বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে কেন এত উন্মাদনা
আবু সাদাত
অতিথি সংবাদভাষ্য
১৮ নভেম্বর ২০২২
‘বাংলাদেশিদের প্রেম ফুটবলের সঙ্গে, কিন্তু সংসার করছে ক্রিকেটকে নিয়ে৷’ প্রচলিত এই কথাটি আমার মতো খেলাপাগল প্রায় সবাই খুব ভালো ভাবে টের পাই ফুটবল বিশ্বকাপ এলে৷
বিজ্ঞাপন
বাড়ির ছাদ, বারান্দা, কিংবা পাড়া মহল্লার অলিগলি৷ সবখানে পতপত করে উড়তে থাকে হাজার হাজার মাইল দূরের দেশ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি কিংবা স্পেনের পতাকা৷
এই তো সপ্তাহ দুয়েক আগে অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে চোখ আটকে গেলো পাশের বাসার ছাদে৷ বিশাল আকৃতির জার্মানির পতাকা৷ ওপরে অবশ্য ছোট করে বাংলাদেশের পতাকাও আছে৷ কিন্তু আমি খানিকটা অবাক হয়েছি, পতাকাটা জার্মানির বলে৷ কারণ বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ যেখানে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলে বিভক্ত, সেখানে জার্মান ভক্তের এমন সরব উপস্থিতি৷
বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে এই উন্মাদনা যে শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক, তা কিন্তু নয়৷ গত সপ্তাহে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে মিন্টু নামের একজন শখের বাগান বিক্রি আর স্ত্রীর জমানো মোট ৫ লাখ টাকা দিয়ে নিজের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার লম্বা দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা টানিয়েছেন৷ একই শহরে একজন তার পাঁচতলা বাড়ি ব্রাজিলের পতাকার রংয়ে রাঙিয়েছেন৷ মোটকথা বিশ্বকাপ শুরুর সময় যত ঘনিয়ে আসছে, উন্মাদনা ততোই বাড়ছে৷
বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা কার, কতখানি?
খেলাধুলার তথ্য বিশ্লেষণকারী সংস্থা স্ট্যাটস পারফর্ম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিশ্বকাপে কোন দলের জেতার সম্ভাবনা কতখানি তা জানিয়েছে৷ ভবিষ্যদ্বাণী করতে বাজির দর ও দলগুলোর অতীত ও বর্তমান পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়েছে৷
এটি খেলাধুলার তথ্য বিশ্লেষণকারী একটি সংস্থা৷ স্প্যানিশ ফুটবল লিগ লা লিগা, প্রচারমাধ্যম ইএসপিএন, সংবাদ সংস্থা রয়টার্সসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যম খেলার পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ তুলে ধরতে স্ট্যাটস পারফর্মের তথ্য ব্যবহার করে৷
বিশ্বকাপ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কয়েকটি বেটিং কোম্পানির বাজির দর ও স্ট্যাটস পারফর্মের নিজস্ব টিম ব়্যাংকিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে কাতার বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা কার কতখানি, তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে৷ এছাড়া প্রতি ম্যাচের সম্ভাব্য ফলাফল বিবেচনা করে কে, কোন স্থান অর্জন করে নকআউট পর্যায়ে যেতে পারে এবং সেখানে কে, কার বিরুদ্ধে খেলতে পারে সেই সব বিবেচনা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে৷
পাঁচবারের (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২) বিশ্ব সেরা ব্রাজিল এবার ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছে বলে স্ট্যাটস পারফর্মের ভবিষ্যদ্বাণী বলছে৷ ফিফা ব়্যাংকিংয়েও এক নম্বরে আছে নেইমাররা৷ স্ট্যাটস পারফর্ম বলছে, সেলেসাওদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা ১৫.৮ শতাংশ৷
ছবি: Isabella Bonotto/AFP
এরপরেই আছে আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনার সমর্থক ছাড়াও এবার আরও অনেকে ফুটবলের বিস্ময় মেসির হাতে শিরোপা দেখতে চাইছেন৷ ভবিষ্যদ্বাণী বলছে তাদের সেই সম্ভাবনা ১২.৬ শতাংশ, সে হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনার তালিকায় ব্রাজিলের পরেই আছে দুবারের (১৯৭৮ ও ১৯৮৬) জয়ী আর্জেন্টিনা৷ ফিফা ব়্যাংকিংয়ে দলটি আছে তিন নম্বরে৷ এছাড়া টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত আছে আলবিসেলেস্তেরা৷
ছবি: Odd Andersen/AFP
তিনে ফ্রান্স
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সে এবারও তারকার অভাব নেই৷ এমবাপ্পে ছাড়াও আছেন সদ্য ব্যালন ডি আর জয়ী বেনজেমা৷ লিওনেল মেসিও ফ্রান্সকে বিশ্বকাপের ফেভারিট বলেছেন৷ তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশ্লেষণ জানাচ্ছে, ফিফা ব়্যাংকিংয়ে চার নম্বরে থাকা ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা ১২.২ শতাংশ৷ ১৯৯৮ সালেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স৷
ছবি: Bertrand Guay/AFP
স্পেন চারে
২০১০ সালে একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্পেন৷ স্ট্যাটস পারফর্ম বলছে, এবার তাদের সেরা হওয়ার সম্ভাবনা ৯.১ শতাংশ৷ কারণ কোচ লুইস এনরিকে ও অধিনায়ক সার্জিও বুসকেটসের দলে আছে গাভি, তোরেস, মোরাতা, কারভাহালের মতো ফুটবলার৷
ছবি: Paul White/AP Photo/picture alliance
পাঁচে ইংল্যান্ড
১৯৬৬ সালের পর থেকে ‘ফুটবলের ঘরে ফেরার’ অপেক্ষায় আছেন ইংলিশ সমর্থকরা৷ গত ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছিল থ্রি লায়নসরা৷ এবার দলে আছেন হ্যারি কেন, রহিম স্টারলিং, ফিল ফোডেনের মতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বড় দলে খেলা সব ফুটবলার৷ তাই আবারও আশায় বুক বাঁধছেন সমর্থকরা৷
ছবি: Martin Rickett/PA Wire/picture alliance
জার্মানি ছয়ে
ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার (১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০ ও ২০১৪) বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জার্মানি৷ তবে এবার ফেভারিটের তালিকায় নেই হানসি ফ্লিকের দল৷ গত বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড পেরোতে পারেনি জার্মানি৷ ইউরো ২০২০-এ শেষ ষোলোতে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়েছিল ‘ডি মানশাফট’৷ ফিফা ব়্যাংকিংয়েও দশের মধ্যে নেই জার্মানি৷
ছবি: Markus Ulmer/ULMER/IMAGO
সাতে নেদারল্যান্ডস
১৯৭৪, ১৯৭৮ ও ২০১০ সালে ফাইনালে উঠেছিল নেদারল্যান্ডস৷ তবে একবারও কাপ হাতে নিতে পারেনি৷ এবার কি সেই স্বপ্ন পূরণ হবে লুই ফান খালের দলের?
ছবি: Olaf Kraak/AFP
পর্তুগাল, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক
স্ট্যাটস পারফর্মের ভবিষ্যদ্বাণীর তালিকায় আট, নয় ও দশ নম্বরে আছে পর্তুগাল, বেলজিয়াম ও ডেনমার্ক৷ তারা একবারও বিশ্বকাপ জিততে পারেনি৷ রাশিয়া বিশ্বকাপে ‘গোল্ডেন জেনারেশন’ নিয়ে সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠতে পেরেছিল বেলজিয়াম৷ তবে তাদের সামর্থ্য ক্রমশ কমে যাওয়ায় ফিফা ব়্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন এবারও অধরা থেকে যেতে পারে ক্যাভিন ডি ব্রোইনেদের৷
ছবি: PhotoNews/Panoramic/IMAGO
10 ছবি1 | 10
ক্রীড়া সাংবাদিকতায় আসার আগে থেকেই আমি আর্জেন্টিনার ভক্ত৷ কিন্তু সেদিন আমার পাঁচ বছর বয়সি মেয়ে শব্দ-কে জিজ্ঞেস করলাম, মা, তোমার কোন দল ভালো লাগে, ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা? ওর মা পাশে ছিল বলেই কিনা বেশ চটপট উত্তর দিলো আমি ব্রাজিলের সাপোর্টার৷ কেন, জানতে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, তার জবাব, ‘মা ব্রাজিলের সাপোর্টার তাই আমিও৷’
আমার ধারণা বিশ্বকাপ নিয়ে এই যে বিভক্তি, এটা শুধু আমার বাসায় না৷ খেলা যারা পছন্দ করে এমন সবখানে৷
হাজার হাজার মাইল দূরের অচেনা-অজানা এই দেশগুলোকে নিয়ে বাংলাদেশিদের এই যে আবেগের বহি:প্রকাশ, তা দেখে প্রায়ই মনে প্রশ্নে জাগে, কেন এমন আবেগী আর জোড়ালো সমর্থন৷ শুধু কি একজন মেসি, নেইমার কিংবা রোনালদোর কারণেই এতোটা মাতামাতি, নাকি অন্য কিছু৷
এই কারণ খোঁজার আগে চলুন জানার চেষ্টা করি, ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের এই যে আগ্রহ আর উন্মাদনা ঠিক কবে থেকে শুরু৷ এটা একেবারে দিন তারিখ নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না৷ তবে বাংলাদেশের মানুষের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা বেশ পুরোনো৷ অর্থাৎ স্বাধীনতারও আগে থেকে ক্লাব ফুটবল বেশ জনপ্রিয় ছিলো এই অঞ্চলে৷ সেটা অব্যহত ছিলো ৯০ এর দশক পর্যন্ত৷
বর্তমান প্রজন্মের কাছে ব্যাপারটা একটু অবিশ্বাস্যই মনে হতে পারে৷ অথচ সে সময় আবাহনী-মোহামেডানের একটা ম্যাচকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যেত পুরো দেশ৷ বাড়িতে বাড়িতে উড়তো দুদলের পতাকা৷ খেলাকে কেন্দ্র করে ঝগড়াঝাটি, এমনকি মারামারি পর্যন্ত হতো আবাহনী-মোহামেডান সমর্থকদের মধ্যে৷
কিন্তু ফুটবল কর্তাদের সূদুর প্রসারী কোনো পরিকল্পনা না থাকায়, কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলের সেই সোনালী অধ্যায়৷ স্তিমিত হয়ে গেছে ঘরোয়া ফুটবল নিয়ে সাধারন মানুষের উন্মাদনা৷ কিন্তু নিজেদের রক্তে ফুটবলের মোহনীয় জাদুর যে স্পর্শ সেসময় পেয়েছিল বাঙালি, তা কি কখনো ভোলা যায়? একদমই না৷
ঢাকায় ফুটবল বিশ্বকাপের যত আনন্দ-উন্মাদনা
মরুভূমির দেশ কাতারে শুরু হয়েছে ২২তম ফিফা বিশ্বকাপ। ফুটবলের এই আসরকে ঘিরে ঢাকায় দেখা যাচ্ছে নানা ধরনের উন্মাদনা। তার কিছু চিত্র থাকছে এই ছবিঘরে।
ছবি: Rajib Paul/DW
দেয়ালে বিশ্বকাপ
বিশ্বকাপ উদযাপনের অংশ হিসেবে পুরান ঢাকার টিকাটুলির কেএম দাস লেনের একটি গলি দেয়ালচিত্রে রঙিন হয়ে উঠেছে। এখানে দেখা যাচ্ছে, সাত দেশের বিশ্বখ্যাত ফুটবলারদের চোখ রয়েছে বিশ্বকাপ ট্রফিতে।
ছবি: Rajib Paul/DW
তরুণদের আবেগ
টিকাটুলির স্থানীয় তরুণরা নিজ উদ্যোগে তারকা ফুটবলারদের মুখাবয়ব এঁকেছেন। বর্তমান ফুটবলারদের পাশাপাশি প্রয়াত কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও সাবেক ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনালদিনিয়োকেও সম্মান জানিয়েছেন তারা।
ছবি: Rajib Paul/DW
ছবি তোলার স্পট
কেএম দাস লেনের গলিতে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকার রঙে পাখির ডানা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দেয়ালচিত্রের এই অংশটি এখন স্থানীয়দের কাছে ছবি তোলার আকর্ষণীয় স্পটে পরিণত হয়েছে। চাইলে সেলফিও তোলা যেতে পারে কিন্তু!
ছবি: Rajib Paul/DW
ঢাবিতে বিশ্বকাপের আমেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ঝুলছে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশের পতাকা। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে এই সাজ সাজ রব চোখে পড়ার মতো।
ছবি: Rajib Paul/DW
রঙিন করিডোর
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের অভ্যন্তরেও বিশ্বকাপের আমেজ। নিজেদের প্রিয় দল আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকায় করিডোর সাজিয়ে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
ছবি: Rajib Paul/DW
মাঠের দেয়ালচিত্র
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের পাশের একটি মাঠে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখানো হবে বড় পর্দায়। এজন্য এখানকার দেয়ালে ব্রাজিল ও বাংলাদেশের পতাকা আঁকা হয়েছে। মাঠের গাছে আর্জেন্টিনার পতাকা ঝুলিয়ে রেখেছেন সমর্থকরা।
ছবি: Rajib Paul/DW
বেচাকেনা জমজমাট
গুলিস্তানে ফুটপাত মার্কেটে বিভিন্ন দেশের জার্সির বেচাকেনার রীতিমতো জমজমাট আয়োজন চোখে পড়েছে। দোকানিরা ডয়চে ভেলেকে জানালেন, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের জার্সি কেনার দিকেই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি।
ছবি: Rajib Paul/DW
শিশু-কিশোরদের আনন্দ
বড়দের পাশাপাশি ফিফা বিশ্বকাপ যেন আলাদা আনন্দ যোগ করেছে শিশু কিশোরদের মনে। প্রিয় দলের জার্সি কিনতে চায় তারাও। গুলিস্তান বেলপট্টিতে সন্তানের আবদার মেটাতে কেনাকাটা করতে এসেছেন একজন মা।
ছবি: Rajib Paul/DW
দর্জিদের ব্যস্ততা
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে পতাকা সেলাইয়ে ব্যস্ত দর্জিরা। শনির আখড়ার কদমতলীতে একটি কারখানায় বিভিন্ন দেশের পতাকা তৈরি করতে দেখা গেছে।
ছবি: Rajib Paul/DW
ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা
কারখানা থেকে পতাকা সংগ্রহ করে অনেকে ভ্যানে করে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। শনির আখড়া এলাকায় এই ছবিটি তোলা।
ছবি: Rajib Paul/DW
ক্রেতাদের ভিড়
বিশ্বকাপের আনন্দে মাততে পতাকা কিনতে দোকানে দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকার চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এমনই ছবি ধরা পড়েছে আলোকচিত্রীর ক্যামেরায়।
ছবি: Rajib Paul/DW
শহরের ফেরিওয়ালা
ঢাকায় এখন এদিক-সেদিক পতাকা হাতে ফেরিওয়ালাদের দেখা যাচ্ছে। নবাবপুরের কাপ্তানবাজারে তাদেরই একজন আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন যেন!
ছবি: Rajib Paul/DW
বড় পতাকার প্রতিযোগিতা
কে কার চেয়ে বড় পতাকা রাখবে তা নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে। গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের চার তরুণ প্রিয় দলের পতাকা কেনার আগে মাপ দেখে নিচ্ছে। কারণ, বিশ্বকাপে প্রিয় দলের পতাকাটি নিখুঁত হওয়া চাই।
ছবি: Rajib Paul/DW
সব শ্রেণির মানুষের আগ্রহ
নিম্ন-আয়ের মানুষরাও বিশ্বকাপ জ্বরে ভুগছেন। আফতাব নগরে একজন রিকশাচালক প্রিয় দলের তিনটি পতাকা সাজিয়েছেন নিজের বাহনে।
ছবি: Rajib Paul/DW
ছোট পর্দায় খেলা
বিশ্বকাপের ম্যাচ সরাসরি দেখতে অনেকে টেলিভিশন কিনছেন। ঢাকার পুরানা পল্টনে ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন দলের জার্সি ও ফুটবল দিয়ে দোকানঘর সাজানো হয়েছে ।
ছবি: Rajib Paul/DW
15 ছবি1 | 15
আমার ধারনা ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের এই উন্মাদনা তা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়ার মূল কারিগর আর্জেন্টিনার দিয়েগো ম্যারাডোনা৷ তবে তার সঙ্গে আরও একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ তা টেলিভিশনে খেলা দেখানো৷ এ নিয়েই সেদিন কথা হচ্ছিলো ফুটবল কোচ সাইফুল বারী টিটুর সঙ্গে৷ তিনি তার স্মৃতি হাতরে মনে করছিলেন সেসব দিনের কথা৷ বলছিলেন, বিটিভির পর্দায় ১৯৮২ সালের সেই বিশ্বকাপ এখনো চোখের সামনে ভাসে৷ একদিকে আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা, অন্যদিকে ব্রাজিল দলে জিকো, সক্রেটিসের মতো ফুটবলারদের নৈপুণ্য৷ সঙ্গে ঐ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দল ইতালির পাওলো রসির খেলা এখনো নাকি স্পষ্ট দেখতে পান সাইফুল বারী টিটু৷
তবে তার মতে, এসব খেলোয়াড়দের বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে টেলিভিশন৷
টিটুর সঙ্গে আমিও পুরোপুরি একমত৷ আমার কাছে সবসময়ই মনে হয়, ম্যারাডোনার সেই চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্যের সঙ্গে, ব্রাজিলের শৈল্পিক ফুটবল৷ সবমিলিয়ে লাতিন ফুটবলের প্রতি আরো বেশি বুদ হয়ে যায় বাংলাদেশিরা৷
পেলে-ম্যারাডোনার রেখে যাওয়া সেই ব্যাটন উঠেছে লিওলেন মেসি আর নেইমারদের হাতে৷ যাদের পায়ের যাদুতে তাবত পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীদের মতোই মুগ্ধ বাংলাদেশিরা৷
তারপরও মনে একটা প্রশ্ন চলেই আসে৷ তা হলো, মেসি অনেক বড় খেলোয়াড় তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই৷ কিন্তু ম্যারাডোনার যে জাদু সেটাকে কি ছাপিয়ে যেতে পেরেছেন মেসি? আবার সাফল্যের প্রয়োজনে মাঠের সেই শৈল্পিকতাকে বিদায় জানিয়েছে ব্রাজিল৷ তারপরও কেন, বাংলাদেশের মানুষ এতোটা আবেগী এই দুটো দলকে নিয়ে৷ এর কয়েকটি যুক্তিযুক্ত কারণও আছে৷
• প্রথমত, দেশের ফুটবলে বলার মতো সাফল্য নেই৷ আবার নিকট ভবিষ্যতে যে সাফল্য আসবে তার ছিটেফোঁটা কোন লক্ষণও নেই৷ আবার দেশের ক্লাব ফুটবলের অবস্থাও বিবর্ণ, আকর্ষণহীন৷ ফলে দৈনন্দিন জীবনে নানামুখী সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে থাকা আমার মতো অসংখ্য মানুষ বিনোদনের উপায় খুঁজতে গিয়ে সারাবছর রাত জেগে দেখি ইউরোপের ক্লাব ফুটবল৷ আর চার বছর পরপর আসা বিশ্বকাপ তো আমাদের কাছে রীতিমতো ঈদের আনন্দের চেয়ে বেশি মনে হয়৷
• দ্বিতীয়ত, কাগজে কলমে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও, বাস্তবতা পুরোপুরি উল্টো৷ মন খুলে রাজনীতি, ধর্ম কিংবা নিজের সমস্যা নিয়ে কথা বলতেও আমরা ভয় পাই৷ অথচ দলমতের ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করাতে পারে শুধুমাত্র ক্রিকেট আর ফুটবলই৷ শুধু তাই না, ঘোরতর শত্রুর সামনেও গলা উচিয়ে জানাতে পারি নিজের পছন্দ আর অপছন্দের কথা৷
• আবার জাতিগত ভাবে আমরা বাংলাদেশিরা এমনিতেই খানিকটা উৎসব প্রেমী৷ উপলক্ষ পেলে, হাজারো সমস্যার মধ্যেও, আনন্দ খুঁজি নানাভাবে৷ যা অবশ্যই ইতিবাচক৷ তাই চার বছর পরপর আসা এই বিশ্বকাপ যদি কিছুসময়ের জন্যে হলেও কমিয়ে আনে শত্রু আর মিত্রের দূরত্ব, তবে আনন্দেই কাটুক না আগামী একমাস৷ তাতে জয় হবে ফুটবলেরই৷