1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিল্পীদের মেলবন্ধনে বিশ্বাসী অনিল হোসেন

২২ জুলাই ২০২১

জার্মানির ব্রেমেন শহরের চিত্রশিল্পী অনিল হোসেন৷ বাংলাদেশি-জার্মান এই শিল্পীর শহরটিতে রয়েছে নিজস্ব স্টুডিও এবং গ্যালারি৷ গত কয়েক দশক ধরে জার্মানিতে বসবাসরত অনিল কাজ করছেন দেশি শিল্পীদের সঙ্গে জার্মানির মেলবন্ধন ঘটাতে৷

Onil Hossain | Künstler aus Bangladesch
ছবি: Arafatul Islam/DW

ছবি আঁকাই ধ্যানজ্ঞান তার কাছে৷ সাদা ক্যানভাসে তুলির ছোঁয়ায় তিনি ফুটিয়ে তোলেন নিজের দেশের সংস্কৃতিকে৷ শিল্পী অনিল হোসেন নিজের আঁকা ছবির মাঝে ফেলে আসা দেশের রং, গন্ধ খোঁজেন৷

জার্মানির ব্রেমেন শহরে তার স্টুডিওতে নানা কিছুর সন্ধান পাওয়া যায়৷ জলরংয়ে আঁকা নিজের বিভিন্ন ছবি দিয়ে স্টুডিওটি সাজিয়েছেন তিনি৷ ছোটবেলায় ছবি আঁকার শখ ছিল হোসেনের, সেই শখকেই পেশায় রূপ দিতে পেরেছেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনিল হোসেন বলেন, ‘‘আমি যখন ছোটবেলায় স্কুলে পড়তাম, ক্লাস থ্রি বা ফোরের কথা৷ তখন অংক শিক্ষককে সাইড দিয়ে স্কেচ করতাম৷ অর্থাৎ, পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতাম৷ তার নাকটা অনেক বড় ছিল৷ পুরো ছবি আঁকতে পারতাম না৷ তখন থেকেই ছবি আঁকার উৎসাহ তৈরি হয়েছিল৷ আমার বয়স যখন সাত বছর, তখন বাবা প্রথম পেন্সিল বক্স কিনে দিয়েছিল৷ রং-তুলি দিয়ে বাংলাদেশের সব গ্রামের ছবি আঁকতাম তখন৷ এভাবে আমার শিক্ষা হলো৷ তখন আমি প্রতি বছর একটা-দু'টো ছবি আঁকতাম নিজের জন্য৷''

ঢাকা থেকে ব্রেমেন

সত্তরের দশকের শেষের দিকে দেশান্তরি হন অনিল হোসেন৷ প্রথমে প্যারিসে কিছুদিন গেস্ট স্টুডেন্ট হিসেবে কাটিয়েছেন তিনি৷ এরপর জার্মানিতে চলে আসেন৷ ইউরোপের এই দেশটিতে নিজেকে শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলেছেন ঢাকার সাবেক এই বাসিন্দা৷ 

ব্রেমেনে স্ত্রী নীহারিকা হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে একটি স্টুডিও এবং গ্যালারি তৈরি করেছেন অনিল হোসেন৷ দু'জনই পেশায় শিল্পী৷ অনিল হোসেন তার ছবিতে নানা রংয়ের প্রাধান্য দেন নিজের দেশের কথা মাথায় রেখে৷ তার কাছে বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি অনেক রঙিন৷ পশ্চিমা অনেক শিল্পীর ছবির মাঝেও ভারত বর্ষের প্রভাব দেখতে পান তিনি৷ হোসেন মনে করেন, ‘‘এখানকার বড় বড় শিল্পীরা, যেমন পিকাসো, আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতিকে ছবিতে ব্যবহার করেছেন৷ গুস্তাভ ক্লিম্টও ওরিয়েন্টাল অনেক কিছু ছবিতে ব্যবহার করেছেন৷ আর এভাবে তাদের অনেক নামও হয়েছে৷ এখন আমাদের দেশের অনেক তরুণ শিল্পী ইউরোপে শত বছর ধরে চলা অ্যাবস্ট্রাক্ট ছবি আঁকছে, যেগুলো রঙিন নয়৷ আমি মনে করি, আমাদের যে অনেক রং. সেগুলো বরং ক্যানভাসে তুলে ধরা উচিত৷ তরুণ শিল্পীরা যদি সেদিকে মনোযোগ দেন তাহলে আমাদের দেশের উন্নতি হবে৷''

শিল্পীদের মেলবন্ধনে বিশ্বাসী যিনি

06:09

This browser does not support the video element.

নীহারিকা হোসেন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে শিল্পকলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির তুলনা করতে গিয়ে বলেন, ‘‘ভালো লেগেছে যে, বাংলাদেশে জলরংয়ের প্রতি অনেক আগ্রহ রয়েছে, জার্মানিতে ততটা নেই৷ সবচেয়ে ভালো লেগেছে এটা দেখে যে, সেদেশের গণমাধ্যমে শিল্পকলা নিয়ে প্রতিবেদন অনেক গুরুত্ব পায়৷ জার্মানিতে প্রথমে বিশ্বসংবাদ, তারপর খেলা এবং সবশেষে কখনো কখনো শিল্পের খবর থাকে৷ আর বাংলাদেশে প্রথম সংবাদ, তারপর শিল্প, সবশেষে ক্রিকেটের খবর দেখানো হয়৷ সেখানে শিল্পের গুরুত্ব বেশি৷''

শিল্পী জীবনের অনিশ্চয়তা

শুধু শিল্পী হিসেবে জীবনযাপন জার্মানিতে সহজ নয় বলে মনে করেন অনিল হোসেন৷ এক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা অনেকটা বাংলাদেশের মতোই তার কাছে৷ দুই দেশেই শিল্পীদের একটি বড় অংশের অর্থকষ্টে ভুগতে হয়৷ ছবি আঁকার পাশাপাশি তাই ছবির প্রদর্শনীর জন্য একটি গ্যালারিও তৈরি করেছেন অনিল৷ এছাড়া ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন তিনি, আর শিক্ষার্থীদের ছবি আঁকা শেখান৷ 

বাংলাদেশের শিল্পীদের প্রতি দরদ

অনিলের গ্যালারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের ছবির প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়৷ গতবছর করোনা মহামারী শুরুর পর কয়েকজন বাংলাদেশি শিল্পীর ছবি জার্মানিতে এনে বিক্রির ব্যবস্থা করেন তিনি৷ ছবি বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ ঢাকায় করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের পেছনে ব্যয় করেছেন সেই শিল্পীরা৷ হোসেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশি শিল্পীদের অনেক ছবি আমরা কুরিয়ারের মাধ্যমে জার্মানিতে নিয়ে এসেছি৷ তারপর অনেক ছবি বিক্রি করেছি৷ বিক্রি করে ওদেরকে সব দেয়া হয়েছে৷ শিল্পীরা সেখান থেকে কিছু টাকা খরচ করে গরিব মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছে৷''

অনিল হোসেনের আঁকা কোনো কোনো ছবি সাত থেকে নয় হাজার ইউরোতেও বিক্রি হয়েছে৷ তার ছবি নিয়ে দেশে-বিদেশে নিয়মিত বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়৷ ভবিষ্যতে জার্মানি এবং বাংলাদেশের মধ্যে ‘কালচারাল এক্সচেঞ্জ' নিয়ে আরো কাজ করতে আগ্রহী তিনি৷ অনিল হোসেন বলেন, ‘‘ঢাকায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ-এ একটি প্রদর্শনীর জন্য আমি এই ছবিটা তৈরি করছি৷ আপনাদের সবাইকে সেখানে আমন্ত্রণ৷ আমার একটা বড় ইচ্ছা আছে, সেটা হচ্ছে ঢাকায় একটি আর্টস্কুল খোলা৷ আমি জার্মানিতে যা যা শিখেছি তা তরুণ শিল্পীদের সেই স্কুলের মাধ্যমে শেখাতে চাই৷''

আরাফাতুল ইসলাম/এসিবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ