জানানো হয়নি৷ তাই বাস্তবে বন্ধ হওয়া পোশাক কারখানার সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে৷ তবে ঢাকায় বন্ধ করে গাজীপুর-আশুলিয়ায় একই নামে আবার কারখানা চালু করছেন অধিকাংশ মালিক৷
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তি
২৪শে এপ্রিল, ২০১৩৷ সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছের সুউচ্চ ভবন ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ল বিকট শব্দে৷ ধসের আশঙ্কাকে আমলে না নেয়ার পরিণাম ১,১৩৫ জন পোশাক শ্রমিক, করুণ মৃত্যু৷ আহত এক হাজারেরও বেশি মানুষের এখনো দিন কাটে আতঙ্কে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাঁচা আর বাঁচানোর লড়াই
ভবন মালিক সোহেল রানার অর্থলিপ্সার নির্মম শিকার পোশাক শ্রমিকদের বাঁচানোর জন্য সরকারি উদ্যোগের অপেক্ষায় বসে থাকেননি সাধারণ মানুষ৷ দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসে একরকম খালি হাতেই অনেকে নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে৷ নিজেদের প্রাণ বাজি রেখে বহু পোশাক শ্রমিককে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
অসহায়ত্ব
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকলেও, ঘটনাস্থলে উদ্ধারকর্মীর কমতি ছিল না৷ তবুও অনেকেই চলে গেছেন স্বজনদের কাঁদিয়ে৷ এ ছবির মতো অবস্থাতেও উদ্ধার করতে হয়েছে অনেক মৃতদেহ৷ ৮০০-রও বেশি মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা গেলেও, অনেকের পরিচয় আজও জানা যায়নি৷ কিছু লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে৷ কিন্তু ৮৭ জনের জন্য নতুন করে নমুনা চাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রেশমার ফেরা
রানা প্লাজা ধসের ১৭তম দিনে ঘটে বিস্ময়কর এক ঘটনা৷ ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে আর কাউকে জীবন্ত উদ্ধার করা সম্ভব নয় ভেবে সাধারণ উদ্ধারকারীদের অনেকে যখন ঘরে ফিরছেন, তখনই প্রায় সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২২ বছর বয়সি পোশাক শ্রমিক রেশমাকে৷
ছবি: Reuters
এখনো কাঁদে প্রাণ
ধসের পর ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন অনেকে৷ বিজিএমইএ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিয়েছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা৷ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১২৭ কোটি টাকা জমা হয়েছে ঠিকই, তবে বিতরণ করা হয়েছে ২২ কোটি টাকা৷ ভবন ধসের বর্ষপূর্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মুখে শোনা গেছে হতাশা আর ক্ষোভের কথা৷ পপি বেগমকে কেড়ে নিয়েছে রানা প্লাজা৷ ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে তাঁর কবর জিয়ারত করতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন বোন রোজিনা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মায়ের কান্না
জুরাইন কবরস্থানে রশিদা খাতুনের কবরের পাশে সফুরা খাতুন৷ ভবন ধসের প্রায় দশ মাস পর, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি পেয়েছিলেন সন্তানের লাশ খুঁজে পাওয়ার সান্ত্বনা৷
জুরাইন কবরস্থানে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করতে মূলত তাঁদের পরিবারের সদস্যরাই এসেছিলেন৷ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তিতে আয়োজন ছিল অনেক, তবে জুরাইন কবরস্থানে ভিড় ছিল না তেমন৷ সেখানে এভাবেই হারানো স্বজনের ছবি হাতে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছিলেন এক নারী৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রদর্শনী
রানা প্লাজা ধসের ছবি নিয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী৷ বাংলাদেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ৬০ জন আলোকচিত্র সাংবাদিকের তোলা ছবি স্থান পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ফুলের জলসা
রানা প্লাজা ধসে নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছে বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠন৷
ছবি: DW/M. Mamun
মোনাজাত
জুরাইন কবরস্থানে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
কারখানা বন্ধের পাশাপাশি নতুন কারখানা করার হারও কমছে৷ ২০১৪ সালে ৮০টি, ২০১৩ সালে হয়েছে ১৪০টি আর ২০১২ সালে ২০০টি কারখানা নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে৷ বর্তমানে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত সাড়ে তিন হাজার কারখানা চালু রয়েছে৷ যদিও বিজিএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা পাঁচ হাজার ৭৫১টি৷
কারখানা বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘‘কারখানা বন্ধ হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে৷ এক নম্বর কারণ হচ্ছে রানা প্লাজা ধসের প্রভাবে ক্রয় আদেশ কমে যাওয়া৷''
এছাড়া ‘অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সের' কারখানা পরিদর্শন, শেয়ার্ড বিল্ডিং কারখানা থাকার কারণে ক্রেতারা অর্ডার না দেওয়া, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির কারণে মালিকরা কারখানা চালাতে না পারা এসব কারণেও কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি৷
শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘‘আমাদের হিসেবে রানা প্লাজা ধসের পর থেকে ২১৮টি গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে৷ যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলোর বেশিরভাগই ছোট ও মাঝারি আকারের এবং প্রত্যেক কারখানায় ৩০০-৮০০ শ্রমিক কাজ করতেন৷''
তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে গার্মেন্ট রপ্তানি ১.৬ শতাংশ কমে গেছে৷তবে এ সময় নিটওয়্যার রপ্তানি বেড়েছে ৫ শতাংশ৷ যদিও গত অথবছরের একই সময়ে এ খাতে রপ্তানি বেড়েছিল ১২ শতাংশ৷
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১,১৩৮ জন মারা যাওয়ার পর থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার ২০০ ক্রেতার পক্ষ থেকে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স নামের দুটো প্রতিষ্ঠান প্রায় ১,৭০০ গার্মেন্ট পরিদর্শন করেছে৷ এর মধ্যে অ্যাকর্ড ১,১০০ এবং অ্যালায়েন্স ৬০০ কারাখানা পরিদর্শন করে৷ তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে অনেক গার্মেন্ট ব্যাপক সংস্কার করতে বাধ্য হয়৷