বুধবার থেকে ফরমালিন মেশানো ফল-মূল বিরোধী অভিযান শুরু হচ্ছে বাংলাদেশে৷ যে সব বিক্রিতার কাছে এ ধরণের ফল পাওয়া যাবে, তাঁদের জরিমানা গুনতে হবে৷ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিনের ব্যবহার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে এখন আমের মৌসুম৷ কিন্তু এ মৌসুমে যে সব আম পাওয়া যাচ্ছে, চার প্রায় শতভাগ বিষাক্ত ফরমালিন মিশ্রিত৷ লিচুর ক্ষেত্রে বিষাক্ত ফলের পরিমাণ ৮০ শতাংশ৷ দেশি-বিদেশি অন্যান্য ফলের অবস্থাও এক৷ এমনকি ‘ফরমালিন মুক্ত বাজার' থেকে আম ও লিচু কিনে পরীক্ষা করেও তাতে মাত্রারিক্ত পরিমাণে ফরমালিন পেয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন৷
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘পরীক্ষাগারের ঐ পরীক্ষায় দেখা গেছে আম শতকরা ৯৪ ভাগ, লিচু ৯০ ভাগ এবং জামগুলি ১০০ ভাগ ফরমালিন যুক্ত৷''
ঈশ্বরদীর লিচু
বাংলাদেশে লিচু উৎপাদনের অন্যতম বড় অঞ্চল পাবনা জেলার একটি উপজেলা৷ নাম – ঈশ্বরদী৷ এ বছর সেখানকার প্রায় ২,৪০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে৷ গতবছর লিচু বিক্রি করে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি আয় করেছিল সেখানকার স্থানীয় কৃষকরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
জনপ্রিয় হচ্ছে ঈশ্বরদীর লিচু
ঈশ্বরদীর রূপপুরের একটি বাগানে পাকা লিচু৷ স্বাদে ও আকারে এখানকার লিচুর সুনাম দেশজুড়ে৷ একটা সময় দিনাজপুরের লিচুর খ্যাতি থাকলেও গত প্রায় এক যুগ ধরে তাতে ভাগ বসাতে শুরু করেছে ঈশ্বরদীর লিচু৷ ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি দপ্তরের মতে, গত বছর সেখানে প্রায় ২,৩০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছিল৷ এবার সেটা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৪০০ হেক্টর৷
ছবি: DW/M. Mamun
পরিবারের সবাই ব্যস্ত
ঈশ্বরদীর ছলিমপুরের একটি বাগানে লিচু বাছাই করছেন পরিবারের সদস্যরা৷ লিচু মৌসুমে এ অঞ্চলে শ্রমিকের অভাব থাকে বলে শ্রমের মূল্যও থাকে চড়া৷ পরিবারের সব সদস্যই তাই এ সময়ে কাজে লেগে পড়েন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সার্বক্ষণিক তদারকি
ঈশ্বরদীর ছলিমপুরের লিচু চাষি আবুল কালাম৷ প্রতিবছর লিচু চাষের টাকায়ই চলে তাঁর সংসার৷ অনাবৃষ্টি এবং উচ্চ তাপমাত্রা ঈশ্বরদীর অনেক বাগানে লিচু চাষে কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও কালামের সার্বক্ষণিক তদারকি আর যত্নের কারণে তাঁর বাগানে ক্ষতির ছোঁয়া এবার খুব একটা লাগেনি৷ এ বছরও লিচু থেকে আয় ভালো বলে জানান তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
যত্নের সঙ্গে পাড়া
ঈশ্বরদীর ছলিমপুরে গাছ থেকে লিচু পাড়ছেন একজন কৃষক৷ এ কাজটি তাঁদেরকে করতে হয় অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বৈরি আবহাওয়া
বৈরি আবহাওয়া ঈশ্বরদীর লিচু চাষে অনেক ক্ষতি করলেও ভালো ফলন পেয়েছেন অনেক কৃষক৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাজারে নেয়ার ব্যবস্থা
গাছ থেকে লিচু পাড়ার পর বাগানেই ঝুড়িতে ভরে নিচ্ছেন কৃষকরা৷ চারপাশে গাছের কাচা পাতা দিয়ে ঝুড়ির ভেতরে রাখা হয় লিচু৷ গাছ থেকে পাড়ার পর খুব দ্রুতই এ কাজটি করতে হয় তাদের৷ কারণ খুব বেশি বাতাসের সংস্পর্শ পেলে লিচু দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
দাম চড়া
ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন গতবছরের তুলনায় কিছুটা কম হওয়ায় এবছর ফলটির দাম কিছুটা চড়া৷ গত বছর ভালো মানের প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হয়েছিল দুই থেকে তিন হাজার টাকায়৷ কিন্তু এ বছর প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
কুড়িয়ে পাওয়া লিচু
ঈশ্বরদীর মিরকামারীতে গাছের তলায় কুড়িয়ে পাওয়া লিচু হাতে একটি শিশু৷ এ অঞ্চলের গরিব মানুষ যাঁদের লিচু বাগান নেই, আবার কিনে খাবার সামর্থ্যও নেই, এই কুড়িয়ে পাওয়া লিচুই তাদের চাহিদা মেটায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিক্রির জন্য প্রস্তুতি
বাছাই শেষে ঝুড়ি ভর্তি লিচু৷ পাঠানো হবে শহরে৷ ঈশ্বরদীর ছলিমপুর থেকে তোলা ছবি৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রতিকূল আবহাওয়ার শিকার
খরায় ফেটে যাওয়া ঈশ্বরদীর মিরকামারী এলাকার একটি বাগানের লিচু৷ গাছে ফলন আসার পরে বেশ কিছুদিন বৃষ্টির দেখা মেলেনি এ অঞ্চলে৷ তবে সময়মতো কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় কৃত্রিম বৃষ্টি ও ঔষধ প্রয়োগ করে ক্ষতির হাত থেকে অনেকেই বাঁচতে পেরেছেন৷ যাঁরা সময়মতো পদক্ষেপ নেননি, তাঁদেরই এরকম ক্ষতি হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর এই ফরমালিন আজকাল ফল-মূল এবং শাক-সবজি তাজা রাখার জন্য বাংলাদেশে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি-র অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান জানান, ‘‘সাধারণত ফলে ০.০৩ থেকে ০.১৫ পিপিএম (পার্ট পার মিলিয়ন) ফরমালিন স্বাভাবিকভাবেই থাকে৷ কিন্তু বর্তমানে ঢাকার বাজারে আম, লিচু, জাম থেকে শুরু করে আমদানি করা ফলে ৩.৫ থেকে ৪৬ পিপিএম ফরমালিন পাওয়া যাচ্ছে – যা ভয়াবহ৷ এ সব ফল খেয়ে দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তো আছেই, কেউ কেউ আবার তাৎক্ষণিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন৷ আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা৷
ওদিকে জাতীয় জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট আমসহ দেশি-বিদেশি ফলের ১০ হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করে উচ্চ মাত্রার ফরমালিন পেয়েছে৷ আসলে তাদের পরীক্ষায় ফরমালিনমুক্ত কোনো ফলই পাওয়া যায়নি৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ জানান যে, তারাও বাজার থেকে নানা ধরণের মৌসুমী ফল কিনে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে উচ্চ মাত্রার ফরমালিন পেয়ে অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ আগামী কাল, অর্থাৎ বুধবার থেকে তারা ঢাকার প্রবেশ পথসহ ৮টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে ফরমালিন বিরোধী অভিযান শুরু করবেন৷
তিনি জানান, ফরমালিন শনাক্ত করার কিট দিয়ে কাজটি করা হবে৷ এছাড়া ফলবাহী যানবাহন থামিয়ে তা পরীক্ষাও করা হবে৷ কোনো ফলে সহনীয় প্রাকৃতিক মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় ফরমালিন পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ২,০০,০০ টাকা জরিমানা এবং ফল বাজেয়াপ্ত করে তা ধ্বংস করা হবে৷
অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, ফল-মূল এবং খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন মেশানোর বিরুদ্ধে একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে সরকার৷