1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে মাংস রপ্তানি বাড়াতে চায় ভারত

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২২ জুলাই ২০২২

মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও ভারত বাংলাদেশে মাংস রপ্তানি করতে চায়৷ এ কথা জানিয়ে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে ভারত সরকার৷

Indien Landwirtschaft Milch Rinder Vieh Viehhaltung
ছবি: DW/S. Waheed

তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ভারত বাংলাদশের  আমদানি নীতিসহ সব নীতি মেনে মাংস আগের মতোই রপ্তানি করতে পারবে, কিন্তু বাড়তি কোনো সুবিধা পাবে না৷

কিন্তু ভারত এখন বাংলাদেশে গরু-মহিষের মাংসসহ বিভিন্ন ধরনের মাংস রপ্তানি করতে চায় বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মিট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘এজন্য ভারত বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে৷ সেটার ওপর এখন কাজ হচ্ছে৷”

তিনি বলেন, ‘‘গত ২৪ এপ্রিল নতুন বাণিজ্যনীতি হওয়ার পর থেকে ভারত থেকে মাংস আমদানি বন্ধ আছে৷ কারণ, আমদানি করতে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের অনুমোদ লাগবে৷”

তিনি জানান, ভারত থেকে প্রধানত মহিষের মাংস এলেও, কিছু গরুর মাংসও আসে৷ বাংলাদেশ আমদানি নিষিদ্ধ করেনি৷ নীতি পরিবর্তন করেছে৷

গত এপ্রিলে ভারত থেকে হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি নেয়ার বিষয়টি নতুন শর্ত হিসেবে যোগ করার পর বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে দেয়া এক চিঠিতে ভারত থেকে বাংলাদেশে মাংস রপ্তানির  সুযোগ চেয়েছে নতুন কোনো শর্ত ছাড়াই৷

চিঠিতে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বাংলাদেশ মাংস আমদানিতে শতকরা ২০ ভাগ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে৷ ভারত থেকে হিমায়িত হাড়বিহীন গরুর মাংস আমদানির জন্য ৪-৫ কেজি থেকেই এই কর বসানো হবে৷”

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য সাফটা চুক্তির সুবিধাকে লঙ্ঘন করে৷

তারা বলছে, ভারতীয় কোম্পানিগুলো উচ্চ-মানের ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রক্রিয়াজাত মাংসের বৃহত্তম রপ্তানিকারক এবং বাংলাদেশে তারা অ-প্রতিযোগিতামূলক বাজারের মুখে পড়ছে৷ তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম ডয়চে ভেলের কাছে এই চিঠির কথা স্বীকার করেছেন৷

অল ইন্ডিয়ান বাফেলো অ্যান্ড শিপ মিট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইএমএলইএ) ও বাংলাদেশ মিট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমআইটিএ) বাংলাদেশ সরকারের এসব সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷

বিএমআইটিএ-র সভাপতি শামীম আহমেদ দাবি করেন, ‘‘বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বিশ্বে গড় বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশি৷ বিশ্বে গরুর মাংসের গড় কেজি ৪.২৭ ডলার, অথচ বাংলাদেশে এখন সাত ডলার৷ তাই ভোক্তাদের কম দামে গরুর মাংস দিতে আমদানির কোনো বিকল্প নেই৷”

বাংলাদেশে এখন ৬৭টি প্রতিষ্ঠান ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গরু-মহিষের মাংস আমদানি করে৷

‘ভোক্তাদের কম দামে গরুর মাংস দিতে আমদানির কোনো বিকল্প নেই’

This browser does not support the audio element.

২০১৪ থেকে ২০২২

২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ করে দেয়৷ আর সেটাই হয়েছে বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ৷ এখন বাংলাদেশ গবাদি পশুতে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, গরুর মাংস রপ্তানিও শুরু করেছে৷ বিবিএস-এর সর্বশেষ হিসাব বলছে, দেশে এখন গরুর সংখ্যা দুই কোটি ৪০ লাখ ১৪ হাজার ১৪৪, ২০০৮ সালে যা ছিল ২ কোটি ৫৭ হাজার ৮৫৩৷ এক যুগের ব্যবধানে গরু বেড়েছে ৪০ লাখের বেশি৷ অন্যদিকে দেশে বর্তমানে ছাগলের সংখ্যা এক কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার ২০০, যা এক যুগ আগে ছিল এক কোটি এক লাখ ৫৯ হাজার ৫০৯৷ এক যুগে ছাগল বেড়েছে প্রায় ৬১ লাখ৷

গত এক যুগে ভেড়ার উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ৷ বর্তমানে ভেড়ার সংখ্যা ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৬১৯টি৷ ২০০৮ সালে ছিল চার লাখ ৭৮ হাজার ১৭৷ মহিষের সংখ্যাও বেড়েছে শতকরা ৩০ ভাগ৷ এখন ছয় লাখ ২৯ হাজার ৬৪০টি মহিষ আছে৷ ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল চার লাখ ৩১ হাজারের মতো৷  আর সব মিলিয়ে দুধ দেয় এমন গরু, মহিষ ও ছাগল আছে ১৮ লাখের মতো৷

তারপরও কেন আমদানি?

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দেশে  বছরে ৭.৪ মিলিয়ন টন মাংসের চাহিদার বিপরীতে ৮.৪৪ মিলিয়ন  টন মাংস উৎপাদন হচ্ছে৷ তারপর বিদেশ থেকে হিমায়িত মাংস আমদানি করা হচ্ছে৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪টি দেশ থেকে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন ডলারের হিমায়িত মাংস আমদানি করা হয়৷  বিলাসবহুল হোটেল ও ফুড চেইনের নামে এসব মাংস আমদানি করা হয়৷ সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয় ভারত থেকে৷ ভারতীয় মহিষের মাংস বাংলাদেশে গরুর মাংসের বাজার দখল করছে৷ বিলাসবহুল হোটেল ও ফুড চেইনের নামে আনা হলেও এগুলো সাধারণ বাজারেই বিক্রি করা হয়৷

ভারত ছাড়াও ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে মাংস আমদানি করা হয়৷

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাহ ইমরান বলেন, ‘‘ভারত থেকে গরু-মহিষের মাংস আমদানির সুযোগ দেয়া হলে বাংলাদেশের খামারিরা বিপদের মুখে পড়বে৷ একটি মহল তাদের ব্যবসার স্বার্থে ভারতের মাংস আমদানির পায়তারা করছে৷”

তিনি বলেন, ‘‘ভারত বাংলাদেশে গরু পাঠানো বন্ধের পর তা আসলে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে৷ আমরা এখন গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ এখন তারা মাংস রপ্তানি করে বাংলাদেশের এই শিল্পকে পথে বসাতে চাইছে৷”

তিনি বলেন, ‘‘ভারত  ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বেশি, কারণ, অ্যানিমেল ও পোল্ট্রি ফিডে সরকারের নীতি সহায়ক নয়৷ হালাল-হারামের প্রশ্ন তুলে মিল বোন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এসব ব্যাপারে সরকার সহায়ক নীতি করলে গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকা হবে৷”

আমাদের যে নীতি আছে সেটা মেনেই ভারতকে রপ্তানি করতে হবে

This browser does not support the audio element.

মন্ত্রী যা বললেন

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রোজাউল করিম বলেন, "আমরা বাংলাদেশে গরু-মহিষের মাংস আমদানির পক্ষে নই৷ কারণ, আমরা এখন মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ কিন্তু আমরা আমদানি বন্ধ করতে পারি না৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যে সাপটা চুক্তি আছে, সেই চুক্তি অনুযায়ী আমরা আমদানি একেবারে বন্ধ করলে চুক্তির লঙ্ঘন হবে৷ তবে এ ব্যাপারে আমাদের যে নীতি আছে সেটা মেনেই ভারতকে রপ্তানি করতে হবে৷ এর বাইরে কোনো সুবিধা তারা পাবে না৷”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ভারত থেকে মহিষের মাংস আসে৷ গরুর মাংস আসে না৷ ওটা ওরা ধর্মীয় কারণে পাঠায় না৷”

তিনি বলেন, ‘‘সরকার খামারিদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে৷ আমরা চাচ্ছি পশু খাদ্যের আমদানি নির্ভরতা কমাতে৷”

আর মিল বোন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এটা শুকরের বা হারাম পশু দিয়ে তৈরি হয়৷ তাই হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে মিল বোন আমদানি করা যাবে না৷”

হারুন উর রশীদ স্বপন (ঢাকা)

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ