1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি অনেক উন্নত’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৩ জানুয়ারি ২০১৯

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন একান্ত সাক্ষাৎকারে ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে মানবাধিকারের অবস্থা অনেক ভালো৷''  ভারতের সঙ্গে তিস্তাসহ সব সমস্যার সমাধান এবং রোহিঙ্গা সংকট নিরসনেও আশাবাদী তিনি৷

AK Abdul Momen, Außenminister von Bangladesch
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

ডয়চে ভেলে: রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কি আপনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী: রোহিঙ্গা আমাদের একটা বড় সমস্যা৷ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁদের আশ্রয় দেয়ায় পৃথিবী একটা বড় রকমের জেনোসাইড থেকে রেহাই পেয়েছে৷ তবে তাঁরা আমাদের দেশে বেশিদিন থাকলে এই এলাকায় অস্থিতিশীলতা দেখা দেবে৷ তাতে অনেকের অনেক ক্ষতি হবে৷ যেসমস্ত রাষ্ট্র এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাদের অনেকেরই ক্ষতি হবে৷  সেজন্য এর সামাধান আমাদের অতি তাড়াতাড়ি করতে হবে৷ আমরা আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ওপর বিশ্বাস করেছিলাম যে, তারা যে অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছে সেইভাবে তাদের লোকগুলোকে ফেরত নিয়ে যাবে৷ সেই ব্যাপারে তারা খুব অগ্রসর হচ্ছে না৷ এই পরিস্থিতিতে আমরা চিন্তা করছি কিভাবে এগুলোর মীমাংসা করতে পারি৷ একাধির পরিকল্পনা আমাদের হাতে আছে৷ একটি হচ্ছে, আমরা চাই একটি ‘সেফ জোন ইনসাইড রাখাইন' করতে৷ মিয়ানমারের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোই ওখানে তদারকি করবে৷ এটাতে আমার ধারণা হয়তো মিয়ানমার রাজি হবে৷ বিদেশি শক্তি নয়, তাদেরই আসিয়ান, চায়নাকে দিয়ে একটা সেফ জোন করা৷ এটা ইউএন মডেল৷ আরেকটি হলো, ইন্টারিম পিরিয়ডে তাদের (রোহিঙ্গ) আমরা বিভিন্ন দেশে শেয়ার করতে পারি৷ তাছাড়া এদের আমরা বিভিন্ন কাজে নিয়োগের চিন্তা করছি৷ এরকম একাধিক পরিকল্পনা আছে আমাদের৷ তবে সবগুলিই নির্ভর করছে মিয়ানমারের অবস্থার ওপর৷ তারা কতটুকু সহনশীল হয়, তারা পৃথিবীর আইনগুলো কতটুকু মানে, তার ওপর৷''

ভারত চীনের ভূমিকা এক্ষেত্রে কেমন আশা করছেন?

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভারত ও চীনের বিশেষ ভূমিকা রাখা উচিত৷ কারণ, মিয়ানমার চীনের কথা শোনে৷ আর এখানে কোনো অশান্তি বা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে ভারতসহ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷

‘আমার সরকার মানুষের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করে মানবাধিকার রক্ষা করছে’

11:08

This browser does not support the video element.

এই অঞ্চলে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছি৷ আগামীতে এশিয়া হবে এই পৃথিবীর আকর্ষণ৷ এই আকর্ষণে একটা ক্ষত হয়ে যাবে৷সেই কারণে ভারত, চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড সবাইকে নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে৷ তাদের বিশেষ ভূমিকা প্রয়োজন৷ বিশেষ করে বারত ও চীনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন৷

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত, বাণিজ্য, পানি নিয়ে কিছু অমীমাংসিত বিষয় আছে৷ আপনি তা নিয়ে কী ভাবছেন?

ভারত হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র৷ আমরা গণতান্ত্রিক নিয়ম মেনে সরকার গঠন করেছি৷ তাদের সাথে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক৷ সংস্কৃতি বলেন, ভাষাগত বলেন, বিভিন্নভাবে আমরা ভারতের সাথে সম্পৃক্ত৷ আর এখন আমাদের সবচয়ে উষ্ণ সম্পর্ক৷ এই অবস্থায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন৷ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন৷ তাঁর দেশ সফরের আমন্ত্রণ জনিয়েছেন৷ তারা একটা বন্ধু দেশ৷ আমি বন্ধুত্বের কারণে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি পরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমার প্রথম সফরে ভারতে যাবো সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কটাকে জিইয়ে রাখার জন্য৷ এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য৷

আর যেগুলো সমস্যা আর যে সমস্যার কথা বলেছেন, এগুলো প্রতিবেশী দেশের মধ্যে থাকে৷ কিন্তু যদি মন উদার থাকে, মন ঠিক থাকে, সম্পর্ক যদি মধুর থাকে, তাহলে সব সমস্যা আপনাতেই শেষ হয়৷ আমি প্রায়ই বলে থাকি৷ আপনার বউয়ের সাথে যদি সম্পর্ক মধুর থাকে, আপনার ছোটখাট সমস্যা এগুলো এমনিতেই সামাধান হয়৷ আর সম্পর্ক যদি তিক্ত হয়, তাহলে ছোট অসুবিধাটাও বড় আকারে দেখা দেয়৷

তিস্তার পানি নিয়ে তো উদ্বেগ আছে...

আমাদের ৫৪টা নদী৷ তিস্তা নিয়ে আপনি চিন্তা করেন৷ তিস্তা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়েছে৷  এবং এক পর্যায়ে এটার সমাধানের পথ মোটামুটিভাবে নির্ধারিত হয়েছিল৷ ওদেরও অসুবিধা আছে৷ আমাদেরও অসুবিধা আছে৷ আমরা ইউএন-এতে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, অঞ্চলের অববাহিকায় যারা থাকে, তাদের মঙ্গলের জন্য এই ওয়াটার শেয়ারিং হবে৷ আমার বিশ্বাস, এটা ওরাও যেমন চিন্তা-ভাবনা করছে, আমরাও চিন্তা করছি৷ এগুলো সমস্যা আর সমস্যা থাকবে না৷

বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ আছে৷ সেটাকে আপনি কিভাবেন দেখেন?

পৃথিবীতে অনেকগুলো দেশ মানবাধিকার বলেন আর সন্ত্রাস বলেন, এগুলো বলা হয় আপনাকে একটু চাপে রাখার জন্য৷ ইউরোপে যেমন মানবাধিকার, আমাদের দেশেও তা সমান৷ আপনি এ দেশেও যা বলতে চান, আপনার টিভি চ্যানেল খুলে দেখেন, সরকারের চৌদ্দ পুরুষ এখানে ডাউন করতেছে৷ কোনো আপত্তি নে, চলছে৷ এখানে যত পত্র-পত্রিকা বের হয়, তা প্যারিস শহরেও বের হয় না৷ সারা ইউরোপে কত পেপার বের হয়, আমি জানি না? এখানে যত পেপার বের হয়, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, পৃথিবীর খুব কম দেশেই তা আছে৷ আমরা এখানে মানুষের বলা কথার কোনো সেন্সর করি না৷ অ্যামেরিকা হলো ফ্রিডম অব স্পিচের দেশ৷ সেখানে যদি আপনি আল জাজিরা দেখতে চান, তাহলে মাসে ২৭০ ডলার দিতে হয়৷ আপনি যদি আরটি দেখতে চান, অনেক টাকা দিতে হবে৷ ব্যান্ড না, কিন্তু অনেক টাকা দিতে হয়৷ আর এখানে মাসে ১৫ ডলার দিয়ে সব চ্যানেল দেখা যায়৷ আমাদের এখানে এ ধরনের কোনো বৈষম্য নেই৷

আমরা মনে করি, আমি বিশ্বাস করি, মানুষের উন্নয়ন, মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার সবচেয়ে বড় মানবাধিকার৷ তাকে সুষ্ঠুভাবে, উন্নতভাবে বাঁচিয়ে রাখার অধিকারটা হলো সবচেয়ে বড় মানবাধিকার৷

এটায় বাংলাদেশ সরকার অনেক এগিয়ে৷ আগে দারিদ্র্যসীমার নীচে লোক ছিল ৫৮ ভাগ৷ ২০০৯ সালে ছিল ৪২ ভাগ৷ এখন কমে গিয়ে হয়েছে ২১ ভাগ৷ আর অতি দারিদ্র্য কমে হয়েছে ১০ ভাগ৷ আমরা তাঁদের মানবাধিকার নিশ্চিত করেছি৷ আমরা চাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে৷ সবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা নিশ্চিত করতে৷ সব জনগণ, সব নাগরিকের জনগণের জন্য সমান অধিকার, সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা আমাদের প্রত্যাশা৷ সোনার বাংলা গড়তে চাই আমরা৷ সুতরাং এই যে মানবাধিকার নিয়ে কথা ওঠে, ‘এটা করেন, ওটা করেন', এগুলো অলীক৷ দেখতে হবে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, তাঁর খাওয়ার অধিকার, তাঁর বাড়ির অধিকার আমরা নিশ্চিত করছি কিনা৷ এগুলোর জন্য আমরা কাজ করছি৷

কিন্তু বিচারববির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নিখোঁজ , খুন এসবের কথা তারা বলেন...

আপনি চিন্তা করেন, অ্যামেরিকায় প্রতিবছর ৩৩ হাজার লোক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়৷ ৩৩ হাজার লোক৷ তার মানে, প্রতিদিন কত লোক কিল্ড হয়৷ আর  আমাদের এখানে বছরে যদি ১০টি লোক কিল্ড হয়, এটাই বড় করে দেখেন আপনি?৩৩ হাজার লোক, অ্যামেরিকার টেলিভিশনে কখনো এগুলো দেখায় না যে, কাকে মেরে ফেলল৷ ট্রাফিক লাইটে সে পার হয়ে গেছে, পুলিশ ওখানে গিয়ে তাকে গুলি করে মেরে ফেলেছে৷ ইদানিং সেলফোন বের হওয়ার কারণে মাঝেমধ্যে কিছু তথ্য বের হয়৷ এগুলো তাদের মিডিয়া কখনো প্রকাশ করে না৷

ইউরোপে যেখানেই টেররিজম হয়, আপনি কখনো দেখেছেন, ওদের বিচার হয় কোর্টে? ওদের সাথে সাথে মেরে ফেলে৷ আমাদের দেশে কিন্তু কোর্টে গিয়ে ওদের বিচার হয়৷ মানবাধিকার কোন দেশে কত আছে সেটা যদি আপনি হিসেব করেন, আমরা অনেক উর্ধে আছি৷ কিন্তু আমাদের পত্রপত্রিকা, আমাদের মিডিয়া এগুলো নিয়ে খুব সোচ্চার৷ সোচ্চার হোক আপত্তি নেই৷ কারণ, আমরা চাই, আমাদের সরকার চায়, একটি লোকও যেন বিনা বিচারে হত্যার শিকার না হয়৷ তবে তারপরও হয়৷ কিন্তু আমাদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে৷ ২০০২, ২০০৩, ২০০৪ সালে আপনি শুনেছেন বিচারবহির্ভূত হত্যা কত হয়েছে- ১২শ'৷ আর এখন সারা বছরে কয়টা হয়েছে? একটাও আমি চাই না৷ কিন্তু ১০-১২টাও যদি হয় তা-ও আমার জন্য দুঃখ৷

অ্যামেরিকায় প্রতিবছর ৩৩ হাজার লোক বিনা বিচারে হত্যার শিকার হয়৷ সেখানে জেল ভর্তি লোক, যার শতকরা ৯২ ভাগ কালো মানুষ৷ এগুলো কি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়?

 মঙ্গা মানবাধিকারকে হরণ করে৷ না খেয়ে মারা যাওয়া সবচেয়ে বড় মানবাধিকারের লঙ্ঘন৷ আমার সরকার মানুষের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করে মানবাধিকার রক্ষা করছে৷ এই সরকার টিকে থাকলে আমরা বিশ্বাস করি, অতি দরিদ্রের সংখ্যা আমরা ৫ ভাগে নিয়ে আসব৷ আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ