‘প্রতিটা ঘটনার তদন্ত হয়, কিন্তু সব প্রকাশিত হয় না’
২২ এপ্রিল ২০২২
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিটি অপরাধের তদন্ত করলেও সবক্ষেত্রে সেসব তদন্ত প্রকাশিত হয়না বলে মনে করেন নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল৷ ইউটিউবে ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশোতে একথা বলেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়' টকশোতে শুক্রবার আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক এবং সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল৷ ঢাকায় এক দশক আগে গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ছিল আলোচনার বিষয়বস্তু৷
আলোচিত এই গুমের সঙ্গে কি ব়্যাব জড়িত? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের কাছে সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চান, ‘‘গুম খুনের আদেশ কীভাবে দেওয়া হয়? এর কি আইনি ভিত্তি আছে?''
জবাবে হক বলেন, ‘‘বেআইনি কাজের আদেশের প্রশ্নই ওঠে না৷ কেউ এমন আদেশ দেয় না৷''
গুম খুন তাহলে কারা করে? ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধানের এমন প্রশ্নের উত্তরে শহীদুল হক বলেন, ‘‘ফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স দিবস জাতিসংঘ পালন করে৷ শুধু বাংলাদেশ না, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকাও এমন ঘটে৷ হারিয়ে যাওয়া দুঃখজনক৷ তবে এর নানা কারণ আছে, টাকা পয়সা লেনদেন, শত্রুপক্ষ, পুলিশ উদঘাটন করতে পারলে অপহরণ ইত্যাদি জানা যায়৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কয়েকটি অপহরণের ঘটনা পারেনি৷ শতভাগ কেউ সফল হয় না৷''
সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল জানান যে ঢাকার বনানী থেকে ইলিয়াস আলীকে তুলে নেয়ায় ব়্যাব ১ সেই ঘটনার তদন্ত করেছে কেননা এলাকাটি তাদের আওতায় পড়ে৷ তিনি বলেন, ‘‘বনানী ব়্যাব ১ এর অধীনে৷ ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে যাবে, কেউ তদন্ত করবে না৷ বাংলাদেশের প্রতিটা গুমের ঘটনা তদন্ত হয়, কিন্তু সেগুলো প্রকাশ হয় না৷''
ইউটিউবে প্রচারিত অনুষ্ঠানটি শুক্রবার বারো হাজারের বেশি মানুষ সরাসরি দেখেছেন৷ ইলিয়াস আলী গুম সংক্রান্ত এক জরিপে ভোট পড়েছে ৫০ হাজারটি৷ পুরো অনুষ্ঠানটি পাবেন এখানে৷
আরকেসি/এআই
র্যাব – বিতর্কিত এক বিশেষ বাহিনী
শুরুটা হয়েছিল ২০০৪ সালে৷ সেসময় বাঘা বাঘা জঙ্গিদের কুপোকাত করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় ব়্যাব৷ কিন্তু অসংখ্য ক্রসফায়ার, অপহরণ, হত্যার দায়ে এখন সমালোচিত এই ‘এলিট ফোর্স’৷ র্যাব নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP
‘এলিট ফোর্স’
বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব নামক ‘এলিট ফোর্স’-এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে৷ এই বাহিনীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার একটি এলিট ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করে৷’’ তবে এই বাহিনী এখন তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সমন্বিত বাহিনী
বাংলাদেশ পুলিশ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে র্যাব গঠন করা হয়৷ এই বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাস প্রতিরোধ, মাদক চোরাচালান রোধ, দ্রুত অভিযান পরিচালনা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রদান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জঙ্গি তৎপরতা দমন
শুরুর দিকের ব়্যাবের কার্যক্রম অবশ্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷ বিশেষ করে ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে বাংলাদেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা উগ্র ইসলামি জঙ্গি তৎপরতা দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে র্যাব৷
ছবি: AP
জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় ২০০৫ সালে একসঙ্গে বোমা ফাটিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা জেএমবির শীর্ষ নেতাদের আটক ব়্যাবের উল্লেখযোগ্য সাফল্য৷ ২০০৬ সালের ২ মার্চ শায়খ আব্দুর রহমান (ছবিতে) এবং ৬ মার্চ সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় ব়্যাব৷ একাজে অবশ্য পুলিশ বাহিনীও তাদের সহায়তা করেছে৷
ছবি: DW
ভুক্তভোগী লিমন
২০১১ সালে লিমন হোসেন নামক এক ১৬ বছর বয়সি কিশোরের পায়ে গুলি করে এক ব়্যাব সদস্য৷ গুলিতে গুরুতর আহত লিমনের বাম পা উরুর নীচ থেকে কেটে ফেলতে হয়৷ এই ঘটনায় ব়্যাবের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ তবে এখনো সুবিচার পায়নি লিমন৷ উল্টো বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেছেন তিনি৷
ছবি: DW
‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’
জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য দেখালেও ক্রসফায়ারের নামে অসংখ্য ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব়্যাবের বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বাহিনী ‘সিসটেমেটিক’ উপায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷
ছবি: DW
‘ক্রসফায়ার’
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ব়্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ২৪ জন৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে কমপক্ষে সাতশো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ব়্যাব জড়িত ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলোচিত সাত খুন
২০১৪ সালের মে মাসে ব়্যাবের বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকা ঘুসের বিনিময়ে সাত ব্যক্তিকে অপহরণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে৷ নারায়ণগঞ্জে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন ব়্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ৷ এই ঘটনার পর ব়্যাবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আবারো বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
ছবি: DW
প্রতিষ্ঠাতাই করছেন বিলুপ্তির দাবি
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করেছেন৷ অথচ তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই ‘এলিট ফোর্স’৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিলুপ্তির দাবি নাকচ
বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক স্তর থেকে ব়্যাবকে বিলুপ্তির দাবি উঠলেও বর্তমান সরকার সেধরনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ বরং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ব়্যাব বিলুপ্তির দাবি নাকচ করে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘র্যাবের কোনো সদস্য আইন ভঙ্গ করলে তাদের চিহ্নিত করে বিচারিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়৷’’