বিশ্বব্যাপী নবজাতকের মৃত্যু নিয়ে মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানে নবজাতকের মৃত্যুর হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি৷ সেখানে জন্ম নেয়া ২২জন নবজাতকের মধ্যে নাকি অন্তত একজনের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে৷
তবে নবজাতকের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি– এমন দশটি দেশের মধ্যে আটটিই সাব-সাহারা আফ্রিকার দেশ৷ এগুলো হচ্ছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, সোমালিয়া, লেসোথো, গিনি-বিসাউ, দক্ষিণ সুদান, আইভরিকোস্ট, মালি ও চাড৷ তালিকার শীর্ষ দশের অন্য দেশটি আফগানিস্তান৷
আর নবজাতকের মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম জাপানে৷ এই তালিকার পরের দেশগুলো হচ্ছে আইসল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, স্লোভেনিয়া, সাইপ্রাস, বেলারুশ, লুক্সেমবার্গ, নরওয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়া৷
ইউনিসেফের প্রতিবেদন বলছে, প্রতিবছর অন্তত ১০ লক্ষ শিশু জন্ম নেয়ার দিনই মারা যায়৷ আর ২৬ লক্ষ নবজাতক মারা যায় এক মাসের মধ্যে৷
নবজাতকের মৃত্যুর দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান টুইটারে জানিয়েছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ৷ তারা বলছে, বাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় সাত জন নবজাতক শিশু মারা যায়৷
বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের সঙ্গে একটি ফেসবুক লাইভেরও আয়োজন করেছিল ইউনিসেফ বাংলাদেশ৷ সেখানে বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যাটি আশঙ্কাজনক বলে জানান সাকিব৷ এই সংখ্যা কমিয়ে আনতে তিনি সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন৷ এছাড়া হাসপাতালে গেলেই সিজার করিয়ে দেবে– এই আশংকায় না থেকে সবাইকে সন্তান প্রসবের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি৷ সবাইকে আশ্বস্ত করে একটি পরিসংখ্যানও উল্লেখ করেন সাকিব৷ সেটি হচ্ছে, বাংলাদেশে মাত্র ১৫ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় সিজারিয়ানের মাধ্যমে৷
নবজাতকের মৃত্যু কমাতে...
প্রতিবেদন বলছে, নবজাতকের মোট মৃত্যুর ৮০ শতাংশই রোধ করা সম্ভব৷ এর জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী৷ আর গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজন পরিষ্কার পানি ও পুষ্টিকর খাবার৷ এছাড়া জন্মের পর শিশুকে মায়ের শরীরের সঙ্গে লেপ্টে থাকার ব্যবস্থা করা ও জন্ম নেয়ার প্রথম ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে৷
ইউনিসেফ বলছে, দরিদ্র দেশগুলোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও ধাত্রীর অভাব রয়েছে৷ এছাড়া প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নেই৷ সংস্থার নবজাতক কর্মসূচির প্রধান উইলিবাল্ড জেক আগে তাঞ্জানিয়ায় গাইনি বিশেষজ্ঞ ছিলেন৷ নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যন্ত্রপাতির অভাবে অনেকসময় তাঁকে হাত দিয়ে ভ্রূণের অবস্থা বুঝতে হয়েছে৷
তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সীমিত সম্পদ দিয়েও নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা কমানো যায় বলে মনে করছে ইউনিসেফ৷ এক্ষেত্রে রুয়ান্ডার উদাহরণ দিয়েছে সংস্থাটি৷ দেশটি নাকি ২০১৬ সালে নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা ১৯৯০ সালের তুলনায় অর্ধেকে নামিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ইউনিসেফ বাংলাদেশ)
১৯৪৬ সালের ১১ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে শুধুমাত্র শিশুদের জন্য বিশ্বের প্রথম সংগঠন ইউনিসেফ৷ মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সহায়তা দিতে গড়ে ওঠা সংগঠনটি এখন গোটা বিশ্বের শিশুদের পাশে রয়েছে৷
ছবি: UNICEF/UNI42500যুদ্ধপরবর্তী ইউরোপের শিশুদের সহায়তায় ইউনিসেফ গঠন করা হয়েছিল জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে৷ সেসময় স্বাস্থ্য এবং খাদ্য নিয়ে উদ্বেগ ছিল৷ আর এখনও সেই উদ্বেগ রয়ে গেছে৷ জাতিসংঘের ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় তিন মিলিয়ন শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার৷ উপরের ছবিটি ইউনিসেফের প্রতিষ্ঠার বছরে গ্রিসে তোলা৷
ছবি: UNICEF/UNI41884১৯৫৫ সাল নাগাদ বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিশুদের সংগঠনটির কার্যক্রম ৯০টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ ছবিতে ১৯৫৮ সালে ইকুয়েডরে এক শিশুর ম্যালেরিয়া সংক্রমণ পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ তখন এবং এখনো শিশু মৃত্যুর এক অন্যতম কারণ ম্যালেরিয়া৷ ইউনিসেফ ম্যালেরিয়া থেকে শিশুদের রক্ষায় তখন থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে৷
ছবি: UNICEF/UNI41904১৯৫৯ সালে জাতিসংঘ শিশুদের নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান এবং ভালো পুষ্টির অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে একটি ডিক্লারেশন অনুমোদন করে৷ ছবিতে মোজাম্বিকে একদল শিশু জাতিসংঘের শিশুবান্ধব স্কুলে বিরতিতে খেলছে৷ স্কুলটিতে শুধু লেখাপড়া নয়, স্যানিটেশন এবং সমাজসেবা ও যোগাযোগ বিষয়ক বিভিন্ন শিক্ষাও দেয়া হয়৷
ছবি: UNICEF/UNI46342/Pirozziশিশুদের জন্য ইউনিসেফ-এর কাজকে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ১৯৬৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়৷ ছবিতে অসলোতে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করছেন ইউনিসেফ-এর তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক হেনরি লাবুস৷ তবে নোবেল জিতলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং ঘুষের অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার৷
ছবি: UNICEF/UNI99955শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এরকম হাজার হাজার মানবিক দুরযোগে সাড়া দিয়েছে ইউনিসেফ৷ পরবর্তী সত্তর বছরে প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য হচ্ছে এমন এক পৃথিবী গড়ে তোলা যেখানে তাদের কাজের আর দরকার নেই৷
ছবি: UNICEF/UNI29868/LeMoyneইউনিসেফ প্রথমবারের মতো পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিন প্রোগ্রাম শুরু করে সেই ১৯৫৩ সালে৷ সেসময় থেকে এখন অবধি প্রায় তিন বিলিয়ন মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি এবং ভালো স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷ ছবিতে বাংলাদেশের স্কুল শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে হাত ধোয়ার উপায় শেখানো হচ্ছে৷
ছবি: UNICEF/UNI122066/Haqueপাকিস্তানের স্কুল-পড়ুয়া মেয়েদের মতো লাখ লাখ শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করেছে ইউনিসেফ৷ ১৯৯০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের হার ৪০ শতাংশের বেশি কমিয়ে এনেছে৷
ছবি: UNICEF/UNI46382/Isaacবিশ্বের প্রতি চারটি শিশুর একটি, বা প্রায় ৫৩৫ মিলিয়ন শিশু যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার৷ চলতি মাসে প্রকাশিত ইউনিসেফ-এর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এই তথ্য৷ প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এখনো বিশ্বের প্রায় ৫০ মিলিয়ন শিশু শরণার্থী জীবনযাপন করছে৷
ছবি: UNICEF/UN012725/Georgievইয়াংস্টাররা তাদের দেহ এবং বিভিন্ন বস্তু ব্যবহার করে ইটালীয় শব্দ ‘কনস্টরুয়ার’ লিখেছে, যার অর্থ হচ্ছে গড়া৷ তারা মনে করে, উন্নত মূল্যবোধসম্পন্ন নতুন প্রজন্ম গড়ার সময় এখন৷ ইউনিসেফ-এর হিসেবে, পৃথিবীর ধনী দেশগুলোতে দারিদ্রসীমার নীচে বাস করা শিশুর সংখ্যা ২ দশমিক ছয় মিলিয়ন৷
ছবি: UNICEF/UNI173333/Pirozzi