বাংলাদেশে সাংবাদিকদের জন্য ঝুঁকি আরো বেড়েছে৷ ঝুঁকি বিবেচনায় ২০১৩ সালের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান নেমেছে আরো দুই ধাপ৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও ভালো কিছু আইনও হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স বুধবার ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স-২০১৪ প্রকাশ করেছে৷ তাদের ইনডেক্স অনুযায়ী সাংবাদিকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬৷ অথচ ২০১৩ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৪ আর ২০১২ সালে ১২৯৷ অর্থাৎ আগের তুলনায় বাংলাদেশে সাংবাদিকদের জন্য ঝুঁকি বেড়েছে৷
এ বছর বিশ্বের ১৮০টি দেশের তালিকা করা হয়৷ আগের দু'বছর ১৭৯টি দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল৷ এই তালিকা অনুযায়ী, ১ নম্বরটি হচ্ছে সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ৷ আর তারপর ক্রমিক যত বাড়ে ঝুঁকির পরিমাণও তত বাড়ে৷ সেই হিসেবে বিশ্বে সাংবাদিকেদের জন্য এখন সবচেয়ে কম ঝুঁকির দেশ হলো ফিনল্যান্ড৷ অন্যদিকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ইরিত্রিয়া৷
সাংবাদিকদের জন্য ঝুঁকি বিবেচনায় গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান দুই ধাপ নীচে নেমে গেছে৷ ২০১২ সালের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ঝুঁকির মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে বলে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স-এর ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স প্রতীয়মান হয়৷ তবে শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ৷ তাদের অবস্থান যথাক্রমে ১৬৫ এবং ১৫৮৷ ভারতের অবস্থান ১৪০৷ চীন ও ইরানসহ এশিয়া এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এখন সাংবাদিকদের জন্য৷ অবাক করার বিষয় হলেও, তাদেও তুলনায় আফগানিস্তানের অবস্থা এ মুহূর্তে ভালো৷
ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স-এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর টার্গেট করে হামলা করা হয়েছে গত বছরও৷ এই হামলার জন্য পুলিশ এবং দুর্বৃত্ত উভয়ই দায়ী৷ সহিংস আন্দোলনকারীরাও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চলিয়েছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি করায় ব্লগারদের ওপর হামলা, এমনকি তাঁদের হত্যাও করা হয়েছে৷ এছাড়া, ২০১২ সালে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মহেরুন রুনির হত্যাকারীদের এখনও বিচারের আওতায় আনা হয়নি৷
শাহবাগ আন্দোলনের বছরপূর্তি
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা৷ তবে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আরো অনেক ইস্যুতে এখন সরব গণজাগরণ মঞ্চ৷ শাহবাগ আন্দোলনের বর্ষপূর্তি নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি৷ বর্ষপূর্তিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন আন্দোলনের কর্মীরা৷ গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে চলবে এই আন্দোলন৷
ছবি: DW/M. Mamun
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু
পাঁচ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় গণজাগরণ মঞ্চের অনুষ্ঠান মালা৷ তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হয় বর্ষপূর্তি৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘ফাঁসির’ দাবি
শাহবাগ আন্দোলনের এক বছর পূর্তির শোভাযাত্রায় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ‘ফাঁসির’ দাবিতে সোচ্চার ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
জনতার ভিড়
গণজাগরণের মঞ্চের আয়োজিত বর্ষপূর্তির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় সাধারণ মানুষের ঢল নামে৷ এক বছর পূর্তিতে ঢাকার শাহবাগ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে গণজাগরণ মঞ্চ কর্মীরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘প্রতীকী ফাঁসি’
শোভাযাত্রায় ‘প্রতীকী ফাঁসির’ চিত্রও তুলে ধরা হয়৷ বলাবাহুল্য, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের উদ্যোগকে সমর্থন করলেও ফাঁসির বিষয়ে সমর্থন নেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের৷
ছবি: DW/M. Mamun
আলোকচিত্র প্রদর্শনী
আন্দোলনের বছর পূর্তিতে শাহবাগে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন শাহবাগ ছাড়িয়ে গোটা বাংলাদেশে এবং পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘নাস্তিক ব্লগার’
শাহবাগ আন্দোলন থেকে সৃষ্ট গণজাগরণের মঞ্চের গত এক বছরের পথচলা মোটেই সহজ ছিল না৷ বরং আন্দোলনের এক পর্যায়ে খুন হন ব্লগার রাজিব হায়দার৷ এরপর ঢালাওভাবে ব্লগারদের নাস্তিক এবং ইসলাম ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে তাঁদের শাস্তির দাবিতে রাজপথে নামে হেফাজতে ইসলাম৷ এক পর্যায়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ব্লগে ‘ইসলাম ধর্ম নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য ও কটূক্তির' অভিযোগে চার ব্লগারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
ছবি: Getty Images
‘সমর্থন আগের মতোই’
তবে ‘নাস্তিক ব্লগার’ প্রচারণার কারণে শাহবাগে জনসমর্থন কমেনি বলে মনে করেন ব্লগার আরিফ জেবতিক৷ শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম এই কর্মী বলেন, ‘‘আমাদের শুরুতে যে জনসমর্থন ছিল, আজকেও সেই একই জনসমর্থন আছে৷ এবং আমি চ্যালেঞ্জ করি যে কোনো মিডিয়া এটা জরিপ চালিয়ে দেখতে পারে৷’’
ছবি: Arif Jebtic
ভিন্নমত
শুরুর দিকে শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন অবশ্য মনে করেন, ‘‘রাজনৈতিক দল এবং আমাদের রাজনীতিক নেতারা আসলে আমাদের আন্দোলনটা খেয়ে ফেলেছে৷’’ দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত আসিফ গত বছর বাংলাদেশে কয়েকমাস কারাভোগের পর বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থান করছেন৷
ছবি: DW/A. Islam
বিভিন্ন ইস্যুতে সরব গণজাগরণ মঞ্চ
প্রসঙ্গত, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবির পাশাপাশি আরো অনেক ইস্যুতে সরব রয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷ সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ‘রোড মার্চ’ করে গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
10 ছবি1 | 10
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং বৈশাখী টেলিভিশনের চিফ এডিটর মনজুরুল আহসান বুলবুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, এটি ঠিক যে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে৷ সাগর-রুনিসহ আরো অনেক সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি৷ সাংবাদিকরা হুমকি ও হামলার শিকার হচ্ছেন৷ ব্লগাররা হত্যার শিকার হয়েছেন৷ সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তার বিষয়টি আজও ঝুঁকির মুখেই রয়েছে৷ তবে তার সঙ্গে এ কথাও সত্য যে সাংবাদিকদের সুরক্ষা এবং সংবাদমাধ্যমের জন্য ভালো কিছু আইনও হয়েছে বাংলাদেশে৷
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক আবেদ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে পেশাদারিত্বের অভাব লক্ষণীয়, যা সাংবাদিকদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে৷ সংবাদমাধ্যম এমন সব ব্যক্তিদের হাতে চলে যাচ্ছে, যাঁরা সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করছেন রাজনীতি, ব্যবসা অথবা ব্যক্তি স্বার্থে৷ এর ফলে ঝুঁকির মুখে পড়ছেন সাংবাদিকরা৷ তিনি বলেন, সাংবাদিকতার মানেরও অবনতি ঘটেছে৷ সংকীর্ণ চিন্তা সাংবাদিকতার পেশাদারিত্ব নষ্ট করছে৷ তাই ঝুঁকি কমাতে সাংবাদিকদের এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন আবেদ খান৷