যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘ফ্রিডম হাউজ’-এর বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে নাগরিক স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক অধিকার চর্চা একদমই কম৷
বিজ্ঞাপন
তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকায় আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ৷ সারা বিশ্বে চীন, ইরান, তুরস্ক আর রাশিয়ার অবস্থাও ভয়াবহ৷
গত পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে নাগরিক স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক অধিকার চর্চার সবচেয়ে অবনতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷ ‘আংশিক স্বাধীন’ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে৷ ফ্রিডম হাউজের ২০২১ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২১০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশ ১০০ নম্বরের মধ্যে ৩৯ স্কোর করেছে৷ এর মধ্যে বাংলাদেশ রাজনৈতিক অধিকারে ৪০-এর মধ্যে ১৫ এবং নাগরিক স্বাধীনতায় ৬০-এর মধ্যে ২৪ পেয়েছে৷ ২০১৯ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪১, ২০১৮ সালে ৪৫ এবং ২০১৭ সালে ৪৭৷ গত বছরে স্কোর এ বছরের মতোই (৩৯) ছিল৷
২০০৬ সাল থেকে গত ১৫ বছর ধরে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে ফ্রিডম হাউজ৷ যেসব দেশের স্কোর ১ থেকে ৩৪-এর মধ্যে, সেগুলোতে নাগরিকদের স্বাধীনতা নেই, ৩৫ থেকে ৭১ স্কোর করলে ‘আংশিক স্বাধীন' এবং ৭১-এর উপরে যাদের স্কোর, তারা ‘স্বাধীন’৷ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কেবল আফগানিস্তানের স্কোর ২৭৷ পাকিস্তানের স্কোর ৩৭ এবং ভারতের ৬৭৷
‘সবচেয়ে স্বাধীন’ দেশের তালিকায় আছে সুইডেন, নরওয়ে এবং ফিনল্যান্ড৷ এই দেশগুলোর স্কোর ১০০৷ জার্মানির স্কোর ৯৪, যুক্তরাজ্যের ৯৩ এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্কোর ৮৩৷
তুরস্ক আর রাশিয়ার স্কোর বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ- ৩২৷ তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা চীন ও ইরানের৷ ইরানের স্কোর ১৬ এবং চীনের মাত্র ৯৷
রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে নির্বাচনি ব্যবস্থা ও স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক বহুত্ববাদ ও্ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ, সরকারের কার্যকারিতা, নীতি নির্ধারণী ব্যবস্থা, ক্ষমতার ব্যবহার ও স্বচ্ছতা সম্পর্কিত নানা বিষয়৷ অন্যদিকে, নাগরিক স্বাধীনতার মধ্যে রয়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিশ্বাস, মানবাধিকার সংস্থাসহ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা, আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা৷
এপিবি/এসিবি (ফ্রিডম হাউজ)
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ‘গণতান্ত্রিক’ ও স্বৈরাচারী’ সরকারের মধ্যে তফাত করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়৷ ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের তথ্য অনুসারে এই ছবিঘরে থাকছে স্বৈরাচারী সরকারের ১০টি লক্ষণ৷
ছবি: DW/S. Elkin
গণমাধ্যমকে ভয় দেখানো
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে গণমাধ্যম বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকে৷ সরকারের সমালোচনা ও ভুল ধরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক৷ ফলে সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাংবাদিকদের দূরে রাখতে স্বৈরাচারী শাসকরা পত্রিকা, টেলিভিশনকে ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করতে চান৷
ছবি: DW/S. Elkin
সরকারপন্থি গণমাধ্যম সৃষ্টি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে৷ ফলে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা সবক্ষেত্রে সম্ভব হয় না৷ পালটা ব্যবস্থা হিসেবে স্বৈরশাসকরা সরকারপন্থি গণমাধ্যম নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন৷ এর ফলে ব্যাপক হারে সরকারের নানা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো সহজ হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/J. Büttner
রাষ্ট্রীয় সংস্থার দলীয়করণ
রাষ্ট্রের সকল স্তরে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে স্বৈরাচারী শাসকরা পুলিশ, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সরকারি আমলাদের মধ্যেও দলীয়করণ প্রতিষ্ঠা করে থাকেন৷ এর ফলে রাষ্ট্রের ভেতর থেকে ক্ষোভ দেখা দিলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
বিরোধীদের ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি
রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীতাকারীদের ওপর নজরদারির কাজে লাগানো হয়৷ গোয়েন্দা মারফত পাওয়া তথ্য কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে নানাভাবে হেয় করা ও কোণঠাসা করতে অপব্যবহার করা হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Chromorange
বিশেষ সুবিধা ও দমনপীড়ণ
স্বৈরাচারী সরকার বা সরকারপ্রধানকে যেসব কর্পোরেট সংস্থা বা ব্যক্তি নানাভাবে সহায়তা করে থাকেন, তাদের বিশেষ রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়া হয়৷ বেআইনি উপায়ে কাজ পাইয়ে দেয়া থেকে শুরু করে নানাভাবে সহায়তা করা হয়৷ অন্যদিকে, যেসব সংস্থা সহায়তা করে না, তাদের ক্ষেত্রে চলে যে-কোনো উপায়ে দেউলিয়া বানানোর প্রক্রিয়া৷
ছবি: Imago/blickwinkel
বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ
আদালত স্বাধীন থাকলে স্বৈরাচারী শাসকদের নানা সময়ে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়৷ ফলে শুরু থেকেই স্বৈরাচারী শাসকরা সুপ্রিম কোর্টকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেন৷ অনুগত বিচারক নিয়োগ দেয়া, বিরোধীদের ছাঁটাই করা থেকে শুরু করে, নানাভাবে চেষ্টা চলে এ নিয়ন্ত্রণের৷
ছবি: Fotolia/Sebastian Duda
একপাক্ষিক আইন প্রয়োগ
স্বৈরাচারী শাসকদের শাসনামলে ‘আইন সবার জন্য সমান’ বাক্যটি থাকে শুধু কাগজে-কলমে৷ বাস্তবে প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য পাস করা হয় নতুন নতুন আইন৷ বিরোধীদের নানা উছিলায় গ্রেপ্তার নির্যাতন করা হলেও, নিজের সমর্থকদের রাখা হয় আইনের আওতার বাইরে৷
ছবি: Fotolia/axentevlad
‘জুজুর ভয়’ দেখানো
বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে ভয়াবহ অবস্থা হবে, দেশ রসাতলে যাবে, বিরোধীরা কত খারাপ, ক্রমাগত সে প্রচার চালানো হয়৷ এর ফলে এমন অবস্থা তৈরির চেষ্টা হয় যাতে জনগণের মনে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
দৃষ্টি সরাতে ভীতি সৃষ্টি
ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের ভীতি তৈরি করে থাকেন স্বৈরাচারী শাসকরা৷ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, গণতন্ত্রহীনতা ও দুঃখ-দুর্দশা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে কোথাও জঙ্গি সংকট, কোথাও মাদকবিরোধী যুদ্ধ, কোথাও অন্য দেশের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়৷
ছবি: Fotolia/lassedesignen
নির্বাচনে কারচুপি
আগে জোর করে ক্ষমতায় থাকার উদাহরণ থাকলেও, এখন স্বৈরাচারী শাসকরাও নিয়মিত বিরতিতে নির্বাচন দিয়ে থাকেন৷ ‘গণতন্ত্র আছে’ জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে এমন ধারণা দেয়ার জন্য তারা নির্বাচন দেন৷ কিন্তু সে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের আয়োজন আগে থেকেই করা থাকে৷