বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ৷ তারা মনে করে, সরকারের উচিত এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা৷
বিজ্ঞাপন
এইচআরডাব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বিরোধী দলের সদস্যদের অনুমান সাপেক্ষে ‘ক্রসফায়ারে' হত্যাকাণ্ডের এক ভীতিজনক ধারা আমরা লক্ষ্য করছি৷ বাংলাদেশ সরকারের উচিত নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং ক্রসফায়ারে নিহতের ঘটনায় একটি নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের নির্দেশ দেয়া৷'' তিনি বলেন, ‘‘সরকারের উচিত নিরাপত্তা হেফাজতে আটক সব ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রকাশ্যে নির্দেশ দেয়া৷''
এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরের কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে৷ সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে ঘটনার যারা শিকার তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের৷ একইসঙ্গে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার জামায়াত ও বিএনপির কয়েকজন সদস্যদের নাম ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে৷
সহিংসতায় প্রধান হাতিয়ার ‘পেট্রোল বোমা’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেট্রোল বোমার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ হাতে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পেট্রোল বোমায় পুড়ছে জীবন
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ৷ নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসময়৷ হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রোল বোমা৷
ছবি: imago/imagebroker/theissen
যেভাবে তৈরি হয় এই বোমা
কাঁচের বোতল, পেট্রোল আর কিছু ভাঙা কাঁচ বা মার্বেলের টুকরা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করছে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর সুযোগ বুঝে সেগুলো নিক্ষেপ করছে যাত্রীবাহী গাড়িতে৷ ফলে গাড়ি পুড়ছে, সঙ্গে পুড়ছে মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture alliance/abaca
রয়েছে অন্য বোমাও
তবে শুধু পেট্রোল বোমাই নয়, লাল বা কালো টেপে মোড়া ককটেলও ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে৷ ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ছোট পেরেক বা লোহার টুকরা৷ এছাড়া বোমা তৈরিতে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোমা বাণিজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময় হাতে তৈরি বোমার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পেশাদারি গ্রুপও বোমা তৈরি করে৷ চড়া দামে এসব বোমা বিক্রিও করা হয়৷ গত বছর পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, একেকটি হাত বোমার দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters
বড় পর্যায়ে বোমা হামলা
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মঘাতী বা বড় পর্যায়ে বোমা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
ছবি: dpa - Bildfunk
আত্মঘাতী হামলা
১৭ আগস্টের সেই সিরিজ হামলার পর কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে৷ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেসময় ‘‘বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন৷’’ তবে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান দমনে সক্ষম হয়৷ ২০০৭ সালে জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: AP
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানান, বাংলাদেশ পুলিশের শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম রয়েছে৷ তাদের কাছে আধুনিক সরঞ্জামও রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বোমা নিষ্ক্রিয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের এই টিম৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
বিবৃতিতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৫০ জন নিহত হয়েছেন৷ আর সহিংসতা প্রতিরোধে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের নামানো হয়েছে৷ যারা সহিংসতায় জড়িত তাদের সন্ত্রাসী উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের দমন করা হবে৷
ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘‘র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী বিরোধী দলের সমর্থকদের গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে৷ গ্রেফতার হওয়া নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতায় জড়িত ছিলেন৷ আর নিারপত্তা বাহিনী বলছে, ক্রসফায়ারে নিহতের ঘটনা ঘটেছে৷''
এদিকে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে জানান, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়ে গেছে৷ তাঁদের হিসেবে, চলতি জানুয়ারি মাসে এপর্যন্ত ১৪ জন ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়৷ তিনি দাবি করেন সরকারের উচিত অচিরেই একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা করা৷ এই কমিশন হতে হবে স্থায়ী৷ তিনি বলেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্র এক বিবৃতিতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি জানিয়েছে বলেও জানান তিনি৷