1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার কমেছে

২৩ মার্চ ২০০৯

মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের ৮টি লক্ষ্যের চার নম্বরে আছে শিশু স্বাস্থ্য৷ বাংলাদেশকে শিশু স্বাস্থ্যের যে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে তার কয়েকটির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছি আমরা৷ আবার অন্য কয়েকটিতে খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই বাংলাদেশ৷

ছবি: Samir Kumar Dey

এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণার সময় বলা হয়েছিল, পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার দুই তৃতীয়াংশ কমাতে হবে৷ তখন এক হাজারে ১৫১ জন শিশুর মৃত্যু হত৷ এখন এক হাজারে ৮২ জন শিশু মারা যাচ্ছে৷ ২০১৫ সালের মধ্যে তা কমিয়ে আনতে হবে ৫০ জনে৷ এক্ষেত্রে বেশ খানিকটা এগিয়েছে বাংলাদেশ৷ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পর্যায়ে এক বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যুর হার ছিল হাজারে ৯৪ জন৷ বর্তমানে তা আছে ৪২ জনে৷ তা কমিয়ে আনতে হবে ৩১ জনে৷ শিশুদের হামের টিকা দেওয়ার হার ২০১৫ সালের মধ্যে আনতে হবে শতভাগে৷ বর্তমানে ৬৯ শতাংশে পৌঁছতে পেরেছি আমরা৷

শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আবদুল্লাহ শাহরিয়ার টুটুল বলেন, ‘‘মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল এই লক্ষ্যমাত্রায় আমাদের মূল যে বিষয়, তার একটি শিশু স্বাস্থ্য৷ দেখা গেছে লক্ষ্যের এক ও চার নম্বর যে বিষয়, তাতে বলা হয়েছে শিশুদের কথা৷ সেখানে দেখা গেছে, শিশুদের যে মৃত্যুর হার – সেটাকে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেমন শিশুদের টিকা দেওয়া, টীকাদান কর্মসূচী সফল করা, বিশেষ করে শিশুদের জন্মের সময়, অর্থাৎ প্রসবের বিষয়টি নিশ্চিত করা – এসবের মধ্য দিয়ে শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা৷ দেখা গেছে, ২০০০ সালের দিকেই আমরা কয়েকটি জায়গায় সন্তোষজনক জায়গায় চলে গেছি৷ বিশেষ করে এক বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হারের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার খুব কাছাকাছি চলে গেছি আমরা৷ বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার যে কর্মসূচী, সেক্ষেত্রে অত্যন্ত সন্তোষজনক জায়গায় পৌঁছে গেছি৷ এটা বিভিন্ন অঞ্চলে শতভাগ না হলেও ৯০ শতাংশে পৌঁছে গেছে৷ হামের বিষয়টির ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রার কাছে পৌঁছে গেছি৷ সরকারসহ পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে যারা সক্রিয় রয়েছে তারা ভালোভাবেই কাজ করছে৷ এভাবে চলছে আমরা লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হবো৷''

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যালেরিয়ায় শিশুদের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে হবে অর্ধেকে – যার খুব কাছাকাছি আমরা৷ শিশুদের যক্ষ্মা রোগ সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া নিতে হবে ৭০ ভাগে৷ যা এখন পর্যন্ত ৩৪ ভাগে পৌঁছেছে৷ আর যক্ষ্মা রোগীদের ভালো করার হার ২০১৫ সালের মধ্যে নিতে হবে শতকরা ৮৫ ভাগে৷ এখন পর্যন্ত ৫৪ ভাগের বেশী শিশুকে যক্ষ্মা রোগ থেকে ভালো করা যাচ্ছে না৷ এভাবেই ভালো খারাপের মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে শিশু স্বাস্থ্যে লক্ষ্য৷ গোল ঘোষণার সময় পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের অপুষ্টিতে ভোগার হার ছিল ৬৭ ভাগ৷ ২০০০ সাল পর্যন্ত তা কমিয়ে আনা হয়েছে ৫১ ভাগে৷ ২০১৫ সালের মধ্যে নিতে হবে ৩৩ ভাগে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই আমরা ৩৩ ভাগের কাছাকাছি আনতে পেরেছি৷

তবে ছয় থেকে ১১ মাস বয়সী ৮৫ শতাংশ শিশু এখনও রক্তস্বল্পতায় ভুগছে৷ আর কিশোরীদের ক্ষেত্রে এই হার ৪০ শতাংশ৷ আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ সংক্ষেপে আইসিডিডিআরবির এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে৷ পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, রক্তস্বল্পতায় ভুগলে শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়৷ আর এসব শিশুরা যখন বড় হয়, তখন তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়৷ বিশেষ করে ২০০৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ইউনিসেফ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, পুষ্টি পরিস্থিতি জরিপ ও এনএসপির পুষ্টি জরিপ পর্যালোচনায় রক্তস্বল্পতার বিপদজনক তথ্য পাওয়া গেছে৷ তবে রক্তস্বল্পতা নিয়ে দেশে এখনও জাতীয় পর্যায়ের কোন জরিপ নেই বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পুষ্টি বিজ্ঞানীরা৷

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য শিশু স্বাস্থ্যের জন্য মায়ের স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন৷ এখনও দেশে ৪৫ শতাংশ গর্ভবতী মা রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন৷ এসব মায়েরাই জন্ম দিচ্ছেন রুগ্ন ও দূর্বল শিশু৷

ঢাকা শিশু হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আবু তৈয়ব মনে করেন, ‘‘সুস্থ মাই জন্ম দিতে পারে সুস্থ শিশুর৷ শিশুদের আগের আমাদের বেশী গুরুত্ব দিতে হবে মায়েদের ওপর৷ সুস্থ শিশু যদি জন্ম নেয় তাহলে তাদের হাসপাতালে আসার হার ৫০ ভাগ কমে যাবে৷ অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শিশুর জন্ম হচ্ছে৷ এটাও হচ্ছে মূলত অসচেতনতার কারণে৷ আমরা যদি মায়ের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হই, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের চেক আপের মধ্যে রাখতে পারি তাহলে তাহলে পারশিয়াল ইমপ্যাক্ট পড়বে আমাদের শিশু স্বাস্থ্যের ওপর৷''

বাংলাদেশে সরকারের সর্বশেষ এক জরিপে দেখা গেছে, চার বছর বয়সী ৬৯ শতাংশ গ্রামীণ শিশু রক্তস্বল্পতায় ভুগছে৷ এটি হচ্ছে অপুষ্টি থেকে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও দেশে শিশুদের ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, হাম ও যক্ষ্মা থেকে সন্তোষজনক হারে মুক্ত করা যাচ্ছে না৷ এর কারণ অসচেতনতার পাশাপাশি সরকারের প্রচার প্রচারণাও দূর্বল৷ ডায়রিয়া থেকে শিশুকে রক্ষা করতে কেবল রাজধানী ঢাকাতেই একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল রয়েছে৷ ঢাকার বাইরে এমন ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল৷ শিশুর জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি ও সঠিক সময়ে চিকিৎসার পরামর্শ পাওয়া যায় না৷ একই কারণে তাদের হামেরও শিকার হতে হচ্ছে৷ বিশেষ করে এখনও দেশে যক্ষ্মা রোগ চিকিৎসায় সরকার কোন সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারেনি৷ যদিও বলা হচ্ছে বিনা মূল্যে যক্ষ্মার চিকিৎসা হয়৷ কিন্তু প্রান্তিক শিশুরা এর সুফল পাচ্ছে না৷

ঢাকা শিশু হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার মোমেনা খাতুন বলেন, ‘‘বর্তমানে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেশী শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে৷ অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণেই এমন হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি৷ মায়েরা সচেতন না দেখেই এসব রোগ বেশী হচ্ছে৷ তারা ঠিকভাবে খাওয়াচ্ছে না, পানিটা ঠিকমতো ফুটিয়ে খাওয়াচ্ছে না৷ পানিটা কতটুকু ফোটাতে হবে তাও অনেক ক্ষেত্রে তারা জানেন না৷ বোঝেনও না৷ যেমন ধরেন বুকের দুধ দেওয়া দরকার সেটাও দিচ্ছে না৷ ফিডারে খাওয়াচ্ছে সেজন্যই ডায়রিয়াটা হচ্ছে৷ আর ধুলা বালির কারণে নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস হচ্ছে৷ এ থেকে প্রতিকারের কারণও তারা জানেন না৷''

সবশেষে দেশে শিশু স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত কর্মসূচি৷ এর জন্য অবশ্যই জরুরী প্রসূতি সেবা ও দক্ষ ধাত্রীর দিয়ে সন্তান প্রসব নিশ্চিত করতে হবে৷ শিশুর জন্য গ্রাম পর্যায়ে পুষ্টি কার্যক্রম হাতে নিতে হবে৷ বিশেষ করে মায়েদের শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে সুশিক্ষিত করে তুলতে হবে৷

প্রতিবেদক: সমীর কুমার দে, ঢাকা/সম্পাদক: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ