1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশ কি পারবে?

ড. বিনায়ক সেন১৬ মার্চ ২০১৬

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্য দূর করার সরলতর সূচকে বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই৷ একসময় যে দেশকে তলাবিহীন সাহায্যের ঝুড়ি বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হতো, সে দেশের নীরব উত্থান ঘটে গেছে বিশ্ব-সভায়৷ কিন্তু এরপর?

ঢাকার রাস্তায় ভিক্ষা করছে এক বৃদ্ধা
ছবি: Farjana K. Godhuly/AFP/Getty Images

মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো

গত বছর বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্বল্প-আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশের উৎক্রমণ ঘটেছে মধ্য আয়ের তালিকায়৷ সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বিচারেও দেশটির অর্জন তাৎপর্যপূর্ণ৷ বিশেষত নারী-শিক্ষা, প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য – এ সব সূচকে বাংলাদেশ স্বল্প-আয়ের দেশগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে৷ এমনকি মধ্য-আয়ের দেশ ভারতের থেকেও এ সমস্ত সূচকে বাংলাদেশকে বেশ এগিয়ে রাখতে হবে৷ এ কথাটি আমার নয়, এটি অমর্ত্য সেন ও জঁ দ্রেজ-এর যৌথ প্রকাশনা ‘অ্যান আনসারটেইন গ্লোরি' থেকেই বেশ বোঝা যায়৷ বাংলাদেশের মতো পৃথিবীতে কয়টা উন্নয়নশীল দেশ পাওয়া যাবে, যেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের শিক্ষার হার (বা এনরলমেন্ট রেট) ছেলেদের চেয়ে বেশি? টিকা গ্রহণ, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন, নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর স্বল্প হার – এ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা থেকে আফ্রিকার মতো দেশগুলো মনযোগের সাথে শিক্ষা নিতে পারে৷ বাংলাদেশ হচ্ছে অ্যাফ্রো-পেসিমিজমের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় দাওয়াই৷ দুনিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতির দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশর নাম৷ তার ওপর রয়েছে বছর বছর সাইক্লোন-বন্যা-অতিবৃষ্টির নিত্য শঙ্কা৷ এ দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে মানুষ৷ এ রকম দেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারলে আফ্রিকাও যে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে৷

আগামী দিনের অনিশ্চয়তা

চিত্রকর অ্যান্ডি ওয়ারহল বলেছিলেন, এই শতকের প্রতিটি মানুষই অন্তত ‘পনেরো মিনিটের জন্য বিখ্যাত' হবে৷ বাংলাদেশের সাফল্যও কি তেমনি মাত্র ১৫ মিনিটের ক্ষণস্থায়ী সাফল্য? প্রশ্ন উঠেছে, এমডিজি-তে দেশটির অতীতের সাফল্যকে কি আগামী দুই দশকে ধরে রাখা যাবে? অনিশ্চয়তার হুমকি আসছে কোথা থেকে? এক্ষেত্রে আমি তিনটি মৌলিক অনিশ্চয়তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই৷

প্রথমত, এমডিজির অতীতের ধারা আগামীতেও ধরে রাখতে হলে দারিদ্র্য সম্পূর্ণভাবে দূর করতে হবে৷ উপশম নয়, দারিদ্র্যের শেকড় থেকে তুলে আনতে হবে৷ ১৯৯১/৯২ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৬০ শতাংশ, ২০১০ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩২ শতাংশে৷ ২০১৬ সালের জরিপ সবে শুরু হতে যাচ্ছে৷ তখনই জানা যাবে হালের অবস্থা৷ এসডিজি বলছে, সব দেশকেই ২০৩০ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের গ্লানি থেকে মুক্ত করতে হবে৷ আমার মনে হয়, বাংলাদেশে এটা করা সম্ভব৷ কিন্তু সমস্যা হলো, অতীতের সাফল্য ক্রমেই আমাদের দারিদ্র্যের ১০০ শতাংশ দূরীকরণের লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে৷ অনেকটা ‘অনেক সাফল্য অর্জিত করেছি এবার বরং প্রবৃদ্ধি বাড়ানো নিয়ে ভাবা যাক' ধরনের মনোভাব সরকারি মহলে ‘সেট-ইন' করেছে৷ চরম দরিদ্ররা সংখ্যায় কম৷ এছাড়া তারা সাংগঠনিক ভাবেও দুর্বল৷ ফলে তারাও চেঁচিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে পারছে না৷ কিন্তু চরম দরিদ্রদের সাহায্য না করতে পারলে সবার জন্য মানসম্মত প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা কারিগরী শিক্ষার স্লোগান কখনোই কার্যকর হবে না (যেটা এসডিজি-তে বলা আছে)৷

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ বিশ্বে জনসংখ্যার দিক থেকে সপ্তম৷ আর এ রকম একটি দেশ চলছে ‘এক কেন্দ্র'-এর ওপরে নির্ভর করে৷ খোদ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেল এক-কেন্দ্র থেকে উন্নয়নকে পরিচালনা করার কঠিন, প্রায়-অসম্ভব, কাজে ব্রতী হয়ে৷ অথচ বাংলাদেশ (জনসংখ্যার দিক থেকে রাশিয়ারও বেশি) এখনো ক্ষমতার ‘ডিসেন্ট্রালাইজেশন' বা বিকেন্দ্রীকরণকে মন থেকে গ্রহণ করতে পারল না৷ ইউনিয়ন পরিষদ অবধি টুকটাক কিছু কাজ যা-ও বা হয়, উপজেলা পর্যায়ে কোনো ক্ষমতা-কাঠামো নেই যার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়৷ এখানে চলছে এমপি-দের আর ব্যুরোক্র্যাটদের দাপট৷ শহর এলাকায় বিকেন্দ্রীকরণ আরও কম৷ এর ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্য-শিক্ষা-নিরাপত্তা ইত্যাদি সুবিধা বা সেবাগুলো পৌঁছাতে পারছে না সমানভাবে৷ বস্তি এলাকা হাওড় এলাকা, নদীভাঙন, পাহাড়ি দুর্গম এলাকা, উপদ্রুত উপকূল, বন্যাপীড়িত ‘পকেটগুলো' সবচেয়ে অবহেলিত হয়ে থাকছে, থেকে যাচ্ছে৷

ড. বিনায়ক সেন, বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদছবি: DW

তৃতীয়ত, বাংলাদেশের এমডিজি সাফল্যের পেছনে রয়েছে নারীদের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ অবদান৷ কিন্তু এখানে কতগুলো বঞ্চনার খাত রয়ে গেছে৷ বাংলাদেশের ৬৫-৭০ শতাংশ বিয়ে এখনো হয়ে থাকে ১৮ বছরের নীচে, ৪০ শতাংশের মতো বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর পূর্তির আগেই৷ এর ফলে অচিরেই ভেঙে পড়ে মাতৃস্বাস্থ্য, জন্ম নেয়া শিশুরা ভোগে দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টিতে৷ এই মাতৃ-শিশু অপুষ্টির ফলে স্কুলে বা ভবিষ্যৎ দিনের পেশায় গরিবেরা বড়লোক-মধ্যবিত্তের চেয়ে পিছিয়ে পড়ে৷ আমাদের দেশে তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার কারণ দারিদ্র, যৌতুকের চাপ এবং চলা-ফেরার নিরাপত্তার অভাব৷ গত দুই দশকে গ্রামে-শহরে মাদ্রাসা শিক্ষার দ্রুত প্রসার এবং ‘ফিমেল মাদ্রাসার' তাৎপর্যপূণ সম্প্রসারণও বাল্য-বিবাহের টিঁকে থাকার জন্য দায়ী৷ এক্ষেত্রে ধর্মবেত্তাদের যেমন এগিয়ে আসতে হবে, তেমনি সরকারকেও নানাভাবে আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে৷ আমার মনে হয়, নারীদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ালে দ্রুত বাড়বে বিয়ের বয়সও৷

বাংলাদেশ কি এমডিজি-র মতো এসডিজি-ও বাস্তবায়ন করতে পারবে? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ