বাংলাদেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার থেকে ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট৷ আর এই চাহিদা হয় গ্রীষ্মকালে৷ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৩৭ মেগাওয়াট৷ তারপরও বিদ্যুতের সংকট কেন?
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংকটে পড়ায় জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না৷ আর বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার জন্যই এই আমদানি নির্ভর পরিকল্পনা করা হয়েছে হয়ে বলে দাবি করেছেন এক বিশ্লেষক৷
পিডিবি জানিয়েছে, গরমের সময়ে চাহিদা থাকে ১৬ হাজার থেকে ১৬ হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট৷ তখন গড়ে দুই থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি থাকে৷ গত ৪ জুন দেশে লোডশেডিং ছিলো দুই হাজার ৫০০ মেগাওয়াট৷
বাংলাদেশে এখন ১৭০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ৫৭টি পুরোপুরি উৎপাদনে আছে৷ পুরোপুরি বন্ধ আছে ৫১টি৷ আর আংশিক চালু বা বন্ধ আছে ৬২টি৷ এর কারণ বাংলাদেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়৷ আর ডলার সংকটের জন্য সেই আমদানি করা যাচ্ছে না৷ ভাড়াভিত্তিক যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানির অভাবে বসে আছে তাদেরও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে৷ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত তাদের ১৮ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে৷
বাংলাদেশের মোট বিদ্যুতের উৎপাদন ৫১.০৫ ভাগ গ্যাসের উপর নির্ভরশীল৷ ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের উপর নির্ভর করে ৩৪ ভাগ, কয়লার ওপর নির্ভর করে ৭ দশমিক ৮৬ ভাগ৷ এছাড়া সৌর, পানি ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ আছে৷ ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল পুরোপরিই আমদানি নির্ভর৷ কয়লাও অনেকটাই আমদানি করা হয়৷ এলএনজিও বাইরে থেকে আনতে হয়৷ বাংলাদেশের গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা দুই হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট৷ কিন্তু সেটা উৎপাদন হচ্ছে না৷ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা দুই হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট৷ কিন্তু সক্ষমতা অনুযায়ী গ্যাস উৎপাদন না হওয়ায় কেন্দ্রগুলো চাহিদামত গ্যাস পাচ্ছে না৷ দেশের বাইরে স্পট মার্কেট থেকে এখন এলএনজি কেনা হচ্ছে৷ কয়লার অভাবে কয়লা ভিত্তিক তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রই বন্ধ আছে৷ বিপিসি দাম শোধ করতে না পারায় তেল দিচ্ছে না কিছু সরবরাহকারী৷ বাংলাদেশের যে বিদ্যুৎ পরিকল্পনা তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ এই খাতের শতকরা ৯০ ভাগ জ্বালানি আমদানি করতে হবে৷
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মুখপাত্র শামীম হাসান জানান, ‘‘বৃষ্টির কারণে এখন বিদ্যুতের চাহিদা কম৷ ১১-১২ হাজার মেগাওয়াটে নেমে এসেছে৷ তাই পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে৷ কিন্তু যদি চাহিদা গরমের কারণে বেড়ে যায় তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়৷''
তিনি জানান, ‘‘দেশের জ্বালানি তেল ভিত্তিক সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ আছে তেলের অভাবে৷ আমরা এই সংকটের সময় ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে অনুরোধ করেছিলাম অন্তত কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য৷ আমরা জ্বালানি তেলের কিছু ব্যবস্থা করার কথাও বলেছিলাম৷ কিন্তু কাজ হয়নি৷ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে শুধু রামপাল আংশিক চালু আছে৷ রামপালের জন্য আজ (শনিবার ) কয়লা এসেছে৷ পায়রা বন্ধ আছে৷ কয়লার জন্য এলসি খোলার প্রক্রিয়া চলছে৷ আমরা এখন প্রধানত নির্ভর করছি গ্যাস ভিত্তিকবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর৷ তাও আমাদের চাহিদার অর্ধেক পাচ্ছি৷ আমাদের দরকার এক হাজার ৫০০ এমএমসিএফডি৷ পাচ্ছি সর্বোচ্চ ৮০০ এমএমসিএফডি৷ ফলে উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেকের কিছু বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে৷''
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, ‘‘বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানের পিছনে আসলে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্য কাজ করেছে৷ এটা আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি৷ একই সঙ্গে কিছু মানুষকে আমদানির ব্যবসার সুযোগ দিতে এটার জ্বালানি আমদানি নির্ভর করা হয়েছে৷ নিজস্ব জ্বালানির উপর নির্ভর না করে আমদানি নির্ভর হওয়ার পরিণতি আমরা এখন ভোগ করছি৷ এটা যে ভবিষ্যতে আরো কতো জটিল হতে পারে তা ভেবে আমি আতঙ্কিত৷ সৌরবিদ্যুতের জন্য আমরা যেসব প্যানেল, যন্ত্রপাতি এনেছি তাও কোনো কাজে আসছে না৷ আসলে বিদ্যুতের জন্য নয়৷ কাজ হয়েছে এখানে একটা বাজার বানিয়ে ব্যবসা করার জন্য৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা গ্যাস ঠিক মতো অনুসন্ধান করিনি৷ আর এখনো যে গ্যাস আছে তা উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না৷ সেটা না করে আমরা তেল ভিত্তিক ভাড়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছি৷ এখন বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছি৷ এখন আমাদের ডলার ক্রাইসিস৷ এই সংকট কবে কাটবে জানি না৷'' চুক্তি অনুযায়ী রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ ডলারে দিতে হয়৷
'বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর মানে গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়া'
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘‘ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো শর্ট টার্মে ভালো ছিলো৷ কিন্তু তিন বছরের বেশি নয়৷ তিন বছরে তো তার বিনিয়োগ উঠে ব্যবসা হয়েছে৷তারপরও ১০-১২ বছর বসিয়ে বসিয়ে কেন ভাড়া দিতে হবে৷ এটা কোনো ওয়াইজ ডিসিশন নয়৷''
তার কথায়, ‘‘আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভরতাই বিদ্যুতের এই বিপদ ঘটিয়েছে৷ কিন্তু আমাদের পর্যাপ্ত গ্যাস থাকার পরও আমরা তা উত্তোলন করছি না৷ তেল গ্যাস আহরণে উদ্যোগ নিচ্ছি না৷ কয়লার ব্যাপারে পরিবেশবাদীরা বাধা দিয়েছেন৷ তারপরও ওপেন না করে ক্লোজ পিট করা যেত৷''
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা ৫০ মিলিয়ন রিজার্ভ নিয়ে বসে আছি৷ রশিদপুরে আমাদের গ্যাস আছে৷ সেটা নিয়েও বসে আছি৷ আসলে এখন আমাদের যে গ্যাসক্ষেত্রগুলো আছে সেখান থেকে অপটিমাম উৎপাদনের ব্যবস্থা করা উচিত৷''
এদিকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নির্মাণের খরচও অন্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি বলে জানান শামসুল আলম৷ তার দাবি, ‘‘এই অতিরিক্ত খরচের পিছনেও আছে গোষ্ঠী ও ব্যক্তি সুবিধা৷''
লোডশেডিংয়ে রাজধানীর জনজীবন
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল ও গ্যাস সংকটে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং চাহিদার সমন্বয় করতে গত ১৯ জুলাই থেকে শিডিউল মেনে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চালু করেছে সরকার৷ এই লোডশেডিংয়ের কেমন প্রভাব পড়ছে জনজীবনে? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mortuza Rashed/DW
এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং
সরকার দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের এলাকা এবং সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে৷এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘এলাকাভিত্তিক আমরা ঠিক করেছি৷ আগে থেকে আমরা গ্রাহকদের জানিয়ে দেবো৷ প্রথম সপ্তাহে দেখবো৷ আমরা মনে করছি যে, এক থেকে দুই ঘণ্টার মতো মেজার নেবো লোডশেডিংয়ের জন্য৷ তা দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘চুরি ঠেকাতে হবে সবার আগে’
ঢাকার পীরেরবাগের ভোলা হেয়ার ড্রেসারের মালিক কার্তিক শীল বলেন, ‘‘শুনছি সারা দুনিয়াতেই সমস্যা চলতেসে৷ এখন দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকলে কী আর করা? সরকার চেষ্টা তো করছে৷ কিন্তু আসল কথা হইল, চুরি-দুর্নীতি ঠেকাইতে হবে সবার আগে৷ সরকারি লোক যে কাজেরই দায়িত্ব পায়, সেই কাজেই চুরি করে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘কারেন্ট গেলে সবারই অসুবিধা, তয় গরম বাড়লে বেচা-বিক্রিও বাড়ে’
ঢাকার গাবতলি এলাকায় শরবত বিক্রেতা আবদুর রহিমা বলেন, ‘‘আমরা যে বস্তিতে থাকি, সেখানে দিনে কয়বার কারেন্ট যায় হিসাব নাই৷ কারেন্ট গেলে সবারই তো অসুবিধা৷ তয় গরম বাড়লে আমার বেচা-বিক্রিও বাড়ে৷ একদিক দিয়া যেমন অসুবিধা হইসে, অন্যদিকে সুবিধাও হইসে কারো কারো৷ সেই হিসাবে আমি খুশি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘খালি সরকারের দোষ দিয়ে লাভ আছে?’
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা সবুর মিয়া বলেন, ‘‘লোডশেডিং এই এলাকায় নতুন কিছু না৷ ২৪ ঘণ্টায় কতবার কারেন্ট যায় তার কোনো হিসাব নাই৷’’ তিনি জানান, শুধু কারওয়ান বাজারেই কতশত অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ আছে তার কোনো হিসাব নেই৷ তাই তিনি একতরফাভাবে শুধু সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নারাজ৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘ব্যবসা করা কঠিন’
ঢাকার পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বৌবাজারের মুদি দোকানি শাহ আজম বলেন, ‘‘আমাগো এদিকে কারেন্ট একটু কমই যায়৷ তবুও এমনে নিয়ম কইরা লোডশেডিং হইলে সবার জন্য একটু সমস্যাই৷ তার উপর আবার রাত আটটা বাজতেই দোকান বন্ধ করন লাগে৷ জিনিসপত্রের দাম অনেক বাড়তি৷ সবমিলাইয়া আমরা ব্যবসায়ীরা হিমশিম খাইতেসি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
জরুরি সেবায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ
পঙ্গু হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটসহ একাধিক সরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো লোডশেডিং নেই৷ সরকার ঘোষিত লোডশেডিং হাসপাতালে হয় কিনা জানতে চাইলে এক সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, ‘‘শুধু এখন না, আমার গত ১০ বছরের ক্যারিয়ারে আমি হাসপাতালে লোডশেডিং দেখিনি৷ এখানে অনেক মুমূর্ষু রোগী থাকেন, ইলেকট্রিসিটি না থাকলে তো অক্সিজেনের অভাবে তাদের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে যাবে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অলিগলিতে নিয়ম মানা হচ্ছে না
ঢাকার শেওড়াপাড়া-পীরেরবাগ রোডে রাত সাড়ে ৯টায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার প্রায় প্রতিটি দোকানই খোলা৷ সরকারের বিধিনিষেধ না মেনে রাত ৮টার পর দোকান খোলা রাখার কারণ জানতে চাইলে এক দোকানি বলেন, ‘‘ব্যবসাপাতির অবস্থা ভয়াবহ৷ তার মধ্যে এত জলদি দোকানপাট বন্ধ করলে ব্যবসা করবো কীভাবে?’’ অনেকেই দাবি করেন, বিদ্যুৎচালিত ফ্যান-লাইট বন্ধ করে তারা রিচার্জেবল লাইট ব্যবহার করছেন যেন বিদ্যুতের কোনো সমস্যা না হয়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
উৎপাদন খরচ বেড়েছে
ঢাকার মিরপুর ১৩-র জকি গার্মেন্টসের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান রাসেল আহমেদ বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবন থাকায় লোডশেডিং কম হয়৷ তবে যদি ১ ঘণ্টায় ইলেকট্রিসিটি না থাকে, আমাদের জেনারেটর চালানোর জন্য ডিজেল খরচ বাবদ ১৬ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়৷ এটা আমাদের উৎপাদন খরচকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান
সরকার গত ১৯ জুলাই থেকে শিডিউল মেনে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার পর থেকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রিচার্জেবল ফ্যান-লাইটের মূল্য বৃদ্ধি করে অন্যায়ভাবে মুনাফা লাভের চেষ্টা করছেন৷ এ প্রচেষ্টা রোধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিতভাবে বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবসায়ীদের সতর্ক এবং জরিমানা করছেন৷
ছবি: Consumer association for Bangladesh
লোডশেডিংয়ের শিডিউল না মানার অভিযোগ
ঢাকার তেজগাঁওয়ের আজিজ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোঃ আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের ব্যবসা পুরাপুরি কারেন্টের সাথে সম্পর্কিত৷ কারেন্ট ছাড়া আমরা পুরা বসা৷ সরকার যে ঘোষণা দিসে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা কারেন্ট থাকবে না, সেই নিয়ম তো মানা হইতেসে না৷ তাছাড়া নির্ধারিত যে সময়ে কারেন্ট যাওয়ার কথা, সে সময়েও যায় না, যায় আগে-পরে কোনো এক সময়ে৷ আমরা প্রস্তুতি রেখেও লাভ হয় না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঢাকার বাইরে ভয়াবহ লোডশেডিং
ঢাকার তালতলা কাঁচাবাজারের শাকসব্জি ব্যবসায়ী নুরুল আমিন জানান, ‘‘আমি গ্রামের বাড়িতে আমার মাকে প্রতিদিন ফোন দেই৷ ফোন দিলেই শুনি কারেন্ট নাই৷ এমনকি অনেক সময় ফোনে চার্জও দিতে পারে না কারেন্টের অভাবে৷ আবার আছে ভোল্টেজের সমস্যা, এই সমস্যার কারণে কারেন্টে চলা অনেক জিনিস নষ্ট হইয়া যায়৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সরকারি অফিস-আদালতে নির্দেশনা পালন
ঢাকার মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এয়ার কন্ডিশনার কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এর কারণ জানতে চাইলে এক কনস্টেবল বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারি অফিসে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার পর ওসি স্যার এই উদ্যোগ নিয়েছেন৷ এছাড়া প্রাকৃতিক আলো বাতাসের জন্য কক্ষে স্থায়ীভাবে লাগানো জানালাগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দাম বাড়ানোর যুক্তি
ঢাকার স্টেডিয়াম মার্কেট, চকবাজারসহ একাধিক পাইকারি ও খুচরা ইলেকট্রনিক্সের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রিচার্জেবল সকল পণ্যের দাম বেড়েছে দুইশ থেকে হাজার টাকা৷ যথেষ্ট মজুদ থাকার পরও দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, এটা বাজারের নিয়ম, চাহিদা বেশি থাকলে দাম বাড়বেই৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘এ সমস্যা ক্ষণস্থায়ী’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাপী কিন্তু জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের সংকট চলছে৷ কোভিড পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হওয়ায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান আবার খুলেছে এবং তেল-গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে৷এর সাথে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংকট৷ আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ এই সংকটের অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে৷’’