বাংলাদেশে সীমান্তসেনা বিজিবি-র সারমেয় বাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য একটি কেন্দ্র গড়তে সাহায্য করবে ভারত৷ সারমেয় এবং তাদের ‘হ্যান্ডলার'-দের প্রশিক্ষণ দেবেন ভারতীয় প্রশিক্ষকরা৷
বিজ্ঞাপন
নিরাপত্তার কাজে, বিশেষত ভিভিআইপি-দের সুরক্ষার কাজে প্রশিক্ষিত কুকুরের চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে৷ সীমান্ত পাহারার কাজেও সারমেয় সতর্কতার গুরুত্ব অপরিসীম৷ সেই কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশে নিজস্ব একটি সারমেয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে আগ্রহী বর্ডার গার্ডস্ বাংলাদেশ, বা বিজিবি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এই ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহী৷ ফলে শিগগিরই বাংলাদেশের মাটিতে তৈরি হবে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ভারতের সহযোগিতায়৷ গত সপ্তাহে ভারতের এক প্রতিনিধিদল ঢাকায় গিয়েছিল৷ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর ডিরেক্টর জেনারেল কে কে শর্মা সেই দলে ছিলেন৷ সেই সফরেই বাংলাদেশি সীমান্তসেনার পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি আসে এবং সাগ্রহে রাজি হন বিএসএফ কর্তা৷ সিদ্ধান্ত হয়, ভারতীয় সারমেয় প্রশিক্ষকরা বাংলাদেশ গিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি গড়ে তুলতে সাহায্য করবেন৷ নতুন এক সারমেয় বাহিনী গড়ে তোলার পাশাপাশি সারমেয়-প্রশিক্ষকদেরও তালিম দিয়ে আসবেন তাঁরা৷ দিল্লির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই সহযোগিতা উদ্যোগকে দুই দেশের সম্পর্কের সাম্প্রতিক উন্নতির আরও এক নজির হিসেবেই দেখছে৷
ভেনিসের কুকুরগুলো
‘দ্য ডগস অফ ভেনিস’ বইটিতে ভেনিসকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়েছে৷ এই ‘পানির শহরের’ কুকুররা কেমনভাবে থাকে, ধনি মালিকদের দামী কুকুর?
ছবি: Luiza Puiu
অন্য এক ভেনিস
কানাল গ্রান্দে, রিয়ালটো, পিয়াৎসা সান মার্কো: টুরিস্টদের ভিড় যেখানে, সেখানে নয়৷ আরেকটি ভেনিস আছে, যা হলো ভেনিসের সাধারণ বা অসাধারণ - বাসিন্দাদের ভেনিস, যেখানে খাওয়া-দাওয়া, বাজার করা, কফিহাউসে বসা ছাড়া কুকুর পোষাও আছে৷
ছবি: Luiza Puiu
লেখক নিজে কিন্তু কুকুরপ্রেমী নন
‘দ্য ডগস অফ ভেনিস’-এর লেখক ক্রিস্টিয়ান অর্টনার অস্ট্রিয়ার মানুষ, পেশায় সাংবাদিক৷ বিশেষ কুকুরপ্রেমী নন৷ সাধারণত অর্থনীতি নিয়ে লিখে থাকেন৷ প্রতিবছর শীতে সপ্তাহখানেক ভেনিসে কাটান অর্টনার৷ সেখানেই এই ‘ভেনেসিয়ান’ কুকুররা তাঁর নজরে পড়ে৷
ছবি: Luiza Puiu
আশ্চর্য ব্যাপার
‘‘হাঁটতে বেরিয়ে হঠাৎ খেয়াল করলাম যে, ভেনিসে যত কুকুর আছে, আর কোথাও তত নেই৷ অদ্ভুত সব কুকুর৷ ভেনিসের মানুষজন আবার শীত পড়লে তাদের কুকুরদের সাজুগুজু করান,’’ জানালেন অর্টনার৷ সেটা তাঁর ‘এতোই আজগুবি আর মজার’ বলে মনে হয়েছিল যে, ভেনিসের কুকুরদের নিয়ে একটা বই করার আইডিয়া তাঁর মাথায় আসে৷
ছবি: Luiza Puiu
শত শত ছবি
প্রকল্পটির জন্য তিনি আলোকচিত্রী লুইজা পুইয়ু-কে ভেনিসের কুকুরদের ৮০টি মজাদার ছবি তুলতে বলেন৷ লুইজা গত জানুয়ারিতে দু’ সপ্তাহের জন্য ভেনিসে গিয়ে ফেরেন প্রায় ১২০টি কুকুরের ১২,০০০ ছবি নিয়ে৷ লুইজা নিজেই সেই ছবির পাহাড় থেকে সেরা ছবিগুলো বেছে নিয়ে অর্টনারকে দেখান৷
ছবি: Luiza Puiu
যেন দ্বিতীয় চার্চিল
সব কুকুর ও কুকুরের ছবির মধ্যে এই অ্যালবিনো বক্সার কুকুরটি অর্টনারের ফেবারিট৷ কুকুরটির নাম ‘আকিলে’ হলেও, তাকে দেখে অর্টনারের প্রথমেই উইনস্টন চার্চিলের কথা মনে হয়েছে৷
ছবি: Luiza Puiu
হঠাৎ দেখা
আলোকচিত্রী লুইজা পুইয়ুর জন্ম রোমানিয়ায়, বাস অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়৷ ঝাঁকড়া লোমওয়ালা এই বিরাট কুকুরটির দেখা পান ভেনিসের একটি ‘দলচেরিয়া’, মানে প্যাস্ট্রির দোকানে - যেন বল নাচ নাচছে! এটি লুইজার খুবই প্রিয় ছবি৷
ছবি: Luiza Puiu
ভেনিসের স্টাইল
‘‘যারা কুকুর পোষেন, তারা আলাপী হন,’’ বলেছেন লুইজা৷ প্রভুর কাঁধে এই কুকুরটিকে বেশ কয়েকদিন ধরে দেখছিলেন লুইজা৷ শেষে খোঁজ পেলেন, এনোটেকা রিও মার্তিন নামের ওয়াইন বারটিতে গেলে তাদের দেখা পাবেন - সেখানে তারা রেগুলার কাস্টমার কিনা!
ছবি: Luiza Puiu
হারিয়ে যায় না
ভেনিসের খালবিল গলিঘুঁজিতে টুরিস্টরা নিয়মিত পথ হারিয়ে ফেলেন বটে, কিন্তু ভেনিসের কুকুরদের ক্ষেত্রে তা কোনোদিন ঘটবে না বলে গন্ডোলার ‘মাঝি’ নিকোলা গ্রসির বিশ্বাস৷ তাঁর ১৪ বছর বয়সি কুকুর সান্দ্রো যেমন সারাদিন গন্ডোলায় বসে থাকতে পারে, তেমনই ভেনিসের গলিঘুঁজি ধরে সোজা বাড়ি পৌঁছে যেতে পারে৷
ছবি: Luiza Puiu
সৌখীন কুকুর
‘‘ওরা ভেনিসের মানুষদের মতোই বিলাসী ও সৌখীন,’’ বলেন লুইজা তাঁর ‘মডেলদের’ সম্পর্কে৷ ক্রিস্টিয়ান অর্টনার ও লুইজা পুইয়ুর ‘দ্য ডগস অফ ভেনিস’ বইটিতে টুরিস্টদের স্রোতে ভেসে যাওয়া একটি শহর কিভাবে তার রোম্যান্টিক সত্তা বজায় রাখতে পারে, তারও যেন একটা আভাস পাওয়া গেছে৷
ছবি: Luiza Puiu
9 ছবি1 | 9
সারমেয় প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ভারতের সহযোগিতা অবশ্য এই প্রথম নয়৷ ২০১৫ সালে, বাংলাদেশের অনুরোধে, ২০টি সারমেয় শাবক এবং যাঁরা তাদের নিয়মিত দেখাশোনা করবেন, তালিম চালু রাখবেন, সেই বাংলাদেশি হ্যান্ডলারদের আলাদা প্রশিক্ষণ দিয়েছিল বিএসএফ৷ পর্যায়ক্রমে যে কুকুরদের বাংলাদেশে মূলত ভিআইপি নিরাপত্তার কাজে নিয়োগ করা হয়৷ এর পর ২০১৬ সালেও আরও ১৮টি কুকুর এবং হ্যান্ডলারদের তালিম দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়৷ এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের গোয়ালিয়রের টেকানপুরে, জাতীয় সারমেয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘এনটিসিডি'-তে, যা বিএসএফ পরিচালনা করে৷ সারা ভারতেই বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োজনে প্রশিক্ষিত সারমেয় পাঠানো হয় এখান থেকে৷ ভিভিআইপি নিরাপত্তায় থাকা বিশেষ বাহিনী, সন্ত্রাস দমন বাহিনী, বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনের নিরাপত্তায় থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং বিভিন্ন রাজ্যের পুলিসের কুকুরের জোগান যায় এই জাতীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে৷ বিস্ফোরক-সন্ধানী ‘স্নিফার ডগ' থেকে শুরু করে পাহারাদার কুকুর, মাদক-সন্ধানী কুকুর – সব ধরনের বিশেষজ্ঞ তালিম হয় এখানে৷ হ্যান্ডলারের বিশেষ তালিমও এখানেই হয়৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে খবর, এই কেন্দ্র থেকেই বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষকরা বাংলাদেশে যাবেন সারমেয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি গড়ে দিয়ে আসতে৷
সূত্রের খবর, এর আগে দু'দফায় যে ৩৮টি কুকুরকে তালিম দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল, সবক'টিই ছিল ‘জার্মান শেফার্ড' গোত্রের, যা অ্যালসেশিয়ান নামেও পরিচিত৷ স্বভাব-সন্দিগ্ধ জার্মান শেফার্ড পাহারা দেওয়ার পাশাপাশি বিস্ফোরকের হদিস করতেও সমান দক্ষ৷ ২০১৬ সালে ৩০ হাজার টাকা করে একেকটি জার্মান শেফার্ডের বাচ্চা কেনা হয়েছিল, ছ'মাস প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর তাদেরকে কাজ করতে পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশে৷ এর আগে এনটিসিডি নেপাল এবং মরিশাসের পুলিস বাহিনীর জন্যও সারমেয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে৷
প্রাণীরা যখন শিক্ষক
প্রাণীরা শুধু মানুষের বিশ্বাসী বন্ধু নয়, প্রাণীদের কাছ থেকে মানুষের অনেককিছুই শেখার আছে৷ আর সেই শিক্ষা গ্রহণ করলে মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও সুন্দর হতে পারে৷ প্রাণীদের সেরকমই কিছু আচরণের নমুনা পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Meyers
বেড়াল শান্ত রাখে
‘স্ট্রেস’ বা চাপ? না, এই শব্দ বেড়াল একেবারেই চেনে না৷ আর সেটা ওদের চোখের দিকে সরাসরি তাকালেই বোঝা যায়৷ বেড়ালকে শিকারে নিয়ে যান, মেঝেতে পিঁপড়ে ছড়িয়ে দিন কিংবা শুকনো পাতার ওপর হাঁটুন, কিছুতেই বেড়াল উত্তেজিত হবে না বা ওর গায়ের কোনো পেশী ফুলে উঠবে না৷ তাই বর্তমান যান্ত্রিক জীবনে আমরা বেড়ালের কাছ থেকে নিজেকে শান্ত রাখার কৌশল শিখতে পারি৷
পানিতে যাদের বসবাস, তাদের মধ্যে ডলফিন খুবই মিশুক৷ পানিতে খেলার সময় বা ট্রেনিং-এর সময় সহজেই তারা একে-অপরের বন্ধু হয়ে যায়৷ মানুষের সঙ্গেও তাদের সহজেই বন্ধুত্ব হয়৷ তার ওপর স্মরণশক্তিও ওদের খুব ভালো৷ ২০ বছর পরও ডলফিন তার বন্ধুকে চিনতে পেরে কাছে টেনে নেয়৷ যা সত্যিই মানুষের হিংসে করার মতো৷ আহা মানুষ যদি এমন হতো!
ছবি: picture-alliance/dpa
কুকুরের কোনো অভিযোগ নেই!
প্রভুভক্ত কুকুরের একাকী সারাদিন কেমন কেটেছে, তা নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই৷ বরং মনিব বাড়িতে এসে একটু আদর করলেই সে মহাখুশি৷ কুকুরের ক্ষেত্রে যেটা লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে, সে বিনা শর্তে ভালোবাসে, খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বাস অর্জন করে এবং সহজে ক্ষমাও করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Hörhager
ঘোড়া ভালো নেতৃত্ব দেয়
ঘোড়া একদিকে যেমন ভদ্র, অন্যদিকে সহসী ও নেতৃত্বে পটু৷ সে সহজেই মনিবের ভাষা বোঝে, যা অন্যদের ‘মোটিভেট’ করতে পারে৷ এই সুন্দর, শান্ত প্রাণী যতক্ষণ না কোনো নির্দেশ পায়, ততক্ষণ চুপচাপ থাকে৷ তবে কিছু বললে সাথে সাথে বুঝে তার প্রতিক্রিয়া জানায়৷ অন্যদিকে কেউ ঘোড়াকে ক্ষেপালে সে মুহূর্তেই প্রতিবাদ করে ওঠে৷ অর্থাৎ ভদ্র, সাহসী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ঘোড়া৷
ছবি: Andreas Sten-Ziemons
একতাই বল, দলই শক্তি
‘একের বোঝা দশের লাঠি’ বা ‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’ – এ সব প্রবাদবাক্যের প্রমাণ আমাদের দিয়েছে ‘পরিযায়ী পাখি’৷ এরা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে ‘টিম স্পিরিট’ বা ‘দলীয় শক্তি’ কাকে বলে৷ আজকের যুগে একা এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়৷ শুধুমাত্র দলের সকলে মিলে কাজ করলেই সাফল্য অর্জন সম্ভব, ঠিক এই পাখিদের মতো৷ তবে দলকে একত্রিত করে সফল হতে প্রয়োজন শক্তিশালী গাইড বা দলনেতা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধৈর্য
প্রাণীরা বর্তমান সময়কেই উপভোগ করে৷ মানুষদের মতো আগামীতে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করে না৷ কোনো কিছুতে তাড়াহুড়ো নেই তাদের৷ বেড়ালকে দেখুন, কী সুন্দর নিশ্চন্তে বসে থাকে বা কুকরকে নিয়ে বাইরে বের হলেই লক্ষ্য করবেন যে, তারা শীত, গ্রীষ্ম, বৃষ্টির কথা না ভেবে যতক্ষণ দরকার ততটা সময় ব্যয় করে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে৷ আজকের তরুণরা চাইলে প্রাণীদের কাছ থেকে ধৈর্য ধরা শিখতে পারে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/J. Fieber
শোনায় মনোযোগী
প্রাণীরা শোনার ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগী, যা ওদের কান খাড়া করে থাকা দেখেই বোঝা যায়৷ ওরা চুপ করে বসে শোনে এবং সেভাবেই তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়৷ প্রাণীদের কাছে থেকে মানুষরা এই গুণটি গ্রহণ করলে নিঃসন্দেহে তা মানবজাতির অনেক উপকারে আসতে পারে৷ কারণ মানুষের সাধারণত শোনার চেয়ে বলাই পছন্দ৷ ফলে সৃষ্টি হয় ভুল বোঝবুঝি, আবার অনেক সময় কিছু বিষয় স্পষ্ট হয় না৷