1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে প্রশাসনের সব স্তরে নারীর অবস্থান বাড়ছে

৮ মার্চ ২০২৩

দেশে ২০১৭ সালে ১০৬ নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন৷ সেই সংখ্যা এখন ১৬০ জনের বেশি৷ নারী ডিসি ছিলেন ছয়জন, এখন ১০৷ পাঁচ বছরে নারী এডিসির সংখ্যা ১৬ থেকে ৬৩ জন৷সচিব, ডিসি, ইউএনওসহ সব স্তরে নারীর অবস্থান শক্ত হচ্ছে৷

ছবি: bdnews24.com

শুধু মাঠ প্রশাসনের এই তিন পদেই নয়, এখন প্রশাসনের নানা স্তরে নারীর অবস্থান বাড়ছে, সুসংহত হচ্ছে৷ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি মানুষের সচতেনতাও এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে৷ কর্মপরিবেশও ভালো হয়েছে, তবে এখনো বেশ ঘাটতি আছে৷ এ জন্য কর্মপরিবেশ আরও উন্নত করা দরকার বলে মনে করেন নারী কর্মকর্তারা৷ তাঁরা বলছেন, বিশেষ করে চাকরিজীবী মা-বাবার কথা বিবেচনা করেকর্মক্ষেত্রে উন্নত মানের ডে-কেয়ার থাকা উচিত৷ এ ছাড়া নারীর জন্য আরও উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পুরুষদের প্রথাগত মানসিকতা পরিবর্তনে সচেতনতা তৈরিসহ আরও কিছু কাজ করলে কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান আরও সুসংহত হবে৷ প্রশাসনে নারীর অবস্থান বাড়লে তা নানা ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ফল নিয়ে আসবে৷

এমন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে৷

দেশে কোন পদে কত নারী

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে সরকারি চাকরিজীবী আছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন৷ এর মধ্যে ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৯১ নারী৷ প্রথম শ্রেণিতে (এখন গ্রেড ভিত্তিতে চাকরি নির্ধারণ হলেও মুখে মুখে শ্রেণি বলা হয়) মোট চাকরিজীবী আছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৭৯ জন৷ এর মধ্যে নারী ৩৯ হাজার ৭৮৭ জন৷

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে মোট ৭৯ সচিব আছেন৷ এর মধ্যে নারী সচিব ১০ জন৷ অর্থ, শিল্প ও কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো নারীরা সামলাচ্ছেন৷ এখন অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন৷ তিনি দেশের প্রথম নারী অর্থসচিব৷ এ ছাড়া অন্য সচিবদের মধ্যে আছেন—অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত সচিব ফারহিনা আহমেদ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) নাসিমা বেগম, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সচিব হামিদা বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসচিব নাহিদ রশীদ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন৷ এ ছাড়া রয়েছেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ৷

অবশ্য সচিব পদে নারীর সংখ্যাটি বেশ কয়েক বছর ধরেই দশের ঘরেই আটকে আছে৷ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) শাখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৩২৭ অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে ৫৫ জন নারী, ৮৫৮ যুগ্ম সচিবের মধ্যে ১৬৪ নারী, ১ হাজার ৭০৪ উপসচিবের মধ্যে ৩৭০ নারী, ১ হাজার ৮৬৭ জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনারের মধ্যে নারী ৬৮৯ জন৷ এ ছাড়া ১ হাজার ৪৪২ সহকারী কমিশনার বা সহকারী সচিবের মধ্যে নারী ৪৩৩ জন৷

মাঠ প্রশাসনে নারীরা

বর্তমানে৬৪ জেলা প্রশাসকের মধ্যে ১০ জন নারী৷ এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার তিনটিতেই নারীরা জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন৷ তাঁরা হলেন নেত্রকোনায় অঞ্জনা খান মজলিশ, শেরপুরে সালেহা আক্তার ও জামালপুরে শ্রাবস্তী রায়৷ এঁদের মধ্যে অঞ্জনা খান নেত্রকোনার আগে চাঁদপুরেও ডিসির দায়িত্ব পালন করেছেন৷

অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে অঞ্জনা খান ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমেই একজন নারীকে প্রমাণ করতে হয়, তিনি এ পদের যোগ্য কি না৷ তবে ধীরে ধীরে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে৷ মানুষ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে৷ ভবিষ্যতে হয়তো আরও পরিবর্তন হবে৷ তবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নারী হিসেবে তিনি বড় কোনো অসুবিধায় পড়েননি বলে উল্লেখ করেন৷

অন্য নারী ডিসিরা হলেন মাদারীপুরে রহিমা খাতুন, মুন্সিগঞ্জে কাজী নাহিদ রসুল, হবিগঞ্জে ইশরাত জাহান, রংপুরে চিত্রলেখা নাজনীন, ঝিনাইদহে মনিরা বেগম, ঝালকাঠিতে ফারাহ্ গুল নিঝুম ও বান্দরবানে ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি৷

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে তিনিই প্রথম নারী ডিসি হিসেবে কাজ করছেন৷ সমতলের জেলাগুলো থেকে পার্বত্য এলাকার  সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ ভিন্ন৷ তবে এখননারীরা চ্যালেঞ্জ নিতেপছন্দ করেন৷ দুই বছরের দায়িত্ব পালনকালে এখন পর্যন্ত তিনি বড় কোনো সমস্যায় পড়েননি৷

ইয়াছমিন বলেন, তাঁর অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নারী ডিসিদের কাছে মানুষ সহজেই আসতে পারেন৷ বিশেষ করে অনেক সমস্যা নারীকেন্দ্রিক হওয়ায় তাঁরা খুব সহজেই তাঁকে বলতে পারেন৷ ডিসিদের মধ্যে নারীর সংখ্যা আরও বেশি হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন৷

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি শাখার তথ্যমতে, এখন সারা দেশে ৪৮০ ইউএনওর মধ্যে ১৬৪ জন নারী৷ দায়িত্বরত ইউএনওদের মধ্যে এই হার ৩৪ শতাংশ৷ উপজেলা প্রশাসনে ইউএনও পদই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ, তাঁরাই উপজেলায় সরাসরি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন৷ তাঁরা উপজেলার অন্য সরকারি দপ্তরগুলোর কাজে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন৷ এ ছাড়া  সারা দেশে ভূমিসংক্রান্ত দপ্তর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আছেন ১৩৩ নারী৷

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সরকার নারীবান্ধব৷ নারীর কর্মপরিবেশ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় আজ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে নারীরা নেতৃত্বে আছেন৷ এটি এক দিনে হয়নি৷ ধীরে ধীরে হয়েছে৷ তাঁরাও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন৷ আগামী পাঁচ বছরে প্রশাসনে নারীর অবস্থান আরও উচ্চমাত্রায় যাবে বলে তিনি আশা করেন৷

এনএস/কেএম (প্রথম আলো)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ