ইংল্যান্ডের জাতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে প্রশ্নটি আবারো সামনে এসেছে৷ গুলশান হামলায় অনেক বিদেশি নিহত হওয়ার পর দেশটিতে বিদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল৷ তখন ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন অনেকই৷
বিজ্ঞাপন
নিরাপত্তা নিয়ে লম্বা সময় আলোচনার পর বাংলাদেশ সফরের সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ডের জাতীয় ক্রিকেট দল৷ ঢাকা এবং চট্টগ্রামে মোট পাঁচটি ম্যাচে স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাঠে নামছে দলটি, যার তিনটি একদিনের এবং দু'টি টেস্ট ম্যাচ৷ তবে ইংলিশ দলের দু'জন খেলোয়াড় এবং একটি সমর্থক গোষ্ঠী নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে বাংলাদেশে সফরে অংশ নেয়নি৷ গত জুলাইয়ে গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ বিদেশিসহ কমপক্ষে ২০ ব্যক্তি নিহতের পর, এটাই দেশটিতে বিদেশিদের বড় ধরনের সফর৷ তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস সেই হামলার দায় স্বীকার করে৷
জঙ্গি গোষ্ঠীর সেই বর্বর হামলা গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল এবং অনেক পশ্চিমারাষ্ট্র তখন বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাদের নাগরিকদের উপর বিভিন্ন সতর্কতা জারি করেছিল৷ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, মুসলিম অধ্যুষিত দেশটিতে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা সত্যিই আছে এবং সেটা বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী৷ গুলশান হামলার পর আর কোনো বড় হামলার ঘটনা ছাড়া তিনমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ সতর্কতা প্রত্যাহার করেনি৷
ঢাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে বিশেষ বাস ও রিকশা
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর, গুলশান-বনানী-বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় চালু হয়েছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক বাস ও বিশেষ রঙের রিকশা সার্ভিস৷ যার নাম রাখা হয়েছে ‘ঢাকা চাকা’৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW
কূটনৈতিক এলাকায় নতুন বাস
গুলশান, বারিধারা, বনানী ও নিকেতন সোসাইটির উদ্যোগে এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সহায়তায় বিশেষ এ সার্ভিসটির বাস্তবায়ন করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন৷
ছবি: DW
দুই রুটে ‘ঢাকা চাকা’
মোট দু’টি রুটে প্রতি ১০ মিনিট পর পর বাস ছাড়বে৷ একটি রুট – তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডের নাভানা মোড় থেকে পুলিশ প্লাজা, গুলশান ১ ও রূপায়ণ টাওয়ার হয়ে গুলশান ২-এর গোলচত্বর পর্যন্ত৷ আর অন্য রুটের বাসটি ছাড়বে কাকলী মোড় থেকে৷ এটি বনানী বাজার, গুলশান ২ নম্বর হয়ে যাবে নতুন বাজারে৷
ছবি: DW
ভাড়া মাত্র ১৫ টাকা
নতুন এ বাস সার্ভিসটি শীততাপনিয়ন্ত্রিত৷ তারপরেও যে কোনো দূরত্বের ভাড়া মাত্র ১৫ টাকা৷ অর্থাৎ মাত্র ১৫ টাকায় পুরো গুলশান এলাকায় যাতায়াত করা যাবে৷ এছাড়া এই বাসে রয়েছে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থাও৷
ছবি: DW
কম দূরত্বের যাত্রীরা খুশি নন
সামগ্রিক ভাবে এ ভাড়া যাত্রীদের কাছে সহনীয় হলেও, ছোট ছোট রুটের যাত্রীরা ১৫ টাকা ভাড়াকে বেশি মনে করছেন৷ যেমন গুলশান শুটিং ক্লাব থেকে গুলশান ২ নম্বরের ভাড়া ১৫ টাকা৷ এটা ঠিক আছে৷ কিন্তু গুশলান ১ নম্বর থেকে গুলশান ২ নম্বরের দূরত্ব অনেক কম৷ অথচ এক্ষেত্রেও ভাড়া কিন্তু সেই ১৫ টাকাই৷ আগে গুলশান ১ নম্বর থেকে ২ নম্বরের ভাড়া ছিল মাত্র ৪-৬ টাকা৷
ছবি: DW
অভিযোগের শেয নেই
নতুন এ সার্ভিসে বাসের সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রীদের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে৷ তাই এ নিয়ে অভিযোগ অনেক যাত্রীর৷ শুধু তাই নয়, গুলশান এলাকায় অন্যান্য গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অন্যান্য ভোগান্তির কথাও জানালেন সাধারণ মানুষ৷ তাঁদের কথায়, আগে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে গুলশানে সরাসরি আসা যেত৷ কিন্তু এখন আসতে হচ্ছে ভেঙে ভেঙে৷
ছবি: DW
বাসের সংখ্যাও কম
বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় অনেকক্ষণ পরে একটি বাস এলেও তার উপর যাত্রীদের চাপ পড়ে যায়৷ ফলে গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে চলতে হচ্ছে বাসগুলোকে৷ এরপরেও গুলশান-বনানী এলাকায় অন্য কোনো গণপরিবহন না থাকায় এখন অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে এ বাসে যাতায়ত করেন৷
ছবি: DW
এসেছে হলুদ রিকশাও
সার্কুলার বাস সার্ভিস চালুর পাশাপাশি এ সব এলাকায় চালু করা হয়েছে হলুদ রঙের রিকশা সার্ভিসও৷ পুরো গুলশান-বনানী-বারিধারা ও নিকেতন এলাকার আবাসিক সোসাইটিগেুলোর উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে মাত্র ৫০০ রিকশা নামানো হয়েছে৷ এর মধ্যে গুলশানে ২০০টি, বনানীতে ২০০টি, বারিধারা ও নিকেতনে ৫০টি করে রিকশা৷
ছবি: DW
রিকশার জন্য বিশেষ ‘হটলাইন’
গুলশান-বনানী- বারিধারা ও নিকেতন আবাসিক এলাকায় নতুন এ রিকশার গায়ে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন রুটের নির্ধারিত ভাড়া৷ এ ভাড়ায় কোনো চালক না চলতে চাইলে একটি ‘হটলাইন’ নম্বরে অভিযোগ করতে পারবে যাত্রীরা৷ এছাড়া কোনো যাত্রীর গতিবিধি সন্দেহজনক হলেও হটলাইন নম্বরটিতে জানানো যাবে৷
ছবি: DW
নানারকম বিধি-নিষেধ
নতুন এ রিকশা সার্ভিসের চালকরা নির্ধারিত সব জায়গায় যেতে বাধ্য৷ আবার এ সব রিকশা নিয়ে ঐ সব এলাকার বাইরেও যেতে পারবেন না তারা৷
ছবি: DW
হারিয়ে যায়নি সাধারণ রিকশা
গুলশান-বনানী- বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় শুধু হলুদ রঙের বিশেষ রিকশা চলাচলের কথা বলা হলেও চালু হওয়ার ছয়দিন পরেও দেখা গেছে যে, অন্যান্য সাধারণ রিকশাও চলছে এ সব এলাকায়৷
ছবি: DW
সমস্যা এখানেও আছে...
গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় গত চার বছর ধরে রিকশা চালান খুলনার জাহাঙ্গীর আলম৷ নতুন এ নিয়মের ফলে অনেক সুবিধার কথাই বললনে তিনি৷ তবে যাত্রীদের নিয়ে তাঁর অভিযোগ, নির্ধারিত ভাড়ার পরও অনেক যাত্রীই নাকি তাঁদের সঙ্গে ভাড়া কমানোর দাবি করেন৷ আবার এ নিয়ে দুর্ব্যবহারও করেন অনেকে৷
ছবি: DW
11 ছবি1 | 11
অনেক সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত
গুলশান হামলার পর সন্ত্রাসীদের দমনে কড়া অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশ৷ বিভিন্ন সম্ভাব্য জঙ্গি আস্তানায় তাদের চালানো অভিযানে প্রাণ হারায় বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন জঙ্গি৷ ২৬ জুলাই ঢাকার কল্যাণপুরে এক অভিযানে প্রাণ হারায় নয় সন্দেহভাজন, যারা অধিকাংশই শিক্ষিত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ আর ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে আরেক অভিযানে প্রাণ হারায় তিন সন্দেহভাজন জঙ্গি, যাদের মধ্যে একজন অতীতে সিরিয়া গিয়েছিল এবং গুলশান হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড' বলে দাবি করে পুলিশ৷
জিহাদিদের অনলাইন কার্যক্রম মনিটর করা সুইডেনে বসবাসরত বাংলাদেশি সাংবাদিক তাসনিম খলিল মনে করেন, সম্ভাব্য জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের এ সব অভিযানে জিহাদিরা কোনঠাসা হয়ে গেছে এবং সামগ্রিকভাবে ঢাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে৷ তবে সন্দেহভাজন শীর্ষ জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করতে না পারার সমালোচনা করেছেন তিনি৷
‘‘(গুলশান হামলার পর) পুলিশ এখনো কোনো শীর্ষ জঙ্গিকে জীবিত গ্রেপ্তার করতে পারেনি, যা বর্তমান সরকারের এক বড় ব্যর্থতা'', ডয়চে ভেলেকে বলেন খলিল এবং সঙ্গে যোগ করেন: ‘‘অতীতে এক সরকার কিন্তু একটি স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতাদের জীবিত গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়েছিল৷ পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জঙ্গি গোষ্ঠীটি পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দেয়া সম্ভব হয়েছিল৷ তাদের জীবিত গ্রেপ্তার এই কাজে সহায়তা করেছিল৷''
‘‘কিন্তু বর্তমানে সেটা হচ্ছে না, যা উদ্বেগজনক'', বলেন খলিল৷
ঢাকা পুলিশের মুখপাত্র মশিউর রহমান অবশ্য দাবি করেছেন, পুলিশের অভিযানের সময় সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ইচ্ছাকৃতভাবে মারা হয়নি৷ ‘‘আমরা সন্দেহভাজনদের জীবিত গ্রেপ্তারের চেষ্টা করি এবং সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য থাকে৷ কিন্তু তাদের যদি গ্রেপ্তার সম্ভব না হয় এবং তারা যদি আমাদের দিকে গুলি ছোঁড়ে তাহলে আমাদেরও পাল্টা গুলি ছোঁড়ার আইনি অধিকার রয়েছে'', বলেন তিনি৷
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
ঢাকার গুলশানের আর্টিজান ক্যাফেতে দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার জিম্মি ঘটনার অবসান হলেও মানুষের মন থেকে আতঙ্ক যাচ্ছে না৷ এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই নিহত হয়েছে ২০ জিম্মি৷ নিহত হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তাও৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
ঘটনার শুরু
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু
পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ছ'জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বলেছেন, বাকি কয়েকজনকে হয়তো বাঁচানো যায়নি৷ এই জঙ্গি হামলায় জড়িত একজন ধরা পড়েছে বলেও শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters
এ যেন দুঃস্বপ্ন
কমান্ডো অভিযানে মুক্ত গুলশানের ক্যাফে থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের ১২ ঘণ্টার ‘দুঃস্বপ্ন’ কাটছে না৷ তাঁদের চোখে মুখে ক্লান্তি ও ভীতির ছাপ৷ তারা বলছিলেন, কয়েকজনের মৃতদেহ দেখেছেন, অনেক জায়গায় রক্তের ছাপ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য
তাঁরা বলছেন, জিম্মিকারীরা বাংলাদেশি মুসলমানদের সুরা পড়তে বলে৷ সুরা পড়তে পারার পর তাঁদেরকে রাতে খেতেও দেওয়া হয়৷ যাঁরা হিজাব পরা ছিল, তাঁদের বাড়তি খাতির করা হয়৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/S. K. Das
আইএস-এর দায় স্বীকার
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে৷ এই জঙ্গি দলের মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এ সব খবরে দাবি করা হয় যে, ‘তাদের’ এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪০ জন৷
ছবি: picture-alliance/abaca
কমান্ডো অভিযান
সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে রাতভর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়৷ ৮ টা ১৫ মিনিটে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ভবনের নিয়ন্ত্রণ ও আতঙ্কের অবসান
৮ টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা৷ গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে৷ ৯ টা ১৫ মিনিটে ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
8 ছবি1 | 8
‘পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে'
পুলিশের অভিযান নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, তা ঢাকায় বসবাসরত বিদেশিদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনছে৷ ঢাকার ডেইলি স্টার পত্রিকায় কর্মরত অস্ট্রেলীয় নাগরিক অ্যান্ড্রু ইগল মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে৷
‘‘গুলশান হামলার পর মনে হয়েছিল, সম্ভবত কোনো কিছুই তাদের থামাতে পারবে না৷ জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক কতটা বড় সে সম্পর্কেও তখন পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল না'', ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘জঙ্গিরা বাংলাদেশে কতটা প্রতিষ্ঠিত সে সম্পর্কে এখন আগের চেয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে৷ এবং আমি মনে করি, তারা সংখ্যায় খুব বেশি নয়৷''
গত আটবছর ধরে ঢাকায় থাকা ইগল অবশ্য স্বীকার করেছেন গুলশান হামলার পর অনেক বিদেশি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন এবং তারা শীঘ্রই আবার ফিরে আসবেন এমন আশা করা যায় না, কেননা এখনো যে কোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটার শঙ্কা রয়ে গেছে৷
‘‘কিন্তু আমার ধারণা, এরকম ভাবনা আজকাল বিশ্বের যেকোনো দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য'', বলেন এই অস্ট্রেলীয় নাগরিক৷
খলিল অবশ্য মনে করেন না আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অগ্রগতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিদেশিদের বাংলাদেশে নিরাপদ বলা যেতে পারে৷ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘আল-কায়দা এবং ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা সীমান্ত এলাকায় এখনো সক্রিয় রয়েছে৷''
ঢাকায় গত ২৯ আগস্ট সংক্ষিপ্ত সফরকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও জানিয়েছেন, তাঁর দেশ বিশ্বাস করে ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে বাংলাদেশে সক্রিয় জঙ্গিদের যোগাযোগ রয়েছে৷ হাসিনা সরকার অবশ্য সেদেশে ইসলামিক স্টেটের কোনো অস্তিত রয়েছে বলে মনে করে না৷
এদিকে, ঢাকা সফররত ইংল্যান্ড দলের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তার আয়োজন করেছে নিরাপত্তা বাহিনী৷ যে হোটেলে ইংলিশ দল রয়েছে, সেটির চারপাশে ট্যাংক এবং স্নাইপার মোতায়েন করা হয়েছে৷ এমনকি প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী এবং পুলিশের উদ্যোগে তৈরি বিশেষ বাহিনী কাজ করছে৷
‘‘ইংলিশ দল এবং তাদের সমর্থকরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পাবেন'', নিশ্চিত করেছেন পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমান৷
আপনার কী মনে হয়? বাংলাদেশ কি বিদেশিদের জন্য আদৌ নিরাপদ? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷
নিরাপত্তা নিয়ে যা ভাবছে দেশের মানুষ
বাংলাদেশে একের পর এক মুক্তমনা, ধর্মনিরপেক্ষ লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও ভিন্ন ধর্মের মানুষ খুন হচ্ছে৷ পুলিশ এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বললেও, দেশের মানুষ খুব উদ্বিগ্ন৷ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে রিকশা চালক – আজ কতটা নিরাপদ আমরা?
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
আব্দুল্লাহ রিফাত, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ রিফাত৷ তার মতে, বাড়ি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় – কোথাও তেমন নিরাপদ না কেউই৷ তবে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে তিনি ভাবছেন না এই মুহূর্তে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
নাফিউল হাসান, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিউল হাসান মনে করেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউই নিরাপদ নয়৷ আমরা একরকম ভয়ের মধ্যেই বসবাস করছি৷ যতক্ষণ বাইরে থাকি, বাসায় অভিভাবকরা চিন্তায় থাকেন৷ অনেক সময় তো স্বাভাবিক ঘোরাফেরাও বন্ধ করতে হচ্ছে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
প্যারিস তালুকদার, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের ছাত্র
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্যারিস তালুকদার মনে করেন, গত দুই বছরের আগ পর্যন্ত নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কখনো ভাবিনি, গভীর রাত পর্যন্তও ঘুরে বেড়াতাম বিভিন্ন জায়গায়৷ তবে গত দিনগুলোর নানান ঘটনায় আমার নিজেরই খুব ভয় হয়৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
ফারিয়া রিফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী
বেশ নির্ভিক টাইপের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ফারিয়া রিফাত৷ কিন্তু দেশের বর্তামান পরিস্থিতিটা তার কাছে খুবই ঘোলাটে মনে হচ্ছে৷ প্রত্যেক দিনই বড় কোনো অঘটন ঘটছে৷ পত্রিকা খুললেই খুন-খারাবির খবর, মনে হচ্ছে ‘মার্ডার’ করাটা এখন সহজ ক্রাইম৷ আমরা প্রত্যেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি৷ ঘর থেকে বেড়িয়ে আবার যে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারব, এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আরিফ জেবতিক, ব্লগার
ব্লগার আরিফ জেবতিক বললেন, ‘‘নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই আছি৷ ব্যক্তিগতভাবে যে যেভাবে পারছি সাবধানে থাকার চেষ্টা করছি৷ জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে৷ এই যেমন, ‘পাবলিক প্লেসে’ যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি৷ সিনেমা দেখতাম, নাটক দেখতাম, জগিং করতাম৷ এখন এগুলো আর করতে পারি না৷ যেহেতু পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই, তাই এভাবেই সাবধানে থাকতে হচ্ছে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
হযরত আলী, ব্যবসায়ী
পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ী হযরত আলী৷ তাঁর মতে, দেশের কোনো শ্রেণির মানুষেরই নিরাপত্তা নেই৷ দিনে-দুপুরে খুন-খারাবি চলছে৷ তাই দিন কিংবা রাত – কখনোই নিরাপদ নই আমরা৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
হারিছ মিয়া, ফল ব্যবসায়ী
মাদারীপুরের হারিছ মিয়া গত প্রায় ১৭ বছর ধরে ঢাকায় ফলের ব্যবসা করেন৷ গত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে খুন-খারাবি বেড়ে যাওয়ায় খুবই চিন্তিত তিনি৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আক্কাস আলী, দিনমজুর
পুরনো ঢাকায় ঠেলাগাড়ি চালান আক্কাস মিয়া৷ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় নেই তাঁর৷ আপাতত সন্তানদের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দিতে পালেই সন্তুষ্ট তিনি৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আব্দুর রহমান, রিকশা চালক
লালমনির হাটের আব্দুর রহমান ঢাকায় রিকশা চালান গত প্রায় ছ’বছর ধরে৷ জীবনের নিরাপত্তার চেয়েও তাঁর কাছে বেশি চিন্তার বিষয় ছিনতাই৷ রাস্তায় থাকা হয় বলে প্রতিনিয়ত অনেক ছিনতাইয়ের সাক্ষী তিনি্৷ কিন্তু জীবনের ভয়ে সেগুলোর প্রতিবাদ না করে নিরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করতে হয় তাঁকে৷ কিন্তু এতে খুবই মনোকষ্টে ভোগেন বিদ্যালয়ের প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে না পারা এই রিকশা চালক৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আবুল কালাম, অটোরিকশা চালক
শেরপুরের আবুল কালাম অটোরিকশা চালান ঢাকা শহরে৷ তাঁর কথায়, দেশে কোনো নিরাপত্তা নেই৷ যে যেভাবে পারছে খুন-খারাবি করে যাচ্ছে৷ অপরাধীরা থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে৷ অনেকে ধরা পড়ার খবর শুনলেও তাদের বিচারের আর কোনো খবর পান না বলে জানালেন এই অটোরিকশা চালক৷