বাংলাদেশে সরকারের আদেশের ফলে বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা
২৮ অক্টোবর ২০২৪স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৪ অক্টোবর এক বিবৃতিতে বলেছে, ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত জুলাই-বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পর্কিত ঘটনাগুলোয় কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না৷ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার নতুন যাত্রা শুরু হয়৷ ছাত্র ও জনগণ এটিকে সফল করার জন্য আন্দোলনের ভিত্তিতে সক্রিয়ভাবে এর জন্য কাজ করেছে; ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত চলা গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না৷''
পঞ্চগড়ের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, প্রায় ৫০০ মানুষ লাঠি ও হাতুড়ি নিয়ে আহমদিয়াদের বাড়িতে হামলা করে৷ ‘‘দুই ঘণ্টা ধরে নৈরাজ্য চলতে থাকে৷ অনেকে মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন, বাকিরা ঝোঁপঝাড়ে বা প্রতিবেশীর বাড়িতে লুকিয়েছিলেন,'' বলে এএফপিকে জানান তিনি৷
শাহরিয়ারের বাবা আব্দুল জানান, ৫ আগস্ট হামলাকারীরা তার ১৬ বছর বয়সি ছেলের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন৷ এরপর থেকে শাহরিয়ার ঢাকার এক হাসপাতালে কোমায় আছেন৷ ‘‘আমার সন্তান এখনও চোখে মেলেনি বা কথা বলেনি,'' এএফপিকে জানান আব্দুল৷ আশঙ্কার কারণে তিনি তার পুরো নাম জানাননি৷
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির কারণে আব্দুলের মনে শঙ্কা জেগেছে যে, তার ছেলের উপর হামলার জন্য দায়ীদের বিচার করা হবে না৷
হামলা, সহিংসতা
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল৷ পুলিশ তখন লুকিয়ে ছিল, কারণ, বিক্ষোভকারীদের উপর হামলার জন্য তাদের দায়ী করা হয়৷ শেখ হাসিনার পতনের আগে ৭০০-র বেশি জন নিহত হন৷
সাবেক সরকারের সমর্থকদের বিরুদ্ধেও সহিংসতা হয়েছে৷ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অন্তত ৪৬ পুলিশ সদস্য নিহত হন৷ এছাড়া আওয়ামী লীগ কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে, ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷
ধর্মীয় ঘৃণা ও লোভ থেকেও কিছু সহিংসতা হয়েছে৷
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব বলছে, ৫ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে শিশুসহ অন্তত ৩১৮ জন মারা গেছেন৷
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলছে, ৪ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ধর্ষণ ও হত্যাসহ ২,০১০টি ঘটনা ঘটেছে৷
৫ আগস্ট ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে হামলার সময়ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ সুকুমার বিশ্বাস নামের এক মুচি জানান, তিনি ঐ ভবনের সামনে ‘চারটি পোড়া দেহ' দেখেছেন৷ আকারে ছোট হওয়ায় ‘এর মধ্যে তিনটি শিশুর দেহ' ছিল বলে মনে করছেন তিনি৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারী জানান, ৫ আগস্ট তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ এইসময় তার স্বামী তাদের তিন সন্তান নিয়ে লুকিয়ে ছিলেন বলেও জানান তিনি৷ ‘‘আমরা ভয়ে বিচার চাইনি,'' বলে জানান ঐ নারী৷
প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নির্মল রোজারিও বলেন, ‘‘সবার বিচার হতে হবে৷ ‘‘সরকার যদি সুশাসন নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে তাদের উচিত প্রতিটি মামলার তদন্ত করা এবং অপরাধীদের বিচার করা৷''
মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘সহিংসতার অপরাধে জড়িত কাউকে মুক্তি দিতে' দায়মুক্তির আদেশ ব্যবহার না করা গুরুত্বপূর্ণ৷'' এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷
সারা হোসেন বলেন, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলা কিংবা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের কোনোটিই ‘বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না'৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি)