গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ও বাস্তবতা
১২ জুন ২০২৫
বাস্তব পরিস্থিতি কি আদৌ সন্তোষজনক? গত দশ মাসের বিভিন্ন ঘটনা, তথ্য, পরিসংখ্যান কী বলে?
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট, অর্থাৎ গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দু'দিন পর৷
তারপর থেকে বাংলাদেশে খুন ও খুনের চেষ্টার মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৬৬ জন সাংবাদিককে৷ তাদের মধ্যে ১৩ জন আছেন কারাগারে৷ মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও না আছে তদন্তের অগ্রগতি, না আছে কারাবন্দিদের বিচারপ্রক্রিয়ার গতি৷
সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম এবং সাংবাদিকদের প্রসঙ্গ৷ তবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও হত্যা মামলার সবচেয়ে কঠোর সমালোচনা হয়েছে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সম্পাদক পরিষদের সভায়৷ গত ৪ মে মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের আলোচনায় সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘‘বর্তমানে ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা অথবা সহিংসতা সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলা চলছে৷ এটা কীভাবে সম্ভব? এটা আমাদের জন্য অসম্মানের৷ এটার অর্থ এই নয় যে, কেউ দোষ করেননি৷ দোষ করে থাকলে সঠিকভাবে মামলা করে শাস্তি দেন এবং আমরা কোনোভাবেই তার পাশে দাঁড়াবো না, যদি সত্যিকার অর্থে সমাজের বিরুদ্ধে বা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের বিরুদ্ধে তার অবস্থান সেরকম থাকে৷ কিন্তু আজকে ছয় থেকে সাত মাস হয়েছে, তারা এসব মামলায় পড়েছেন৷ একটি কদমও এগোয়নি তদন্তের ব্যাপারে৷ আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের কিছু করার নেই, জনগণের অধিকার আছে মামলা করার৷' মেনে নিলাম মামলা করার অধিকার৷ কিন্তু কোনো আইনের যদি অপপ্রয়োগ হয়, তাহলে কি সরকার কিছু করবে না? সেখানেই আমার বড় প্রশ্ন- যাদের নামে মামলা হয়েছে, সেসব সাংবাদিক একটা ভয়ের মধ্যে থাকেন৷ তারা ‘মব সন্ত্রাসের' ভয়ে থাকেন৷ এ রকম দু-একটা ঘটনা ঘটেছে৷''
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দিবসের আলোচনায় ১৩ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম আরো বলেন, ‘‘কেউ যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাদের বিচার হওয়া উচিত৷ কিন্তু আজকে সাত মাস, আট মাস ধরে কারাগারে, তারা জামিন পাচ্ছেন না৷ তাদের আইনি কোনো প্রক্রিয়া চলছে না, বিচার হচ্ছে না৷ তাহলে এটা কি চলতে থাকবে? এখন মামলার যে প্রবণতা, তাতে ১০০ জন, ৫০ জন, ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, তার মধ্যে একজন সাংবাদিকের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হলো৷ খামোখা একেবারে গণআকারে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই আক্রমণ আমি মনে করি এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বিরাট একটা পরিপন্থি ব্যাপার ও এটা ভয়ের ব্যাপার৷''
চ্যাথাম হাউজের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রসঙ্গ
বুধবার লন্ডনের চ্যাথাম হাউজের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর দমন–পীড়নের অনেক খবর পাওয়ার কথা উল্লেখ করে এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার মতামত জানতে চান সঞ্চালক৷ জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘এটা সত্যি নয়৷ তাদের জীবনে এত স্বাধীনতা কখনো ছিল না৷ তারা যা খুশি বলতে পারছে৷''
আমাদের কথা বলতে দিতে হবে, লিখতে দিতে হবে : মতিউর রহমান চৌধুরী
প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে ‘‘তারা যা খুশি বলতে পারছে'' দাবি করলেও মাত্র এক মাস ৮ দিন আগে ঢাকায় মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় তেমন কোনো তথ্য বা বক্তব্য উঠে আসেনি৷ বরং সেখানে দৈনিক মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর বক্তব্যে উঠে আসে সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করার পর তিন সাংবাদিকের চাকরি চলে যাওয়ার প্রসঙ্গ৷ তিনি বলেন, ‘‘যে দেশে প্রশ্ন করার জন্য সাংবাদিকের চাকরি যায়, সে দেশে আমরা মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন করছি৷ এর দায় সরকারকে দেবো, না কাকে দায় দেবো জানি না৷ সাংবাদিক ইউনিয়ন কী করছে বা আমাদের সম্পাদক পরিষদ কী করেছে, আমি মনে করি, আমরাও ব্যর্থ হয়েছি৷ গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়৷ আমাদের কথা বলতে দিতে হবে, লিখতে দিতে হবে, প্রশ্ন করতে দিতে হবে৷ তাহলেই গণমাধ্যম মুক্তির স্বাদ পাবে৷''
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ)-এর সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন তো ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে৷ বিশেষ করে মব সন্ত্রাস৷ কেউ কিছু লিখলে, সেটা তাদের বিরুদ্ধে গেলে কয়েকজন মিলে মব সৃষ্টি করছে৷ আগে যেমন ডিজিএফআই থেকে ফোন করা হতো, এখন সেখানে এসেছে মব৷ ফলে পরিস্থিতি বদলায়নি৷ সরকারও এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতিতে সাংবাদিকদের রাখতে চেয়েছে৷ সেক্ষেত্রে তো তারা সফল হয়েছে৷ শুধু তো এখানেই শেষ না, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হচ্ছে, প্রেসক্লাবের সদস্যপদ থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে৷ এমনকি বিরুদ্ধে লেখার কারণে চাকরিও হারাচ্ছেন সাংবাদিকরা৷ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করার কারণেও অনেকের চাকরি গেছে৷''
কারাবন্দি সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের অবস্থা
বাংলাদেশে এই মুহুর্তে যে ১৩ জন সাংবাদিক কারাগারে আছেন তাদের মধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টেলিভিশনের তিন সাংবাদিক- সাবেক সিইও মোজাম্মেল হক বাবু, সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ও উপস্থাপক ফারজানা রুপার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে ডয়চে ভেলের৷ জানা গেছে, মোজাম্মেল হক বাবু ক্যান্সারে আক্রান্ত৷ গ্রেপ্তারের কিছুদিন আগে তার অস্ত্রোপচার হয়েছে৷ গত নভেম্বরে অস্ত্রোপচার পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করানোর কথা ছিল৷
শ্যামল দত্তের পরিবারের এক সদস্য নাম, পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শ্যামল দত্ত স্লিপ অ্যাপনিয়া'য় (ঘুমের সময় সাময়িকভাবে দম বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ জটিল শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ) ভুগছেন৷ এই সমস্যার কারণে তিনি হৃদরোগ, স্ট্রোক বা জ্ঞানীয় দুর্বলতার মতো কঠিন শারীরিক সমস্যায় পড়তে পারেন৷ এছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলসহ একাধিক দীর্ঘস্থায়ী রোগেও ভুগছেন তিনি৷'' তিনি আরো জানান, শ্যামল দত্ত কারাগারে যাওয়ার পর পরিবারের সবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে সরকার৷ এতে পরিবারের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে৷ দৈনন্দিন খরচ মেটাতে আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করতে হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি৷ তিনি আরো দাবি করেন, শ্যামল দত্ত দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থাকায় তার ছেলে-মেয়ে ট্রমার মধ্যে রয়েছে৷
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝাতে গিয়ে সাংবাদিকের সন্তানদের মনে মব আতঙ্কের কথাও উল্লেখ করেন তিনি, ‘‘মব সন্ত্রাসের কারণে বাসা থেকে বের হতেও ভয় পায় ওরা৷''
একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক সিইও মোজাম্মেল হক বাবুর পরিবারের এক সদস্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটার পর একটা হত্যা মামলা দিচ্ছে৷ ফলে তার বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা হয়েছে, সেটা বলা কঠিন৷ আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করলেই নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে৷ সর্বশেষ গত এপ্রিলে যাত্রাবাড়ী থানার কুতুবখালী এলাকায় ইমরান হাসান হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত৷'' এই কারণে এখন তারা আর জামিনের জন্য আবেদন করতে চান না বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
মোজাম্মেল বাবুর শারীরিক অবস্থা নিয়ে তার পরিবার এখন খুব শঙ্কিত৷ কিছুদিন আগে তার প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে৷ এজন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিতে হয় তাকে৷ চিকিৎসা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনি র্যাডিকাল প্রোস্টেটেক্টমি করিয়েছিলেন৷ কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর তার একাধিক শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়৷ এখনো শরীরে ক্যান্সার ফিরে আসার ঝুঁকিতে রয়েছেন তিনি৷ কারাবন্দি থাকার কারণে গত বছরের নভেম্বরে নির্ধারিত ক্যান্সার স্ক্রিনিং করতে পারেননি৷ এখন তার চিকিৎসার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে৷ এছাড়া তিনি একজন ডায়াবেটিক রোগী৷
একরকম সংগ্রাম করেই দিন পার করছে সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপার একমাত্র মেয়ে৷ গত মাসে তার এ-লেভেলের এ-টু পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু পরিবারের এক সদস্য জানান, নিরাপত্তাহীনতার কারণে শাকিল-রূপার কন্যা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না৷ বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে তাদের বাসার ঠিকানা প্রকাশিত হওয়ার পর শাকিল-রূপার পরিবারের অনেক সদস্যই ভয়ে অনেকদিন বাসা ছেড়ে অন্য স্থানে থেকেছেন৷''
ফারজানা রূপা ও শাকিল আহমেদের পরিবারের ওই সদস্যও বলেন, ‘‘একটার পর একটা হত্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে৷'' ওই সংবাদিক জুটির বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে কতগুলো মামলা হয়েছে, তা বলতে পারেননি পরিবারের ওই সদস্য৷ তিনি জানান, সর্বশেষ গত এপ্রিলে যাত্রাবাড়ী থানার কুতুবখালী এলাকায় ইমরান হাসান হত্যা মামলা ও একই থানাধীন দনিয়া এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় এই দম্পতিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে৷
এর মধ্যে ফারজানা রূপাকে একমাস কনডেম সেলে রাখা হয়েছিল জানিয়ে পরিবারের ওই সদস্য বলেন, ‘‘দাগী আসামীদের সঙ্গে রাখার কারণে ফারজানা রূপা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন৷ একই সঙ্গে মেয়ের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন তিনি৷''
গতকাল (বুধবার, ১১ জুন ২০২৫) সদ্য প্রয়াত মা-কে শেষবারের মতো দেখতে প্যারোলে মুক্তি পান ফারজানা রুপা৷ মায়ের নিথর দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি৷ এরপর থেকে সামাজিক মাধ্যমে নতুন করে আলোচনায় এসেছে তাদের জামিনের বিষয়টি৷ কী অপরাধে তারা কারাগারে- সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে৷
শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুর পক্ষে মামলা লড়ছেন প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘বিচারের ক্ষেত্রে তো একসঙ্গে সবগুলো মামলা হয় না৷ প্রত্যেকটা মামলায় আলাদা আলাদাভাবে জামিনের আবেদন করতে হয়৷ ফলে যে মামলাগুলো আমাদের সামনে আসছে সেগুলোতে জামিনের আবেদন করা হয়েছে৷ আদালত রুল জারি করেছে৷ এখন দেখি সরকার কী জবাব দেয়৷ আসল কথা হচ্ছে, মামলাগুলোর তদন্ত হচ্ছে না৷ অথচ তাদের কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে৷ এটা তো ন্যায় বিচারের পরিপন্থী৷ এখন পুলিশ যদি এই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়, তাতে আমি একটুও অবাক হবো না৷ কারণ, পুলিশ তো স্বাধীন না৷ এরা সংবিধান পরিবর্তন করতে চায়, কিন্তু এই আইনগুলো বদলাবে না৷ পুলিশ আইন তো বৃটিশ আমলের না, তারও আগের৷ ফলে যখন যারা ক্ষমতায় আসে, তারা এদের ব্যবহার করে৷ মূল কথা, সরকারের কথার সঙ্গে আদালতে আমরা সরকারি কৌশুলীদের আচরণে কোনো মিল পাচ্ছি না৷''
সাংবাদিকদের মামলা, সরকারের ভাবনা
সারা দেশে ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে৷ কোনো সাংবাদিক যে অপরাধ করেছেন (যদি করে থাকেন), তার বিরুদ্ধে সেই মামলা হোক৷ কিন্তু ঢালাওভাবে হত্যা মামলা কেন? এই মামলাগুলো নিয়ে সরকার কী ভাবছে? এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রথমত, এই মামলাগুলোর একটাও সরকার করেনি৷ জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরাই এই মামলাগুলো করেছেন৷ ফলে এখানে সরকারকে দায়ী করার কোনো সুযোগ নেই৷ দ্বিতীয়ত, জামিনের ব্যাপারে সরকারের কোনো হাত নেই৷ আদালত স্বাধীন৷ আদালত মনে করলে কাউকে জামিন দিতে পারে, আবার না-ও দিতে পারে৷ এটা পুরোপুরি আদালতের এখতিয়ার৷ আর তৃতীয়ত, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে হত্যা মামলাগুলো হয়েছে সেগুলো নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে৷ ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আলোচনা করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়৷ এগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে৷ শিগগিরই এ ব্যাপারে একটা নির্দেশনা পাওয়া যাবে৷''
বিচারকরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপে
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেছেন, ‘‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিম্ন আদালত জামিন দিচ্ছেন না৷ জামিনের ক্ষেত্রে বিচারক দেখবেন তার সামনে কী কাগজপত্র আছে৷ ডকুমেন্টের বাইরে আদালতের কোনো গল্প শোনার সুযোগ নেই৷ অথচ উনারা শুনতে বাধ্য হচ্ছেন৷ অনেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপের মধ্যে আছেন৷ কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে একে-ওকে চাপের মধ্যে ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে৷ একজন বিচারকের যদি চাকরির নিশ্চয়তা না থাকে, তাহলে তিনি স্বাধীনভাবে বিচার করবেন কিভাবে?''
ব্যারিস্টার বড়ুয়া আরো বলেন, ‘‘আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলি, নিম্ন আদালতে জামিন দেয়নি, উচ্চ আদালতে জামিন হওয়ার পরও পাঁচ-সাত দিন কারাগারে আটকে রাখা হচ্ছে৷ খাগড়াছড়ির একজন সাংবাদিক যিনি নিউ এইজে কাজ করেছেন, এখন সমকালে কাজ করেন৷ তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে৷ এই মামলাগুলোতে উচ্চ আদালতে জামিন হওয়ার পর আমরা যখন কারাগারে বেলবন্ড দাখিল করলাম৷ তখন কারাগার থেকে বলা হলো পাঁচ-ছয় দিন পর তার বিরুদ্ধে আরো মামলা আসবে, সেই কারণে তাকে এখন ছাড়তে পারছি না৷ সর্বশেষ তাকে আরো পাঁচটি মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে৷ আদালতের স্বাধীনতা আমরা কিভাবে রক্ষা করছি? একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার পর মামলা হচ্ছে৷ কেউ বলার নেই এগুলো নিয়ে৷ আগে আমরা রাজনৈতিক মামলা নিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু এখন কী হচ্ছে? একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলায় জামিন করার পর আরো পাঁচটি মামলা হয়েছে৷ এগুলোকে কী বলবেন? এই অনাচার বন্ধ করবেন কিভাবে? আইনি-বিচার ব্যবস্থার মধ্যে কী ধরনের অনাচার চলছে সে কথা খুলেও বলতে পারছি না৷ আওয়ামী লীগ আগে ভয় দেখাতো আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে বলে, কিন্তু এখনো কি এর বাইরে কিছু হচ্ছে? তাহলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে কিভাবে?''