1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

বাংলাদেশ কি গমের সংকট এড়াতে পারবে?

১৫ মে ২০২২

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি বন্ধ আছে৷ এখন ভারতও গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে, যা ভোগ্যপণ্যের বাজারে নতুন সংকট তৈরি করতে পারে৷

নিজেদের বাজার ঠিক রাখতে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত
নিজেদের বাজার ঠিক রাখতে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারতছবি: Prabhat Kumar Verma/Pacific Press/picture alliance

সাধারণত ইউক্রেন ও রাশিয়া বাংলাদেশের গম আমদানির শীর্ষ দেশ হলেও যুদ্ধ শুরুর পর গত মার্চ থেকে সেই জায়গায় উঠে এসেছে ভারত৷ কিন্তু এখন প্রতিবেশী দেশটি থেকেও গম না পেলে পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিবে বাংলাদেশ সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে৷

চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশকে দ্রুত বিকল্প বাজার খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন বেসরকারি খাতের গম আমদানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা৷ কিন্তু সমস্যা হলো ভারতের তুলনায় ক্যানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশে গমের দাম বেশি৷ তাই সেখান থেকে গম আনলে দাম অনেক বেশি পড়বে৷

বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে যারা গম আমদানি করে তাদের মধ্যে টিকে গ্রুপ অন্যতম৷ এই গ্রুপের ঊর্ধ্বতন পরিচালক তারিক আহমদে বলেন, ‘‘গমের বিকল্প উৎস আছে কিন্তু দাম অনেক বেশি৷ ভারতে যেমন এখন প্রতিটন ৪০০ ইউএস ডলার৷ কিন্তু ক্যানডায় ৫৪০ ইউএস ডলার৷ অষ্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানির গমের দামও বেশি। দামের তুলনা করলে এই সময়ে ভারতের কোনো বিকল্প দেখা যাচ্ছে না৷ আমরা যা শুনেছি তাতে ভারতের গম সরকার টু সরকার হয়তো আমদানি করা যাবে৷’’

ভারত গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করলেও এখন পর্যন্ত যে এলসি খোলা হয়েছে সেই গম সরবরাহ করা হবে বলে জানা গেছে৷ এছাড়া কোনো দেশ খাদ্য সংকটে পড়লে ভারত সরকার চাইলে সেই দেশে গম রপ্তানির আদেশ দিতে পারে৷  প্রতিবেশি দেশগুলোর জন্য তারা সরকারি পর্যায়ে গম রপ্তানির একটা ব্যবস্থাপনাও  রেখেছে৷

বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ভারত থেকে তিন লাখ টন গম আনার জন্য এরইমধ্যে চুক্তি করা হয়েছে৷ যার মধ্যে এক লাখ টন মঙ্গলবার আসার কথা৷

বিকল্প উৎস আছে কিন্তু দাম অনেক বেশি: তারিক আহমদে

This browser does not support the audio element.

মজুত সংকট নেই

বাংলাদেশে এখন বছরে গমের চাহিদা ৭৫ লাখ টন৷ এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় ১১ লাখ টন৷ সাধারণত রাশিয়া, ইউক্রেন, ক্যানাডা ও ভারত থেকে আমদানি করে বাকি ঘাটতি মেটানো হয়৷

গত অর্থবছরে মোট আমদানি করা গমের মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে শতকরা ৪৫ ভাগ, ক্যানাডা থেকে ২৩ ভাগ এবং ভারত থেকে ১৭ ভাগ গম আমদানি করা হয়েছে৷ বাকি ১৫ ভাগ গম আমদানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা ও অষ্ট্রেলিয়াসহ আটটি দেশ থেকে৷ ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আমদানিচিত্র পাল্টে যায়৷ ১ মার্চ থেকে ১২ মে পর্যন্ত গম আমদানির যে হিসাব তাতে ভারত শীর্ষে আছে৷ এই সময়ে ছয় লাখ ৮৭ হাজার টন গম আমদানি করা হয়৷ যার মধ্যে ভারত থেকে শতকরা ৬৩ ভাগ, ক্যানাডা থেকে ১৪ ভাগ আর অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয় ২৩ ভাগ৷

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার টন গম আমদানি হয়েছে৷ এর আগে ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আমদানি হয়েছিল ৫৩ লাখ ৪২ হাজার টন৷

বাংলাদেশে বেসরকারি খাত ছাড়াও সরকার তার বিভিন্ন কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পের জন্যও গম আমদানি করে৷ গত অর্থ বছরে সরকার সরাসরি গম আমদানি করেছে প্রায়  চার লাখ ৫০ হাজার টন৷ চলতি অর্থ বছরে এপর্যন্ত আমদানি করেছে চার লাখ ৭৮ হাজার টন৷ বর্তমানে সরকারের কাছে মজুত আছে এক দশমিক এক-আট লাখ টন গম৷

বাড়ছে দাম

বাংলাদেশে চালের বিপরীতে খাদ্য হিসেবে গমের ব্যবহার বাড়ছে৷ এখন বছরে তিন কোটি ৫০ লাখ টন চালের চাহিদার বিপরীতে গমের চাহিদা ৭৫ লাখ টন৷ গমের আটা ও ময়দা থেকে রুটি ছাড়াও নানা ধরনের ব্রেড, বিস্কুট ও বেকারি পণ্য তৈরি হয়৷ এসব খাদ্য পণ্যের উপর নির্ভর করেন নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ৷

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

উইক্রেন যুদ্ধের কারণে এরইমধ্যে আটা ময়দার দামে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে৷ এক বছর আগের চেয়ে কেজিতে প্যাকেটজাত আটার দাম ১০ টাকা আর ময়দায় বেড়েছে ২০ টাকার মতো৷ টিকে গ্রুপের ঊর্ধ্বতন পরিচালক তারিক আহমদে বলেন, ‘‘ইউক্রেন যুদ্ধের আগে গত বছরের দামের  সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় গমের আমদানি মূল্য দ্বিগুণ হয়ে গেছে৷ তখন ভারতের গম ছিলো প্রতি টন ২০০ ডলার, ক্যানাডার ২৮০ ডলার৷ বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত গমের পর্যাপ্ত মজুত থকলেও এরই মধ্যে আটা ও ময়দার দাম বেড়ে গেছে৷ প্যাকেটজাত আটার দাম প্রতি কেজি ৪৭ টাকা এবং ময়দা ৬৫ টাকা৷ কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে আটা ছিলো ৩৫ টাকা এবং ময়দা ৪৫ টাকা কেজি৷’’

সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, ‘‘ভারত থেকে সরকারি পর্যায়ে গম আমাদানির চেষ্টা ছাড়াও বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ বাজার নিয়ে চিন্তা করতে হবে৷ বিকল্প উৎস থেকে গম আমদানির চেষ্টা করতে হবে৷ তবে ভোক্তাদেরও বেশি দামে কেনার জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে৷ কারণ এই সংকট এখন বিশ্বব্যাপী৷’’

তবে সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে তিনি সরকারের তৎপরতার ওপরও জোর দেন৷ ভোজ্য তেলের মতো সরবরাহ ব্যবস্থা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন৷ ‘‘সরকাররে বাণিজ্য এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়কে এখনই আমদানিকারকদের সাথে বসতে হবে৷ বসে মজুতের অবস্থা, আমদানি পরিস্থিতি সবকিছু পর্যালোচনা করতে হবে৷ আর সরকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য যে গম আমদানি করে সেটাও বাড়াতে পারে৷ এসব করতে হবে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে,’’ বলেন এই অর্থনীতিবিদ৷

এদিকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সিলেটে খাদ্য গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘ভারত বেসরকারি পর্যায়ে গম রপ্তানি বন্ধ করেছে, সরকারি পর্যায়ে করেনি৷ আমরা সম্প্রতি ভারত থেকে তিন লাখ টন গম আমদানির চুক্তি করেছি৷ আর এখন তারা হয়তো বন্ধ করেছে, ১০ দিন পর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে৷ এটা নিয়ে কোনো সংকট হবে বলে মনে করি না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ