বাংলাদেশের বয়স এখন ৫০৷ একসময় যাকে বলা হয়েছিল ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’, সেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোর একটি৷
বিজ্ঞাপন
২০০৯ সালে আইরিক জি ইয়ানসেন যখন ফের বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে আসেন, রীতিমত চমকে ওঠেন৷ নরওয়ের এই সমাজ নৃতাত্ত্বিক সত্তরের দশকে এই মানিকগঞ্জেরই একটি গ্রামে কয়েক বছর থেকে গবেষণা করেন৷ এমনকি পরের প্রায় পুরোটা দশকই ছিলেন বাংলাদেশে৷ কিন্তু গ্রামের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য এতটা বদলাতে দেখেননি তিনি়৷
‘‘দিনে যা রোজগার ছিল তা দিয়ে বড় জোর এক-দেড় কেজি চাল নিয়ে বাড়িতে ফিরতেন সেই মানুষগুলো৷ বাড়িতে যদি পাঁচ, ছয়টি মুখ খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, তখন এই আয় খুবই নিতান্ত,’’ স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন আইরিক৷
১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত মানিকগঞ্জের একটি গ্রামে কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে রীতিমত বসবাস করেন আইরিক৷ তিনি সেই পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করছিলেন৷ আশির দশকেও এখানে গবেষণা করেছেন, দূতাবাসে চাকরি করেছেন৷
‘‘বাংলাদেশে তখন দারিদ্র্য মানে ছিল খাবারের অভাব,’’ ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে বলেন তিনি৷ ‘‘স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবা তো প্রায় অনুপস্থিত ছিল৷ আমি অনেককে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সে অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগে মারা যেতে দেখেছি৷’’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: সাফল্য, আশঙ্কার কথা
03:53
আশির দশকের পরে মাঝখানে প্রায় দেড়, দুই দশক বাংলাদেশে আসেননি আইরিক৷ এরপর এলেন ২০০৯ সালে৷ ‘‘দেখলাম, তাদের আয় দশগুণ বেড়েছে৷ দৈনিক আয় দিয়ে এই মানুষগুলো এখন ১০ থেকে ১৫ কেজি চাল কিনতে পারছে,’’ বলেন তিনি৷
বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশকে দেখে আবার গবেষণা করার ইচ্ছে জাগে আইরিকের৷ তিনি সেই গ্রামে সেই পরিবারগুলোর সঙ্গে ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত কাটান৷ বোঝার চেষ্টা করেন পরিবর্তনের কারণগুলো৷
‘‘বাংলাদেশের উন্নয়নের এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে আমার লেখা বই এখন নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়,’’ বলেন আইরিক৷ ‘‘উন্নয়নের খুব ইতিবাচক মডেল তো আমরা সচরাচর তেমন দেখি না৷’’
উন্নয়নের ‘দি' টেস্ট কেস
রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, তখন তার অর্থনীতির ছিল করুণ দশা৷ সাড়ে সাত কোটি মানুষের ৮০ ভাগই ছিলেন দারিদ্রসীমার নীচে৷ অভ্যুত্থান ও পালটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলে ব্যস্ত একদল উচ্চাভিলাষী রাজনীতিক ও সামরিক কর্মকর্তা৷ খুব অল্প প্রাকৃতিক সম্পদের এই ভূখণ্ডে অভাব হত না প্রাকৃতিক দুর্যোগের৷
৫০ বছরেও ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র না পাওয়ার আক্ষেপ
বিশ্বের বুকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থান করে নেয়ার ৫০ বছর পূর্তিতে এ দেশের অগ্রযাত্রায় মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দিত৷ কিন্তু অনেকে মনে করেন এখনো ধর্মনিরপেক্ষতা এবং আইনের শাসন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, এখনো গন্তব্য বহুদূর৷
ছবি: picture alliance/Pacific Press Agency/B. H. Rana
‘সঠিক ইতিহাস প্রজন্ম যেন জেনে নেয়’
বরিশালের সৈয়দ আবদুল মালেক একাত্তরে যুদ্ধ করেন নয় নম্বর সেক্টরে৷ ডান পায়ে গুলি লাগে৷ এখনও স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন না৷ ১৯৭৩ সালে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দেন পটুয়াখালিতে, দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরে যান সচিব হিসেবে৷ তিনি বলেন, ’’দেশের জমি কমেছে, মানুষ বেড়েছে, তবুও খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন আমরা৷ কর্মসংস্থান ও আয় বেড়েছে৷ এগুলো দেখলেই তৃপ্ত হই৷ তবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটা প্রজন্ম যেন জেনে নেয়৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘বাংলাদেশ পেয়েছি, এটাই বড় পাওয়া’
সাব-সেক্টর কমাণ্ডার মাহফুজ আলম বেগ ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের এলিট কমান্ডো৷ একাত্তরে কৌশলে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন৷ স্বাধীনতার পর চাকরি জীবন শুরু করেন, সবশেষ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন৷ এখনও স্বপ্ন দেখেন দেশকে নিয়ে৷ বললেন, ‘‘বাংলাদেশ পেয়েছি, এটাই বড় পাওয়া৷ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এর চেয়ে বড় সফলতা আর কী আছে!’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এখনো হয়নি’
রমা রানী দাস ট্রেনিং নেন ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগের কাছে৷ নয় নম্বর সেক্টরের অধীনে সাতক্ষীরা, ভোমরা, আসাশুনিতে গুপ্তচরের ভূমিকা পালন করতেন৷ স্বাধীনতার পর ঝালকাঠি হরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করেন৷ দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত৷ তবে রমা রানী বলেন, ‘‘স্বাধীন দেশে ভালো আছি৷ তবে অসাম্প্রদায়িক দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম৷ সেটা এখনও হয়নি৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘ধর্মনিরপেক্ষতা বাধার মুখে পড়েছে’
ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল হক একাত্তরে ধলেশ্বরীতে জোনাল কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন৷ স্বাধীনতার পর যোগ দেন চিকিৎসা পেশায়৷ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রথম ট্রেজারার তিনি৷ সব মিলিয়ে তৃপ্ত হলেও একটা আক্ষেপ আছে তার, ‘‘বঙ্গবন্ধু টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া মুসলমানদের নিয়েই একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে সেই ধর্মনিরপেক্ষতার দিকটা বাধার মুখে পড়েছে৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
মানুষের ‘মানুষ’ পরিচয়টাই যেন বড় হয়
সিলেটের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আহম্মদ বাবু একাত্তরে ট্রেনিং নেন আসামে৷ চার নম্বর সেক্টরে দিলখুশা চা বাগান অপারেশনে সাবমেশিন গানের গুলিতে তার বাম পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ স্বাধীনতার পর ব্যবসা শুরু করেন৷ এখন সানি স্যোলার লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি দেখতে চাই না– তুমি হিন্দু কি মুসলমান৷ দেখতে চাই, তুমি মানুষ কিনা, তুমি বাংলাদেশকে ভালবাসো কিনা, তুমি বাঙালি কিনা৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘গণতন্ত্রের নামে যেন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হয়’
মো. সাইফুল আলম আট নম্বর সেক্টরে গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন৷ স্বাধীনতার পর আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন৷ সহকারি জজ, জেলা জজের দায়িত্ব শেষে দুদকের মহাপরিচালক হিসাবে অবসরে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ৷ গণতন্ত্রের নামে যেন পরোক্ষ রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না পায় সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার৷ ফাইনান্সিয়াল অফেন্স, আর সেক্সচুয়াল অফেন্স কমিয়ে আনতে না পারলে সোনার বাংলা হবে না৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘তৃণমূলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে’
অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন একাত্তরে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন দুই নম্বর সেক্টরে৷ নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা, উপ-উপাচার্য ছিলেন চার বছর৷ অবসরের পরও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনারারি প্রফেসর হিসেবে কাজ করছেন৷ বললেন, ‘‘তৃণমূলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে আনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো প্রজন্ম দেখুক’
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে করিমপুর ইয়ুথ ক্যাম্পের সঙ্গে সহকারি প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত হন যুদ্ধ-আলোকচিত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ রায়হান৷ পরে বাংলাদেশ ভলান্টারি সার্ভিসেস কোর-এর আলোকচিত্রী হিসেবে যোগ দেন৷ মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও ঘটনা ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন৷ এই আলোকচিত্রী বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো প্রজন্ম দেখুক৷ ছবি দেখে প্রজন্ম ভাবুক কত কষ্ট আর ত্যাগের বিনিময়ে আমার স্বাধীনতা পেয়েছি৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
8 ছবি1 | 8
‘‘সত্তরের দশকে বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে বেশ কয়েকটি বই আমি পড়েছি, যেখানে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ উন্নয়নের ‘এ টেস্ট কেস’ নয়, ‘দি টেস্ট কেস’,’’ বলেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সিনিয়র ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান৷ ‘‘সেখানে বলা হয়েছিল যদি বাংলাদেশে উন্নয়ন সম্ভব হয়, তাহলে পৃথিবীর যে কোন জায়গায় উন্নয়ন সম্ভব৷’’
বাংলাদেশ এখন দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি৷ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবির হিসেবে, ২০১৮ সালে দারিদ্রের হার কমে হয়েছে ২১.৮ শতাংশ এবং অতিদারিদ্রের হার ২০১৯ সালে দাঁড়ায় ৯.২ শতাংশ৷ করোনার আগে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রায় আট ভাগ হারে বেড়েছে অর্থনীতি৷ এমনকি করোনার আঘাতও এ বছর দ্রুত কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে বাংলাদেশ৷
‘‘মাত্র প্রায় এক লাখ ৪৪ হাজার বর্গ কিলোমিটারে প্রায় সাড়ে ষোল কোটি মানুষ বাস করেন৷ তাদের সবার খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করছে বাংলাদেশ,’’ বলেন মুস্তাফিজ৷ ‘‘মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় কমেছে৷ গড় আয়ু একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, যার মধ্যে অনেকগুলো সূচক রয়েছে৷ সেখানে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু ১৯৭১ সালের ৪৯ বছর থেকে বেড়ে এখন তা ৭২ বছর৷’’
দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় মানুষের গড় আয়ু বাংলাদেশের চেয়ে বেশি৷
এছাড়া ২০১৫ সালে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ৷ খুব শিগগিরই জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশ৷ মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার৷ ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৯তম বড় অর্থনীতি৷
কৃষি থেকে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি
২০১০ সালে আইরিক যখন মানিকগঞ্জের সেই গ্রামে সেই পরিবারগুলোর কাছে ফেরত আসেন, তখন দেখেন সেখানকার স্কুলগুলোর আমূল সংস্কার হয়েছে৷ ছেলে মেয়ে উভয়েই এখন স্কুলে যায়৷ স্বাস্থ্যসেবার মান ভাল এবং কৃষি উৎপাদন বেড়েছে অনেক৷
মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশেষ কিছু ছবি প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)৷ ছবির সমারোহে দেখে নিন অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার ইতিহাস...
ছবি: AP/picture alliance
‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’
৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ৷ লাখো মানুষের উপস্থিতিতে এই ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: AP/picture alliance
সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা
১৯৭১ সালের ২রা এপ্রিল, যশোরে একটি রিকশায় অস্ত্র হাতে দুই মুক্তিযোদ্ধা৷
ছবি: AP/picture alliance
মুক্তিবাহিনীর মার্চ
এটাও ২রা এপ্রিলের ছবি৷ যশোরে মুক্তিসেনারা মার্চ করছেন৷
ছবি: AP/picture alliance
প্রত্যয়ী মুক্তিসেনা
১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিলের এই ছবিতে কুষ্টিয়ায় মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা জয় বাংলা শ্লোগান দিচ্ছেন৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
সবার মুখে ‘জয় বাংলা’
১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিলের এই ছবিটিতে পাংশা গ্রামে শত শত মানুষ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিচ্ছেন৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
রাজধানী ছাড়ছে আতঙ্কিত মানুষ
১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিলের ছবি এটি৷ বাসে করে রাজধানী ছাড়ছেন সাধারণ মানুষ৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
ঘর ছেড়ে পরবাসে
১৯৭১ সালের ১৯শে এপ্রিলের ছবি এটি৷ মেহেরপুর থেকে ভারতে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে যাচ্ছেন এই শরণার্থীরা৷
ছবি: AP/picture alliance
রণাঙ্গনে ভারতীয় সেনা
তখন ভারতে হামলা চালিয়েছে দিশাহারা পাকিস্তান৷ তাই রণাঙ্গনে সরাসরি নেমে পড়ে ভারতীয় সেনা৷ ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বরের এই ছবিতে পূর্ব পাকিস্তানের ভেতরে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় সেনাদের৷
ছবি: AP/picture alliance
যশোর রোডে ভারতীয় সেনা
ছবিটি ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বরের৷ যশোর থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে অবস্থান নিয়েছে ভারতীয় সেনারা৷
ছবি: AP/picture alliance
জনসমাবেশ
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বরের ছবি এটি৷ বিজয়ের মাত্র পাঁচ দিন আগে একটি জনসমাবেশে শ্লোগান দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ একজন মুক্তিযোদ্ধা তাদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ পেছনে সিটি হলে ছাদের উপর টহল দিচ্ছে ভারতীয় সেনা৷
ছবি: AP/picture alliance
বিদেশিদের দেশে ফেরা
১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বরের ছবি এটি৷ ঢাকায় পৌঁছেছে ব্রিটিশ বিমান৷ বিদেশিদের ঢাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ ৬ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতির সময় বিদেশিরা এই বিমানে করে ঢাকা ছাড়েন৷
ছবি: AP/picture alliance
ভারতীয় সেনাদের স্বাগত
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক, বগুড়ার দিকে রওনা হওয়ার পথে তাদের স্বাগত জানাচ্ছে সাধারণ গ্রামবাসী৷
ছবি: AP/picture alliance
আত্মসমর্পণ
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে সই করছেন৷ পাশে আছেন ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর কমান্ডার লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরা৷ সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের উপ-সেনাপ্রধান এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার৷
ছবি: AP/picture alliance
রাজাকারের শাস্তি
ছবিটি ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বরে ঢাকায় তোলা৷ মুক্তিবাহিনীর হাতে মারা যাওয়ার আগে তিন রাজাকারসহ উপস্থিত সবাই আল্লাহ’র কাছে হাত তুলে প্রার্থনা করছেন (নীচে বসা তিন রাজাকার)৷ পাঁচ হাজার মানুষের সামনে রাজাকারদের ‘মৃত্যুদণ্ড’ কার্যকর করা হয়৷
ছবি: Horst Faas/AP/picture alliance
বিহারি ক্যাম্প
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় ভারতের বিহার থেকে উর্দুভাষী মুসলমানরা পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন৷ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের অনেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন৷ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর হাতে অনেকে মারাও যান৷ এই ছবিটি ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে তোলা৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির ছবি এটি৷ পাকিস্তানের বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ-বিধ্বস্ত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন৷ ঢাকায় পৌঁছানোর পর লাখো মানুষ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে তাঁকে সংবর্ধনা জানায়৷ ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে ভাষণ দেন তিনি৷
ছবি: Michel Laurent/AP/picture alliance
স্বাধীনতার পর কলকাতায় শেখ মুজিবুর রহমান
এই ছবিটি ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির৷ কলকাতা বিমানবন্দরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বাগত জানাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে৷
ছবি: AP/picture alliance
17 ছবি1 | 17
‘‘এর মূল কারণ কৃষিবহির্ভূত কাজের সুযোগ,’’ ডয়চে ভেলের কাছে ব্যাখ্যা করেন আইরিক৷ ‘‘অনেক নারী গার্মেন্টসে চাকরি করেন কিংবা হস্তশিল্পের কাজ করেন৷ পুরুষরা স্থানীয় ছোটখাট শিল্পগুলোতে কাজ পাচ্ছেন৷ কেউ কেউ মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া যাচ্ছেন৷’’
পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলে কৃষি থেকে শিল্পভিত্তিক হয়েছে৷ যেখানে ১৯৭১ সালে জিডিপির প্রায় অর্ধেক নির্ভরশীল ছিল কৃষির ওপর, সেখানে এখন কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা ১৩ ভাগ৷
‘‘ক্রমাগত নগরায়ন হচ্ছে৷ বেশিরভাগ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গ্রাম থেকে সরে এসেছে,’’ বলেন সিপিডির মুস্তাফিজুর রহমান৷ ‘‘এমনকি কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কৃষিবহির্ভূত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেব করলে গ্রামীণ অর্থনীতিও বদলে যাচ্ছে৷’’
আইরিক বলেন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি বিশেষ করে নারী শিক্ষা উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে৷ ‘‘মেয়েদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানে কাজ হয়েছে৷ এখন মেয়েরা অনেক সপ্রতিভ৷ চার দশক আগে তারা অনেক বেশি অন্তর্মুখী ছিলেন,’’ বলেন তিনি৷
তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্র পালটে দিয়েছে বলে মনে করেন মুস্তাফিজুর রহমান৷ বিশেষ করে উৎপাদনমূলক অর্থনীতিতে রূপান্তরে বড় ভূমিকা রেখেছে৷ বাংলাদেশের ৮০ ভাগ রপ্তানি আয় আসে এই শিল্প থেকে, যা জিডিপির ১২ ভাগ৷ এছাড়া প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত, যার অধিকাংশই নারী৷
‘‘তৈরি পোশাকশিল্প শুধু অর্থনীতির চিত্রই যে পালটেছে তাই নয়, নারীর সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি করেছে,’’ বলেন মুস্তাফিজ৷
এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ বাজারকে শক্তিশালী করছে বলে মনে করেন তিনি৷
মান ও বৈষম্য সংকট
যদিও প্রায় ৯৭ ভাগ শিশু প্রাইমারি স্কুলে যাচ্ছে, শিক্ষার মানের দিক থেকে বাংলাদেশ এখনও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে অনেক পেছনে পড়ে আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷
জিডিপির প্রবৃদ্ধিসহ অনেক সূচকই উর্ধ্বমুখী হলেও ধনী-গরীবের বৈষম্য বাড়ছে দিন দিন৷ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক জরিপও তাই বলে৷
‘‘মাথাপিছু আয় বেড়েছে৷ তবে সম্পদের বন্টনে ন্যায্যতা ও সমতার অভাব দূর করা যেত,’’ বলেন অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজ৷ ‘‘সমাজের উচ্চআয়ের পাঁচ ভাগের সঙ্গে নিম্ন আয়ের ৪০ ভাগের বৈষম্য বাড়ছে প্রতিনিয়ত৷’’
তার মতে, এলাকা কেন্দ্রিক আয়বৈষম্যও দেখা যায়৷ ‘‘দারিদ্র্য হয়তো ২০ ভাগের কাছাকাছি এসেছে৷ কিন্তু এমন জেলা আছে যেখানে দারিদ্রের হার ৫০ ভাগ,’’ বলেন তিনি৷
আগামী দিনে উন্নয়ন টেকসই করতে হলে এই বৈষম্য দূর করতে হবে এবং সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ৷