1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকরা ‘জিম্মি'

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৬ মে ২০১৬

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন আছে৷ এ সব কমিটিতে শিক্ষানুরাগীদের ঠাঁই নেই৷ কমিটিগুলো পুরোপুরি স্থানীয় সংসদ সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের নেতা বা প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে৷

ছবি: Getty Images/S.Gallup

এর মূল কারণ, অনুদানের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা ও ভর্তি বাণিজ্য৷ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে শিক্ষাবিদদের রাখা বাধ্যতামূলক করা উচিত৷ এ জন্য একটা নীতিমালা থাকা প্রয়োজন৷''

বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮২ হাজার ৯৮২টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৩ হাজার ৫৮৯টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৪ হাজার ৪৯৪টি, মাদ্রাসা ৯০ হাজার ১০৫টি এবং কলেজ ২,৩০০টি৷ এর বাইরে আছে মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার জন্য ব্যস্থাপনা কমিটি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের বিধান রয়েছে৷ আর কলেজগুলোতে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা পদাধিকার বলে ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান৷

কিন্তু বিধানে কোথাও শিক্ষানুরাগীদের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে রাখতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷ ফলে নির্বাচনের নামে প্রভাবশালীরা কমিটিগুলোর নানা পদ দখল করে আছেন৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি মূলত সংসদ সদস্য, সরকার দলীয় রাজনীতিবিদ, প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে গেছে৷ বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ, ভর্তি এবং উন্নয়নমূলক কাজ তাদের নিয়ন্ত্রণেই হয়৷ ফলে এই কমিটির প্রধান বা সদস্য হওয়া লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে৷

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

ব্যবস্থাপনা কমিটি বা গভর্নিং কমিটির নির্বাচনে প্রার্থীরা এখন লাখ লাখ টাকা খরচ করেন৷ পোস্টার ছাপেন৷ অনেক টাকা খরচ করে চালান প্রচারণা, কারণ, নির্বাচিত হতে পারলে অনেক লাভ৷

নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে ধর্ম অবমাননার অপবাদ দিয়ে কান ধরে উঠবস করানোর পেছনেও ছিল সেই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটি৷ স্কুলের অনুদান ৫০ লাখ টাকা ভাগ-বাটোয়ারায় বাধা দেয়ার কারণেই ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজন তার ওপর ক্ষুব্ধ হন৷ এর সঙ্গে যুক্ত হন কমিটির চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলাম৷ তিনি চাইছিলেন, তার এক আত্মীয়কে প্রধান শিক্ষক করতে৷ আর সবশেষে যোগ দেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান৷ তিনি ভোট আর রাজনীতির হিসেব মেলাতে শিক্ষকের অবমাননা করেন৷ জানা গেছে, ফারুকুল ইসলামসহ কমিটির কেউই শিক্ষানুরাগী নন৷ অবশ্য ওই কমিটি এখন বাতিল করা হয়েছে৷

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কামিটিতে এখন আর শিক্ষানুরাগী পাওয়া যাবে না, কারণ, শিক্ষক নিয়োগ, ভর্তিবাণিজ্য আর উন্নয়নমূলক কাজে এখন অনেক টাকা৷ সেই টাকার লোভে কমিটিগুলো দখল করেছে রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীরা৷''

তিনি বলেন, ‘‘এ সব কমিটি শিক্ষার উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখে না৷ উল্টো তারা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে অর্থ আয় করে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এই অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যাতে শিক্ষানুরাগীরা থাকতে পারেন সেজন্য সরকারের নীতিমালা করে দেয়া উচিত৷ ভোট হতে পারে, তবে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা বেঁধে দিতে হবে৷''

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা শিক্ষক শ্যামল কান্তির ঘটনা হয়তো জানতে পেরেছি৷ কিন্তু অনেক ঘটনাই আমরা জানতে পারি না৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকরা ম্যানেজিং কমিটির হাতে জিম্মি৷ এমনকি কোনো কোনো ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, জমি এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও আছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ