1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে স্লোগানের আলো ও অন্ধকার : ইতিহাস মনে রাখে যে ধ্বনি

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

স্লোগান পারে ইতিহাস বদলে দিতে, পারে অশ্রু ভেজা রাতকে পরিণত করতে বিজয়ের প্রভাতে। মানুষের বুকের ভেতর জমে থাকা ক্ষোভ, স্বপ্ন আর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা একসময় স্লোগান হয়েই ঝড় তোলে রাস্তায়, শহরে, গ্রামে।

১৯৭১ সালের প্রতিবাদ - লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার স্বীকৃতি দাবি করে
"তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা”৷ছবি: Wesley/Keston/Getty Images

স্লোগান—একটি শব্দ, কিন্তু তার প্রতিধ্বনি পারে ইতিহাস বদলে দিতে, পারে অশ্রু ভেজা রাতকে পরিণত করতে বিজয়ের প্রভাতে। মানুষের বুকের ভেতর জমে থাকা ক্ষোভ, স্বপ্ন আর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা একসময় স্লোগান হয়েই ঝড় তোলে রাস্তায়, শহরে, গ্রামে।

ভাষা থেকে স্বাধীনতা

১৯৫২ সালে খাজা নাজিমউদ্দিনের ঘোষণা—"উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা”—শুকনো কাঠে আগুনের মতো ছড়িয়ে দিয়েছিল প্রতিবাদের ঢেউ। রাজপথ কেঁপে উঠেছিল "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” ধ্বনিতে। শাসকের কাঁপা কাঁপা সিংহাসনের সামনে উচ্চারিত হয়েছিল "নাজিম-নূরুল দুই ভাই, এক দড়িতে ফাঁসি চাই”। ২১ ফেব্রুয়ারি বসন্তের হাওয়ার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল রক্তের গন্ধ। সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার স্লোগানের পথচলা।

এরপর ১৯৭১—বাঙালির রক্তজাগানিয়া স্লোগান "বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো”, "তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা”, আর সবার ওপরে প্রাণের স্লোগান হয়ে ওঠে "জয় বাংলা”। এই জয় বাংলা শুধু মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠে নয়, বরং মাটির গভীর থেকে উঠে আসা এক অদম্য আকাঙ্খা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ের দিনগুলোতে লিখেছিলেন, ‘‘বাঙলার জয় হোক, বাঙালির জয় হোক''-যার অনুরণন ১৯৭১-এ মিলেছিল নতুন রূপে।

এপার-ওপার বাংলার ‘নতুন’ প্রতিবাদের ভাষা

17:11

This browser does not support the video element.

গণতন্ত্রের মিছিল

সময়ের পরতে পরতে স্লোগান হয়ে উঠেছে গণতন্ত্রের শ্বাস। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর শহিদ নূর হোসেনের বুকে লেখা "স্বৈরাচার নিপাত যাক” আর পিঠে "গণতন্ত্র মুক্তি পাক”—আজও ইতিহাসের বুক চিড়ে বাজে। ১৯৯০-এর আন্দোলনে সেই স্লোগানই রাস্তায় রাস্তায়, গ্রামে গ্রামে আগুন ছড়িয়ে দিয়েছিল।

আধুনিক স্লোগান: ন্যায়বিচার ও বিদ্রোহ

২০১৩-র গণজাগরণ মঞ্চে কেঁপে উঠেছিল শাহবাগ "ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই, "রাজাকারের ঠিকানা, সোনার বাংলায় হবে না”—এইসব স্লোগানে। অন্যদিকে হেফাজতের সমাবেশে শোনা গিয়েছিল "নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর”, "নাস্তিকদের ফাঁসি চাই” ইত্যাদি স্লোগান।

২০১৮ সালে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মুখে শোনা গেল অন্যরকম স্লোগান—কখনো শ্লেষ, কখনো ব্যঙ্গ, কখনো বুকফাটা কান্না। "আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে, "আমার মা কাঁদছে, নৌমন্ত্রী হাসছে”—এইসব ধ্বনি রাস্তায় রাস্তায় বয়ে এনেছিল অগ্নিগর্ভ এক সময়।

"একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার''৷ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

২০২৪: ‘একাত্তরের হাতিয়ার' আবার

চব্বিশের জুলাই ফিরে এলো ১৯৭১-এর স্পৃহা। শিক্ষার্থীরা ধ্বনি তুলল—"একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার''। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন বদলে গেল গণঅভ্যুত্থানে। রাস্তায় রাস্তায় প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো—

"আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম”,

"দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ”,

"লাশের ভেতর জীবন দে, নইলে গদি ছাইড়া দে”,

"জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো”।

আবু সাঈদের মৃত্যু সেই আন্দোলনে ঢেলে দিলো নতুন আগুন।

বিকৃত স্লোগানের অন্ধকার

কিন্তু সব স্লোগান আলো আনে না। কিছু কিছু স্লোগান, জন্মমুহূর্তেই ইতিহাসের আবর্জনায় স্থান করে নেয়। যেমন—"একটা একটা ..….. ধর, ধইরা ধইরা জ…বাই কর” কিংবা "একটা দুইটা ..... ধর, সকাল-বিকাল নাশতা কর”—যা প্রতিবাদ নয়, বরং বিকৃত মানসিকতার প্রতিফলন। একইভাবে এখন শোনা যায় এর উল্টো স্লোগান। সেটাও কাম্য নয়।

২০১৮ সালের সড়ক আন্দোলনে শোনা গিয়েছিল—"আমার ভাইয়ের রক্তে লাল, পুলিশ কোন চ্যা…র…বা…ল। পুরান ঢাকায় এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করার পর এক সভায় উচ্চারিত হয়েছিল—"এক দুই তিন চার, তা…জি…মার”।

সাম্প্রতিককালে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের বাড়ির সামনে তরুণ-তরুণীদের স্লোগান—"টিনের চালের কাউয়া, ফজলু আমার…..”—লজ্জিত করেছে জাতিকে।

এমন স্লোগান ইতিহাসে টেকে না। মানুষ ভুলে যায় স্লোগানটিকে, কিন্তু বিকৃতকারীর নাম হয়ে যায় ঘৃণার ট্রেডমার্ক।

শেষকথা

স্লোগান জাতির প্রতিবাদের হাতিয়ার, জনমানুষের মনের ভাষা। কোনো কোনো স্লোগান শত বছর পরেও উজ্জীবিত করে মানুষকে, আবার কিছু স্লোগান জন্ম মুহূর্তেই ধ্বংস ডেকে আনে। আজকের তরুণরাই আগামী দিনের রাষ্ট্র নির্মাতা। তাদের হাতে যদি থাকে ইতিবাচক ভাষা, বিশ্বমানের স্লোগান, তবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে আলোর পথে। কারণ, তরুণরা ঠিক থাকলে দেশও ঠিক থাকবে। স্লোগান হবে প্রেরণার, ঐক্যের, সংগ্রামের—কখনোই বিভেদ আর বিকৃতির নয়।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ