বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের প্রধান আধেয় হলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসফবুক৷ বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সাইবার হেল্প ডেস্ক-এর তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৭০ ভাগ অভিযোগই আসে নারীদের থেকে৷
বিজ্ঞাপন
এ মুহূর্তে বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ চুরি৷ শুধু বাংলাদেশ কেন, পৃথিবীর প্রায় সব প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমই গুরুত্বের সঙ্গে এই সাইবার ডাকাতি নিয়ে খবর পরিববেশন করেছে, করছে৷ এই অপরাধে জড়িত চক্রটি আন্তর্জাতিক হলেও, এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশের কেউ জড়িত থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছে না তদন্তকারীরা৷
এই সাইবার ডাকাতির ঘটনায় এরইমধ্যে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে পদত্যাগ করতে হয়েছে৷ বিদায় নিতে হয়েছে আরো দু'জন ডেপুটি গভর্নরকে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে জমা থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা সুইফট কোড হ্যাকিং-এর মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে ফিলিপাইন্স এবং চীনা হ্যাকাররা৷ এ ঘটনার সঙ্গে ফিলিপাইন্সসহ আরো কয়েকটি দেশের ব্যাংক কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কে কতটা জড়িত তার তদন্ত চলছে এখন৷
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
এটা অবশ্য প্রথম নয়৷ এর আগে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা তুলে নেয়ার ঘটনাও বেশ আলোড়ন তোলে৷
মুশকিল হলো, এ রকম ঘটনা আলোড়ন তুললেও বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের নানা দিক তেমন আলোচনায় আসে না৷ অথচ প্রতিনিয়ত এর শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, নারী ও শিশু৷ তারা যেমন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তেমনি তাদের ব্যক্তিগত জীবনও হয়ে পড়ছে দুর্বিষহ৷
সাইবার ক্রাইমের প্রধান শিকার নারী
সাইবার হয়রানি থেকে সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে একটি সাইবার হেল্প ডেস্কে রয়েছে৷ এই হেল্প ডেস্কে গত দু'বছরে ১৭ হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়ে৷ দেখা যায়, অভিযোগকারীদের মধ্যে ৭০ ভাগই নারী৷ আরও সুর্দিষ্ট করে বললে, নারীদের অভিযোগের ৬০ ভাগেরও বেশি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক সংক্রান্ত৷
এর মধ্যে ১০ ভাগ অভিযোগ খুবই ভয়াবহ৷ এই ১০ ভাগের মধ্যে রয়েছে অন্যের ছবিতে ছবি জুড়ে দেওয়া (সুপার ইম্পোজ) এবং পর্নোগ্রাফি৷ তাছাড়া ইউটিউব ও বিভিন্ন সাইটে এ সব পর্নোগ্রাফি ও ছবি ‘আপ' করার হারও বেড়েছে৷
আইসিটি-বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, ফেসবুকের চ্যাট বা ভিডিও চ্যাটের ছবি একটু এদিকে-ওদিক করে বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিডিও-চিত্র দ্রুত ইউটিউব-এ বা বিভিন্ন পর্নো সাইটে শেয়ার করা হচ্ছে৷
ডার্কনেটের ব্যবহার বাড়ছে
বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন হওয়ার পরও তথ্য পাওয়া মুশকিল৷ নিরাপত্তা সংস্থাগুলি যে প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করছে, তাতে সব সময় তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় পাওয়া নাও যেতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Amir Kaljikovic
ইন্টারনেটে তথ্য
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিদিনই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কিছু না কিছু তথ্য যোগ করেন৷ স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনগুলোও ব্যবহারকারীদের ধারণার চেয়ে বেশি তথ্য নিয়ে থাকে৷
ছবি: imago/Schöning
মেটাডাটা
গুপ্তচর বিভাগ বেশি আগ্রহী ‘মেটাডাটা’ সম্পর্কে৷ নেট ব্যবহারকারী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য ওয়েবভিত্তিক বিষয়বস্তুর সঙ্গে পাওয়া যায়, যাকে বলা হয় মেটাডাটা৷
ছবি: Reuters
মেটাডাটার তথ্য
কে কাকে ই-মেল করছেন, সেই ব্যক্তির পরিচয়, সময় সম্পর্কে তথ্য থাকে মেটাডাটায় যা গুপ্তচর বিভাগ পেতে চায়৷ প্রেরক, ঠিকানা, তারিখ থেকে শুরু করে যে সার্ভার ব্যবহার করে ই-মেলটি করা হয়েছে, সেই তথ্যও এভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব৷
ছবি: Raigo Pajula/AFP/Getty Images
ডার্কনেটের ব্যবহার
ডার্কনেটের মাধ্যমে পরিচয় গোপন রেখে যোগাযোগ করা সম্ভব৷ প্রযুক্তিগত কারণে এখনো সরকার বা নিরাপত্তা কর্মীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডার্কনেট ব্যবহারকারীদের সনাক্ত করতে পারেন না৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
ফ্রিনেট
সবচেয়ে আলোচিত ডার্কনেটের নাম ফ্রিনেট৷ তাদের ওয়েবসাইটে গেলে বিনামূল্যে একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করা যায়৷
ছবি: Reuters
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য
ফেসবুক এবং টুইটারে একজন ব্যবহারকারী শুধু নিজের সম্পর্কে সাধারণ তথ্যই জানান না, তাঁরা তাঁদের পছন্দ, অপছন্দ, এমনকি বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও জানান৷ ব্লগে সমাজ সচেতনতা, মানবাধিকার, সরকার বিরোধী লেখাও লেখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশে ডার্কনেট
বাংলাদেশে ডার্কনেটের ব্যবহার আগে না হয়ে থাকলেও খুব শিগগিরই যে সেটা শুরু হয়ে যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷
ছবি: Fotolia/Amir Kaljikovic
7 ছবি1 | 7
হেল্প ডেস্ক থেকে আরো জানা যায়, অভিযোগ আসার দু-একদিনের মধ্যে রিপোর্ট করতে গিয়ে দেখা যায় যে, তা কয়েক হাজারবার শেয়ার হয়ে গেছে৷ এ সব ঘটনা ফেসবুকে রিপোর্ট করেও কাজ হয় না৷ ওদিকে গুগল তা মুছতে চায় না৷ ফলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে৷
অভিযোগগুলোর মধ্যে আরো আছে ফেসবুক আইডি হ্যাক, ই-মেল আইডি হ্যাক, বিভিন্ন ধরনের পর্নোসাইট বা ব্যক্তিগত ছবি পর্নোসাইটে ছেড়ে দেয়া৷ এর বাইরে অনলাইনে প্রতারণা বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের বড় একটি জায়গা দখল করে রয়েছে৷
গত মার্চ মাসে র্যাব এই অপরাধে ১২ জন বিদেশিসহ মোট ১৪ জনকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করে৷ তারা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল দীঘদিন ধরে৷
তারা নাকি খুলনার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নারী চাকরিজীবী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের একজন নারী চিকিৎসক, রাঙ্গামাটির একজন প্রাইমারি স্কুল শিক্ষিকাসহ অনেকের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে সখ্য গড়ে তোলেন৷ এখানেই শেষ নয়, সেই আলাপচারিতা আরও বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার, ট্যাঙ্গো এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমও ব্যবহার করেন তারা৷
র্যাব জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগে কর্মরত নারী চিকিৎসকের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কের সূত্র ধরে স্কট মুরি নামে এক ব্যক্তি লন্ডন থেকে কিছু উপহার বিমানযোগে ঢাকা পাঠাচ্ছেন বলে জানান৷ বলেন, বিমানবন্দর থেকে পার্সেলটি খালাস করতে আনুষাঙ্গিক ব্যয় হবে ৬০ হাজার টাকা৷ তাই একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নম্বর দিয়ে সেই নারী চিকিৎসককে সেখানে টাকা পাঠানোর অনুরোধ করেন৷
তথ্য গোপন রাখার সাতটি সহজ উপায়
আধুনিক প্রযুক্তির কারণে মানুষের সুযোগ-সুবিধা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে তথ্য চুরির ঘটনা৷ ফোর্বস জানাচ্ছে কোন সাতটি উপায়ে আপনি খুব সহজেই ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
পাসওয়ার্ড নিজের কাছে রাখুন
কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের পাসওয়ার্ড যেন কখনই এক না হয়৷ আর ব্যাংক কার্ড-এর সঙ্গে যেন এই পাসওয়ার্ডের মিল না থাকে৷ এছাড়া কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে কোনো পাসওয়ার্ড লিখে রাখবেন না৷ এর ফলে আপনার তথ্য চুরির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়৷ বাড়ির বাইরে গেলে এগুলি ‘লক’ করে যাবেন৷
ছবি: Sergey Nivens - Fotolia.com
নামে ‘গুগল অ্যালার্ট’ ব্যবহার করুন
এটা খুব সহজ পন্থা, আপনি যদি দেখতে চান ইন্টারনেটে আপনার সম্পর্কে সবাই কী বলছে৷ সোজা এই ঠিকানায় যান – http://www.google.com/alerts এবং আপনার নাম লিখুন৷ তারপর আপনার নামের বিভিন্ন ধরন লিখে, তার আগে ও পরে ‘কোটেশন মার্ক’ জুড়ে দিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ব্যবহারের পর লক্ষ্য রাখা
আপনি যদি অন্য কারো কম্পিউটার বা ট্যাবলেট ব্যবহার করেন, তবে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন৷ আপনার পর যিনি সেটা ব্যবহার করবেন, তিনি যাতে আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারে – সেটা খেয়াল রাখুন৷ আপনি যদি এটা করতে ভুলে যান, তাহলে ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে৷
ছবি: AFP/Getty Images
ফোন, ই-মেল বা জিপ কোড ব্যবহার করতে না দেয়া
অচেনা কোনো মানুষ এই নম্বরগুলো জানতে চাইলে, আপনারা দেবেন না৷ দেখা যায় কোনো অফিস তাঁর কর্মীর কাছ থেকে এ সব তথ্য চাইলে, অনেকেই সেচ্ছ্বায় তা দিয়ে দেয়৷ বহু অফিস এ নিয়ে একটি প্রোফাইল তৈরি করে৷ আপনার কিন্তু এ সব তথ্য না দেয়ার অধিকার আছে৷ তাই আপনি যদি এতে স্বাচ্ছ্বন্দ্যবোধ না করেন, তবে দেবেন না৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কার্ড নয় ক্যাশ
আপনি যদি চান আপনি যে পণ্যটি কিনছেন, সেই কোম্পানি আপনারা পরিচয় না জানুক, তবে নগদ অর্থে জিনিস কিনুন৷
ছবি: AP
ফেসবুকে নিরাপত্তার জন্য ‘ফ্রেন্ডস’ ব্যবহার করুন
ফেসবুকে সবসময় ‘সিকিউরিটি’ বা নিরাপত্তা পরীক্ষা করুন৷ পোস্ট করার পর লক্ষ্য রাখুন আপনি আপনার ছবি বা মন্তব্য ‘ফ্রেন্ডস’ করে রেখেছেন, নাকি ‘পাবলিক’ করেছেন৷ আপনি যদি ‘স্পেশ্যাল’ নির্বাচন করেন এবং ঠিক করে দেন কে কে আপনার পোস্ট দেখতে পাবে, তবে সেটা আপনার তথ্য নিরাপত্তার জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Bozoglu
‘হিস্ট্রি’ এবং ‘কুকিস’ মুছে ফেলুন
আপনি সবশেষ কবে এটা করেছেন? আপনি যদি নিশ্চিত না হন, ব্রাউজারে গিয়ে এটা পরিবর্তন করুন৷ ব্রাউজারের ‘প্রাইভেসি সেটিংস’-এ যান, সেখানে ‘নেভার রিমেমবার হিস্ট্রি’ নির্বাচন করুন৷ এর ফলে ইন্টারনেটে আপনাকে ‘ট্র্যাক’ করাটা হ্যাকারদের জন্য কঠিন হবে৷ এছাড়া আপনি ‘অ্যাড অন’-ও ব্যবহার করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
7 ছবি1 | 7
কথা অনুযায়ী, নারী চিকিৎসকটি ঐ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬০ হাজার টাকা পাঠান৷ এরপর শাহজালাল বিমানবন্দরে পার্সেলটি গ্রহণ করতে গিয়ে তিনি দেখেন যে, তাঁর জন্য আদৌ কোনো পার্সেল আসেনি৷ তখন তিনি র্যাব-এর কাছে প্রতারণার অভিযোগ করলে প্রতারক চক্রের সদস্যদের আটক করা হয়৷
জড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের কিশোররাও
গতমাসে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার একটি স্কুলে এক ছাত্রকে প্রকাশ্যে মারধোর করে অপর এক কিশোর৷ তার এক সহযোগী সেটা ভিডিওতে ধারণ করে আর তারপর তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়৷ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়৷ সেই কিশোরও এখন কারাগারে৷
বাংলাদেশে ২০০৬ সালে প্রথম সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে আইন (আইসিটি অ্যাক্ট) প্রণয়ন করা হয়৷ এরপর ২০১৩ সালে এই আইন সংশোধন করা হলেও, আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে বিতর্ক থেকে গেছে৷ কারণ ৫৭ ধারাটি মূলত সরকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে৷ এখানে এমন সব ইস্যু যুক্ত করা হয়েছে, যার ব্যখ্যা আইনে নেই৷ ফলে পুলিশ চাইলেই আইনটি ইচ্ছেমত ব্যবহার করতে পারে৷ ঢাকায় অবশ্য এর বাইরে একটি সাইবার অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রয়েছে৷
বাংলাদেশে উগ্রপন্থি এবং জঙ্গিরা ব্যাপকভাবে সাইবার অপরাধে জড়িয়ে পড়লেও, তাদের অনেককেই আইনের আওতায় আনা বা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না৷ তারা ব্লগারসহ মুক্তমনাদের ফেসবুক তো বটেই, সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে, যেমন টুইটারে হত্যার হুমকি দেয় এবং পরবর্তীতে হত্যাও করে৷ বলা বাহুল্য, এই কাজে তারা ব্যবহার করে থাকে ভুয়া ফেসবুক আইডি৷
সাইবার অপরাধ সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাইবার অপরাধের মধ্যে নারীদের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হয়রানির ঘটনাই প্রধান৷ সাধারণত তাদের বিকৃত ছবি অথবা তাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দিয়ে হয়রানি করা হয়৷ এর বাইরে প্রতারণা, আইডি হ্যাক, হুমকিসহ নানা অপরাধও আছে৷ তরুণরাও এই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে আইসিটি অ্যাক্ট এবং পর্নোগ্রাফি আইন আছে৷ তবে অনেকেই, বিশেষ করে নারীরা অভিযোগ করলেও আইনি প্রতিকারে যেতে চানান না, করতে চান না মামলা৷ এ জন্য সামজিক কারণই প্রধানত দায়ী৷''
ভিন্ন এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আইনের সঙ্গে অনলাইন ব্যবহারকারীদেরও সতর্ক হতে হবে৷ নিজের ফেসবুক, ই-মেল আইডি সুরক্ষিত রাখতে হবে৷ এগুলি বা এ সবের ‘পাসওয়ার্ড' কারুর সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না৷ এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ছবি দেয়ার ব্যাপারেও থাকতে হবে সতর্ক৷''
বন্ধু, ফেসবুকে ছবি ‘পোস্ট’ করার ক্ষেত্রে আপনি কতটা সচেতন? লিখুন নীচের ঘরে৷