বাংলাদেশে গত দু'দিনে বজ্রপাতের আঘাতে কমপক্ষে ২২ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন৷ মৌসুমি বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারানোর এক সপ্তাহ পর বজ্রপাতের আঘাতে মৃত্যুর এই ঘটনা ঘটলো৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার এবং সোমবার ঝড়বৃষ্টির সময় বজ্রপাতের আঘাতে এসব প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান রিয়াজ আহমেদ৷ নিহতদের মধ্যে এবং দম্পতি এবং তাঁদের সন্তান রয়েছেন যারা বজ্রপাতের সময় বাদাম ক্ষেতে কাজ করছিলেন৷
বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে অসংখ্য মানুষ মারা যান৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে যার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা রয়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ পাশাপাশি বনের পরিমাণ এবং উঁচু গাছেরসংখ্যা কমে যাওয়াকেও বজ্রপাতে মৃত্যুর কারণ মনে করছেন তাঁরা৷ বড় গাছগুলো আগে বিজলীদণ্ডের কাজ করতো৷ ফলে প্রাণহানি কম হতো৷
গতবছর বজ্রপাতে দু'শোর বেশি মানুষের প্রাণহানির পর এটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ৷ সেবছরের মে মাসে একদিনেই বজ্রপাতে প্রাণ হারান ৮২ ব্যক্তি৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ছয়টি অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটবে
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অবিশ্বাস্য বেশ কিছু ঘটনা ঘটবে৷ বিমান চলাচল দুরুহ হবে, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত বাড়বে, বাড়বে বজ্রপাত৷ চলুন জেনে নিই ছয়টি ঘটনা যা বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ঘটবে৷
বিমানযাত্রা কঠিন হবে
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিমানে ঝাঁকুনি বেড়ে যাবে, ফলে বিমানযাত্রায় শারীরিক ও মানসিক চাপ আরো বাড়বে৷ বিশেষ করে যাত্রীবাহী বিমানগুলো যে পথে চলাচল করে, সেই পথ আগের চেয়ে আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে বলে এক গবেষণায় জানা গেছে৷
ছবি: Colourbox/M. Gann
জাহাজের পথে আইসবার্গ
সমুদ্রে জাহাজ চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি করবে ভাসমান আইসবার্গ৷ গত এপ্রিলে চারশ’ আইসবার্গ নর্থ আটলান্টিকে জাহাজ চলাচলের জলসীমায় প্রবেশ করে৷ ফলে অনেক জাহাজ গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশি সময় নিয়েছে, ঘুরে যাওয়ার কারণে তেল খরচও গেছে বেড়ে৷
ছবি: Getty Images/J. Raedle
বজ্রপাত আরো ঘনঘন হবে
বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বজ্রপাত আরো ঘনঘন হবে৷ যদিও এতে দাবানলের ঝুঁকি বাড়বে৷ তবে বজ্রপাতের ফলে নাইট্রোজেন অক্সাইড উৎপন্ন হয় যা বিশ্বের বায়ুমণ্ডলির জন্য উপকারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত বাড়বে
ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরিগুলো ভবিষ্যতে সক্রিয় হতে শুরু করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমনটা ঘটার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Getty Images/S. Crespo
আপনার রাগ বাড়বে
জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের মুডও পরিবর্তন করে দেবে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মধ্যে অস্থিরতাও বাড়বে৷ এমনকি সহিংস আচরণ করার প্রবণতাও দেখা দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
প্রাণীর আকার ছোট হবে
এই পরিবর্তনটি অবশ্য চোখে পড়তে সময় লাগবে৷ তবে কয়েক কোটি বছর আগে দৈত্যাকারের প্রাণিগুলো ছোট হয়ে গিয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও৷ ভবিষ্যতেও তেমনটা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: Fotolia/khmel
6 ছবি1 | 6
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাতের মৃতের সংখ্যা আনুষ্ঠানিক হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি৷ কেননা অনেকক্ষেত্রে এ ধরনের মৃত্যুর খবর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয় না৷ একজন স্বাধীন গবেষকের হিসেব অনুযায়ী, শুধুমাত্র গতবছর বজ্রপাতের মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ৩৪৯৷
এরকম প্রাণহানি এড়াতে গতবছর বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করছেন এবং শেষমেষ দেশজুড়ে দশলাখ নতুন তাল গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ পাশাপাশি আবহাওয়া অধিদপ্তর বজ্রপাতের আঘাত এড়াতে করণীয় নিয়ে ২০ হাজার স্কুল শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে৷
উল্লেখ্য, গতসপ্তাহে বাংলাদেশে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভূমিধসে ১৬০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং কয়েকশত ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে৷ প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে৷
এআই/ডিজি (এএফপি, এপি)
আকাশে আগুন: বজ্র এবং বিদ্যুৎ চমকানো
গ্রীষ্ম, সূর্য - বজ্রপাত: মাত্রাতিরিক্ত গরমের পর প্রায়ই ঝড় ওঠে, যেমনটা জার্মানিতে দেখা যাচ্ছে৷ বাংলাদেশ বা ভারতে অবশ্য এই প্রবণতা বহু আগে থেকে৷ চলুন বজ্রপাত আর বিদ্যুৎ চমকানোর কয়েকটি বিশেষ দিক জানা যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আকাশে ‘শর্ট সার্কিট’
রাতের আকাশে এমন দৃশ্য বিরল নয়৷ বিদ্যুৎ চমকানোর ব্যাপারটি অনেকটা ‘শর্ট সার্কিটের’ মতো ব্যাপার৷ আর একেকটি বিদ্যুৎ চমক ৫০০ মিলিয়ন ভোল্ট পর্যন্ত শক্তিশালী হতে পারে৷ জার্মানিতে প্রতি বছর গড়ে বিশ লাখের বেশি বার বিদ্যুৎ চমকায়৷ এতে অবশ্য ভয়ের কিছু নেই৷ কেননা অধিকাংশই মাটি স্পর্শ করে না৷ বরং মেঘ থেকে মেঘে স্থানান্তর হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়
ছবিতে থাকা এই মানুষটি বজ্রপাতের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না৷ কেননা তাঁর ধাতব স্যুট বিদ্যুৎ চমক প্রতিরোধে সক্ষম৷ এই স্যুটের নীতি হচ্ছে ‘ফ্যারাডে কেজ’৷ ধাতু বিদ্যুৎ চমক থেকে সৃষ্ট বিদ্যুতের প্রবাহ প্রতিরোধ করতে পারে৷ তাই বিমান কিংবা গাড়িও ‘লাইটনিং বোল্ট’ বা বিদ্যুৎ চমকের আঘাত থেকে নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মাটিতে ফিরিয়ে নেয়া
সাধারণত উঁচু জায়গায় বজ্রপাত ঘটে৷ যেকারণে প্রায় সব বড় গির্জা বা বহুতল ভবনে ‘লাইটনিং রড’ রয়েছে, যা আর্থিং হিসেবেও পরিচিত৷ এই ব্যবস্থার ফলে বজ্রপাতের কারণে ভবনের ক্ষতি হয় না৷ বরং বিদ্যুৎ সরাসরি ভূমিতে চলে যায়৷ ১৭৫২ সালে বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন ‘লাইটনিং রড’ আবিষ্কার করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক আচরণ
২০১৩ সালে বজ্রপাতের কারণে জার্মান বিমা সংস্থাগুলোর ২৮০ মিলিয়ন ইউরোর মতো গুনতে হয়েছে৷ তবে সরাসরি ঘরবাড়ির উপর বজ্রপাতের কারণে এটা হয়নি৷ আসলে অনেক সময় বাড়ির কাছাকাছি বজ্রপাত হলে বাড়তি বিদ্যুৎ সাধারণ বৈদ্যুতিক লাইনের মাধ্যমে ঘরের মধ্যে চলে যায়৷ ফলে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নষ্ট হয়৷ তাই পরামর্শ হচ্ছে, বিদ্যুৎ চমকালে টিভি, ফ্রিজের মতো পণ্যের প্লাগ খুলে রাখুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বল লাইটনিং’ এর অস্তিত্ব আছে
এটা প্রকৃত ‘বল লাইটনিং’ নয়৷ তবে বাস্তবেও এটা সম্ভব! যদিও এমন বিদ্যুৎ চমকানোর ছবি প্রকৃতি থেকে এখনো তোলা যায়নি, তবে বিজ্ঞানীরা বিষয়টি প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আকর্ষণ এবং আতঙ্কের মাঝামাঝি
গ্রীষ্মের আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো দেখে অনেকে রোমাঞ্চ অনুভব করেন৷ তবে কেউ যদি বিদ্যুৎ চমকানোর কথা শুনেই ঘামতে শুরু করেন তাহলে তাকে বলে ‘এস্ট্রাফোবিয়া৷’ বজ্রপাত এবং বিদ্যুৎ চমকানো নিয়ে যাদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে তারা এস্ট্রাফোবিয়ায় আক্রান্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শিল্পীদের প্রেরণা
‘লর্ডস অফ লাইটনিং’ এর মতো শিল্পীরা বজ্রপাতের সৌন্দর্যকে এভাবেই স্টেজে ফুটিয়ে তুলেছেন৷ বিভিন্ন চিত্রকর্মেও বিদ্যুৎ চমকানোর দৃশ্য একেছেন শিল্পীরা৷ নিরাপদ দূরত্বে বসে প্রকৃতির এই খেয়াল উপভোগ্য নয় বৈকি৷