বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রধর্ম থাকা উচিত কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে দীর্ঘদিন ধরেই৷ কেউ কেউ মনে করছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার মূল কারণ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম৷ সত্যিই কি তাই?
বিজ্ঞাপন
স্বৈরশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকার সময় ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম' যোগ করা হয়৷ সে বছরই সংবিধানের এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়৷ সেই রিটের সুরাহা এখনো হয়নি৷ তবে শীঘ্রই হয়ত আদালত এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত জানাবেন৷
তবে আমার লেখার মূল বিষয় সেই রিট নয়৷ ২৭ বছর আগে করা রিটের আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিকের একটি মন্তব্য আমাকে বেশি ভাবিয়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে গত তিন মার্চ তিনি জানিয়েছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার মূল কারণ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম৷
সাতটি ‘নাস্তিক’ দেশের কথা
বিশ্বে ধার্মিক বেশি, নাকি ‘নাস্তিক’? সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না এমন মানুষ কোন কোন দেশে সবচেয়ে বেশি? সবচেয়ে বেশি ‘নাস্তিক’ বাস করেন কোন সাতটি দেশে?
ছবি: picture-alliance/ David Wimsett/UPPA/Photoshot
চীনে শতকরা ৯০ ভাগই ‘নাস্তিক’
৬৫টি দেশে জরিপ চালিয়েছিল ‘গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল’৷ জরিপ থেকে বেরিয়ে আসা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নাস্তিকেরও দেশ৷ সে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষই প্রত্যক্ষ ভা পরোক্ষভাবে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করেন৷ চীনের শতকরা ৬১ ভাগ মানুষ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সরাসরি অস্বীকার করেন, বাকি ২৯ ভাগ নিজেদের ধর্মে বিশ্বাসী নন বলে দাবি করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুইডেনে ৭৬ শতাংশ
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেনে সরকারি হিসেব অনুযায়ী মাত্র শতকরা ৮ ভাগ মানুষ উপাসনালয়ে গিয়ে ধর্ম চর্চা করেন৷ তবে গ্যালাপ-এর জরিপ অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৬ ভাগ সৃষ্টিকর্তা আছেন বলে মনে করেন না৷
ছবি: Leif R Jansson/AFP/Getty Images
চেক প্রজাতন্ত্রে সামান্য কম
‘নাস্তিক’ চেক প্রজাতন্ত্রেও খুব বেশি কম নয়৷ মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩০ ভাগ মানুষ নিজেদের সরাসরিই ‘নাস্তিক’ বলেন৷ তবে বেশিরভাগ মানুষই নিজেদের ধর্মবিশ্বাস আছে কিনা, তা জানাতেই রাজি নন৷ মাত্র ১২ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করেন৷ গ্যালাপ-এর জরিপ জানাচ্ছে, সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশটিতে এক হিসেবে শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষই নাস্তিক, কেননা তাঁরা ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তার গুরুত্ব স্বীকার করেন না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Xamax
ব্রিটেনে ৬৬ শতাংশ
জরিপে অংশ নেয়া ব্রিটেনের শতকরা ৫৩ জন মানুষ বলেছেন যে, তাঁদের কোনো ধর্মবিশ্বাস নেই৷ আর ১৩ ভাগ সরাসরিই বলেছেন, ‘আমি নাস্তিক’৷
ছবি: Reuters
হংকং ও জাপানে শতকরা ৬২ ভাগ
বিশ্বের ৬৫টি দেশের ৬৪ হাজার মানুষের মাঝে এই জরিপ চালিয়েছে গ্যালাপ৷ হংকংয়ের মানুষদের সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া গেছে এই জরিপ থেকে৷ দেখা গেছে, হংকংয়ের শতকরা ৪৩ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে নাস্তিক৷ বাকি ৫৭ ভাগের মধ্যে ১৯ ভাগকেও আস্তিক অন্তত মনে হয়নি৷ জাপানে প্রত্যক্ষ নাস্তিক শতকরা ৩১ ভাগ হলেও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের গুরুত্ব নিয়ে ভাবেন না এমন মানুষও আছে অনেক৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
জার্মানিতে ৫৯ ভাগ
জার্মানির ৫৯ ভাগ মানুষকেই নাস্তিক হিসেবে দেখিয়েছে গ্যালাপ৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশ, যেমন স্পেন, অস্ট্রিয়া এবং ফ্রান্সের নাগরিকদেরও বড় একটা অংশই নাস্তিক৷ বিশ্বের যেসব দেশে অনেক ‘আস্তিক’, সেসব দেশ থেকে অনেক মানুষই এসব ‘নাস্তিক’ দেশে এসে উন্নত জীবনের সন্ধান পেয়েছেন, পাচ্ছেন৷ ইউরোপের বেশ কিছু দেশেই এখনো নাস্তিকরাই সংখ্যাগুরু৷ তবে সংখ্যালঘু আস্তিকদের ধর্ম চর্চায় তাতে কোনো সমস্যা হয় না৷
গরুর মাংস খেয়েছেন, এমন সন্দেহে গতবছর সেদেশে একজন মুসলমানকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে৷ আর পুলিশ সেই হত্যাকণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে তিনি সত্যিই গরুর মাংস খেয়েছিলেন কিনা সেটা বের করাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছে! সেই ঘটনার পর মাঝেমাঝেই শোনা যাচ্ছে, মুসলমান গরু ব্যবসায়ীদের হত্যার খবর৷
ভারতে এমন এক সময় সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা বাড়ছে যখন দেশটিতে ক্ষমতায় আছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)৷ আর দেশটির প্রধানমন্ত্রী এখন নরেন্দ্র মোদী, গুজরাট দাঙ্গার সময় সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সন্দেহজনক৷ সেই দাঙ্গার পর দীর্ঘদিন তাঁর ইউরোপ, অ্যামেরিকা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল৷ লক্ষ্যণীয় হচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষ একটি দেশের মানুষ তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷ যদিও এটা কারো অজানা নয় যে, ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় নিহত হয়েছিল কমপক্ষে ১২০০ মানুষ, যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলমান৷
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিবছর যেসব দেশে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে আছে তার তালিকা প্রকাশ করে৷ ছবিঘরে ২০১৫ সালের জুলাইতে প্রকাশিত সবশেষ প্রতিবেদনের তথ্য থাকছে৷
ছবি: DW
প্রথম: সিরিয়া
সুন্নিপ্রধান দেশ সিরিয়ায় শিয়া, বিশেষ করে আলাউইট সম্প্রদায়ের লোকজন সহ খ্রিষ্টান, কুর্দ, ফিলিস্তিনি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হুমকির মুখে রয়েছে৷ আইএস, হিজবুল্লাহ ছাড়াও সিরিয়ার শাসকপন্থি গ্রুপ সাবিহা এ সব হুমকির অন্যতম কারণ৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ হুমকি বলতে গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যা ও সহিংস দমননীতি বুঝিয়েছে৷
ছবি: Reuters/SANA
দ্বিতীয়: সোমালিয়া
সরকারের সঙ্গে আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সংঘাত এখনও চলছে৷ আর এর শিকার হচ্ছে বান্টু (বেশিরভাগ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী) ও বেনাদিরি (বেশিরভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী) গোষ্ঠীর মানুষজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Warsame
তৃতীয়: সুদান
দেশটির দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী নন-আরব মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর খার্তুম সরকারের নিপীড়নের অভিযোগে দু’টি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ২০০৩ সালে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেটি এখনও চলছে৷ ফলে দারফুরে বসবাসকারী ফুর, জাঘাওয়া, মাসালিট সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষদের জীবন সংকটে রয়েছে৷
ছবি: GetttyImages/AFP/C. Lomodon
চতুর্থ: আফগানিস্তান
বিদেশি সৈন্য চলে যাবার পর সেখানে আবারও তালেবানের শক্তি বেড়েছে৷ ফলে হাজারা, পশতুন, তাজিক, উজবেক, তুর্কমেন, বেলুচি সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষের উপর নির্যাতনের আশঙ্কা বাড়ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Aref Karimi
পঞ্চম: ইরাক
দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত৷ তারপরও সেখানে শিয়া গোষ্ঠীর লোকজনের জীবন বিপদমুক্ত নয়৷ সংকটে রয়েছে সুন্নি, কুর্দ, তুর্কমেন, খ্রিষ্টান, ইয়াজিদি, শাবাক, বাহাই, ফিলিস্তনি সহ অন্যান্যদের জীবনও৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
ষষ্ঠ: ডিআর কঙ্গো
স্থানীয় মায়ি-মায়ি মিলিশিয়া, উগান্ডা ও রুয়ান্ডার বিদ্রোহী এবং কাতাঙ্গান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কারণে মানুষের প্রাণ যাওয়া অব্যাহত আছে৷ ফলে সংকটে আছে হেমা, লেন্ডু, হুতু, লুবা, লুন্ডা, টুটসি, বাটওয়া সহ আরও কয়েকটি গোষ্ঠীর জনগণ৷
বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হামলায় সংকটে রয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন৷ এছাড়া কচিন, কারেনি, কারেন, মন, রাখাইন, শান, চিন এবং ওয়া জাতির জনগণও ভালো নেই সেখানে৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ, ভারতের অবস্থান
‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’-এর তালিকায় বাংলাদেশ ৪১তম আর ভারত ৫৪তম অবস্থানে আছে৷ বাংলাদেশে আহমদিয়া, হিন্দু সহ অন্য ধর্মাবলম্বীরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতির লোকেদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷ আর ভারতে আসামিজ, বোড়ো, নাগা, ত্রিপুরা সহ অন্যান্য উপজাতি এবং কাশ্মিরী, শিখ, মুসলিম ও দলিতরা হুমকির মুখে আছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
জার্মানিতে সংখ্যালঘুরা যা পান না
যে দেশটিতে বসে এই লেখা লিখছি, জার্মানি, সেটিরও কোনো রাষ্ট্রধর্ম নেই৷ তবে ক্ষমতায় থাকা দলটি রক্ষণশীল, নাম খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল (সিডিইউ)৷ দলটি সময়ের সাথে সাথে নিজেদের বদলালেও সমকামীদের বিয়েতে আজও সায় দেয়নি৷ তবে এমন ভাবার কারণ নেই, জার্মানিতে সংখ্যালঘুরা বুঝি খুব কষ্টে আছে৷ মোটেই নয়, বরং মোট জনসংখ্যার চার দশমিক দুই শতাংশ সংখ্যালঘুরা অনেক সুযোগ সুবিধাই পান৷ যা পান না তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলাতে জার্মানিতে ছুটি থাকে না, থাকে খ্রিষ্টানদের উৎসবের দিনগুলোতে৷ জার্মানির মসজিদে মাইকে আযান দেয়ার নিয়ম নেই, তবে গির্জায় নিয়মিত বিরতিতে ঘণ্টা পেটাতে বাধা নেই৷ কোরবানির পশু জবাই দেয়ার নিয়ম নেই৷ সংখ্যালঘুদের ধর্ম মেনে বিয়ে করলে, সেই বিয়ের কোনো আইনি বৈধতা নেই৷ লেখা বাহুল্য, রাষ্ট্রধর্মহীন দেশটিতে সংখ্যালঘুরা এ সব মেনে নিয়েই দিব্যি ভালো আছেন৷
বাংলাদেশ যা পেরেছে, পারেনি
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম' যেমন আছে, তেমনি এটাও পরিষ্কার উল্লেখ আছে যে দেশটিতে সব ধর্মের মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা সমান৷ ফলে রাষ্ট্রধর্ম থাকা না থাকাটা একটি আপেক্ষিক ব্যাপার৷ এটা থাকায় সমাজের একটি ধর্মান্ধ অংশ আত্মতুষ্টিতে ভোগে, কিন্তু আইনের বিচারে সেটা তাদের কোনো বাড়তি সুবিধা দেয় না৷ বরং জার্মানি এবং ভারতের মতো রাষ্ট্রধর্মহীন দেশ সংখ্যালঘুদের যা দিতে পারেনি, বাংলাদেশ তার অনেকটাই পেরেছে৷ মোটের উপর, রাষ্ট্রধর্ম থাকা বাংলাদেশে কোনো ধর্মভিত্তিক দল স্বাধীনতার পর আজ অবধি এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারেনি৷ ভবিষ্যতে পারবে এমন কোনো ইঙ্গিতও নেই৷ তাই রাষ্ট্রধর্ম থাকার কারণে মূলত সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হচ্ছে, এটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না৷ বরং আমি মনে করি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মূল কারণ দু'টি৷
প্রথমত, রাজনৈতিক৷ সংখ্যালঘুদের বড় একটি অংশ বর্তমানে ক্ষমতায় থাক দলটির সমর্থক হিসেবে পরিচিত৷ কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এই দল ক্ষমতায় থাকলেও সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হন, না থাকলেও হন৷ গত কয়েকবছরে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখতে পাওয়া যায়, একাধিক ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের সক্রিয় সদস্যদের পরিষ্কার অংশগ্রহণ রয়েছে৷ সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করা গেলে তাদের উপর নির্যাতন কমবে বলে আমার বিশ্বাস৷
দ্বিতীয়ত, সম্পদ লুট৷ সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠদের একটি অংশ সুযোগ পেলে সংখ্যালঘুদের সম্পদ লুটে নেয়ার চেষ্টা করেন৷ এ জন্য তারা এমন একটা অবস্থা তৈরি করে, যাতে সংখ্যালঘুরা ভিটামাটি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন৷ যদিও বাংলাদেশের আইন এটা রোধে যথেষ্ট শক্তিশালী, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মানসিকতায়৷ আইন প্রয়োগের মানসিকতায় ঘাটতি প্রকট৷ আর এই ঘাটতি কমিয়ে আনা গেলে সংখ্যালঘুরা বর্তমান আইনি কাঠামোতেই পর্যাপ্ত সুরক্ষা পাবেন বলে আমার বিশ্বাস৷
বন্ধু, আপনি কি লেখকের সঙ্গে একমত? জানান নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷
ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে পৃথককরণ
তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের আমল থেকে ‘‘ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিচ্ছেদ’’ কথাটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চালু৷ বিভিন্ন দেশের সংবিধানে এই সমস্যার মূল্যায়ন ও সমাধান আজও আলাদা৷ তার কিছু নমুনা৷
ছবি: Jewel Samada/AFP/Getty Images
অস্ট্রেলিয়া
কমনওয়েলথ দেশটির সংবিধানে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা বা সরকারি পদ গ্রহণের জন্য কোনো ধর্ম পরীক্ষা নিষেধ করা আছে৷ অপরদিকে যে কোনো ধর্ম মুক্তভাবে পালন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে৷ (ছবিতে সিডনির সংসদ ভবনের উপর অস্ট্রেলিয়ার লোগো)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Coch
ব্রাজিল
ব্রাজিলের বর্তমান সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে; কোনো রাষ্ট্রীয় গির্জা প্রতিষ্ঠা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ সরকারি কর্মকর্তাদের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ‘‘জোট গঠন বা নির্ভরতা’’ নিষিদ্ধ৷ (ছবিতে ব্রাজিলের কনগ্রেসো নাসিওনাল বা জাতীয় কংগ্রেস, যার দুই কক্ষ হলো সেনেট এবং চেম্বার অফ ডেপুটিজ)৷
ছবি: Voishmel/AFP/Getty Images
চীন
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘‘কোনো সরকারি বিভাগ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নাগরিকদের কোনো ধর্মে বিশ্বাস করতে বা না করতে বাধ্য করতে পারবে না; এছাড়া যে সব নাগরিক কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন অথবা করেন না, তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা চলবে না৷’’ (ছবিতে বেইজিং-এর গ্রেট হল অফ দ্য পিপল, যেখানে প্রতিবছর ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/How Hwee Young
ফ্রান্স
ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদকে ফরাসিতে বলা হয় ‘লাইসিতে’৷ ফ্রান্সে ধর্ম ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে পরস্পরের থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ একদিকে যেমন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, অপরদিকে সরকারি ক্ষমতাকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির প্রভাবমুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ (ছবিতে প্যারিসের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা জাতীয় সম্মেলন)৷
ছবি: picture-alliance/ZB/M. Tödt
জার্মানি
জার্মান সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, যদিও জার্মানিতে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে পুরোপুরি বিচ্ছেদ নেই৷ সরকারিভাবে স্বীকৃত গির্জাগুলিকে পাবলিক কর্পোরেশনের মর্যাদা দেওয়া হয়, তাদের প্রাপ্য কিছু কিছু কর সরকার আদায় করে দেন – তবে বিনামূল্যে নয়৷ ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক পাঠ্য বিষয় নয়৷ (ছবিতে বার্লিনের বুন্ডেসটাগ বা জার্মান সংসদ)৷
ছবি: imago/Schöning
জাপান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন দখলদারির সময় ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মার্কিন ধ্যানধারণা জাপানে আরোপিত হয়৷ জাপানের সংবিধানে ধর্মপালনের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করা হয়েছে, অপরদিকে সরকার ধর্মপালনের জন্য কোনোরকম চাপ দিতে পারবেন না, অথবা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে সরকারি অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না৷ (ছবিতে টোকিও-র সংসদভবন)৷
ছবি: Reuters
সুইজারল্যান্ড
সুইশ কনফেডারেশনের ফেডারাল সংবিধানে ‘‘ধর্ম ও বিবেকের স্বাধীনতা’’-র গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে৷ বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, ‘‘কোনো ব্যক্তিকে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ে যোগ দিতে বা অঙ্গ হতে, কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে বা ধর্মীয় নির্দেশ অনুসরণ করতে বাধ্য করা চলবে না’’৷ (ছবিতে বার্ন শহরের বুন্ডেসহাউস বা ফেডারাল প্যালেস, যেখানে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন বসে)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Klaunzer
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের প্রধান হলেন ব্রিটিশ নৃপতি স্বয়ং, তিনিই গির্জার উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের নিয়োগ করেন৷ হাউস অফ লর্ডস-এও ২৬ জন বিশপের আসন আছে৷ সব সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ সীমিত, যুক্তরাজ্যে সরকারি শাসনও অপেক্ষাকৃতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ৷ ব্রিটেনের অলিখিত সংবিধান অনুযায়ী অপরাপর ধর্মীয় গোষ্ঠীও ব্যাপক স্বাধীনতা উপভোগ করে৷ (ছবিতে প্যালেস অফ ওয়েস্টমিনস্টার)৷
ছবি: Mohammad Karimi
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
গির্জা ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সম্পর্কে জেফারসনের প্রখ্যাত উক্তি মার্কিন সংবিধানে উল্লিখিত নেই৷ ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্টে বলা হয়েছে যে, ‘‘(মার্কিন) কংগ্রেস কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে, বা মুক্তভাবে ধর্মপালন নিষিদ্ধ করে কোনো আইন প্রণয়ন করবে না’’৷ (ছবিতে ক্যাপিটল হিল-এ মার্কিন কংগ্রেসের আসন)৷