বাংলাদেশে ‘সত্যজিৎ রায়ের বাড়িতে’ জাদুঘরের প্রস্তাব ভারতের
১৬ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশের ময়মনসিংহে ‘সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের বাড়ি’ ভেঙে ফেলার কাজ চলছে৷ সেটা থামিয়ে বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে জাদুঘর বানাতে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত।
বাংলাদেশের ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়দের পূর্বপুরুষদের বাড়ি ভাঙা হচ্ছে। ভারত সেই বাড়ি সারাই ও পুনর্নির্মাণ করে মিউজিয়াম চায়। ছবি: Faget/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়, সুকুমার রায়, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীদের পূর্বপুরুষদের বাড়ি ভেঙে ফেলার কাজ চলছে বলে ১৫ জুলাই প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টার। হরিকিশোর রায় রোডের শতাব্দী প্রাচীন ওই বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। হরিকিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়ার জমিদার। তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় ও সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ।
ময়মনসিংহ শহরের হরিকিশোর রায় সড়কে প্রাচীন একতলা ভবনটি ১৯৮৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ব্যবহার করে আসছিল। গত ১০ বছর ধরে জরাজীর্ণ ভবনটিতে কোনো কার্যক্রম চালানো যায়নি এবং এটি পরিত্যক্ত ছিল। ময়মনসিংহ শিশু একাডেমির কার্যক্রম চালাতে একটি আধাপাকা ঘর নির্মাণের জন্য গত কয়েকদিন ধরে চলছে প্রাচীন বাড়িটি ভাঙার কাজ।
তবে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার প্রথম আলো ১৬ জুলাই তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘কেউ বলছেন বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের, কেউ বলছেন বাড়িটি টাঙ্গাইলের দানবীর রায় বাহাদুর রনদা প্রসাদ সাহার অস্থায়ী বাসভবন।’
তবে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাড়িটি ভাঙা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এরপর আজ বুধবার স্থাপনাটি ভাঙার কাজ বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের শশীলজ জাদুঘরের মাঠ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বাড়িটি ভাঙার ব্যাপারে তথ্য চেয়ে গত সোমবার জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন। সাবিনা ইয়াসমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে বাড়িটির এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সংরক্ষণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।
বাড়ি ভাঙার খবর প্রকাশের পর ১৫ জুলাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও ভারত সরকারের পক্ষে বিবৃতি দেওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। গতকাল রাতেই জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাড়িটি পরিদর্শন করেন।
বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পরিবারের নয়
বাড়িটির মালিকানা নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক স্বপন ধর প্রথম আলোকে বলেন, ‘‘বাড়িটি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের দানবীর রায় বাহাদুর রনদা প্রসাদ সাহার অস্থায়ী বাসভবন। ২০১৬-১৭ সালে জার্মান সরকারের প্রকল্পের আওতায় গবেষণা ও প্রদর্শনী হয়। ময়মনসিংহের নগর ঐতিহ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রকল্পে ফ্রান্সের প্রত্নতত্ত্ববিদ রুমেন লার্চার সঙ্গে তিনিও কাজ করেন। গবেষণায় ৩২০টি বাড়ি চিহ্নিত করা হয়। তখন তিন ক্যাটাগরিতে ভবনগুলো ভাগ করা হয়েছিল। যে বাড়িটি ভাঙা হচ্ছে, সেটি ছিল দ্বিতীয় ক্যাটাগরির বাড়ি। প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে এই বাড়ি ভাঙার অধিকার কারও নেই, উচিতও হয়নি।’’
স্বপন ধর বলেন, ‘বাড়িটি ছিল রনদা প্রসাদের অস্থায়ী বাসভবন। এর মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। আমাদের কাছে সব ধরনের গবেষণা কাগজ রয়েছে। যে কথাটি বলা হচ্ছে, এটি সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি, সেটি হচ্ছে দুর্লভ ভবন। সেই বাড়িটি এখান থেকে কিছুটা দূরে। এই রোডটি সত্যজিৎ রায়ের পরিবার হরিকিশোরের নামে এতে কোনো সন্দেহ নেই।’’
বিজ্ঞাপন
ভারতের প্রতিক্রিয়া
মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ''আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশের ময়মনসিংহে চলচ্চিত্র পরিচালক ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা ও বিখ্যাত সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।''
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ''এই বাড়ির বর্তমান মালিক বাংলাদেশ সরকার এবং বাড়িটির অবস্থা জরাজীর্ণ। বাড়িটি বাংলার সাংস্কৃতিক রেনেসাঁর প্রতীক। এই গুরুত্বের কথা বিচার করে ভারত এই বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা এবং তা সারাই ও পুনর্নির্মাণ করে সাহিত্যের মিউজিয়াম হিসাবে গড়ে তোলার আবেদন জানাচ্ছে। তাহলে তা হবে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ সংস্কৃতির একটা প্রতীক। ভারত সরকার এই বিষয়ে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক।''
‘মহারাজা, তোমারে সেলাম’
বিশ্বের দরবারে বাঙালি সংস্কৃতির উজ্জ্বল প্রতিনিধি সত্যজিৎ রায়৷ অস্কারবিজেতা চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ, চিত্রশিল্পী ও সাহিত্যিক রূপেও সমাদৃত৷ ২ মে, জন্মবার্ষিকীতে তাঁর ঘর ঘুরে এসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন.....
ছবি: DW/P. Samanta
শততম জন্মদিন
১৯২১ সালের ২ মে তাঁর জন্ম৷ শ্রদ্ধা পুত্র সন্দীপ রায়ের৷
ছবি: DW/P. Samanta
হলুদ বাড়ির তিনতলায়
শুধু বাড়ি বললে কম বলা হবে৷ বলা ভালো, সৃষ্টির সূতিকাগার৷ বিশপ লেফ্রয় রোডের দি প্রপার্টি ইন্ডিয়া কোম্পানির বাড়িতে সত্যজিৎ রায় ১৯৯২ সালের শেষ দিনটি পর্যন্ত কাটিয়েছেন৷ তাঁর লেখা-আঁকা আর চলচ্চিত্রের উদ্ভাবনী দক্ষতার সাক্ষী তিনতলার ঘরগুলি৷
ছবি: DW/P. Samanta
ভরা থাক স্মৃতিসুধায়
এই বাড়ির ইঁট-কাঠ-কড়ি-বরগায় এক দীর্ঘদেহী মানুষের স্মৃতি৷ তাঁকেই ছুঁয়ে দেখার চেষ্টাই যেন ভক্তদের৷ জন্মদিনে মানিকবাবুর বসার ঘর জমজমাট৷ অতিথি আপ্যায়নে তাঁর পুত্র সন্দীপ৷
ছবি: DW/P. Samanta
বারান্দার স্মৃতি
ছোটবেলা থেকেই তাঁর পছন্দ ছিল বারান্দা৷ ভবানীপুরে মামার বাড়ির বারা্ন্দা সম্পর্কে নিজেই বলেছেন, ‘‘শোবার ঘর থেকে বেরিয়েই বারান্দা, সকাল-দুপুর-বিকেলভরে দেখতাম রাস্তায় কতরকম লোকের চলাফেরা৷’’ বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়ির লম্বা লাল বারান্দা জুড়ে তাঁর কত স্মৃতি জড়িয়ে৷ পুত্রের জন্মদিনে বাবা সুকুমার রায়কেও স্মরণ৷
ছবি: DW/P. Samanta
তোমার সৃষ্টির পথ
বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার প্রথম কৃতিত্ব তাঁরই৷ কলকাতা পুরসভা বিশ্ববরেণ্য চিত্র পরিচালকের স্মৃতিধন্য বিশপ লেফ্রয় রোডকে শিল্পীর সৃষ্টিতে সাজিয়েছে৷ রাস্তার দুধারে ভিক্টোরিয়ান যুগের আদলে তৈরি আলোকস্তম্ভের সঙ্গে সত্যজিতের আঁকা পোস্টার যেন তাঁর নিবাসের দিকচিহ্ন৷
ছবি: DW/P. Samanta
দাদু-নাতি যুগলবন্দি
বুদ্ধদেব বসু বলেছেন, ‘‘...বাংলা শিশুসাহিত্য এই রায়চৌধুরীদের পারিবারিক এবং মৌরশি কারবার ভিন্ন কিছুই নয়৷’’ উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার, সত্যজিতের তিন প্রজন্মকে কুর্নিশ জানায় বাঙালি৷ দাদু উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অসামান্য সৃষ্টি গুপী গাইন-বাঘা বাইনকে বইয়ের পাতা থেকে চলচ্চিত্রের পর্দায় তুলে এনেছিলেন সত্যজিৎ৷ কলকাতায় জহরলাল নেহরু রোড থেকে বিশপ লেফ্রয় রোডে ঢোকার মুখে ‘হীরক রাজার দেশে’র পোস্টার৷
ছবি: DW/P. Samanta
এ তোমার মাটি
দক্ষিণ কলকাতার লি রোডের খুব কাছেই ১/১, বিশপ লেফ্রয় রোড৷ এটাই রায় পরিবারের ঠিকানা৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর নামকরণ করেছেন ‘সত্যজিৎ রায় ধরণী’৷ সরণী নয়, কারণ এটাই ছিল মানিকবাবুর সৃষ্টির আপন ভুবন৷
ছবি: DW/P. Samanta
বাঙালি গোয়েন্দার বিশ্বজয়
সত্যজিৎ সৃষ্ট তুখোড়, মেধাবী, অসামান্য পর্যবেক্ষণশক্তির অধিকারী ও অসীম সাহসী গোয়েন্দা প্রদোষচন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা সববয়সি পাঠকের একান্ত প্রিয়জন৷ রহস্যের জট ছাড়াতে তাঁকে দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হলেও তিনি আদ্যোপান্ত বাঙালি যুবক৷ ছাপার অক্ষরে ছড়িয়ে পড়েছেন বিশ্বময়৷ সত্যজিতের ফেলুদার ফরাসি, ইতালীয়, জাপানি ও জার্মান অনুবাদের প্রচ্ছদ৷
ছবি: DW/P. Samanta
দেশেও ফেলুদার জয়জয়কার
সত্যজিতের চলচ্চিত্রের মতো সাহিত্যের চাহিদা বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায়৷ গোয়েন্দাকাহিনী থেকে আশ্চর্য সব ছোটগল্পের অনুবাদ হয়েছে৷ ওড়িয়া, গুজরাতি, মারাঠি, মালায়ালম ভাষায় অনূদিত বইয়ের প্রচ্ছদ৷
ছবি: DW/P. Samanta
চলচ্চিত্রের নেপথ্য ভাবনা
কোনও কাহিনী থেকে সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে অভিনেতার কস্টিউম থেকে কেশসজ্জা, সব কিছুতেই নিখুঁত ডিটেলিংয়ে বিশ্বাসী ছিলেন সত্যজিৎ৷ তা সে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা নরেন্দ্রনাথ মিত্রের কাহিনী হোক, কিংবা নিজের লেখা ফেলু মিত্তিরের উপন্যাস৷ সোনার কেল্লা’র জন্য ফেলুদা এবং ভিলেন মন্দার বোস ও ডাক্তার হাজরার মেক-আপ ভাবনার স্কেচ৷
ছবি: DW/P. Samanta
নিঁখুতেই নজর
খুঁতখুঁতে ছিলেন বলেই নিখুঁত না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়তেন না৷ ফেলুদার খাস কলকাতার রহস্য কাহিনী ‘বোসপুকুরে খুনখারাপি’র খসড়া দেখেই সেটা বোঝা যায়৷ তাঁর হাতে লেখা খসড়াটির সঙ্গে আঁকা প্রচ্ছদ৷
ছবি: DW/P. Samanta
নতুন যুগের কেতা
সিনেমা আর গল্পের বাইরে ফেলুদা অনেক আগেই টিভি সিরিয়াল ও কমিক্সে হাজির হয়েছেন৷ এখন ব্যাটম্যান, সুপারম্যানের মতো টি-শার্টেও হাজির তিনি৷ বিপণনের জগতে ছোটদের সঙ্গে মোলাকাতের জন্য নয়া রাস্তা এই ফেলুদা টি-শার্ট৷ ৩০০ টাকায় দেদার বিকোচ্ছে কলকাতার আইসিসিআর-এ৷
ছবি: DW/P. Samanta
তথ্যচিত্রে সত্যজিৎ
পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের পাশাপাশি সত্যজিৎ তৈরি করেছেন তথ্যচিত্রও৷ ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘সিকিম’, ‘সুকুমার রায়’, ‘বালা’, ‘ইনার আই’ প্রভৃতি৷ তাঁর জীবন ঘিরে তৈরি হয়েছে একাধিক তথ্যচিত্র৷ জন্মদিনে নতুন একটি তথ্যচিত্রের মুক্তি সন্দীপ রায় ও সব্যসাচী চক্রবর্তীর হাতে৷
ছবি: DW/P. Samanta
দেওয়াল জুড়ে সত্যজিৎ
ছোটদের জন্য লেখালেখি ও ছবি তৈরিতে খুব উৎসাহী ছিলেন সত্যজিৎ রায়৷ তাদের রং-তুলিতেই ফুটে উঠেছেন তিনি৷ একটি কর্মশালায় ছেলেমেয়েরা এঁকেছে সত্যজিতের পৃথিবীকে৷ নেহরু চিল্ড্রেন্স মিউজিয়ামের দেওয়ালে৷
ছবি: DW/P. Samanta
14 ছবি1 | 14
কেন এই বাড়ি ভাঙা হচ্ছে?
ময়মনসিংহ শিশু একাডেমির জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মো. মেহেদী জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'ভাড়া বাসায় একাডেমির কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সব প্রক্রিয়া মেনে স্থাপনাটি ভাঙা হচ্ছে। এখানে আপাতত একটি আধাপাকা স্থাপনা হবে।' ৩৬ শতাংশ জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা স্থাপনাটি ঠিক রেখে চার-পাঁচ ঘরের আধাপাকা স্থাপনা করার সুযোগ কি ছিল না, এমন প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তা বলেন, 'বাড়িটি থাকলে শিশুদের চলাচলে ঝুঁকি থাকত।' বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তার জানা ছিল না বলেও স্বীকার করেন তিনি।
ময়মনসিংহের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান
‘হাওর-জঙ্গল-মইষের শিং, এই তিনে ময়মনসিংহ’ এভাবেই এক সময় পরিচয় করানো হতো ভারতবর্ষের বৃহত্তম জেলা ময়মনসিংহকে৷ ২০১৫ সালে দেশের অষ্টম বিভাগ হিসেবে ঘোষণা পাওয়া বিস্তীর্ণ এ জনপদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্রের লীলাভূমি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আলেকজান্ডার ক্যাসেল
স্থানীয়ভাবে ‘লোহার কুঠি’ নামে পরিচিত প্রাসাদটি মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য্য ১৮৭৯ সালে নির্মাণ করেন৷ তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এম এস আলেকজান্ডারের স্মৃতি রক্ষার্থে তিনি প্রাসাদটি শহরের কেন্দ্রস্থল কোট-কাচারি এলাকায় নির্মাণ করেন৷ বিভিন্ন সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লর্ড কার্জন, নবার স্যর সলিমুল্লাহসহ বরেণ্য ব্যক্তিরা সেখানে গিয়েছেন৷ বর্তমানে এটি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এটি অবস্থিত৷ মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ১৯ সদস্য প্রাণ হারান৷ তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে এই স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
শহিদ স্মৃতিসৌধ
মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে শহিদ স্মৃতিসৌধ বা স্মৃতিস্তম্ভ৷ শম্ভুগঞ্জে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কাছে এ স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয় ২০১৩ সালে৷ ৫০ ফুট উঁচু স্তম্ভটি দাঁড়িয়ে আছে মশাল আকৃতিতে৷ সৌধটির চারদিকের চারটি দেয়ালে রয়েছে চার-রকমের প্রাচীরচিত্র৷ ভাষা আন্দোলন, ৬৬-র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিমূর্ত চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দেয়াল চারটিতে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
কেওয়াটখালি ব্রিজ
ময়মনসিংহের তিনটি রেলব্রিজের অন্যতম হচ্ছে কেওয়াটখালি ব্রিজ৷ প্রায় ৯০০ মিটার দীর্ঘ এ ব্রিজটি ব্রহ্মপুত্র নদের উপর ১৯১৫ সালে নির্মিত হয়৷ ময়মনসিংহের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও ভৈরবের রেল যোগাযোগের সুবিধার্থে এটি তৈরি করা হয়৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় বোমার আঘাতে সেতুর তিনটি খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ বর্তমানে সেতুর উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই তিনটি আন্তঃনগর, দুটি মেইল, দুটি কমিউটার এবং আটটি লোকাল ট্রেন চলাচল করছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ব্রহ্মপুত্র নদ
ময়মনসিংহের প্রাণ ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বনাম ছিল ‘লৌহিত্য’৷ উত্তরের কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে এ নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে ময়মনসিংহ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরববাজারের দক্ষিণে মেঘনায় পড়েছে৷ উৎপত্তিস্থল থেকে এ নদের দৈর্ঘ্য দুই হাজার ৮৫০ কিলোমিটার৷ বাংলাদেশের নদীগুলোর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদই সবচেয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
শশী লজ
মুক্তাগাছার জমিদার বংশের উত্তরসূরি নিঃসন্তান মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরি তার দত্তকপুত্র শশীকান্তের নামানুসারে ময়মনসিংহ শহরে ‘শশী লজ’ নামে একটি দ্বিতল বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করেন৷ প্রবেশ তোরণ ধরে প্রায় ৯ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত প্রাসাদটির দিকে যেতে থাকলে চোখে পড়বে মার্বেল পাথরে তৈরি একটি সুন্দর ভাস্কর্য৷ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ১৯৮৯ সালে এ ভবনটিকে ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি’ ঘোষণা করে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
গার্লস ক্যাডেট কলেজ
ময়মনসিংহ-ভালুকা সড়কের সেহড়াতে অবস্থিত ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য স্থাপিত প্রথম ক্যাডেট কলেজ৷ ২৩ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয় ১৯৮৩ সালে৷ স্বাধীনতাপূর্ব চারটি ক্যাডেট কলেজের সাফল্যের প্রেক্ষিতে আরও ছয়টি কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে এটি একটি৷ ১৯৮২ সালে ‘ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল ফর গার্লস’কেই পরবর্তীতে ক্যাডেট কলেজে পরিণত করা হয়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
কৃষি বিষয়ক উচ্চতর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত৷ দেশের কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬১ সালে ভেটেরিনারি কৃষি অনুষদ নামের দুটি অনুষদ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে৷ বাউ-৬৩, বাউধান, কমলা সুন্দরী আলুর জাত, গবাদিপশুর ভ্রুণ প্রতিস্থাপন, ছাগল ও মহিষের কৃত্রিম প্রজনন, বিভিন্ন উন্নত কৃষিযন্ত্রসহ কৃষি গবেষণায় ঈর্ষণীয় অবদানের স্বাক্ষর রেখেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বিমূর্ত মুক্তিযুদ্ধ
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পেরোলেই এটি চোখে পড়বে৷ এর মাধ্যমে একুশ থেকে একাত্তর পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত সকল ঐতিহাসিক ঘটনার বিমূর্ত উপস্থাপন করা হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি
শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে মুক্তাগাছায় এটি অবস্থিত৷ এটি ‘মুক্তাগাছা রাজবাড়ী’ নামেও পরিচিত৷ এতে দূর্গামন্দির, তোষাখানা, ঘূর্ণায়মান নাট্যমঞ্চ, শিবমন্দির, জোড়ামন্দির রয়েছে, যা তৎকালীন ঐতিহ্য বহন করে৷ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৯৩ সালে বাড়িটিকে ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি’ ঘোষণা করে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
থানাঘাট মন্দির
ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত প্রাচীন একটি মন্দির এটি৷ মন্দিরটি শহরের জুবিলী ঘাট সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত৷ স্থানীয়দের মতে, মন্দিরটি প্রায় ১৩০ বছরের পুরনো৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ
ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া এলাকায় অবস্থিত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন একটি চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল৷ প্রায় ৮৪ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই কলেজ ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ কলেজে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা প্রায় ১,৪০০টি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সার্কিট হাউজ
ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত সার্কিট হাউজের মাঠ ময়মনসিংহের একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান৷ এর পাশেই রয়েছে আরও দুটি দর্শনীয় স্থান, ডিসি পার্ক এবং জুবিলী ঘাট সংলগ্ন বিপিন পার্ক৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
লালকুঠি দরবার শরীফ
আনুমানিক ১৯২২ সালে এটি নির্মিত হয়৷ ব্রিটিশ ডেভিড কোম্পানি কর্তৃক নির্মিত এ ভবনটি ছিল কোম্পানির পাটের অফিস৷ পরবর্তীতে বিভিন্ন ঘটনাক্রমে এই দরবার শরীফের উৎপত্তি৷ ময়মনসিংহ শহরের শম্ভুগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বপাড়ের এ দরবার শরীফে রয়েছে ইসলাম প্রচারক আল্লামা শাহ সুফী খাজা মোঃ সাইফুদ্দিন এবং তার স্ত্রী জেবুন্নেসা সাইফের মাজার৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
চকবাজার মসজিদ
ময়মনসিংহের সবচেয়ে বড় মসজিদ চকবাজার জামে মসজিদ, যা ময়মনসিংহের বড়বাজার এলাকায় অবস্থিত৷ এখানে প্রায় দশ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন৷ সুদৃশ্য এবং বহুতল বিশিষ্ট এ মসজিদ প্রাঙ্গণে একটি মাদ্রাসাও রয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
15 ছবি1 | 15
জিএইচ/এসজি(দৈনিক প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি)