1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে বৈধের চেয়ে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বেশি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ মে ২০২২

অনুমতি ছাড়াই বাংলাদেশজুড়ে চলছে হাজার হাজার হাসপাতাল ও ক্লিনিক৷ এজন্য প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা৷

BHangladesch Dhaka Medical College und Krankenhaus
ছবি: DW

গত দুই দিনে সারাদেশে প্রায় নয়শ অবৈধ বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ বন্ধ করে দেওয়া ক্লিনিক ও হাসপাতালের সংখ্যা সারাদেশে যে পরিমাণ অনুমোদনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে এর তুলনায় সামান্য বলে বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে৷

আর বাংলাদেশে যত বৈধ বেসরকারি স্বাস্থসেবা প্রতিষ্ঠান আছে অবৈধ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি৷

ঢাকার অদূরে সাভার ও আশুলিয়ায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ৪০টি৷ কিন্তু সে এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান আছে ১১৭টি৷

সাভার বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল হালিম বলেন, ‘‘ওই ৪০টি ক্লিনিকই আমাদের সদস্য৷ বাকি যে আরো শতাধিক ক্লিনিক আছে তাদের আমরা সদস্যপদ দেইনি৷ কারণ তাদের কারুরই লাইসেন্স নাই৷ কিন্তু তারা বছরের পর বছর ধরে ক্লিনিক চালাচ্ছে৷ এমনকি এক রুমের ঘর ভাড়া নিয়েও কেউ কেউ ক্লিনিক খুলে বসেছেন৷ হাতুড়ে ডাক্তার আর নার্স দিয়ে চালাচ্ছেন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এরা কেউ ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ক্লিনিক চালান৷ আবার কেউ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেই ক্লিনিক চালু করে দেন৷’’

এটা কীভাবে সম্ভব হয়  জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা সবাই জানে৷ আমি আর কী বলব৷ আমরা সমিতির পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরেই ওইসব অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতাল বন্ধের দাবি করে আসছি৷ আমরা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে অভিযান করেও বন্ধ করতে পারিনি৷’’

অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে যাদের লাইসেন্স নাই, ডাক্তার নাই, নার্স নাই: ডা. মো. মনিরুজ্জামান

This browser does not support the audio element.

তবে আরেকজন ক্লিনিক মালিক অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্যবিভাগের কিছু কর্মকর্তা এবং পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় এইসব অবৈধ ক্লিনিক চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে৷ মাঝে সাময়িক বন্ধ করে দিলেও কয়েকদিন পর সমঝোতার ভিত্তিতে আবার চালু হয়৷

কত বৈধ, কত অবৈধ?

সারাদেশে বৈধ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়গনিস্টিক সেন্টারের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫৫টি৷ আর ডায়গনিস্টিক সেন্টার আছে ছয় হাজারের মত৷

১২ হাজার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের বিপরীতে অবৈধের সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি বলে ধারণা করা হয়৷ আর সরকারের এই অভিযানে এমন ধারণা স্পষ্ট হচ্ছে৷

যেমন সাভারে বৈধ ক্লিনিকের চেয়ে অবৈধ ক্লিনিক প্রায় তিনগুন বেশি৷ ময়মনসিংহেও একই অবস্থা৷ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের চিত্র সবখানেই প্রায় একই রকম বলে জানা গেছে৷

বরিশালে অবৈধ ক্লিনিক নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে রবিবার হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা৷

এদিকে, উদ্বেগ শুধুমাত্র অনুমোদনহীন ক্লিনিক বা হাসপাতাল নিয়েই নয়৷ কেননা বৈধ ক্লিনিকেরও একটি অংশ মানসম্পন্ন নয় বা লাইসেন্সের শর্ত পূরণ করছে না৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘‘আমরা অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক নিজেদের উদ্যোগেই বন্ধ করার জন্য ৭২ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়েছিলাম৷ সেটা শেষ হওয়ার পর দুই দিন ধরে সারাদেশে অভিযান শুরু হয়েছে৷ এপর্যন্ত আমরা ৮৮২টি বন্ধ করে দিয়েছি৷ আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে৷ অবৈধ ক্লিনিক-হাসাপাতালের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে৷ তবে সঠিক সংখ্যা বলা সম্ভব নয়৷’’

এদিকে, অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স থাকলেও তারা শর্ত মানছে না৷ অনেকের লাইসেন্সও নবায়ন করা নেই৷ লাইসেন্স দেয়া হয় এক বছরের জন্য, এক বছরের পর আবার নবায়ন করতে হয়৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের একজন সাবেক পরিচালক জানান, ঢাকা ছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্লিনিকের লাইসেন্স যখন দেয়া হয় তখন ডাক্তার, নার্স, যন্ত্রপাতি ভাড়া করে আনে মালিক কর্তৃপক্ষ৷ সেটা দেখিয়ে তারা লাইসেন্স নেয়৷ ফলে অনেক ক্লিনিকই বাস্তবে শর্ত পূরণ করে না৷ এটা পরিদর্শক দলও জানে৷ সমঝোতার ভিত্তিতেই হয়৷

হাসপাতাল ও ক্লিনিক করার শর্ত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, হাসপাতাল বা ক্লিনিকের লাইসেন্স পেতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়৷ ১০ শয্যার একটি ক্লিনিকের লাইসেন্স পেতে হলে ওই ক্লিনিকে কমপক্ষে তিনজন এমবিবিএস ডাক্তার, ছয়জন নার্স ও দুইজন ক্লিনার থাকতে হবে৷

প্রত্যেকটি বেডের জন্য কমপক্ষে ৮০ বর্গফুট জায়গা থাকতে হবে৷ আপারেশন থিয়েটার হতে হবে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত৷ সেইসাথে আধুনিক যন্ত্রপাতি যা থাকতে হবে তার একটি তালিকাও দেয়া আছে৷

আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে: ডা. মো. বেলাল হোসেন

This browser does not support the audio element.

এর সঙ্গে থাকতে হবে ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন নম্বর, বিআইএন নম্বর, পরিবেশ ও নারকোটিকস বিভাগের লাইসেন্স৷

আউটডোর, জরুরি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার সব ক্লিনিকের জন্য বাধ্যতামূলক নয়৷ হাসপাতালের ধরন অনুয়ায়ী শর্ত নির্ধারণ করা হয়৷

হাসাপতাল বা ক্লিনিকের লাইসেন্সের আবেদন করার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন উপপরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল সরেজমিন তদন্ত করে লাইসেন্স প্রদান করেন৷ লাইসেন্সের শর্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একই তবে লাইসেন্স ফি প্রদানে পার্থক্য রয়েছে৷

এক ইউনিটের একটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সর্বনিম্ন ১০টি শয্যা থাকতে হবে৷  শয্যা সংখ্যা বেশি হলে আনুপাতিক হারে জনবল এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যা করছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. বেলাল হোসেন মানহীন ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করা হচ্ছে জানিয়ে বলেন, ‘‘তাদেরও একটি সময় বেধে দেয়া হচ্ছে৷ সেই সময়ের মধ্যে তারা সবকিছু ঠিকঠাক না করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ এখন যেগুলো বন্ধ করা হচ্ছে তাদের লাইসেন্স তো দূরের কথা সাধারণ ট্রেড লাইসেন্সও নাই৷’’

অনুমোদানহীন ক্লিনিক ও হাসপাতাল এতদিন কীভাবে চলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এতদিন চলেছে এখন বন্ধ করা হচ্ছে৷ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশমত আমরা বন্ধ করছি৷''

আর এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক শ্রেণির কর্মকর্তার অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান৷

বাংলাদেশ বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি ডা. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘‘আমাদের সদস্য সংখ্যা ১১ হাজার৷ তারা সবাই লাইসেন্সপ্রাপ্ত৷ তবে অনেক অবৈধ প্রতিষ্ঠান আছে৷ তাদের বিরুদ্ধে আমরা এই অভিযানকে স্বাগত জানাই৷’’

তিনি দাবি করেন, ‘‘যাদের লাইসেন্স আছে কিন্তু শর্ত পুরণ করছে না তাদের অবৈধ বলা যাবে না৷ তবে তাদের শর্ত পূরণের জন্য মনিটরিং-এর আওতায় আনা দরকার৷’’

তার কথা, ‘‘অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে যাদের লাইসেন্স নাই, ডাক্তার নাই, নার্স নাই৷ তারা এতদিন কীভাবে টিকে আছে এই প্রশ্ন আমাদেরও৷’’

করোনা মহামারির সময়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার করুণ পরিস্থিতি নিয়ে ছবিঘর... 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ