দেশে ২০১৭ সালে ১০৬ নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন৷ সেই সংখ্যা এখন ১৬০ জনের বেশি৷ নারী ডিসি ছিলেন ছয়জন, এখন ১০৷ পাঁচ বছরে নারী এডিসির সংখ্যা ১৬ থেকে ৬৩ জন৷সচিব, ডিসি, ইউএনওসহ সব স্তরে নারীর অবস্থান শক্ত হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
শুধু মাঠ প্রশাসনের এই তিন পদেই নয়, এখন প্রশাসনের নানা স্তরে নারীর অবস্থান বাড়ছে, সুসংহত হচ্ছে৷ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি মানুষের সচতেনতাও এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে৷ কর্মপরিবেশও ভালো হয়েছে, তবে এখনো বেশ ঘাটতি আছে৷ এ জন্য কর্মপরিবেশ আরও উন্নত করা দরকার বলে মনে করেন নারী কর্মকর্তারা৷ তাঁরা বলছেন, বিশেষ করে চাকরিজীবী মা-বাবার কথা বিবেচনা করেকর্মক্ষেত্রে উন্নত মানের ডে-কেয়ার থাকা উচিত৷ এ ছাড়া নারীর জন্য আরও উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পুরুষদের প্রথাগত মানসিকতা পরিবর্তনে সচেতনতা তৈরিসহ আরও কিছু কাজ করলে কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান আরও সুসংহত হবে৷ প্রশাসনে নারীর অবস্থান বাড়লে তা নানা ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ফল নিয়ে আসবে৷
এমন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে৷
দেশে কোন পদে কত নারী
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে সরকারি চাকরিজীবী আছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন৷ এর মধ্যে ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৯১ নারী৷ প্রথম শ্রেণিতে (এখন গ্রেড ভিত্তিতে চাকরি নির্ধারণ হলেও মুখে মুখে শ্রেণি বলা হয়) মোট চাকরিজীবী আছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৭৯ জন৷ এর মধ্যে নারী ৩৯ হাজার ৭৮৭ জন৷
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে মোট ৭৯ সচিব আছেন৷ এর মধ্যে নারী সচিব ১০ জন৷ অর্থ, শিল্প ও কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো নারীরা সামলাচ্ছেন৷ এখন অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন৷ তিনি দেশের প্রথম নারী অর্থসচিব৷ এ ছাড়া অন্য সচিবদের মধ্যে আছেন—অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত সচিব ফারহিনা আহমেদ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) নাসিমা বেগম, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সচিব হামিদা বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসচিব নাহিদ রশীদ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন৷ এ ছাড়া রয়েছেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ৷
অবশ্য সচিব পদে নারীর সংখ্যাটি বেশ কয়েক বছর ধরেই দশের ঘরেই আটকে আছে৷ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) শাখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৩২৭ অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে ৫৫ জন নারী, ৮৫৮ যুগ্ম সচিবের মধ্যে ১৬৪ নারী, ১ হাজার ৭০৪ উপসচিবের মধ্যে ৩৭০ নারী, ১ হাজার ৮৬৭ জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনারের মধ্যে নারী ৬৮৯ জন৷ এ ছাড়া ১ হাজার ৪৪২ সহকারী কমিশনার বা সহকারী সচিবের মধ্যে নারী ৪৩৩ জন৷
মাঠ প্রশাসনে নারীরা
বর্তমানে৬৪ জেলা প্রশাসকের মধ্যে ১০ জন নারী৷ এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার তিনটিতেই নারীরা জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন৷ তাঁরা হলেন নেত্রকোনায় অঞ্জনা খান মজলিশ, শেরপুরে সালেহা আক্তার ও জামালপুরে শ্রাবস্তী রায়৷ এঁদের মধ্যে অঞ্জনা খান নেত্রকোনার আগে চাঁদপুরেও ডিসির দায়িত্ব পালন করেছেন৷
অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে অঞ্জনা খান ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমেই একজন নারীকে প্রমাণ করতে হয়, তিনি এ পদের যোগ্য কি না৷ তবে ধীরে ধীরে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে৷ মানুষ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে৷ ভবিষ্যতে হয়তো আরও পরিবর্তন হবে৷ তবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নারী হিসেবে তিনি বড় কোনো অসুবিধায় পড়েননি বলে উল্লেখ করেন৷
বাংলাদেশে নারীদের ‘প্রথম’
প্রথম ওয়ান ডে সেঞ্চুরিতে ইতিহাস গড়েন ফারজানা হক পিঙ্কি। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ১৫৬ বলে শতরান করেন তিনি। ছবিঘরে থাকছে এমনই কিছু নারীর কথা যারা বাংলাদেশে বিভিন্ন অঙ্গনে ‘প্রথম’।
ছবি: Andrew Cornaga/Action Plus/IMAGO
প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী৷ ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তার দল ক্ষমতায় আসে৷
ছবি: Getty Images
প্রথম শতরান
ওয়ান ডে সেঞ্চুরিতে ইতিহাস গড়লেন ফারজানা হক পিঙ্কি। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় ওয়ান ডেতে ১৫৬ বলে শতরান করলেন তিনি। ৫০ ওভারের ম্যাচে ওপেন করতে নেমে পুরো ইনিংসে একাই ব্যাট হাতে গোটা দলকে টেনে নিয়ে যান ফারজানা। ম্যাচের একেবারে শেষ বলে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ১০৭ রানে আউট হন তিনি।
ছবি: Morgan Hancock/NurPhoto/picture alliance
প্রথম নারী স্পিকার
২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী৷
ছবি: bdnews24.com
প্রথম নারী বিচারপতি
বিচার বিভাগের ইতিহাসে হাইকোর্টের প্রথম নারী বিচারক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা৷ ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি মুনসেফ (সহকারী জজ) হিসেবে বিচার বিভাগে যোগ দেন৷ প্রথম নারী জেলা জজ তিনি, হাইকোর্টেও প্রথম নারী বিচারপতি৷ ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন৷ ২০২১ সাল থেকে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হিসেবে আছেন৷ এই পদে নিয়োগ পাওয়া প্রথম নারীও তিনি৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন কবিতা খানম৷
ছবি: bdnews24.com
ফুটবলে নারীদের প্রথম সাফ জয়
১৯ সেপ্টেম্বর স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা জেতেন বাংলাদেশের মেয়েরা৷
ছবি: Mir Farid
ক্রিকেটে নারীদের প্রথম এশিয়া কাপ জয়
২০১৮ সালে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল৷
ছবি: Suhaimi Abdullah/Getty Images
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য
২০১৪ সালের ২ মার্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ফারজানা ইসলাম৷ তিনিই কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হওয়া প্রথম নারী৷
ছবি: bdnews24.com
বিজিএমইএ-র প্রথম নারী সভাপতি
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ-র প্রথম নির্বাচিত নারী সভাপতি হয়েছিলেন রুবানা হক৷ ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি৷
ছবি: bdnews24.com
প্রথম বেসামরিক নারী বৈমানিক
১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে বিমান চালানোর অনুমতি পেয়েছিলেন সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা৷ ১৯৮৪ সালে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরে একটি ফকার বিমান অবতরণ করাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পাইলট কানিজসহ বিমানের ৪৫ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. Ramany
প্রথম সামরিক নারী বৈমানিক
২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর বিমানবাহিনীর পাইলট অফিসার তামান্না-ই-লূৎফী দেশের প্রথম সামরিক নারী বৈমানিক হিসেবে সফলভাবে একটি হেলিকপ্টার ওড়ান৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto
প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে
২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেন বিমানবাহিনীর দুই ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুৎফী (বামে) ও নাইমা হক৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto
প্রথম নারী প্যারাট্রুপার
২০১৩ সালে সিলেট সেনানিবাস সংলগ্ন পানিছড়া ড্রপ জোনে এক হাজার মিটার উচ্চতা থেকে প্যারাস্যুট নিয়ে নিরাপদে মাটিতে নেমে আসার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্যারাট্রুপারের গৌরব অর্জন করেছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস৷ (ছবিটি প্রতীকী)
ছবি: Gavriil Grigorov/TASS/dpa/picture alliance
প্রথম এভারেস্টজয়ী নারী
প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসেবে ২০১২ সালের ১৯ মে এভারেস্ট জয় করেন নিশাত মজুমদার৷
ছবি: Lakpa Sherpa/AFP/Getty Images
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাত মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ শৃঙ্গে
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন৷ ২০১১ সালে আফ্রিকার কিলিমানজারো দিয়ে শুরু করে ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর ওশেনিয়ার কার্সটেসনস পিরামিড দিয়ে শেষ করেছিলেন ওয়াসফিয়া৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রথম নারী নাবিক
২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ১৩ জন নারী নাবিক কাজ শুরু করেন৷ তারা সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরি পান৷ এই নারী মেরিন ক্যাডেটরা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজে যোগ দিয়েছিলেন৷
ছবি: Reuters
প্রথম নারী ট্রেন চালক
২০০৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে সহকারী চালক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে দেশের প্রথম নারী ট্রেন চালক হয়েছিলেন সালমা খাতুন৷
ছবি: privat
গিনেস বুকে প্রথম বাংলাদেশি নারী
১৬ বার জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০০২ সালে জোবেরা রহমান লিনুর নাম গিনেস বুকে ওঠে৷
ছবি: Khandakar Tarek
এসএ গেমসে সোনাজয়ী প্রথম নারী
দক্ষিণ এশিয়ান গেমস এসএ গেমসে বাংলাদেশের সোনাজয়ী প্রথম নারী অ্যাথলেট কাজী শাহানা পারভীন৷ ১৯৯১ সালে কলম্বো গেমসে শুটিংয়ে সোনা জিতেছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Xhemaj
এসএ গেমসে সাঁতারে সোনাজয়ী প্রথম নারী
২০১৬ সালে ভারতের গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় গেমস এসএ গেমসে ৫০ মি: ও ১০০ মি: ব্রেস্টস্ট্রোকে দুটি স্বর্ণপদক অর্জন করেন মাহফুজা খাতুন৷
ছবি: bdnews24.com
এসএ গেমসে ভারোত্তলনে সোনাজয়ী প্রথম নারী
২০১৬ সালে ভারতের গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় গেমস এসএ গেমসে ভারোত্তলনে বাংলাদেশের ইতিহাসে মেয়েদের মধ্যে প্রথম সোনা জেতেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত৷
ছবি: Khandakar Tarek
আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনায় প্রথম বাংলাদেশি নারী রেফারি
বাংলাদেশের প্রথম নারী রেফারি হিসেবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করেছেন জয়া চাকমা৷ ২৩ জুন মালয়েশিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ফিফা প্রীতি ম্যাচ পরিচালনা করেন তিনি৷
ছবি: Private
22 ছবি1 | 22
অন্য নারী ডিসিরা হলেন মাদারীপুরে রহিমা খাতুন, মুন্সিগঞ্জে কাজী নাহিদ রসুল, হবিগঞ্জে ইশরাত জাহান, রংপুরে চিত্রলেখা নাজনীন, ঝিনাইদহে মনিরা বেগম, ঝালকাঠিতে ফারাহ্ গুল নিঝুম ও বান্দরবানে ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি৷
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে তিনিই প্রথম নারী ডিসি হিসেবে কাজ করছেন৷ সমতলের জেলাগুলো থেকে পার্বত্য এলাকার সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ ভিন্ন৷ তবে এখননারীরা চ্যালেঞ্জ নিতেপছন্দ করেন৷ দুই বছরের দায়িত্ব পালনকালে এখন পর্যন্ত তিনি বড় কোনো সমস্যায় পড়েননি৷
ইয়াছমিন বলেন, তাঁর অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নারী ডিসিদের কাছে মানুষ সহজেই আসতে পারেন৷ বিশেষ করে অনেক সমস্যা নারীকেন্দ্রিক হওয়ায় তাঁরা খুব সহজেই তাঁকে বলতে পারেন৷ ডিসিদের মধ্যে নারীর সংখ্যা আরও বেশি হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন৷
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি শাখার তথ্যমতে, এখন সারা দেশে ৪৮০ ইউএনওর মধ্যে ১৬৪ জন নারী৷ দায়িত্বরত ইউএনওদের মধ্যে এই হার ৩৪ শতাংশ৷ উপজেলা প্রশাসনে ইউএনও পদই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ, তাঁরাই উপজেলায় সরাসরি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন৷ তাঁরা উপজেলার অন্য সরকারি দপ্তরগুলোর কাজে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন৷ এ ছাড়া সারা দেশে ভূমিসংক্রান্ত দপ্তর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আছেন ১৩৩ নারী৷
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সরকার নারীবান্ধব৷ নারীর কর্মপরিবেশ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় আজ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে নারীরা নেতৃত্বে আছেন৷ এটি এক দিনে হয়নি৷ ধীরে ধীরে হয়েছে৷ তাঁরাও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন৷ আগামী পাঁচ বছরে প্রশাসনে নারীর অবস্থান আরও উচ্চমাত্রায় যাবে বলে তিনি আশা করেন৷
এনএস/কেএম (প্রথম আলো)
বিশ্বে রাজনৈতিক ক্ষমতায় নারীর অবস্থান
বর্তমানে বিশটিরও বেশি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান নারী৷ কিন্তু স্থানীয় সরকার, সংসদ ও মন্ত্রিপরিষদে নারীদের প্রতিনিধিত্বের হার এখনও যথেষ্ট কম৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. McDougall
২২টি দেশে
জাতিসংঘের হিসাবে বর্তমানে ২২টি দেশে নারীরা সরকার বা রাষ্ট্রের নেতৃত্বে দিচ্ছেন৷ ১১৯টি দেশে এখনও কোন নারীনেতৃত্ব তৈরি হয়নি৷ ইউএন উইমেন এর হিসাবে, বর্তমান হারে ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে লিঙ্গ সমতা আসতে আরো ১৩০ বছর লাগবে৷
ছবি: Reuters/S. Lecocq
সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান
মাত্র দশটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নারী৷ ১৩ টি দেশে সরকার প্রধান হিসেবে নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ কোনো কোনো দেশে দুটি পদেই নারীরা নেতৃত্বে রয়েছেন৷ এই তালিকায় কেবল নির্বাচিত সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদেরই বিবেচনা করা হয়েছে৷ (ছবি: ২০১১ সালে বার্লিনে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷)
ছবি: Getty Images/AFP/J. McDougall
মন্ত্রিত্ব সিকিভাগের কম
২০২০ সালে বিশ্বে মাত্র ২১ শতাংশ নারী মন্ত্রীত্ব পেয়েছেন৷ কেবল ১৪টি দেশে মন্ত্রিপরিষদে নারীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ বা তার বেশি৷ বর্তমান হারে বাড়লে গোটা বিশ্বে কেবল মন্ত্রী পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণে সমতা আসতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ২০৭৭ সাল পর্যন্ত৷ (ছবিতে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন এর সঙ্গে তার মন্ত্রিপরিষদের তিন সদস্য৷)
ছবি: picture-alliance/dpa/Lehtikuva/V. Moilanen
নারীদের মন্ত্রণালয়
নারীরা সচরাচর যেসব মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্ব পান তার মধ্যে সবার উপরে আছে পারিবারিক, শিশু, যুব, প্রবীণ কিংবা প্রতিবন্ধী বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷ দ্বিতীয় অবস্থানে সমাজ কল্যাণ৷ এরপরে রয়েছে পরিবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়৷ চতুর্থ শ্রম, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ এবং পঞ্চম নারী বা লিঙ্গ সমতা মন্ত্রণালয়৷ (ছবি: বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি৷)
ছবি: Abdullah Al Momin/bdnews24.com
সংসদে নারী
বর্তমানে বিশ্বে জাতীয় সংসদগুলোতে ২৫ শতাংশ নারী জনপ্রতিনিধি রয়েছেন৷ ১৯৯৫ সালের তুলনায় এই হার ১১ ভাগ বেড়েছে৷ (ছবি: ইথিওপিয়ার সংসদ৷)
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
ব্যতিক্রম
মাত্র চারটি দেশের সংসদে নারী জনপ্রতিনিধি ৫০ শতাংশের বেশি৷ এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রুয়ান্ডা৷ দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষে ৬১ শতাংশই নারী৷ কিউবা ও বলিভিয়ায় এই হার ৫৩ শতাংশ৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংসদে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা পুরুষের সমান৷ (২০২০ সালে রুয়ান্ডার নির্বাচনের ভোট গ্রহণের ছবি৷)
ছবি: ALEXIS HUGUET/AFP
চল্লিশের উপরে
আরো ১৯টি দেশে নারী জনপ্রতিনিধির হার ৪০ ভাগ বা তার বেশি৷ এর মধ্যে নয়টি ইউরোপের, পাঁচটি লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ার, চারটি আফ্রিকা আর একটি দেশ প্রশান্ত মহাসাগরীয়৷ (ছবি: এস্তোনিয়ার সংসদ৷)
ছবি: Raigo Pajula/AFP/Getty Images
দশ শতাংশের কম
বিশ্বে এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ অথবা সংসদের নিম্নকক্ষে নারী জনপ্রতিনিধি ১০ শতাংশেরও কম এমন ২৭ টি দেশ আছে৷ বর্তমান হার বজায় থাকলে বিশ্বে ২০৬৩ সালের আগে সংসদে লিঙ্গ সমতার সম্ভাবনা নেই৷ (ছবি: ইরানের সংসদ৷)
ছবি: Fatemeh Bahrami/AA/picture alliance
স্থানীয় সরকার
১৩৩টি দেশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধি প্রায় ২২ লাখ, যা মোট জনপ্রতিনিধির ৩৬ শতাংশ৷ দুইটি দেশে এই হার ৫০ শতাংশ আর আরো ১৮টি দেশে ৪০ শতাংশের বেশি৷ (ছবি: ২০২০ সালের নভেম্বরে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনার স্থানীয় সরকার নির্বাচন৷)
ছবি: Mustafa Ozturk/AA/picture alliance
নারীর ক্ষমতায়ন সূচক
এইসব তথ্যের ভিত্তিতে নারী ক্ষমতায়ন সূচক তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস৷ ২০২০ সালের এই সূচকে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমতায় সবচেয়ে এগিয়ে লাতিন আমেরিকার দেশ কোস্টারিকা৷ ১০০তে তাদের স্কোর ৭৪৷ এছাড়া প্রথম পাঁচে আছে রুয়ান্ডা, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড৷ (ছবি: সুইডেনের সংসদ৷)
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Sandberg
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে এই সূচকে সবার উপরে আছে নিউজিল্যান্ড৷ এরপর অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের অবস্থান৷ বাংলাদেশের স্কোর ৩১৷ স্থানীয় সরকারে ২৫ শতাংশ, জাতীয় সংসদে ২১ শতাংশ, মন্ত্রিপরিষদে আট শতাংশ নারী প্রতিনিধি রয়েছে বাংলাদেশে৷ (ছবি: নিউজিল্যান্ডের সংসদে জেসিন্ডা আর্ডার্ন৷)
ছবি: Mark Mitchell/New Zealand Herald via AP/picture alliance