বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা সেন্টার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হলো। জমা দেয়া পাসপোর্ট নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে সব ইন্ডিয়া ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার(আইভিএসি) বন্ধ থাকবে। পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না দেয়া পর্যন্ত আইভিএসি বন্ধ রাখার কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইটে বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কবে থেকে আবার আবেদনপত্র নেয়া হবে, তা এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। আগামী কাজের দিনে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে নেয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
বুধবারই বাংলাদেশ থেকে দূতাবাসের ১৯০ জন কর্মী ও তাদের পরিবারকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, তারা নন-এসেনশিয়াল কর্মী বা অত্যন্ত জরুরি কর্মী নন। পদস্থ কর্মী ও কূটনীতিকরা বাংলাদেশে আছেন এবং দূতাবাস খোলা থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসছে ট্রাক ও মেডিক্যাল ভিসা পাওয়া মানুষরা
পেট্রাপোল সীমান্তে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরছে ট্রাক। ফিরছেন ভারতীয়রা। আর আসছেন চিকিৎসা করাতে আসা বাংলাদেশিরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পেট্রাপোল সীমান্তের ছবি
পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল সীমান্ত। এদিকে ভারত। উল্টোদিকে বাংলাদেশের বেনাপোল। স্বাভাবিক সময়ে অত্যন্ত কর্মব্যস্ত সীমান্তের ছবিটা বদলে গেছে। বাংলাদেশ থেকে কিছু ট্রাক ঢুকছে। তবে ভারত থেকে ট্রাক যাচ্ছে না। উপরের ছবিতে বাংলাদেশ থেকে ঢোকা একটি ট্রাকের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সারাদিন ধরে
মঙ্গলবার সারাদিন ধরে ট্রাক ঢুকেছে। বুধবার সকাল থেকেও ঢুকছে। ভারত চাইছে, যত ট্রাক বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পৌঁছেছে, তা পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসতে। মঙ্গলবার একের পর এক ট্রাক বেনাপোল থেকে এভাবেই পেট্রাপোলে ঢুকেছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ৩৫৬টি ট্রাক ভারতে ঢুকেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাণিজ্য বন্ধ
ভারত থেকে কোনো ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকছে না। বাংলাদেশ থেকেও পণ্যভর্তি ট্রাক আসছে না। আসছে ভারতের খালি ট্রাক। ফলে বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষীরা জানিয়েছেন, সরকার কিছুদিন আগে প্রতিবেশী দেশে ৮০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দেয়। ফলে প্রচুর পেঁয়াজভর্তি ট্রাক আটকা পড়ে গেছে। সাবেক সাংসদ ও কৃষক নেতা রাজু শেট্টি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সমস্যার সমাধান করার অনুরোধ করেছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কড়া সুরক্ষা
সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো কড়া করা হয়েছে। বিএসএফের ডিজি এসে পরিস্থিতি দেখে গেছেন। যে সব ট্রাক ঢুকছে, সেই ট্রাকচালকদের কড়া তল্লাশির মুখে পড়তে হচ্ছে। কোনোরকম ঝুঁকি নিচ্ছে না সীমান্ত রক্ষী বাহিনী।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মেডিক্যাল ভিসা থাকলে
বাংলাদেশের নাগরিকদের মেডিক্যাল ভিসা থাকলে তাদের ভারতে আসতে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই ভারতে চিকিৎসার জন্য আসেন। এছাড়া ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশ থেকে আসতে পারছেন। এখন তারাই শুধুমাত্র ভারতে ঢুকতে পারছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ফিরছেন বাংলাদেশিরা
বাংলাদেশি নাগরিক যারা ভারতে ছিলেন, তারা সীমান্ত দিয়ে হেঁটে বাংলাদেশে ফিরছেন। প্রচুর মানুষ এভাবেই ফিরে যাচ্ছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ট্রাকচালকের অভিজ্ঞতা
ট্রাকচালক ইন্দু সিং ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''আমি মুম্বই থেকে যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশ গেছিলাম। সেখান থেকে ফিরছি। তবে খুব কঠিন কোনো পরিস্থিতির মুখে আমাকে পড়তে হয়নি।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ওষুধ দিতে গিয়ে
মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা ধীমান চন্দ্র দেবনাথ বাংলাদেশ গিয়েছিলেন এক আত্মীয়কে ওষুধ দিতে। সেসময়ই ছাত্রদের আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। চারপাশ উত্তাল হয়ে যায়। ফলে তিনি দ্রুত ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঢাকা থেকে বাসে
ঢাকার মালিবাগে ছিলেন গৌতম ঘোষাল। গত ছয় বছর ধরে তিনি বাংলাদেশেই বেশিরভাগ সময় থাকতেন। ড্রাইভিংয়ের ট্রেনিং দিতেন আসানসোলের গৌতম। পরিস্থিতি দেখে তিনি ভয় পেয়ে যান। তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। প্রথম সুযোগেই ঢাকা থেকে বাসে করে সীমান্ত পৌঁছান। তারপর বেনাপোল থেকে চলে আসেন পেট্রাপোলে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বেড়াতে গিয়ে
জলপাইগুড়ির সেনপাড়ার বাসিন্দা দুলাল সরকার তার ঠাকুমাকে নিয়ে বাংলাদেশে ঘুরতে গেছিলেন। পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠার পর তারাও তাড়াতাড়ি ভারতে ফিরে এসেছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
প্রথম সুযোগেই ফিরেছেন
গত ছয় বছর ধরে বাংলাদেশে ছিলেন অজিত কুমার। বগুড়ায় চাকরি করতেন। চোখের সামনে আন্দোলন দেখেছেন। তারপর ভারতে ফেরার প্রথম সুযোগেই দেশে ফিরে এসেছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মুদ্রা ব্যবসায়ীর অভিজ্ঞতা
মুদ্রা ব্যবসায়ী বাপ্পা ঘোষ বলেছেন, ''বাংলাদেশ থেকে এই মুহূর্তে খুব বেশি মানুষ ভারতে আসছেন না আমার মতো মুদ্রা ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি টাকা যে দরে কিনে রেখেছিলাম তা ছেড়ে দিচ্ছি। আমরা মনে করছি, এখন লাভের দিকে তাকালে হবে না। কারণ দর কমছে। সেটা হিসাব করে রেখেই আমরা মূল পুঁজি বাঁচানোর চেষ্টা করছি।'
ছবি: Satyajit Shaw/DW
12 ছবি1 | 12
এর আগে গত ৪ অগাস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি অ্যাডভাইসারি জারি করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে থাকা ভারতীয়দের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে ও গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলা হয়েছিল। ভারতীয় নাগরিকদের ঢাকার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও অনুরোধ করা হয়েছিল। তার জন্য তিনটি এমার্জেন্সি ফোন নম্বরও দেয়া হয়েছিল।
ভারতীয় সীমান্তেও যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। একমাত্র মেডিক্যাল ভিসা থাকলে তবেই আসতে দেয়া হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের সীমান্তে
বুধবার উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি সীমান্তে প্রায় ছয়শ মানুষ এসে ভারতে আশ্রয় চান। বিএসএফ তাদের জিরো পয়েন্টে আটকে দেয়। পুরো বিষয়টি বিএসএফ কর্তাদের জানানো হয়েছে। নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কাউকে ভারতে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে। যারা এসেছিলেন, তাদের ফিরে য়েতে অনুরোধ করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির হলদিবাড়ি সংলগ্ন সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই। সেখানে চা বাগান আছে। সেখানেই বাংলাদেশ থেকে মানুষ এসে ভারতে ঢুকতে চেয়েছিলেন।