বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুয়ায়ী বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক তিন কোটি ১২ লাখ৷ প্রতিদিন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গড়ে লেনদেন হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা৷
বিজ্ঞাপন
[No title]
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয় ২০১০ সালে৷ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন নেয়৷ এর মধ্যে ১৯টি ব্যাংক মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে৷ বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অনুমোদনের ভিত্তিতে সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি এজেন্ট এভাবে নগদ টাকা লেনদেনের কাজ করছেন৷ বাংলাদেশ ব্যাংকয়ের হিসাব অনুযায়ী এখন প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়৷ গত বছরের নভেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেকর্ড ১৪ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে৷
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি বোঝার জন্য একটি উদাহরণই যথেষ্ট৷ গত বছরের অক্টোবরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক ছিল তিন কোটি৷ মাত্র এক মাসে, অর্থাৎ নভেম্বরে গ্রাহক ১২ লাখ বেড়ে দাঁড়ায় তিন কোটি ১২ লাখ যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ৷ গত দু'বছর ধরেই চলছে এমন অবিশ্বাস্য হারের গ্রাহক বৃদ্ধি৷
মোবাইল ফোনে আসক্ত? বুঝবেন যেভাবে...
স্মার্টফোনে অতি আসক্তি এক ধরণের রোগ৷ যাঁরা মোবাইল হাতে না থাকলে অস্থির হয়ে যান, বিজ্ঞানীরা বলছেন তাঁরা ‘নোমোফোবিয়া’-য় আক্রান্ত৷ চিনে নিন এ রোগের কিছু লক্ষণ৷
ছবি: Fotolia/Picture-Factory
ব্যাটারির চার্জ ফুরালেই আতঙ্ক
যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কিছু মানুষের মধ্যে স্মার্টফোনের আসক্তির এমন তীব্রতা লক্ষ্য করেছেন যা রীতিমতো বিস্ময়কর৷ তাঁরা দেখেছেন, কিছু লোক মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, যেন মোবাইল বন্ধ হয়ে গেলে জীবনই অচল৷ এমন হলে বুঝতে হবে আপনিও নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন বা অচিরেই হবেন৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
ইন্টারনেট-নির্ভরতা
কিছু লোক ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে নারাজ৷ স্মার্টফোনের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জানলেই ওয়াই-ফাই জোন-এ যাওয়ার জন্য তাঁরা হা-হুতাশ শুরু করেন৷ এমন সবারও মোবাইল আসক্তি বাড়তে বাড়তে ‘নোমোফোবিয়া’-র সীমা ছুঁয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schutt
ইন্টারনেট থাকতেই হবে?
কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে সবার আগে কী কী জানতে চান? ‘‘ওখানে ইন্টারনেট আছে?-’’এই প্রশ্ন করেন? যদি মনে হয়, যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ নেই সেখানে বেড়াতে যাওয়া একদম উচিত নয়, তাহলে ‘নোমোফোবিয়া’ আপনাকেও গ্রাস করছে৷
ছবি: Colourbox
‘স্ট্যাটাস’ না দিতে পারলে হতাশ
ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে প্রতিদিন ‘স্ট্যাটাস’ না লিখলেও অনেকের একদমই চলে না৷ মনে হয়, খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করা হয়নি৷ এমন হওয়াটাও খারাপ কথা, তখন বুঝতে হবে ‘নোমোফোবিয়া’ আপনাকেও পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Lei
আরেক ‘সর্বনাশ’
ধরুন, ফোন করতে পারছেন না, এসএমএস-ও না, ফোন বা এসএমএস আসছেনওনা আপনার কাছে৷ কী হয় তখন? স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও খুব অসহায় লাগে? তাহলে আপনাকে নিয়েও চিন্তা আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রিচার্জ করাতে পারেননি....
প্রি-পেইড সিম ব্যবহার করেন এমন অনেকে ফোনের ‘ক্রেডিট’ শেষ হলে, অর্থাৎ ফোন বা এসএমএস করার উপায় না থাকলেই মহাদুশ্চিন্তায় পড়ে যান৷ তখন মনে রাখতে হবে, মোবাইল ফোন ছাড়া এক সময় পৃথিবীর সবারই জীবন চলতো, এ যুগেও কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকটা দিন নিশ্চয়ই চলবে৷
ছবি: PeJo/Fotolia
ঘুমের সময় অন্তত অন্য কিছু ভাবুন.....
স্মার্টফোনে মানুষ এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে যে কারো কারো রাতে মোবাইল ফোনে একটা হাত না রাখলে ঠিকমতো ঘুমই হয় না৷ নোমোফোবিয়া-র চূড়ান্ত লক্ষণ এটা৷ সুতরাং এই অভ্যাস ছাড়ুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Marttila/Lehtikuva
7 ছবি1 | 7
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা হলো এ ধরনের ব্যাংকিং সেবা পেতে আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয়না৷ মোবাইল ফোন থাকলে যে কেউ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন আর টাকা লেনদেন করতে পারেন বাংলাদেশের যে কোনো স্থান থেকে৷ তাঁকে ব্যাংকের কোনো শাখায় যেতেও হয় না৷ যাঁরা মোবাইল ফোনের কল রিচার্জ বা ‘ফ্লেক্সিলোড' করেন, তাঁরাই অ্যাকাউন্ট খুলে দেন৷ মোবাইল ফোন নম্বরটিই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট নম্বর৷ এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই অন্য কোনো মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারেন গ্রাহক৷
নগদ টাকা তুলতে মাঝখানে থাকেন একজন এজেন্ট৷ তাঁরা মূলত ছোট ব্যবসায়ী৷ এই এজেন্টরা ব্যাংকের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে নিজের দোকান ঘরেই ব্যাংকিং সেবা দান শুরু করেন৷ অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিং মানুষের সময় বাঁচিয়ে দিয়েছে, কমিয়েছে ভোগান্তি৷ এ কারণেই এ পদ্ধতি এত দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যাঁরা অল্প অর্থের লেনদেন করেন, তাঁদের জন্য প্রচলিত ব্যাংক একাউন্ট একটি ঝামেলা এবং খরচের বিষয়৷ মেবাইল ব্যাংকিং কাজটা সহজ করে দিয়েছে৷ তাঁদের ব্যাংক মানে তাঁদের মোবাইল ফোন৷ তাঁদের খরচ এবং সময় দু’টোই বেঁচে যাচ্ছে৷ তাই মেবাইল ব্যাংকিং বাংলাদেশে বিস্ময়কর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে৷''
জাতীয় অর্থনীতিতেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অগ্রগতির প্রভাব পড়ছে জানিয়ে খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আরো বলেন, ‘‘এতে অর্থনীতি, বিশেষ করে ’ইনক্লুসিভ’ অর্থনীতি লাভবান হচ্ছে৷ বিরাট এক জনগোষ্ঠীকে বিকল্প এক ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনা যাচ্ছে৷''
তবে মোবাইল ফোন ব্যাংকিংয়ে এখন কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ আগে গ্রাহকের বাইরেও এজন্টের মাধ্যমে অনেকেই আর্থিক লেনদেন করতেন৷ তাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ তাছাড়া এখন একবারে পাঁচ হাজার টাকার কেশি লেনদেন করলে গ্রাহকের ছবিও লাগে৷ আর অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজন হয়৷ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণা এবং জঙ্গি অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক গত আগস্টে এই ব্যবস্থা নিয়েছে৷
বিশ্বনেতারা যে মোবাইল ব্যবহার করেন
আজকাল মোবাইল ফোন ছাড়া যেন অনেকে চলতে পারেন না৷ এক্ষেত্রে তাঁরা নিজেদের পছন্দের ফোন ব্যবহার করে থাকেন৷ বিশ্বনেতারাও এর বাইরে নন৷ ব্রিটিশ দৈনিক ‘দি টেলিগ্রাফ’ সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷
ছবি: Reuters
বারাক ওবামা
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর গোয়েন্দাদের বাধা সত্ত্বেও ‘ব্ল্যাকবেরি’ ফোন ব্যবহার করছেন বারাক ওবামা৷ অবশ্য তাঁর ব্যবহৃত ফোনটির নিরাপত্তা বাড়িয়েছে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, এনএসএ৷
ছবি: Saul Loeb/AFP/Getty Images
ভ্লাদিমির পুটিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না৷ ২০১০ সালে তিনি তাঁর মোবাইল না থাকার কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘আমার যদি মোবাইল থাকতো তাহলে সেটা সবসময় বাজতে থাকতো৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
আঙ্গেলা ম্যার্কেল
সংসদে বসে মোবাইলে জার্মান বুন্ডেসলিগার ধারাবিবরণী শোনেন – জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের মোবাইল প্রীতি সম্পর্কে এমন কথাও চালু আছে৷ গত বছরের জুলাই থেকে তিনি ‘ব্ল্যাকবেরি জেড১০’ ব্যবহার করছেন৷ অবশ্যই এতে বাড়তি নিরাপত্তা যোগ করা হয়েছে৷ এর আগে অবশ্য ম্যার্কেল ব্যবহার করতেন নোকিয়া ৬২১০৷
ছবি: Reuters
মাটেও রেনসি
ফরাসি প্রেসিডেন্টের চেয়েও ‘আইফোন’-এর প্রতি বেশি আকৃষ্ট ইটালির তরুণ প্রধানমন্ত্রী মাটেও রেনসি৷ একবার তাঁকে অ্যাপল-এর প্রধান কার্যালয়ে অ্যাপল লোগোর পাশে ছবি তুলতে দেখা গেছে৷ স্টিভ জবস মারা যাওয়ার পর নিজের ফেসবুকে ‘আইগড’-কে ‘‘আমাদের সময়ের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন ইটালির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রেনসি৷
ছবি: DW/V. Over
শেখ হাসিনা
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সম্প্রতি জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণত স্যামসাং-এর ‘গ্যালাক্সি এসথ্রি’ ফোন ব্যবহার করেন৷
ছবি: Reuters
5 ছবি1 | 5
তবে খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ জানালেন, ‘‘যে কোনো ব্যবস্থায়ই ঝুঁকি আছে৷ আমরা সমীক্ষা করে দেখেছি, মেবাইল ব্যাংকিংয়ে এখনো বড় ধরনের কোনো অনিয়ম বা অঘটন ঘটেনি৷''
জানা গেছে, মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসে গ্রহকদের পছন্দের সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থ স্থানান্তর (পিটুপি), নগদ জমা (ক্যাশ ইন) এবং নগদ উত্তোলন (ক্যাশ আউট)৷ মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস ব্যবহার করে বেতন-ভাতা প্রদান, ইউটিলিটি বিল পরিশোধের প্রবণতাও বাড়ছে৷
আপনি কি মোবাইল ব্যাংকিং করে থাকেন? জানান আপনার অভিজ্ঞতা, নীচে মন্তব্যের ঘরে৷