1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে ১৪ হাজার নতুন রোহিঙ্গা, অপেক্ষায় আরো ৭০ হাজার

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এবং আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে গত ৮-৯ দিনে ১৪ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কমপক্ষে ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে তারা প্রবেশ করছে। মংডু এলাকা থেকে আসা রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে বেশি৷

কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্প
কক্সবাজারে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা নয়ন ডয়চে ভেলেকে বলেন, প্রতিদিনই ক্যাম্পে নতুন রোহিঙ্গা দেখা যাচ্ছে। ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নোম্যানস ল্যান্ডে কমপক্ষে আরো ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ যদি পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারে, তাহলে এই দফায় আরো এক লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা আছে।

৩ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি বাংলাদেশে নতুন করে আট হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা জানান। তিনি জানান, " এটা কীভাবে ঠেকানো যায়, সেটা আমাদের চেষ্টা করতে হবে।''

পররাষ্ট্র  উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘‘নীতিগতভাবে আমরা কোনো রোহিঙ্গাকে নতুন করে আশ্রয় দেবো না, যদিও দুঃখ লাগে কথাটা বলতে, কিন্তু আমাদের জন্য সাধ্যের অতীত, আর পারবো না তাদের আশ্রয় দিতে।''

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, গত ৮-৯ দিনে কমপক্ষে ১৩-১৪ হাজার নতুন রোহিঙ্গা  টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছে। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য মংডু সীমান্তে জড়ো হয়েছে আরো ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা। নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যেও নানা কৌশলে তারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। এক শ্রেনির দালালও তাদের অর্থের বিমিয়ে ঢুকতে সহায়তা করছে।

উখিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ইউনুস আরমান বলেন," আমরা জানতে পেরেছি রাখাইন রাজ্যের মংডুতে চলমান যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে। মংডু টাউনে থাকা সেনা ও বিজিপির দুটি ব্যারাক (ব্যাটালিয়ন) দখলের জন্য মরিয়া আরাকান আর্মি। গোলাগুলির পাশাপাশি দুই পক্ষ থেকে ছোঁড়া হচ্ছে মর্টার শেল, গ্রেনেড-বোমা। মাঝেমধ্যে ড্রোন হামলাও চালানো হচ্ছে।”

দালালরা তাদের ঢুকতে সহায়তা করছে: নুরুল

This browser does not support the audio element.

রোহিঙ্গাদের ৯ নাম্বার ক্যাম্পের এক নাম্বার ব্লকের হেড মাঝি মোহাম্মদ হোসেন বলেন," প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা আসছেন। তারা নাফ নদীর পাশাপাশি অন্য সীমান্ত থেকেও আসছেন। স্থানীয় কিছু লোকজন তাদের বাংলাদেশে প্রবেশে সহায়তা করছে।  তারা যে সবাই ক্যাম্পে আসছেন, তা নয়। ক্যাম্পের বাইরেও তারা অবস্থান করছেন।”

তার কথা, "মংডুতে এখন যে তীব্র সংঘাত হচ্ছে, তাতে রোহিঙ্গারা আর সেখানে টিকতে পারছেন না। তারা মিয়ানমারের সামরিক জাস্তা এবং আরাকান আর্মি উভয়ের হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।”

টেকনাফের সাবেক কাউন্সিলর নুরুল বাসার বলেন, "৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কয়েকদিন সীমান্ত থেকে রোহিঙ্গারা ব্যাপকভাবে ঢুকেছে। এখনো বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ঢুকছে। এরকম কমপক্ষে ৩০টি পয়েন্ট থেকে তাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত আছে।”

তিনি আরো বলেন, "দালালরা তাদের ঢুকতে সহায়তা করছে। যারা ঢুকছে, তারা প্রথমে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে। এরপর  যাদের ক্যাম্পে আগে আসা আত্মীয়-স্বজন আছে, তাদের মাধ্যমে ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে।”

তার কথা, "নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে আমরা আতঙ্কে আছি। এমনিতেই আমরা এখন বাংলাদেশিরা এখানে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছি, এরকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।”

কক্সবাজারে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা নয়ন ডয়চে ভেলেকে বলেন," প্রতিদিনই ক্যাম্পে নতুন রোহিঙ্গা দেখা যাচ্ছে। এটা স্পষ্ট যে, সীমান্ত থেকে নতুন করে রোহিঙ্গারা ঢুকছে। তবে আমরা তাদের কোনো তালিকা করা এখনো শুরু করিনি। সরকারের কাছ থেকে আমরা এখনো এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাইনি।”

এখনই এই সমস্যা সমাধানের হাইটাইম: শহীদুল

This browser does not support the audio element.

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল হক বলেন, "রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে না পারলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। এমনিতেই তারা নানা সংকট তৈরি করছে ক্যাম্পে। সেখানে মাদক, অস্ত্র ব্যবসা হচ্ছে। নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আশ্রয় নিচ্ছে।”

তার কথা, "এখনই এই সমস্যা সমাধানের হাইটাইম। সরকারের উচিত কূটনৈতিক তৎপরতাআরো জোরদার করা। আমরা আর কোনোভাবেই নতুন রোহিঙ্গা নিতে পারবো না।”

আরেক সাবেক কূটনীতিক ও কসোভোতে সাবেক ইউএন আঞ্চলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এস এম রাশেদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘‘ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে আশা করি প্রধান উপদেষ্টা  অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা ইস্যুটি শক্তভাবে তুলে ধরবেন। তার একটি গ্রহণযোগ্যতা আছে। আশা করি, তার প্রচেষ্টায় কাজ হবে।”

তার কথা, "আসলে এখনই সময় কূটনেতিক প্রচেষ্টা জোরদার করে এই সমস্যা সমাধানের। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবসনই একমাত্র সমাধান। আর কোনো সমাধান নাই। প্রয়োজনে আমাদের আরাকান আর্মির সাথে ভিন্ন চ্যানেলে কথা বলতে হবে।”

"আর আমাদের  কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সাথে দৃশ্যমান শক্তি দেখাতে হবে। একটি দেশে সীমান্তের ওপার তো নন-স্টেট অ্যাক্টরদের দখলে থাকতে পারে না,” বলেন মো. শহীদুল হক।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ