বৃহস্পতিবার ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজমে' শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়৷ বাংলাদেশে ওই বছর তিনটি সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলেও তাতে কেউ মারা যাননি বলে জানানো হয়৷
এর আগে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের' অভিযোগে গত ১১ ডিসেম্বরর্যাব এবং এর বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এই নিষেধাজ্ঞার খবরে অসন্তোষ প্রকাশ করে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এই পদক্ষেপকে ‘খুবই দুঃখজনক' হিসেবে বর্ণনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন৷
বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে ফোনালাপের সময়ও প্রসঙ্গটি তোলেন তিনি৷ নিষেধাজ্ঞাটি দেশবাসী ‘গ্রহণ করেনি' বলেও তাকে জানান৷
বাংলাদেশের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ‘আলোচনা' ও ‘আগে জানানোর' জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানান মোমেন৷ বৃহস্পতিবার এমন খবরের মধ্যে রাতে বাংলাদেশ নিয়ে ইতিবাচক তথ্য প্রকাশ পেল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এ প্রতিবেদনে৷
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ দুই ইউনিট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ) এর কার্যক্রমসহ সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের পদক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে৷
এতে বলা হয়েছে, সিটিটিসিইউ ও র্যাব বিদেশের সঙ্গে যুক্ত জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের (ফরেন টেরোরিস্ট ফাইটার- এফটিএফ) গ্রেপ্তার বা তাদের বিষয়ে অনুসন্ধনে আমূল সংস্কার ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম হাতে নিয়েছে৷
প্রতিবেদনে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে আইইডি বিস্ফোরণ, ৩১ জুলাই নওগাঁয় হিন্দু মন্দিরে হাতবোমা পুঁতে রাখা এবং ২৪ জুলাই গুলশানে পুলিশের মোটরসাইকেলে আইইডি রাখার ঘটনার উল্লেখ রযেছে৷
চট্টগ্রাম ও নওগাঁর ঘটনার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএস)৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘গুলশানে পুলিশের মটরসাইকেলে আইএস-সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর আইইডি রাখার কথা বলা হলেও পরে তা ভুয়া হিসাবে ধরা পড়ে৷’’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আইএস ও আল কায়েদার মত আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে দেশি সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে বাংলাদেশ সরকার৷
জঙ্গিদের বিষয়ে বাংলাদেশের ‘শূন্য সহিষ্ণুতা' নীতি নেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মামলা ঝুলে রয়েছে৷
প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সীমান্ত ও বন্দরগুলোতে নিয়ন্ত্রণ জোরালো করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ৷ ‘‘ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন৷ টহলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষিত বিস্ফোরক শনাক্তকারী কে-নাইন টিম সেখানে থাকলেও বিমানবন্দরে তাদের অবস্থান স্থায়ী নয়৷’’
প্রতিবেদনের বিষয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর অন্তর্নিহিত বিষয়াদি তুলে ধরে প্রতিবছর প্রকাশিত কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম৷ এটি যুক্তরাষ্ট্রকে নীতি, কর্মসূচি ও সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে তথ্যসমৃদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে; যার মাধ্যমে আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক সক্ষমতা ও সহনশীলতা তৈরি করতে চাই৷’’
এনএস/এফএস (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
২০১৯ সালের ছবিঘর
নানা মত, নানা পথকে পাথেয় করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে জঙ্গি সংগঠনগুলো৷ বাংলাদেশে মসজিদ থেকে আদালত, মেলা থেকে সিনেমা হল- কিছুই বাদ যায়নি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর থাবা থেকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ যশোরে উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর উপর জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত এবং ১০৬ জন আহত হয়৷ এর পর থেকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে জঙ্গিরা৷ ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোণায় উদীচী কার্যালয়ের সামনে বোমা হামলায় নিহত হয় আট জন৷
ছবি: bdnews24.com২০০১ সালের ১৪ এপ্রিলে রমনা বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়৷ ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ শহরের দনিয়ার এক মেলায় বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় ৮ জনকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনায় আহমদিয়াদের মসজিদে জঙ্গিদের বোমা হামলায় আট জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়৷ ২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর পুরান ঢাকায় হোসাইনি দালান ইমামবাড়ায় শিয়াদের সমাবেশে বোমা হামলায় একজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়৷ ১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনায় আহমদিয়াদের মসজিদে বোমা হামলায় মারা যায় আট জন, আহত হয় ৪০ জন।
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের অলকা, ছায়াবাণী, পূরবী ও অজন্তা সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা হয়৷ তাতে মারা যায় ১৮ জন, আহত হয়েছিলেন ৩০০ মানুষ৷
ছবি: DW/ISPR২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিক ও দুই পুলিশ সদস্যসহ ২৩ জন নিহত হন৷ ওই হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ ঘটে নব্য জেএমবির৷
ছবি: bdnews24.com২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে তখনকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা করা হয়৷ ওই হামলায় হাইকমিশনার বেঁচে গেলেও মারা যান দুইজন৷ ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে খুন হন ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর জাপানি নাগরিক হোশি কোনিওকে রংপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে সহকারী জেলা জজ সোহেল আহম্মেদ এবং জগন্নাথ পাঁড়েকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়৷
ছবি: APবিভিন্ন সময় সশস্ত্র হামলায় বেশ কয়েকজন ব্লগার ও মুক্তমনা নিহত হয়েছেন৷ ২০১৫ সালের ঢাকায় গলা কেটে হত্যা করা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে৷ ২০১৬ সালেন ২৫ এপ্রিল কলাবাগানে বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ সমকামীদের অধিকার-বিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনা ও প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জুলহাজ আর মাহবুব ছিলেন নাট্যকর্মী৷
ছবি: Robert Richter২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদের সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা এবং গোলাগুলিতে দুই কনস্টেবলসহ চারজন নিহত হয়৷
ছবি: bdnews24.com২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে জামাআতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি৷ ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলার ৫০০ স্থানে বোমা ফাটিয়ে আলোচনায় এসেছিল এই জঙ্গি গোষ্ঠী৷ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ আহত হন।
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Munirকিছু সংগঠনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নজরে আসার পর সেগুলোকে থামাতে সময়ে সময়ে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ ‘আনসার আল ইসলাম’, জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সব ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com