করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বরগুনার তালতলী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২২ জন চীনা নাগরিক৷ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনার সিভিল সার্জন৷ নির্মাণাধীন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১১শ বাংলাদেশি শ্রমিক এখনো সুস্থ আছেন৷
বিজ্ঞাপন
কোভিড আক্রান্ত সবাই দেড়মাস আগে চীন থেকে তালতলী এসেছেন৷ বরগুনার সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, করোনার উপসর্গ থাকায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩৭ জন চীনা নাগরিক তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোভিড পরীক্ষার নমুনা দেওয়ার পরে বরিশাল পিসিআর ল্যাবে নমুনা পাঠানো হয়৷
আক্রান্তদের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আইসোলেশন সেন্টারে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে আলাদা কোয়ার্টারে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাওসার হোসেন৷
লকডাউনের পর ঢাকা যেমন আছে
প্রায় চার মাস ধরে চলা কঠোর লকডাউন শেষে গত ১১ আগস্ট থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে গণপরিবহন, অফিস-আদালত, বিনোদনকেন্দ্র, শপিং মল ও দোকানপাট৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খুললেও ঢাকার জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পুরান ঢাকায় যানজটের পুরাতন চিত্র
পুরান ঢাকার নয়াবাজার এবং বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রচণ্ড যানজট৷নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক পুলিশ জানান, পুরান ঢাকায় দিনব্যাপী প্রচণ্ড যানজট থাকা নৈমিত্তিক ঘটনা৷ স্বাভাবিক কর্মদিবসে তো বটেই, ছুটির দিনেও যানজট সামলাতে তাদের হিমশিম খেতে হয়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
কাঁচাবাজারে ভিড়
ঢাকার অন্যতম প্রধান কাঁচাবাজারের মধ্যে মিরপুর ১, কারওয়ান বাজারে ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতার যথেষ্ট সমাগম রয়েছে৷ কারো মাঝে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই৷ অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই, কেনাকাটা করছেন গা ঘেঁষে৷ সাংবাদিকের উপস্থিতি দেখে কেউ কেউ তড়িঘড়ি করে মাস্ক পরলেও বাকিরা ছিলেন নির্বিকার৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মাস্ক পরায় উদাসীনতা
ছেলের চিকিৎসা করাতে কামরাঙ্গীরচর থেকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে এসেছিলেন মোছা. লিমা খাতুন৷ চিকিৎসাশেষে ফিরে যাওয়ার সময় মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘টিভিতে দেখসি ভাইরাসের এহন তেমন একটা মানুষ মরতাসে না৷ তাই এহন আর মাস্ক পরি না৷ আর এই গরমে মাস্ক পইরা থাকাও কঠিন৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
স্বাভাবিক হচ্ছে জীবনযাত্রা
ঢাকার অলি-গলির চায়ের দোকান, বিপণিবিতান, ছোট-বড় হোটেল-রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখা যায়, সেখানে সাধারণ মানুষের আনাগোনা বেড়েছে, সেই সাথে বেড়েছে আড্ডা, কেনাকাটা৷ বেশ কয়েকজন ক্রেতা, বিক্রেতা এবং পথচারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, লকডাউন তুলে নেওয়া এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় মানুষজন এখন কাজে বের হচ্ছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
গণপরিবহণে উপেক্ষিত সরকারি নির্দেশনা
সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউন শিথিল করলেও গণপরিবহণে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী না নেওয়া এবং জীবাণুনাশক স্প্রে দেওয়ার ব্যাপারে কঠোরভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়৷ কিন্তু কোথাও এ নির্দেশনা মানতে দেখা গেল না৷ সরেজমিনে গিয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন পরিবহণের পাশাপাশি খোদ সরকারি পরিবহণ সংস্থা বিআরটিসি’র বাসেও এসব নিয়ম লঙ্ঘনের ব্যত্যয় দেখা গেল না৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
জমে উঠছে ফুটপাথের কেনাকাটা
ঢাকার শ্যামলি, গুলিস্তান, ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাথে ব্যবসা করেন এমন একাধিক হকারের সাথে কথা বলে জানা যায়, লকডাউন তোলার পর তাদের স্বস্তি কিছুটা ফিরেছে৷ তবে স্বাভাবিক হতে আরো সময় লাগবে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন অনেকে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
খুলে দেওয়া হয়েছে বিনোদনকেন্দ্র
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই গত ১৯ আগস্ট থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে বিনোদনকেন্দ্রগুলো৷ ঢাকার শ্যামলির ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ডের টিকেট বিক্রয় প্রতিনিধি নাজিফা ইসলাম জানান, স্বাভাবিক দিনের চেয়ে বন্ধের দিনে দর্শনার্থী বেশি আসছেন, যদিও করোনা মহামারির আগের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ দর্শনার্থীও হয় না৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বিয়ের কেনাকাটায় মন্দা
ঢাকার বাটা সিগনালের বিয়ের সামগ্রীর বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকান ক্রেতাশূন্য৷ কেনাবেচা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে বর-কনে নামক দোকানের স্বত্বাধিকারি মোফাজ্জল হোসেইন বলেন, বিয়ের কেনাকাটার বাজার একদম খারাপ৷ করোনা মহামারির প্রভাবে হাতে টাকা-পয়সা না থাকার কারণে ঘরোয়াভাবেই বিয়ের কাজ সারছেন অধিকাংশ মানুষ৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বড় মার্কেটে ক্রেতা সমাগম কম
ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, চাঁদনি চক, নিউ মার্কেটের মতো বড় মার্কেটে ঘুরে দেখা যায় ক্রেতা সমাগম তুলনামূলক কম৷ দোকানের চেয়ে ফুটপাথে বিক্রি বেশি বলে দাবি করেন অনেক দোকানমালিক৷ কারণ জানতে চাইলে বিক্রয়কর্মী শাহাদাত হোসেন বলেন, ফুটপাথের জিনিস আমাদের দোকানের চেয়ে সস্তা৷ যেহেতু মানুষের হাতে পয়সাপাতি নেই, তাই মানুষ সস্তা জিনিস দিয়েই আপাতত প্রয়োজন সারছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ব্যাংকপাড়ায় বাড়ছে ব্যস্ততা
ঢাকার মতিঝিল, কাকরাইল, কারওয়ান বাজারের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের কর্তব্যরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লকডাউনের পর তাদের ব্যস্ততা বহুগুণে বেড়েছে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত যেহেতু প্রায় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানই খুলে দেওয়া হয়েছে, সেই হিসেবে আর্থিক লেনদেনও বেড়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
হাসপাতালের এ কেমন চিত্র?
ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, পিজি হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং প্যাথলজি বিভাগে মানুষজন গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন৷ কেন কেউ স্বাস্থ্যবিধি বা নিয়ম মানছেন না জানতে চাইলে কর্তব্যরত এক আনসার সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘‘জায়গার সংকটের কারণে ইচ্ছা থাকলেও নিয়ম মানানো যাচ্ছে না৷ তাছাড়া সাধারণ মানুষ করোনার ব্যাপারে উদাসীন, তাই বারবার সতর্ক করেও লাভ হচ্ছে না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই
লকডাউনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর ঢাকার বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, গণপরিবহণ ইত্যাদি জায়গা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের সচেতনতা নেই৷ কেউ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি৷ অধিকাংশ মানুষেরই মুখে মাস্ক নেই, সামাজিক দূরত্ব রেখে কাজ করার কোনো প্রবণতা নেই৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আর যেন লকডাউন দেওয়া না হয়
ঢাকার মিরপুর,ফার্মগেট, গুলিস্তানসহ একাধিক জায়গার ব্যবসায়ী এবং খেটে খাওয়া মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, লকডাউনের কবলে তাদের আয় রোজগার শূন্যের কোঠায় প্রায়৷ নিম্ন আয়ের মানুষদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে৷ তারা চাইছেন সরকার যেন সবাইকে টিকার আওতায় আনে এবং লকডাউন আর না দেওয়া হয়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
13 ছবি1 | 13
নির্মাণাধীন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত ১১শ বাংলাদেশি শ্রমিকই সুস্থ আছেন৷ তবে বাড়তি সতর্কতার জন্য তাদেরও করোনা টেস্ট করা হচ্ছে৷
আক্রান্তদের সংস্পর্শে কোনো বাংলাদেশি শ্রমিক আসেনি৷ তারপরেও তারা আক্রান্ত হলে এই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখে লকডাউন করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলে মনে করেন বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান৷