1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইসলামপন্থিদের আন্দোলনে অশান্তি

২০ এপ্রিল ২০১৩

গত ফেব্রুয়ারির এক রাতে ঢাকায় হামলার শিকার হন রাজীব হায়দার৷ পাঁচ যুবক কুপিয়ে হত্যা করে তাঁকে৷ হামলায় রাজীবের চেহারা এতটাই ক্ষতবিক্ষত হয় যে, তাঁকে চিনতে পারেননি তাঁআত্মীয়রা৷ রাজীবের মোবাইলে ফোন করে নিশ্চিত হতে হয়েছিল৷

Activists of Hefajat-e-Islam shout slogans during a rally in Dhaka April 5, 2013. An activist of Bangladesh Awami League was killed and more than ten people were injured as police opened fire during a clash between the activists of Hefajat-e Islam and Bangladesh Awami League in Kamrangirchar area of the capital on the eve of the Islamist party�s long march on Friday. Hefajat-e-Islam, a radical Islamist party, are planning a march on April 6 to demand capital punishment for a group of bloggers, who organised the Shahbagh demonstration, and for the introduction of blasphemy laws, reported local media. REUTERS/Andrew Biraj (BANGLADESH - Tags: POLITICS CIVIL UNREST)
ছবি: Reuters

রাজীব একজন ব্লগার ছিলেন৷ তাঁর মতো কয়েকশত ব্লগার শুরু করেন শাহবাগ আন্দোলন৷ যে আন্দোলনকে অনেকেই বলেন, ‘বাংলাদেশ বসন্ত'৷ এই আন্দোলনের লক্ষ্য হচ্ছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা৷ রাজীব খুন হওয়ার খবরে সেই আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছিল৷

শাহবাগ আন্দোলন এখনো চলছে৷ তবে এই আন্দোলনের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে উগ্র ইসলামপন্থি এক শক্তি৷ এই শক্তি শাহবাগের আন্দোলনকারীদের আখ্যা দিয়েছে ‘নাস্তিক ব্লগারের দল' হিসেবে৷

হেফাজতে ইসলাম নামে পরিচিত এই উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে৷ আগামী পাঁচ মে-র মধ্যে নতুন ব্লাসফেমি আইন চালু করতে হবে, পুরুষের সঙ্গে নারীর অবাধ মেলামেশায় নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে এবং ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশকে ‘তালেবানিকরণের' উদ্দেশ্যে হেফাজত এসব দাবি তুলেছে৷

ঢাকার শাহবাগ চত্বরে প্রতিবাদ এখনও চলছে...ছবি: Soumik Kundu

বলাবাহুল্য, হেফাজতে ইসলামের এসব দাবিকে কেন্দ্র করে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সহিংসতা অনিবার্য হয়ে পড়েছে৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি হেফাজতকে সমর্থন প্রদান করেছে৷ সাবেক কূটনীতিক এবং বর্তমানে সংবাদপত্রের কলামিস্ট মুহাম্মদ জমির মনে করেন, এই সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে বিএনপি কার্যত ‘পান্ডোরার বাক্স' খুলে দিয়েছে৷ ‘পান্ডোরার বাক্স' খুলে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, দৃশ্যত একটি ছোট উদ্যোগ গ্রহণ করা যার পরিনতি অত্যন্ত ভয়ংকর এবং দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে৷

চলতি বছর রাজনৈতিক সহিংসতায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে৷ এদের অধিকাংশই প্রাণ হারিয়েছে ইসলামপন্থি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে৷ মোটের উপর বিরোধী দলের একের পর এক হরতাল বাংলাদেশের দুর্বল অর্থনীতিকে আরো নাজুক করে তুলছে৷

বাংলাদেশের ‘তাহরির চত্বর'

এখনকার বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটার পর পাকিস্তানের অংশ ছিল৷ সেসময় এই দেশ পরিচিত ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান' হিসাবে৷ ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়মাসের রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ এই যুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশকে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে৷

চলতি বছর শাহবাগ আন্দোলনের সূচনা হয় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে৷ একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত এক জামায়াতে ইসলামী দলের নেতাকে পাঁচ ফেব্রুয়ারি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত৷ এই রায় মেনে নিতে পারেনি সাধারণ মানুষ৷ তাদের প্রত্যাশা ছিল, মৃত্যুদণ্ড৷ সেই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় এক ফেসবুক ঘোষণার মাধ্যমে ঢাকার শাহবাগে সমবেত হন অসংখ্য মানুষ৷ বাংলাদেশ বসন্তের সূচনা হয় এভাবে৷

শাহবাগকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ হয়েছে জার্মানির কোলন শহরে...ছবি: Firoz

জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে জমায়াত হওয়া এই জনতার মূল দাবি এখন দুটো৷ প্রথম দাবি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে৷ আর দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে৷

এসব দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিজের চিকিৎসকের চাকুরি ছেড়ে দিয়েছেন ইমরান এইচ সরকার৷ শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ, অনেকে যাকে তুলনা করেন তাহরির চত্বরের সঙ্গে, সেই মঞ্চের মুখপাত্র তিনি৷ ইমরান জানান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ইসলামপন্থি মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে ‘শাহবাগ' ব্যানারে এখন ষাট হাজার ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিস্ট সমবেত হয়েছেন৷

২৯ বছর বয়সি মৃদুভাষী ইমরান জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে রয়টার্সকে বলেন, ‘‘এমনকি তারা এই দেশকেও ভালোবাসে না৷ যখন আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রিকেট খেলি, তখন তারা পাকিস্তানের পতাকা সঙ্গে নিয়ে ঘোরে৷''

‘আমরা তালেবান নই'

গত ৬ এপ্রিল ঢাকার মতিঝিলে মহাসমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম, যাদেরকে গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিপক্ষ মনে করছেন অনেকে৷ এই সংগঠনের মহাসমাবেশে হাজির হন লক্ষাধিক মানুষ৷ সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকারীদের একজন হাবিবুর রহমান৷ একটি মাদ্রাসার প্রধান এই ব্যক্তি ১৯৯৮ সালে আফগানিস্তান সফর করেছিলেন৷ সেসময় তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷ বাংলাদেশের স্থানীয় গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেছেন হাবিবুর রহমান৷ তিনি আফগানিস্তানে তালেবানের জয় এবং সেদেশে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হওয়ায় লাদেনের প্রশংসাও করেন৷

প্রতিবাদের মিছিল দেখা গেছে লন্ডনেও...ছবি: Rajib Ahmed

হাবিবুর রহমানের মতো নেতা হেফাজতে ইসলামে থাকলেও সেদলের অনেকে নিজেদেরকে তালেবানের আদর্শে বিশ্বাসী হিসেবে মানতে রাজি নন৷ এদেরই একজন মুফতি ফায়েজ উল্লাহ৷ ঢাকার একটি মসজিদে অবস্থানকালে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ‘তালেবান' হিসেবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে৷ এটা পুরোপুরি মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়৷ তবে শাহবাগে অবস্থানরতরা ইসলামের বিরোধী৷ তারা দাড়িওয়ালা এবং টুপি পড়া মানুষদের অপমান করছে৷ এটা সহ্য করা হবে না৷''

হেফাজতে ইসলামের এই নেতা জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার তাদের ১৩ দফা দাবি মেনে না নিলে পাঁচ মে ঢাকা শহর অচল করে দেওয়া হবে৷ এই ১৩ দফা দাবির মধ্যে ব্লাসফেমি রোধে নতুন আইন করার দাবিও রয়েছে৷

উল্লেখ্য, বর্তমানে ব্লগার এবং ইসলামপন্থিদের মধ্যে এই বিরোধ বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন ইস্যুকে চাপা দিয়ে রেখেছে৷ বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় নির্বাচনের দাবিতে অনঢ় রয়েছে৷ এই দাবি পূরণ না হলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে বিএনপি৷ আর তাতে সহিংসতা আরো বাড়বে৷ তখন বাংলাদেশে আবারো ২০০৭ সালের অবস্থা ফিরে আসতে পারে৷ সেসময় সেনাবাহিনী রাস্তায় নেমেছিল এবং একটি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করে রাজনৈতিক ঠগিবাজী এবং সহিংসতা প্রতিরোধ করেছিল৷

এআই/ডিজি (রয়টার্স)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ