বাংলাদেশে সাগরের পানি বৃদ্ধির হার বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম
১৬ জুন ২০২৪
২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে পটুয়াখালির আব্দুল আজিজের বাড়ি ভেঙে গিয়েছিল৷ এরপর তিনি ঐ বাড়ি থেকে আধ কিলোমিটার দূরে নতুন করে বাড়ি তৈরি করেন৷ এখন তিনি তার আগের বাড়ির এলাকায় মাছ ধরেন৷
বিজ্ঞাপন
‘‘আমার বাড়ি যেখানে ছিল এখন সেখানে মাছ ঘোরাফেরা করে,'' এএফপিকে বলেন তিনি৷
সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ায় অনেক জনপদ হারিয়ে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বের সব জায়গায় সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার মাত্রা এক নয়৷ তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ঘনবসতিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা যে হারে হারিয়ে যাচ্ছে সেটা বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম৷ এক প্রজন্মের মধ্যে অন্তত ১০ লাখ মানুষকে উপকূল থেকে সরে অন্যত্র চলে যেতে হবে বলে মনে করছেন তারা৷
গতমাসে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব মন্তব্য করেন বিজ্ঞানীরা৷ প্রধান গবেষক একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর সাগরের পানির উচ্চতা ৩.৭ মিলিমিটার করে বাড়ছে৷ আর আমাদের গবেষণায় আমরা দেখেছি, আমাদের উপকূলে পানি বাড়ছে ৪.২ থেকে ৫.৮ মিলিমিটার করে৷'' সাইফুল ইসলাম বুয়েটের অধ্যাপক এবং জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা আইপিসিসির সদস্য৷
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এক বা দুই মিটার উঁচুতে অবস্থিত৷ সে কারণে ঝড়ের সময় সাগরের লবণ পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে কূপ ও পুকুরের পানি লবণাক্ত করে ফেলে৷ এতে করে উর্বর জমিরও ক্ষতি হয়৷
‘‘সাগরের পানি বেশি বাড়লে আমাদের বাড়ি ও জমিতে ঢুকে পড়ে,'' বলে জানান মরিচ, মিষ্টি আলু, সূর্যমুখী ও ধান চাষ করা কৃষক ৬৫ বছর বয়সি ইসমাইল হাওলাদার৷ ‘‘এতে শুধু আমাদের ক্ষতিই হয়,'' বলেন তিনি৷
৬৩ বছর বয়সি রেস্তোরাঁ মালিক শাহজালাল মিয়া জানান, প্রতিবছরই সাগর ‘জমি খেয়ে ফেলছে'৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেকে ইতিমধ্যে সাগরে ঘর হারিয়েছে৷''
বাংলাদেশের কয়েকটি সমুদ্র সৈকত
বাংলাদেশের দক্ষিণে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বঙ্গোপসাগর৷ তাই আয়তনে ছোট দেশ হলেও বেশ কিছু নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত আছে এ দেশে৷ বাংলাদেশের কিছু সমুদ্র সৈকত নিয়ে ডয়চে ভেলের এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার৷ সড়কপথে রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় সাড়ে চারশ’ কিলোমিটার এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার দূরে নয়নাভিরাম এ সমুদ্র সৈকতের অবস্থান৷ পৃথিবীর দীর্ঘতম এ সমুদ্র সৈকতের শহরকে বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী বলা হয়৷ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে লাবনী সৈকত, সুগন্ধা সৈকত আর কলাতলী সৈকত৷ সারা বছরই এ সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ইনানী সমুদ্র সৈকত
এ সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার জেলায়৷ কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পূর্বে এর অবস্থান৷ এখানকার সমুদ্র সৈকতে রয়েছে প্রচুর বড় বড় কালো পাথর, যেগুলো মূলত মৃত প্রবাল৷ কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ ধরে আজকাল সহজেই আসা যায় এ সমুদ্র সৈকতে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফ সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকত৷ কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান৷ খুবই পরিচ্ছন্ন এ সৈকতে পর্যটকের আনাগোনা সবসময়ই কম৷ টেকনাফ সৈকতের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে রংবেরঙের জেলে নৌকা৷ জেলেরা লাল, নীল, বেগুনি ইত্যাদি নানা রঙের পতাকায় শোভিত করে রাখেন তাঁদের নৌকাগুলো৷ রংতুলির বর্ণিল আঁচড়ও থাকে নৌকার গায়ে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শাহ পরীর দ্বীপ
টেকনাফ উপজেলার দক্ষিণপ্রান্তে শাহপরীর দ্বীপ৷ সাবরাং ইউনিয়নের একটি গ্রাম৷ টেকনাফ উপজেলা শহর থেকে শাহ পরীর দ্বীপের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার৷ এ দ্বীপের দক্ষিণ পাশটা জুড়ে রয়েছে সমুদ্র সৈকত৷ পর্যটকদের কাছে এ সমুদ্র সৈকতটির জনপ্রিয়তা না থাকলেও নির্জন প্রকৃতি যাদের পছন্দ, তারা যেতে পারেন জায়গাটিতে৷ শাহ পরীর দ্বীপ থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন খালি চোখে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
সেন্ট মার্টিন সমুদ্র সৈকত
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের চারপাশেই আছে সমুদ্র সৈকত৷ টেকনাফ উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরের এ দ্বীপের আরেক নাম নারিকেল জিঞ্জিরা৷ প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপটি নানান বৈচিত্রে ভরপুর৷ উত্তর, পূর্ব, পশ্চিম আর দক্ষিণ সৈকত ছাড়াও, দ্বীপের দক্ষিণপ্রান্তে আরেকটি ছোট দ্বীপ শাহপরীর দ্বীপের সমুদ্র সৈকতও বেশ আকর্ষণীয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকত
এ সমুদ্র সৈকতটিও কক্সবাজার জেলায়৷ প্রায় ২১৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপের পশ্চিম পাশজুড়ে আছে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত৷ এখানকার নৈসর্গিক দৃশ্য, ঝাউবনে ঘেরা অপরূপ সমুদ্র সৈকত, জেলেদের জীবনধারা, বাতিঘর সহজেই পর্যটকদের আকর্ষণ করে৷ কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকতে দেখা যায় নানা রকম সামুদ্রিক পাখি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ব্যস্ততম ও জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত৷ শহরের দক্ষিণ প্রান্তে সৈকতটির অবস্থান৷ চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও নেভাল একাডেমির পরেই সুন্দর এ সৈকতটি৷ এখানে দাঁড়িয়ে বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষমাণ জাহাজগুলোকে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পারকি সমুদ্র সৈকত
কর্ণফুলী নদী আর বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত পারকি সমুদ্র সৈকত৷ লুসাই পাহাড় থেকে বয়ে আসা কর্ণফুলী যেখানে সাগরে মিলেছে, তার দক্ষিণ তীরের নামই পারকি৷ চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে আনোয়ারা উপজেলার গহিরা এলাকায় এর অবস্থান৷ প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সৈকতের তীর জুরে আছে বিস্তীর্ণ ঝাউবন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটাকে বলা হয় সাগরকন্যা৷ পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালী ইউনিয়নে এ সমুদ্র সৈকতটির অবস্থান৷ সাগরের বুকে একই জায়গা থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায় বলে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বিবেচনায় দেশের অন্যান্য সমুদ্র সৈকত থেকে এর গুরুত্ব অনেক বেশি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
হরিণঘাটা সমুদ্র সৈকত
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরগুনা জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে বিশখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় হরিণঘাটা সমুদ্র সৈকতের অবস্থান৷ আকর্ষণীয় এ সৈকতেও পর্যটকের আনাগোনা থাকে না বললেই চেলে৷ সৈকতের পাশেই আছে শুঁটকি পল্লি৷ হরিণঘাটা সমুদ্র সৈকতের পাশেই আছে শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
চর কুকরি মুকরি
ভোলা জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিমি. দূরে নির্জন এক সমুদ্র সৈকত চর কুকরি মুকরি৷ বঙ্গোপসাগরের তীরে মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীর মোহনায় জেগে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চর কুকরি-মুকরি৷ এ চরের প্রধান আকর্ষণ এখানকার শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল লাগোয়া জনশূন্য সমুদ্র সৈকত৷ এছাড়াও এর পাশাপাশি চর পাতিলা, ঢালচর, চর নিজাম, চর সাকুচিয়াতেও আছে সমুদ্র সৈকত৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
সুন্দরবনের সমুদ্র সৈকত
বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবন৷ সুন্দরবনে তাই আছে বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকত৷ একেবারেই জনমানবহীন সুন্দরবনের সমুদ্র সৈকতগুলো৷ এখানকার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সৈকত হলো, কচিখালী সৈকত, ডিমের চর, পক্ষীর চর, জামতলা সৈকত, দুবলার চর, মান্দারবাড়িয়া সৈকত, পুটনি দ্বীপ, বঙ্গবন্ধু দ্বীপ ইত্যাদি৷