1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাড়ছে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

২০ নভেম্বর ২০১৮

#মি টু আন্দোলন ইউরোপ-অ্যামেরিকা পেরিয়ে ভারত হয়ে এখন বাংলাদেশে৷ দেরিতে হলেও শুরু হয়েছে #মি টু ঝড়৷ যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠছে শিল্পপতি, শিক্ষক, সাংবাদিক, আবৃত্তিকার, প্রয়াত নাট্যকারসহ সমাজের নানা পেশার মানুষের বিরুদ্ধে৷

Me Too-Proteste in Bangladesch
ছবি: bdnews24.com

 প্রথমে শিল্প গ্রুপের মালিকের বিরুদ্ধে মডেল-অভিনেত্রীর অভিযোগ, এরপর নামকরা একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তারই সাবেক সহকর্মীর মেয়ের অভিযোগ, একটি ইংরেজি দৈনিকের এক সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাবেক নারী সাংবাদিকের অভিযোগের পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আঙুল তুললেন একজন সংবাদপাঠক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বের দিকে৷ বাংলাদেশে যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়৷ 

রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রিয়তির অভিযোগ

গত ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশের রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফেসবুকে #মি-টু'-তে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন আয়ারল্যান্ডপ্রবাসী মডেল অভিনেত্রী মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি৷ সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালের মে মাসে বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে কাজ করার পেমেন্ট আনতে রফিকুলের অফিসে গিয়েছিলেন তিনি৷ রফিকুল ইসলাম হঠাৎ করে টেবিল থেকে উঠে এসে তার জামার ভিতর হাত ঢুকিয়ে দেন৷ প্রিয়তি পরে কোথাও তার সঙ্গে সময় কাটানো আশ্বাস দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে বের হন৷ তিনি জানান, সেদিন রুম থেকে বের হয়ে একজনকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদেছেন৷ এরপর তিনি অপেক্ষা করছিলেন কতদিনে দেশ ছাড়বেন৷ অবশেষে তিন বছর পর মুখ খুললেন প্রিয়তি৷

‘ওই মেয়েকে চিনি না, ফালতু বিষয় নিয়ে কথা বলব না’

This browser does not support the audio element.

ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে ফেসবুকে প্রিয়তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফেসবুকেই বলেন, ‘‘ওই লোকটা ক্ষমতাধর৷ সে নানাভাবে হুমকি দিয়েছে৷ দেখে নেয়ার কথাও বলেছে৷ এখনো সে বলে আয়ারল্যান্ড খুব দূরে নয়৷''

প্রিয়তির পুরো অভিযোগটাই অস্বীকার করেছেন রফিকুল ইসলাম৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি ওই মেয়েকে চিনি না৷ ফালতু বিষয় নিয়ে আমি কথা বলব না৷ তবে আপনি পারলে তাকে আমার সামনে নিয়ে আসেন৷ তখন দেখব সে আমাকে চেনে কিনা৷ সামনে নির্বাচন, আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী৷ আমার প্রতিপক্ষ আছে, তারাই ওকে ব্যবহার করে এটা করছে৷ আমার প্রতিষ্ঠানের ৫০টি অ্যাড আছে৷ কোন মডেল কী অ্যাড করে, এগুলো আমি জানি না৷ এর জন্য আলাদা লোক আছে৷ তারাই ভালো বলতে পারবে৷ শেষ কথা, আমি ওকে চিনি না৷''

সাংবাদিক প্রণব সাহার বিরুদ্ধে সীমন্তির অভিযোগ

দ্বিতীয় অভিযোগ নিয়েই মূলত বাংলাদেশে দমকা হাওয়া থেকে ঝড় বইতে শুরু করেছে৷ অভিযোগ উঠেছে ডিবিসি টেলিভিশনের সাংবাদিক প্রণব সাহার বিরুদ্ধে৷ অভিযোগকারী তারই এক সময়ের সহকর্মী ও প্রেমিকা সুপ্রীতি ধরের মেয়ে শুচিস্মিতা সীমন্তি৷ বর্তমানে নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত সীমন্তি অভিযোগ তুলেছেন, ১১ বছর আগে, যখন তার বয়স ১৬ বছর, তখন তার শরীরে অভিযুক্ত ব্যক্তি বহুবার আপত্তিকরভাবে স্পর্শ করেছেন৷ ৩০ অক্টোবর ফেসবুকে #মি-টু নিয়ে অভিযোগ করে সীমন্তি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সবার অগোচরে এই বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি৷ তার হৃদয়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল৷ গত ৪ নভেম্বর প্রণব সাহার অফিসে একটি ই-মেল দিয়ে লিখিত অভিযোগও করেছেন সীমন্তি৷

ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে সীমন্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফেসবুকে লিখে তিনি জানান, ‘‘প্রিয়তি আপুর ইস্যু বা আমারটা নিয়ে অপব্যাখ্যা করে অনেকেই ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন৷ সোশাল মিডিয়াতে রঙ-চং মাখিয়ে অনেক কিছু লেখা হচ্ছে৷ এভাবে যদি একজন অপরাধী পার পেয়ে যায়, তাহলে এমন নির্যাতনের শিকার আর কোনো মেয়ে মুখ খুলতে সাহস পাবে না৷ আমি মুখ খোলার পর অনেকে গুজব বলে ঘটনার মোড় ঘুরানোর চেষ্টা করছে৷ এটা খুবই দুঃখজনক৷ আমাদের সোসাইটিতে অনেক শিক্ষিত মানুষও ভিকটিমের দিকে আঙুল তুলছেন৷ তাদের জন্য শুধুই করুণা৷ আমি মুখ খোলার পর অনেকে আমার ফ্যামিলি নিয়ে অনেক আজেবাজে কিছু বলছে৷ সারপ্রাইজিং ব্যাপার হলো, তাদের কেউ কেউ বেশ প্রোগ্রেসিভ-শিক্ষিত বলেই পরিচিত৷ তাদেরকেও আমার করুণা৷ আমি ভাবি, নিজের ফ্যামিলিতে এমন হলে তারা কী করতেন? কাউকে কিছু বলা লাগবে না– এই বলে ভিকটিমকে চুপ করিয়ে দেন তারা৷''

‘যে অভিযোগ উঠেছে তার পুরোটাই মিথ্যা’

This browser does not support the audio element.

সীমন্তির এই অভিযোগের পর বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকরা একত্রিত হয়েছেন৷ তবে সেখানে এখন ভাঙনের সুর৷ প্রণব সাহার বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথাও বলেছেন কেউ কেউ৷ আবার অনেকেই সরেও গেছেন৷ সর্বশেষ সুলতানা কামাল, খুশি কবীর ও নাসিমুন আরা হক মিনু ডিবিসি অফিসে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ কর্তৃপক্ষ তাঁদের তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন৷ এ নিয়ে একটি কমিটির করার কথাও বলেন নারীনেত্রীরা৷

বিষয়টি নিয়ে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে সাংবাদিক প্রণব সাহার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি নতুন কিছু বলব না, যা বলার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেছি, যা বিবিসিতেও এসেছে৷ আমার বক্তব্য ওটাই৷'' 

ঘটনার পর ফেসবুকপোস্টে প্রণব সাহা অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, সীমন্তির মায়ের সঙ্গে তার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ঘনিষ্টতা ছিল৷ তখন দু'জনেই প্রথম আলোতে চাকরি করতেন৷ ২০০৪ সালের দিকে প্রেমের সম্পর্কের সময় সুপ্রীতির মেয়ে সীমন্তি ও ছেলে সৌম্যকে নিজের সন্তানের মতো দেখেছেন বলেও দাবি করেন সিনিয়র সাংবাদিক প্রণব সাহা৷ ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি পরিস্কার করে বলতে চাই, সন্তানতুল্য সীমন্তি যে এক যুগ পর এমন অভিযোগ তুলতে পারে, সেটাই আমার জন্য বড় পীড়াদায়ক৷'' বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি জানান, ইতিমধ্যে কোনো পক্ষ নিয়েছেন এমন কাউকে কমিটিতে রাখা হোক তা তিনি চান না৷

সংবাদ পাঠক জামিলের বিরুদ্ধে হোসনার অভিযোগ

রফিকুল ইসলাম এবং প্রণব সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা দু'জনই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন৷ তবে  আসমাউল হোসনা বাংলাদেশেই থাকেন৷ সিপিডির পাবলিকেশন্স অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কাজ করছেন তিনি৷এর আগে কিছুদিন সংবাদপত্রেও কাজ করেছেন৷ আসমাউল হোসনার অভিযোগ সংবাদ পাঠক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জামিল আহমেদের বিরুদ্ধে৷ গত ৭ নভেম্বর ফেসবুকেই বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি৷

‘আমার এই আন্দোলন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য’

This browser does not support the audio element.

সেখানে তিনি জানান, ঘটনাটি ২০১৩ সালের৷ তিনি তখন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী৷ জামিল আহমেদের সঙ্গে সেদিনের আগেও দু'বার দেখা হয়েছে তাঁর৷ সেই বিকেলে তাঁরা শিল্পকলায় আড্ডা দেন৷ সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাসায় ফেরার জন্য আড্ডা থেকে ওঠেন হোসনা৷ শিল্পকলার ক্যান্টিন থেকে মৎস্য ভবনের  গেইটের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি৷ হোসনার দাবি, হাঁটতে হাঁটতেই জামিল আহমেদবলেন, ‘‘আমি তো তোমার বাবার বয়সি, তারপরও আমরা ভালো বন্ধু হতে পারি, কি বলো?'' এ কথা বলতে বলতে জামিল আহমেদ হোসনার বাম কাঁধে হাত রেখে দুদকের অফিসের পাশ দিয়ে একটু হাঁটার অনুরোধ করেন৷ তখন অন্ধকার নেমেছে৷ রাস্তায় কোনো লোক ছিল  না৷ হোসনার ভাষায় তারপর, ‘‘কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটি আমাকে জোর করে ধরে চুমু খেলো আর আমার শরীরে বাজেভাবে হাত দেওয়া শুরু করলো৷ আমি প্রচণ্ড ভয় পেলাম৷ তাড়াতাড়ি তাকে ধাক্কা দিয়ে মৎস্য ভবনের দিকে দৌড়াতে লাগলাম৷ রাস্তা পার হয়ে একটি রিক্সায় উঠে পড়লাম৷ ওই দিন সারারাত আমি ঘুমোতে পারিনি৷''ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে হোসনা বলেন, ‘‘অনেকেই আমাকে বলছেন, এত দেরি করে অভিযোগ কেন? আমি মনে করেছি, এটাই উপযুক্ত সময়, তাই করেছি৷ আমাকে মানষিকভাবে ও পারিবারিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এই অভিযোগ করতে হয়েছে৷ এটাকে আমি আন্দোলন হিসেবেই দেখি৷ আমার এই আন্দোলন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য৷''

জামিল আহমেদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল৷ তবে তিনি ‘‘আমি এখন লিফটে, পরে আপনাকে ফোন করব'' বলে পরে আর কথা বলেননি৷

‘নিপীড়কদের আসল চেহারা উন্মোচন করতে চাই, এটাই মিটু’র আসল উদ্দেশ্য’

This browser does not support the audio element.

ডেইলি স্টারের সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাবেক সহকর্মীর অভিযোগ

ডেইলি স্টারের কূটনৈতিক প্রতিবেদক রেজাউল করিম লোটাসের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন তারই সাবেক সহকর্মী আলফা আরজু৷ বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী এই নারী সাংবাদিক ফেসবুকে দাবি করেছেন, একদিন অফিস শেষে লোটাসের গাড়িতে তিনি বাসায় ফিরছিলেন৷ পথে লোটাস তাঁর গায়ে আপত্তিকরভাবে হাত দেন৷ ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি করেছে৷ অনলাইনে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তারা এই তদন্তের কথা জানায়৷ এ বিষয়ে জনাব লোটাস কিছু বলতে রাজি হননি৷ তবে তার স্ত্রী রোজিনা রহমান ফেসবুকে একটা পোষ্ট দিয়ে তাদের পারিবারিক অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন৷ সেখানে তিনি এই আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, আলফা আরজুর সঙ্গে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে৷ গত ১০ বছর ধরে আরজু ফেসবুকে লোটাসের বন্ধু হিসেবেই আছেন৷ সেখানে বিভিন্ন সময় তাদের পারিবারিক ছবি, লোটাসের ব্যক্তিগত ছবিসহ বিভিন্ন স্ট্যাটাসে শুভেচ্ছামূলক মন্তব্য করেছেন আলফা আরজু৷ তাই রোজিনার প্রশ্ন, ‘‘একজন ব্যক্তির প্রতি যদি এত ক্ষোভ থাকে, তাহলে এতদিন কেন তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন?''  

আরো কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ

গত ১০ নভেম্বর তাসনুভা আনান নামে এক অভিনেত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান ‘পাঠক সমাবেশ'-এর কর্ণধার শহীদুল ইসলাম বিজুর বিরুদ্ধে৷ তাসনুভা তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, পাঠক সমাবেশের গুলশান ব্রাঞ্চে চাকরি দেওয়ার কথা বলে একদিন শহীদুল ইসলাম বিজু তার অফিস কক্ষের দরজা বন্ধ করে জোর করে চুমু খান এবং নিজের গোপনাঙ্গ প্রদর্শন করেন৷ চিৎকার করতে চাইলে বিজু দরজা খুলে দেন এবং তাসনুভা সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন৷

ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে শহীদুল ইসলাম বিজু জানান, তিনি এখন আর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না৷ তবে এর আগে তিনি সংবাদ মাধ্যমের কাছে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘এগুলোর সত্যতা কিছুই নেই৷ আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি৷''

গত ১১ নভেম্বর জাকিয়া সুলতানা মুক্তা নামের এক তরুণী ফেসবুকে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন আবৃত্তিকার মাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে৷ মাহিদুল ইসলামের আবৃত্তি সংগঠন সংবৃতায় যুক্ত হওয়ার পর একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে কবিতা আবৃত্তি অনুশীলনের সময় মাহিদুল ইসলাম জোর করে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছেন বলে মুক্তার অভিযোগ৷ সহপাঠীরা এসে পড়ায় ঘটনা আর বেশি দূর গড়ায়নি৷

‘এখন যে আন্দোলনটা শুরু হয়েছে, এটা আগেই হওয়া দরকার ছিল’

This browser does not support the audio element.

অভিযোগ যথারীতি অস্বীকার করেছেন মাহিদুল ইসলাম৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি ৩০ বছর ধরে আবৃত্তির সংগঠন চালাই৷ এই ৩০ বছরে অন্তত ২০ হাজার শিক্ষার্থী আমার হাত ধরে বের হয়েছে৷ এর মধ্যে অন্তত ১০ হাজার নারী শিক্ষার্থী ছিল৷ আমার শাসনে যদি কেউ মনে রাগ পুষে রাখে এবং এখন সেটা নিয়ে অভিযোগ করে, তাহলে কী বলব? আমি মামলা করতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু পরিস্থিতি তো সেরকম নেই৷ আমি নিজেও এই আন্দোলনের পক্ষে৷ অথচ আমার বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ আনা হলো৷ আমার ঘনিষ্ঠজনরাও আমার পক্ষে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না, যদি তাদের বিরুদ্ধেও আবার একই অভিযোগ করা হয়! তবে আমি এটা বলতে পারি, যে অভিযোগ উঠেছে তার পুরোটাই মিথ্যা৷ এটাকে একটা ষড়যন্ত্রই মনে হচ্ছে আমার কাছে৷''

আরেকটি অভিযোগ নিয়ে বেশ শোরগোল শুরু হয়েছে৷ এ অভিযোগ প্রয়াত শিক্ষক, নাট্যকার সেলিম আল দীনের বিরুদ্ধে৷ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তার প্রথম ব্যাচের ছাত্রী মুশফিকা লাইজু৷ লাইজু লিখেছেন, ‘‘এই মহান শিক্ষক এক বিকালে দুটো বই আনতে তার বাসায় যেতে বলেন৷ এটা ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা৷ সেখানেই একা পেয়ে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং চুমু খান৷ বড় ওভারকোট থাকায় সম্মান নিয়ে কোনোমতে দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পাই আমি৷'' ওই ঘটনার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ই ছেড়ে দেন বলে জানিয়েছেন লাইজু৷   

এত বছর পরে ঘটনাটি প্রকাশ করার কারণ জানাতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি কোনো বিচার চাই না, শুধু এইটুকু প্রত্যাশা, যারা এখনো এই ধরনের নিপীড়নের সাথে যুক্ত আছেন, তাদের বল, দিন বদলে গেছে৷ আগামী পৃথীবির কাছে সব পাপের, অন্যায়ের হিসাব বুঝে দিতে হবে৷''

রবিবার জাতীয় প্রেসকাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেন লাইজু৷ সেখানে নিপীড়নের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি আশির দশকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম৷ সেলিম আল দীনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হয়েছি৷ এখন মাথা উঁচু করে ৩১ বছর পরে আমার কষ্টের কথাটা বলতে পেরেছি৷ আমি আমার ট্রমার কথাটা বলতে পেরেছি৷ সেজন্যই আমি এখানে এসেছি৷''

নিপীড়কদের সতর্ক হওয়ার আহ্বান

#মি-টু আন্দোলনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন অনেকে৷ গত রবিবারও জাতীয় প্রেস কাবের সামনে একটি মানববন্ধন হয়৷ সাংবাদিক, শিক্ষক, লেখক, কবিসহ বিভিন্ন পেশার নারীরা তাতে অংশ নেন৷ এর একদিন আগে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে আরেক মানবন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন নারী সাংবাদিকরা৷ রবিবার বিভিন্ন পেশার নারীদের উদ্যোগে ‘নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াই, নিপীড়কদের ঘৃণা করি; আমরা #মিটু আন্দোলনের পক্ষে, আমরা যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে' শিরোনামে এই মানববন্ধন হয়৷ সেখানে নিপীড়কদের চেহারা উন্মোচনের দাবি জানানো হয়৷ পাশাপাশি যেসব নারী এখন পর্যন্ত অভিযোগ নিয়ে সামনে এসেছেন, তাঁদের নিরাপত্তা দেয়ারও দাবি জানান তাঁরা৷

মানববন্ধনে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, ‘‘নারীরা মুখ খুলেছেন, তাঁরা শুধু মুখ খোলেননি, সমাজে নিপীড়কদের চেহারা, তাদের চরিত্র ও পরিচয় উন্মুক্ত করেছেন৷ এসব নারীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘#মিটু আন্দোলনে দেখেছি, কিছু কিছু ব্যক্তি আমাদের পরিচিত৷ প্রগতিশীল লেবাসধারী হয়ে তারা মনে করছে, একটা অসহায় ও দুর্বল মেয়ের গায়ে হাত তুলতে পারবে৷ এই মেয়েরা আজ মুখ খুলছে৷মিটু আন্দোলনে শুধু নয়জনই না, আস্তে আস্তে সকল নারীরা মুখ খুলবে এবং এদের সবার চেহারা উন্মোচন করবে৷ যাঁকে নিপীড়ন করা হয়েছে, তাঁকে আমরা দোষারোপ করব না৷ নিপীড়কদের আসল চেহারা আমরা উন্মোচন করতে চাই৷ এটাই মিটু'র আসল উদ্দেশ্য৷''

সাংবাদিক প্রণব সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য কমিটি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে খুশি কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তারা ইন্টারন্যাল একটা তদন্ত কমিটি করেছে বলে শুনেছি৷ তবে আমি কোনো তদন্ত কমিটিতে নেই৷ আর আমাদের সঙ্গে কথা অনুযায়ী তদন্ত কমিটি করলে আমাদের জানানোর কথা৷ তারা এখনো কিছুই জানায়নি৷''

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ওঠাযৌন নিপীড়নের অভিযোগেরসার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার কারণে মানুষ আদালতে যেতে চান না৷ আর এই অভিযোগগুলো তো আদালতে প্রমাণ করা কঠিন৷ তাই অনেকেই নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়কে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুলে ধরছেন৷ অন্তত বিচার না পেলেও মানুষ তো বিষয়টি জানছে৷ তবে এখানে একটা আশঙ্কাও আছে, কেউ যদি কাউকে হেয় করতে চান, তাহলে মিথ্যা অভিযোগও তুলতে পারেন৷ তখন কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তির এক ধরনের সামাজিক মাধ্যামে ট্রায়েল হয়ে যাচ্ছে৷ এটা কিন্তু ভয়ঙ্কর৷ অবশ্য কোনো নারী নিজেকে জড়িয়ে এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলবেন বলে আমার মনে হয় না৷ তিনি মনে করেন, ‘‘এখন যে আন্দোলনটা শুরু হয়েছে, এটা আগেই হওয়া দরকার ছিল৷ এতে অনেকেই সচেতন হবেন৷ নারীদের এ বিষয়ে সাহস করে এগিয়ে আসতে হবে৷''   

রবি বারের মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, সাংবাদিক শাহনাজ শারমিন, শারমিন রিনভী, উদিসা ইমন, সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, শেখ মামুন, নাদিয়া শারমিনসহ বিভিন্ন পেশার নারী-পুরুষ বক্তব্য দেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ