1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার স্বরূপ  

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতির মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা একটি৷ এই নীতি রক্ষা ও বাস্তবায়নে সংবিধানে কিছু রক্ষা কবচও আছে৷ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও নৃগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণের কথা আছে সংবিধান ও আইনে৷ কিন্তু বাস্তব অবস্থা কী?

ছবি: picture-alliance/dpa/M.P. Hossain

ধর্মনিরপেক্ষতার আলাদা কোনো সংজ্ঞা সংবিধানে না থাকলেও সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়৷

ওই অনুচ্ছেদে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা' নিয়ে বলা হয়েছে:

ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য –

(ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা,

(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,

(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,

(ঘ) কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে

এখানে লক্ষ্যণীয় যে, ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দেয়া এবং রাজনৈতিক  উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার ধর্মনিরপেক্ষতার পথে প্রধান বাধা৷ ধর্মনিরপেক্ষতার প্রধান শর্ত হলো, রাষ্ট্রনীতি এবং রাষ্ট্রাচারে কোনো ধর্মকে না রাখা৷ ধর্মকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখা এবং এই ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধর্ম পালনে সব ধর্মের অনুসারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা৷ আর এটা করতে হলে সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে হবে৷ রাষ্ট্রীয় নীতি এবং রাষ্ট্রাচারে ধর্মের প্রভাব না থাকলেও একটি দেশে সামাজিক এবং ব্যক্তি পর্যায়ে সাম্প্রদায়িকতা থাকতে পারে৷ থাকতে পারে রাজনীতিতে৷ যেমন বাংলাদেশে শুধু ধর্মভিত্তিক দল নয়, সেক্যুলার রাজনৈতিক দলও রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে৷

সংবিধানের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্র পরিরচালনার যে চার মূলনীতির কথা বলা হয়েছে তা হলো: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা৷ আর সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে এই চার মূলনীতির কথা আলাদাভাবে রয়েছ৷ অষ্টম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা – এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে৷

‘সংবিধান তো আমাদের আদিবাসী হিসেবেই স্বীকৃতি দেয় না’

This browser does not support the audio element.

সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের সাম্প্রদায়িকতার প্রভাবমূক্ত রাখার বিধান করা হয়েছে৷ একইভাবে সাম্প্রদায়িক আচরণকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷

২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়ছে, কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না৷

২৮(৩)-এ বলা হয়েছে, কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোনো বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনো নাগরিককে কোনোরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না৷

আর কাজ বা চাকরির ক্ষেত্রেও অসাম্প্রদায়িক নীতির কথা বলেছে বাংলাদেশের সংবিধান৷ সংবিধানের ২৯ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না৷

সুতরাং এটা পরিস্কার যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতি, রাষ্ট্রপরিচলানার নীতি, সংবিধান এবং আইন ধর্মনিরপেক্ষতা বা অসাম্প্রদয়িকতাকে ঊর্ধে তুলে ধরেছে৷

একইসঙ্গে বাংলাদেশের ‘উপজাতি', ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি বিকাশ ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে সংবিধানে৷ সংবিধানের ২৩(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷

বাস্তব চিত্র

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামিক রাজনৈতিক দল হলো ১০টি৷  এগুলো হলো – বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও খেলাফত মজলিস৷ জামায়াতে ইসলামির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে আদালতের নির্দেশে৷

কিন্তু এর বাইরে আরো শতাধিক ইসলামি রাজনৈতিক দল আছে৷ শুধু ইসলাম নয় অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈকি দলও আছে বাংলাদেশে৷ যেমন, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু জোট৷ ৫০টি হিন্দু রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সমন্বয়ে আছে বাংলাদেশ জনতা পার্টি বা বিজেপি৷

এর বাইরে বাংলাদেশের প্রধান দু'টি রাজনৈতিাক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার (অপব্যবহার) করে বলে অভিযোগ আছে৷

বিএনপি'র নির্বাচনের আগে প্রচারণায় থাকে ইসলাম রক্ষায় নামে ভোট চাওয়া৷ তারা প্রচারণা চালায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশে ইসলাম থাকবে না৷ বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ভোটের রাজনীতিকে টার্গেট করেই সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' সংযোজন করেন৷ এরপর সামরিক শাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেন ভোটের রাজনীতিকেই টার্গেট করে৷

এদিকে ভোটের আগে আওয়ামী লীগের বহুল ব্যবহৃত স্লোগান হলো, ‘‘লা ই লাহা ইল্লাহ, নৌকার মালিক তুই আল্লাহ৷'' দলটি প্রচারণা চালায়, তারা নির্বাচিত হতে না পারলে সংখ্যালঘুরা দেশে থাকতে পারবে না৷'' আর প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচনের আগে হজ বা ওমরাহ করেন, যান মাজারে৷

বাংলাদেশের প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ইসলামিক গ্রুপ আছে৷ আওয়ামী ওলামা লীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আর জাতীয়তাবাদী ওলামা দল বিএনপি'র সহযোগি সংগঠন৷

‘সংবিধানের মধ্যেই ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে এখন সাংঘর্ষিক অবস্থা বিরাজমান’

This browser does not support the audio element.

সংখ্যালঘু নির্যাতন

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত তাঁর ‘পলিটিক্যাল ইকোনমি অব আনপিপলিং অফ ইন্ডিজিনাস পিপলস: দ্য কেইস অফ বাংলাদেশ' শিরোনামে একটি গবেষণা গ্রন্থে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে সরকার ২২টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে স্বীকার করে না৷ ২৭টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে স্বীকার করা হলেও বাস্তবে  দেশের ৪৮ জেলায় ৪৯ টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী'র বসবাস৷ তাদের মোট জনসংখ্যা ৫০ লাখ, যদিও সরকারি হিসেবে ২৫ লাখ৷'' তিনি তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, গত ৬৪ বছরে সমতলের ১০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর  দুই লাখ দুই হাজার ১৬৪ একর জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে৷ যার দাম প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা৷

আর গত ২ জুন পার্বত্য চট্টগ্রামের লংগদু উপজেলা সদরসহ তিনটিলা, বাইট্টাপাড়া, মানিকজোড় ছড়া গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক পাহাড়ির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়৷

যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘২০১৬ সালে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের ওপর বেশি হামলা হয়েছে৷''

সংস্থাটি বলছে, ‘‘ভূমি দখলের ক্ষেত্রে  হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা আক্রমনের শিকার হন৷ ২০১৪  সালের জাতীয়  নির্বাচনের পর বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বার বার আক্রমনের শিকার হয়েছেন৷''

গত বছরের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে  হামলা চালিয়ে ১৫ টি মন্দির ও ২০০ ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়৷

হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকট রানা দাসগুপ্ত'র মতে, ‘‘২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা পাঁচগুণ বেড়েছে৷ তবে চলতি বছরের শুরু থেকেই তা আবার কমে আসছে৷''

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জানায়, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালের প্রথম তিন মাসেই প্রায় তিনগুণ সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ এই তিন মাসে ৮২৫০টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ এর মধ্যে হত্যা, আহত, অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত, গণধর্ষণ, জমিজমা, ঘরবাড়ি, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছেদের ঘটনা রয়েছে৷ তারা জানান, ২০১৫ সালের বাংলাদেশে ২৬১টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে৷ আর ১৫৬২টি প্রতিষ্ঠান, পরিবার ও ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ কিন্তু ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে সংখ্যালঘুদের ওপর কমপক্ষে ৭৩২টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, যা আগের  বছরের ঘটনার প্রায় তিনগুণ৷ এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯৫৬৬,  যা আগের এক বছরের তুলনায় ছয়গুণেরও বেশি৷ এ সময়ে ১০ জন নিহত, ৩৬৬ জন আহত এবং ১০ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন৷ জোরপূর্বক ধর্মান্তরের অভিযোগ রয়েছে দু’টি৷ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন আটজন৷ জমিজমা, ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, দখল ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ৬৫৫টি৷ ২২টি পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি দেয়া হয়ে৷

২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের বরিশাল, বাগেরহাট, পাবনা ও নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপকসংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে৷ এরপর থেকে একযোগে বিভিন্ন সংখ্যালঘু নির্যাতন কমে এলেও তা থামেনি৷ ২০১২ সালের অক্টোবরে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর বড় ধরনের হামলা হয়৷ আর গত বছরের ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসির নগরে হিন্দুদের শতাধিক বাড়ি ঘরে হামলা-ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়৷ অন্তত ১৫টি মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়৷ হিন্দু পল্লিতে নারী-পুরুষকে বেধড়ক পেটানো হয়৷

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়৷ ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা অর্জনের বিধান ফিরে আসে সংবিধানে৷ কিন্তু সংবিধানের প্রস্তাবনার আগে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' থেকে যায়৷ থেকে যায় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম৷ ফলে সংবিধানের মধ্যেই ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে এখন সাংঘর্ষিক অবস্থা বিরাজমান৷ একটি ধর্মের প্রাধান্য স্পষ্ট৷ ফলে ধর্মনিরপেক্ষতা একটা বুলি মাত্র৷ এ প্রভাব বাস্তব জীবনেও আছে৷ যার ফলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়৷ তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের কোনো বিচার পাওয়া যায় না৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘৭২-এর সংবিধানে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক বা ধর্মীয় রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ছিল৷ কিন্তু ৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন৷ তিনি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ করে দেন৷ পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হলেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি৷ ফলে ধর্মীয় গ্রুপগুলো এর সুযোগ নিচ্ছে৷ এবং অপব্যবহার করছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে ‘হিপোক্রেসি’ আছে৷ তারা সুবিধামতো শব্দ ব্যবহার করেন৷ কখনো বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ, আবার কখনো বলেন মুসলিম রাষ্ট্র৷ এতে সংখ্যালঘুদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়৷ সুযোগসন্ধানীরা চাপ সৃষ্টি করে সুবিধা নেয়৷''

আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংবিধান তো আমাদের আদিবাসী হিসেবেই স্বীকৃতি দেয় না৷ আর আমরা আদিবাসী হিসেবে নানা ধর্মের অনুসারী৷ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম৷ কিন্তু আমাদের ধর্মের কথা তো সংবিধানে নাই৷ আর সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশি বলিয়া পরিচিত হবেন৷ তাহলে বাংলাদেশে বসবাসরত অন্য জাতিসত্তার মানুষের পরিচয় কী হবে?''

তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সঠিকভাবে থাকলে আমরা চাপে থাকতাম না৷ আমাদের ওপর হামলা নির্যাতন নেমে আসত না৷''

রানা দাসগুপ্ত বলেন, ‘‘সংবিধানে প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতা যতদিন স্বচ্ছভাবে না থাকবে, ততদিন এটা বাস্তবেও পাওয়া যাবে না৷ এখন ধর্মনিরপেক্ষতা আছে, কিন্তু দেখা যায় না৷ এখন উপরে বিসমিল্লাহ, নীচে রাষ্ট্রধর্ম আর মাঝখানে সেক্যুলারিজম৷''

এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ