বাংলাদেশে ফেসবুক, টুইটারের মত সামাজিক যোগাযোগ সাইট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলছে বিস্তর বিতর্ক৷ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এই নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন৷ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ রাগিব হাসান এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ কতটা সম্ভব, তা লিখেছেন ফেসবুকে৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের সেরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ডের একটি বিভাগে ইউজার প্রাইজ জয়ী ‘শিক্ষক ডটকম' প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা রাগিব হাসান ফেসবুকে ‘‘ইন্টারনেটে আড়িপাতা - মিথ বনাম বাস্তবতা'' শীর্ষক একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন৷ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ফেসবুক, টুইটার বা সামগ্রিকভাবে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, সেসবের প্রেক্ষিতে এই নিবন্ধ তাঁর৷
‘নাস্তিক ব্লগার’ ইস্যুতে ইসলামি দলের তাণ্ডব
কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে কথিত ‘ধর্মনিন্দার’ অভিযোগে তাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ বাংলাদেশের কয়েক এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে বিভিন্ন ইসলামি দল৷ এতে প্রাণহানিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্র
শুক্রবার (২২.০২.১৩) দুপুর বারোটার দিকে বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ ১২টি ইসলামি ও সমমনা দল আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, তাদের ভাষায় যেসব ব্লগার ইন্টারনেটে ‘ধর্মনিন্দা’ করে বিভিন্ন নিবন্ধ লিখছে, তাদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আন্দোলন করা হবে৷ কিন্তু সেই আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যেই তাণ্ডবে রূপ নেয়৷ এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘পরিকল্পিত অ্যাকশন’
ঢাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানিয়েছেন, ‘শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবেই সহিংস অ্যাকশনে গেল জামায়াত-শিবির ও তাদের সহযোগীরা৷ ব্লগে ইসলামের বিরুদ্ধে কথিত কটূক্তির কথা বলে তাদের ভাষায় ‘মুরতাদ-নাস্তিকদের’ ফাঁসির দাবিতে আগেই শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কর্মসূচি দেয়৷ আর আজ (২২.০২.১৩) জুম্মার নামাজের আগেই তারা তাণ্ডব শুরু করে৷’
ছবি: Reuters
শাহবাগে হামলার চেষ্টা
শুক্রবার (২২.০২.১৩) পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ইসলামি দলের সদস্যরা শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোতে চাইলে সংঘর্ষ পল্টন হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে৷ ককটেল, গুলি আর টিয়ার গ্যাসের সেলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ প্রায় একই সময়ে ঢাকার কাঁটাবনে শাহবাগ বিরোধীরা রাস্তায় নামে৷ তারাও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে৷ সেখানেও পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
ঢাকার বাইরে তাণ্ডব, প্রাণহানি
ঢাকার বাইরে চট্টগামের প্রেসক্লাবে হামলা হয়েছে৷ তাদের হামলায় পুলিশ এবং সাংবদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন৷ বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, চাঁদপুরে গণজাগরণ মঞ্চে হামলা চালায় তারা৷ হামলা চালায় সিলেট শহীদ মিনারে৷ সেখানে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ শুক্রবার বিকেল অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী, গাইবন্ধায় ২ জন এবং ঝিনাইদহে জাগরণ মঞ্চ বিরোধীদের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters
শাহবাগে জনতা
দেশব্যাপী ইসলামি দলগুলোর এই তাণ্ডবের পর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে আবারো ভিড় বাড়তে শুরু করেছে৷ ব্লগারদের ডাকে গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে এই চত্বরে অবস্থান করছেন অগুনতি মানুষ৷ তাদের মূল দাবি হচ্ছে, ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বয়কট৷’’
ছবি: Reuters
তাণ্ডবের পর নতুন কর্মসূচি
শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ইমরান এইচ সরকার শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগরণ মঞ্চ থেকে দাবি করেন, ‘‘আজকের (২২.০২.১৩) হামলায় উস্কানি দিয়েছে জামায়াত শিবিরের পত্রিকা আমার দেশ৷ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর সম্পাদক মাহামুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে৷ তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে৷’’ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ইন্টারনেটে সতর্ক দৃষ্টি
‘ধর্মীয় ভাবমূর্তিতে আঘাত হানছে’ এরকম ইন্টারনেট ওয়েবসাইট খুঁজে খুঁজে বন্ধ করে দিচ্ছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ৷ ইতোমধ্যে কমপক্ষে দুটি ওয়েবসাইট বন্ধ এবং দশটি ব্লগ পোস্ট মুছে দেওয়া হয়েছে৷ বার্তাসংস্থা এএফপিকে এই তথ্য জানিয়েছেন টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি'র ভাইস-চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
রোববার হরতাল
শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালানোর পর রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ‘জামায়াত নিয়ন্ত্রিত’ ১২টি ইসলামি দল৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
রাগিব হাসান লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের চিরন্তন ভিলেন বিটিআরসি (টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ) সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েই ইন্টারনেট সেন্সরশিপের কাজ শুরু করেছে৷ এই সংক্রান্ত খবরাখবরে যথারীতি নানা অতি উৎসাহী কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর নানা মতামত প্রকাশ পেয়েছে৷ কেউ কেউ এভাবে বলছেন যে, ফেসবুক বা ব্লগ থেকে নানা ‘আপত্তিকর' জিনিস সরানো হবে৷ অতি অতি উৎসাহী কেউ কেউ ভয় দেখাচ্ছেন, ‘হান্টার ডিভাইস' নামের কোনো কাঁঠালের আমসত্ত্ব ব্যবহার করে ফেসবুকের স্ট্যাটাস বা কমেন্ট মুছে ফেলা যাবে, বা দূর করা যাবে কারো ব্লগ পোস্ট৷''
সুনির্দিষ্টভাবে ফেসবুক বা ব্লগে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য মোছার বিষয়ে কারিগরী ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাগিব হাসান৷ ফেসবুক বা ব্লগ থেকে কোন প্রোফাইল, ছবি, পাতা বা মন্তব্য ডিলিট করার ক্ষমতা বিটিআরসির মতো নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নেই৷ রাগিব লিখেছেন, ‘‘ফেসবুকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ না করে এই কাজগুলা করা সম্ভব না৷ আপনার ব্লগে যা লেখা লিখবেন, সেগুলা ব্লগ থেকে ডিলিট করানো সম্ভব না, যদিনা ব্লগ কর্তৃপক্ষ সেটা করে৷ মাঝপথে অমুক-তমুক ডিভাইস বসিয়ে বড়জোর ফিল্টার করা যায়, ডিলিট করা যায় না৷ এই ব্যাপারে আতঙ্কিত হবার তাই কিছু নাই৷''
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই তথ্যপ্রযুক্তিবিদ লিখেছেন, ‘‘ফেসবুকের সিকিউরিটি অফিসারের সাথে সাম্প্রতিক আলাপের ভিত্তিতে জানি, তারা কোন দেশের সরকার আদেশ দিলেই সেটা মানতে বাধ্য না, বাকস্বাধীনতায় তারা বিশ্বাসী৷''
উল্লেখ্য, তথমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু রবিবার জানিয়েছেন, ‘আপত্তিকর' মন্তব্য বা ছবি যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ না পায়, তা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করবে সরকার৷ এই প্রযুক্তি চালুর পর ফেসবুকের আপত্তিকর বিষয় বাদ দেয়া সহজ হবে বলেও দাবি করেন তথ্যমন্ত্রী৷