শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্য দূর করার সরলতর সূচকে বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই৷ একসময় যে দেশকে তলাবিহীন সাহায্যের ঝুড়ি বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হতো, সে দেশের নীরব উত্থান ঘটে গেছে বিশ্ব-সভায়৷ কিন্তু এরপর?
বিজ্ঞাপন
মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো
গত বছর বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্বল্প-আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশের উৎক্রমণ ঘটেছে মধ্য আয়ের তালিকায়৷ সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বিচারেও দেশটির অর্জন তাৎপর্যপূর্ণ৷ বিশেষত নারী-শিক্ষা, প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য – এ সব সূচকে বাংলাদেশ স্বল্প-আয়ের দেশগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে৷ এমনকি মধ্য-আয়ের দেশ ভারতের থেকেও এ সমস্ত সূচকে বাংলাদেশকে বেশ এগিয়ে রাখতে হবে৷ এ কথাটি আমার নয়, এটি অমর্ত্য সেন ও জঁ দ্রেজ-এর যৌথ প্রকাশনা ‘অ্যান আনসারটেইন গ্লোরি' থেকেই বেশ বোঝা যায়৷ বাংলাদেশের মতো পৃথিবীতে কয়টা উন্নয়নশীল দেশ পাওয়া যাবে, যেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের শিক্ষার হার (বা এনরলমেন্ট রেট) ছেলেদের চেয়ে বেশি? টিকা গ্রহণ, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন, নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর স্বল্প হার – এ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা থেকে আফ্রিকার মতো দেশগুলো মনযোগের সাথে শিক্ষা নিতে পারে৷ বাংলাদেশ হচ্ছে অ্যাফ্রো-পেসিমিজমের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় দাওয়াই৷ দুনিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতির দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশর নাম৷ তার ওপর রয়েছে বছর বছর সাইক্লোন-বন্যা-অতিবৃষ্টির নিত্য শঙ্কা৷ এ দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে মানুষ৷ এ রকম দেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারলে আফ্রিকাও যে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে৷
দক্ষিণ এশিয়ায় সবার ওপরে বাংলাদেশ
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘বিশ্ব লিঙ্গবৈষম্য সূচক’ বলছে, নারী-পুরুষের ব্যবধান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ৷
ছবি: AP
লিঙ্গ সমতা মাপা
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, ডাব্লিউইএফ ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর ‘বিশ্ব লিঙ্গবৈষম্য সূচক’ প্রকাশ করে আসছে৷ মূলত চারটি বিষয় – অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ, শিক্ষায় অর্জন, স্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন – বিবেচনা করে এ সূচক প্রকাশ করা হয়৷ ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে সবশেষ সূচকটি প্রকাশ করা হয়েছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/D. Reinhardt
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম
সবশেষ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫টি দেশের মধ্যে ৬৮ নম্বরে৷ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের অবস্থান এরও পরে৷ ভারত ১০৮-এ আর পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৪ নম্বরে৷ আরও জানতে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: DW/M. Mamun
শীর্ষে স্বাস্থ্য খাত
যে চারটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সূচক প্রকাশ করা হয় তার মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে৷ ২০১৪ সালের প্রতিবেদনে এই খাতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২২তম৷ ২০১৫ সালে সেটা ২৭ ধাপ এগিয়ে ৯৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে৷
ছবি: D.net/Amirul Rajiv
শিক্ষা
২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে শিক্ষা খাতের ব়্যাংকিংয়ে দুই ধাপ এগিয়ে ১০৯ নম্বরে আছে বাংলাদেশ৷ সবচেয়ে বেশি সাফল্য দেখা গেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে৷ এ বিষয়ে বাংলাদেশের ব়্যাংকিং এক৷ তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১৯ নম্বরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন
এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে দুই ধাপ এগিয়েছে৷ ফলে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান আট৷ সংসদে নারী সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৭৬৷ আর মন্ত্রিসভায় নারী সদস্য সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ আছে ১২৬ নম্বরে৷
ছবি: DW/S. Kumar Day
যেখানে পিছিয়েছে
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গতবারের চেয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে ১৩০তম অবস্থানে এসেছে৷ শ্রমখাতে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ বিবেচনায় বাংলাদেশে অবস্থান ৯৭, আর একই কাজে নারী-পুরুষের বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে অবস্থান ১২৬ নম্বরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
সমতা আসতে লাগবে ১১৮ বছর!
ডাব্লিউইএফ বলছে, বেতনের পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা পুরোপুরি আসবে ২১৩৩ সালে, অর্থাৎ ১১৮ বছর পর৷ অবশ্য ২০১৪ সালের প্রতিবেদনে সংস্থাটি আরও আগেই এই সমতা আসতে পারে বলে জানিয়েছিল৷ কিন্তু গত এক বছরে পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় সমতা আসার সময়সীমাও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
7 ছবি1 | 7
আগামী দিনের অনিশ্চয়তা
চিত্রকর অ্যান্ডি ওয়ারহল বলেছিলেন, এই শতকের প্রতিটি মানুষই অন্তত ‘পনেরো মিনিটের জন্য বিখ্যাত' হবে৷ বাংলাদেশের সাফল্যও কি তেমনি মাত্র ১৫ মিনিটের ক্ষণস্থায়ী সাফল্য? প্রশ্ন উঠেছে, এমডিজি-তে দেশটির অতীতের সাফল্যকে কি আগামী দুই দশকে ধরে রাখা যাবে? অনিশ্চয়তার হুমকি আসছে কোথা থেকে? এক্ষেত্রে আমি তিনটি মৌলিক অনিশ্চয়তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই৷
প্রথমত, এমডিজির অতীতের ধারা আগামীতেও ধরে রাখতে হলে দারিদ্র্য সম্পূর্ণভাবে দূর করতে হবে৷ উপশম নয়, দারিদ্র্যের শেকড় থেকে তুলে আনতে হবে৷ ১৯৯১/৯২ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৬০ শতাংশ, ২০১০ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩২ শতাংশে৷ ২০১৬ সালের জরিপ সবে শুরু হতে যাচ্ছে৷ তখনই জানা যাবে হালের অবস্থা৷ এসডিজি বলছে, সব দেশকেই ২০৩০ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের গ্লানি থেকে মুক্ত করতে হবে৷ আমার মনে হয়, বাংলাদেশে এটা করা সম্ভব৷ কিন্তু সমস্যা হলো, অতীতের সাফল্য ক্রমেই আমাদের দারিদ্র্যের ১০০ শতাংশ দূরীকরণের লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে৷ অনেকটা ‘অনেক সাফল্য অর্জিত করেছি এবার বরং প্রবৃদ্ধি বাড়ানো নিয়ে ভাবা যাক' ধরনের মনোভাব সরকারি মহলে ‘সেট-ইন' করেছে৷ চরম দরিদ্ররা সংখ্যায় কম৷ এছাড়া তারা সাংগঠনিক ভাবেও দুর্বল৷ ফলে তারাও চেঁচিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে পারছে না৷ কিন্তু চরম দরিদ্রদের সাহায্য না করতে পারলে সবার জন্য মানসম্মত প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা কারিগরী শিক্ষার স্লোগান কখনোই কার্যকর হবে না (যেটা এসডিজি-তে বলা আছে)৷
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের যে ছবি আলোড়ন তুলেছে
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ এখনো এক বড় সমস্যা৷ দেশটিতে ৬৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে আঠারো বছর বয়স পার হওয়ার আগেই৷ বার্তা সংস্থা গ্যাটি ইমেজেস-এর এক ফটোগ্রাফার তাঁর ক্যামেরায় ধারণ করছেন এমনই একটি বাল্যবিবাহের কিছু ছবি৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
নওশিনের বিয়ে
নওশিন আক্তারের বয়স ১৫ বছর৷ বাবার বাড়ি বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে৷ বিয়ের দিনও সে ছুটে বেড়াচ্ছিল পড়শিদের বাড়ি বাড়ি৷ সেখান থেকেই ধরে এনে বিয়ের পিড়িতে বসানো হয় তাকে৷ তার বিয়ের, আইনি দৃষ্টিতে যা অবৈধ, কিছু ছবি থাকলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
বিয়ে বাড়িতে উৎসব
আগস্টের ২০ তারিখে বিয়ে হয় নওশিনের৷ নিজে বিয়ের অর্থ সে তেমন না বুঝলেও, পাড়াপড়শির এই বিয়ে নিয়ে আগ্রহের কমতি ছিল না৷ বিয়ের দিন উৎসবের এই ছবি জানান দিচ্ছে একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরের বয়স নিয়ে তাঁদের কোনো ভাবনা নেই৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
নওশিনের গোসল
বিয়ের দিন প্রকাশ্যেই গোসল করানো হয় নওশিন আক্তারকে৷ বাল্যবিবাহের জন্য তাকে প্রস্তুত করার অংশ এই গোসল৷ অনেকের সঙ্গে এএফপি-র আলোকচিত্রিও দেখেছেন সেই আচার৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
বিউটি পার্লারে নওশিন
বিয়ের জন্য সাজাতে নওশিনকে নেয়া হয়েছে বিউটি পার্লারে৷ বাংলাদেশের আনাচেকানাচে এ রকম পার্লারের সংখ্যা অনেক৷ ছবিতে কাপড় পরার সময় অপর এক নারীকে দেখছে নওশিন৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
কনের মেকআপ
বিয়ের সাজে সাজানো হচ্ছে নওশিনকে৷ বাংলাদেশে কনেকে বেশ রংচংয়ে মেকআপে সাজানো হয়৷ অনেক সময় চেহারার রং ফর্সা করার চেষ্টা করা হয় জোর করে, যা অনেকসময় দেখতে কিছুটা দৃষ্টিকটু হলেও ঐতিহাসিকভাবে চলে আসছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
গহনা ছাড়া কি বিয়ে হয়?
কনে নওশিনকে গহনা পড়িয়ে দিচ্ছেন তার আত্মীয়রা৷ বাংলাদেশে বিয়েতে সোনার গহনা এক অপরিহার্য উপাদান৷ কনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা যেমনই হোক, সোনাদানা ছাড়া বিয়ে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে একরকম ভাবাই যায় না৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
জোর করে বিছানায় নেয়া হচ্ছে নওশিনকে
নওশিনকে তার এক আত্মীয় জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন একটি বিছানায়, যেখানে তার ছবি তোলা হবে৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে গড়ে ২৯ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় তাদের বয়স ১৫ পার হওয়ার আগে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
ভিডিও-র জন্য ‘পোজ’
ভিডিও-র জন্য পোজ দিচ্ছে নওশিন আক্তার৷ তার বিয়ের মুহূর্তগুলো এভাবেই ক্যামেরাবন্দি করেছেন ভাড়া করা আলোকচিত্রিরা৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
৩২ বছর বয়সি বর
নওশিনের বরের নাম মোহাম্মদ হাসামুর রহমান, বয়স ৩২ বছর৷ বিয়ের সন্ধ্যায় অপ্রাপ্তবয়স্ক কনের সঙ্গে ছবির জন্য পোজ দিয়েছেন রহমান৷ এএফপি-র একজন বিদেশি আলোকচিত্রি সেই বিয়েতে উপস্থিত হতে পারলেও বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পারেনি গিয়ে বিয়েটি বন্ধ করতে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে নওশিন
বিয়ে শেষে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে ১৫ বছর বয়সি নওশিন৷ পরিবারের সদস্যরা তাকে গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন৷ বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের এ সব ছবি গোটা বিশ্বের আলোড়ন তুলেছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
10 ছবি1 | 10
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ বিশ্বে জনসংখ্যার দিক থেকে সপ্তম৷ আর এ রকম একটি দেশ চলছে ‘এক কেন্দ্র'-এর ওপরে নির্ভর করে৷ খোদ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেল এক-কেন্দ্র থেকে উন্নয়নকে পরিচালনা করার কঠিন, প্রায়-অসম্ভব, কাজে ব্রতী হয়ে৷ অথচ বাংলাদেশ (জনসংখ্যার দিক থেকে রাশিয়ারও বেশি) এখনো ক্ষমতার ‘ডিসেন্ট্রালাইজেশন' বা বিকেন্দ্রীকরণকে মন থেকে গ্রহণ করতে পারল না৷ ইউনিয়ন পরিষদ অবধি টুকটাক কিছু কাজ যা-ও বা হয়, উপজেলা পর্যায়ে কোনো ক্ষমতা-কাঠামো নেই যার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়৷ এখানে চলছে এমপি-দের আর ব্যুরোক্র্যাটদের দাপট৷ শহর এলাকায় বিকেন্দ্রীকরণ আরও কম৷ এর ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্য-শিক্ষা-নিরাপত্তা ইত্যাদি সুবিধা বা সেবাগুলো পৌঁছাতে পারছে না সমানভাবে৷ বস্তি এলাকা হাওড় এলাকা, নদীভাঙন, পাহাড়ি দুর্গম এলাকা, উপদ্রুত উপকূল, বন্যাপীড়িত ‘পকেটগুলো' সবচেয়ে অবহেলিত হয়ে থাকছে, থেকে যাচ্ছে৷
তৃতীয়ত, বাংলাদেশের এমডিজি সাফল্যের পেছনে রয়েছে নারীদের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ অবদান৷ কিন্তু এখানে কতগুলো বঞ্চনার খাত রয়ে গেছে৷ বাংলাদেশের ৬৫-৭০ শতাংশ বিয়ে এখনো হয়ে থাকে ১৮ বছরের নীচে, ৪০ শতাংশের মতো বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর পূর্তির আগেই৷ এর ফলে অচিরেই ভেঙে পড়ে মাতৃস্বাস্থ্য, জন্ম নেয়া শিশুরা ভোগে দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টিতে৷ এই মাতৃ-শিশু অপুষ্টির ফলে স্কুলে বা ভবিষ্যৎ দিনের পেশায় গরিবেরা বড়লোক-মধ্যবিত্তের চেয়ে পিছিয়ে পড়ে৷ আমাদের দেশে তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার কারণ দারিদ্র, যৌতুকের চাপ এবং চলা-ফেরার নিরাপত্তার অভাব৷ গত দুই দশকে গ্রামে-শহরে মাদ্রাসা শিক্ষার দ্রুত প্রসার এবং ‘ফিমেল মাদ্রাসার' তাৎপর্যপূণ সম্প্রসারণও বাল্য-বিবাহের টিঁকে থাকার জন্য দায়ী৷ এক্ষেত্রে ধর্মবেত্তাদের যেমন এগিয়ে আসতে হবে, তেমনি সরকারকেও নানাভাবে আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে৷ আমার মনে হয়, নারীদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ালে দ্রুত বাড়বে বিয়ের বয়সও৷
বাংলাদেশ কি এমডিজি-র মতো এসডিজি-ও বাস্তবায়ন করতে পারবে? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
এসডিজির ১৭ লক্ষ্য: পরামর্শক দলে ইউনূস, মেসি
জাতিসংঘের এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য) কর্মসূচি শেষ হয়ে এসেছে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য)৷ আগে লক্ষ্য ছিল আটটি, এবার ১৭টি৷
এমডিজি থেকে এসডিজি
২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চলা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য বা এমডিজিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল আটটি৷ এমডিজি বাস্তবায়নে কয়েকটি ক্ষেত্রে ভালো সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ৷ এবার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজিতে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/ben_photos
কোনো দারিদ্র্য নয়
এসডিজির প্রথম লক্ষ্য বিশ্ব থেকে একেবারে চরম দারিদ্র্য দূর করা৷ ২০৩০ সালের মধ্যে সেটি করতে চায় জাতিসংঘ৷ বৈশ্বিক এই সংস্থার হিসাবে যাদের আয় দিনে সোয়া এক ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১০০ টাকা তারাই চরম দরিদ্র৷
ছবি: Farjana K. Godhuly/AFP/Getty Images
ক্ষুধা দূর
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্ষুধা দূর করতে হবে এবং গরিব ও নবজাতক শিশু সহ যেসব মানুষ সংকটের মধ্যে আছে তাদের জন্য নিরাপদ, পুষ্টিকর ও পর্যাপ্ত খাবারের সংস্থান নিশ্চিত করতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A.G. Farran
মা ও নবজাতকের মৃত্যু সংখ্যা
এক লক্ষ শিশু জন্মের বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা ৭০ এর নীচে নামিয়ে আনতে হবে৷ আর এক হাজার শিশুর জন্মের বিপরীতে নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা ১২-র নীচে নামাতে হবে৷ আর পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি এক হাজারে ২৫ জনে নামিয়ে আনতে হবে৷
ছবি: Fotolia/poco_bw
শিক্ষা
২০৩০ সালের মধ্যে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
লিঙ্গবৈষম্য দূর করা
নারী ও মেয়েদের ক্ষেত্রে সব ধরণের লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে হবে৷ ব্যক্তিগত ও জনজীবনে নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সব রকমের (যেমন মানব পাচার, যৌন নির্যাতন) নির্যাতন বন্ধ করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/D. Reinhardt
বিশুদ্ধ পানি
বিশ্বের সবাই যেন নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে৷ খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ বন্ধ করতে হবে৷ নারী ও মেয়েদের জন্য মলমূত্র ত্যাগের স্থান ঠিক করার বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Arhab
অন্য যেসব ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে
এর মধ্যে আছে সাশ্রয়ী ও টেকসই জ্বালানি, আর্থিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো, রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অসমতা, নিরাপদ শহর, সম্পদ ভোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, সামুদ্রিক সম্পদ, ইকোসিস্টেম, সুবিচার ও টেকসই উন্নয়ন৷ এ সব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে উপরের ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Fotolia/Ingo Bartussek
পরামর্শক গ্রুপে ইউনূস, মেসি, শাকিরা
এসডিজি কর্মসূচির পরামর্শক গ্রুপে আছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, লিওনেল মেসি, শাকিরা সহ আরও ১২ জন৷ এই গ্রুপের দায়িত্ব হলো এসডিজি কর্মসূচির উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন করা৷