ইটালির বেনেটন-ও বাংলাদেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্ট্রিগুলিতে সুরক্ষা উন্নতির চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত৷ এইচঅ্যান্ডএম, সিঅ্যান্ডএ, টেস্কো, প্রিমার্ক, ইন্ডিটেক্স প্রমুখ সংস্থা ইতিমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মতি প্রকাশ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
সুইডেনের ফ্যাশন চেইন এইচঅ্যান্ডএম বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি গার্মেন্টস কেনে৷ তারা সোমবার জানায় যে তারা পাঁচ বছর মেয়াদের এবং আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক ঐ ফ্যাক্ট্রি সুরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত৷ এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নেদারল্যান্ডসের সিঅ্যান্ডএ, ব্রিটেনের টেস্কো ও প্রিমার্ক, এছাড়া জারা-র মালিক স্পেনের ইন্ডিটেক্স, এরা সবাই এইচঅ্যান্ডএম-এর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেছে৷
অবশ্য সংস্থাগুলির এই তাড়ার পিছনে সম্ভবত একটা তাড়নাও কাজ করছে: বিভিন্ন শ্রমিক অধিকার গোষ্ঠী চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য ১৫ই মে অবধি সময় দিয়েছে; নয়ত তারা ব্র্যান্ডগুলির উপর চাপ বৃদ্ধি করবে৷ গতমাসে জার্মানিতে মুখ্য ব্র্যান্ড ও পাইকারি বিক্রেতাদের আলোচনার পর ১৫ই মের ডেডলাইনটি নির্দ্দিষ্ট করা হয়৷
মৃত্যুকূপ থেকে যেভাবে ফিরলেন রেশমা
সাভারে ধসে পড়া ভবন থকে ১৭ দিন পর উদ্ধার করা হয় জীবিত রেশমাকে৷ এই সতের দিন তিনি কিভাবে কাটিয়েছেন? প্রশ্ন অনেকের মনে৷ চলুন উত্তর খোঁজা যাক৷
ছবি: Getty Images/AFP/STRDEL
সুস্থ আছেন রেশমা
সাভারে ধসে পড়া ভবন থকে ১৭ দিন পর উদ্ধার করা হয় জীবিত রেশমাকে৷ তিনি এখন সুস্থ আছেন৷ কিন্তু ধসে পড়া রানা প্লাজার মধ্যে কিভাবে সতের দিন কাটিয়েছেন তিনি? প্রশ্ন অনেকের মনে৷ চলুন ছবিতে উত্তর খোঁজা যাক৷
ছবি: Reuters
উদ্ধার অভিযান
১০ মে স্থানীয় সময় বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকর্মী রাজ্জাক ধসে পড়া ভবনের মধ্যে বেঁচে থাকা একজন মানুষের উপস্থিতি টের পান৷ সেই মানুষটি রেশমা৷ তিনি একটি ভাঙা পাইপ দিয়ে নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন এবং তাঁকে বাঁচানোর অনুরোধ জানান৷ এরপর রড কেটে ভিতরে ঢুকে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে রেশমাকে বাইরে নিয়ে আসা হয়৷
ছবি: Getty Images/STRDEL
যেভাবে টিকে ছিলেন রেশমা
১৭ দিন রেশমা কি খেয়ে টিকে ছিলেন সেই প্রশ্ন অনেকের৷ উদ্ধারকর্মী রাজ্জাক জানান, ‘‘রেশমা যে তলায় আটকে ছিলেন সেটা অন্যান্য তলার মতো মিশে যায়নি৷ সেখানে হাঁটা-চলা এবং নড়া-চড়া করার কিছুটা সুযোগ ছিল৷ রেশমা তাঁকে জানান যে, ঐ জায়গায় বিভিন্ন ধরনের শুকনা ও জুস জাতীয় খাবার ছিল, যা তিনি খেয়েছেন৷ ৭ মে শুকনা খাবার শেষ হয়ে যায় আর রসালো খাবার যায় পচে৷ ফলে শেষের দু’দিন ধরে তিনি অভুক্ত ছিলেন৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/STRDEL
চিকিৎসকের ব্যখ্যা
ধ্বংসস্তূপের নীচে রেশমার এই ১৭দিন বেঁচে থাকার ঘটনাকে ডয়চে ভেলের কাছে ব্যাখা করেছেন মিটফোর্ড হাসপাতালের চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. মনি লাল আইচ৷ তিনি বলেন, ‘‘রেশমা ১৭ দিনে হৃদরোগ বা নিউরোলোজিক্যাল সমস্যায় পড়তে পারতেন৷ হয়ত মানসিক জোর এবং বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছার কারণেই তাঁকে সেই সমস্যায় পড়তে হয়নি৷ আর গবেষণায় প্রমাণিত যে নারীদের মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি৷’’
ছবি: Reuters
গোটা বিশ্বে আলোড়ন
রেশমাকে ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধারের খবরে গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত সাভারে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এই তরুণীকে দেখতে যান৷ রেশমাকে কেউ যাতে মানসিকভাবে পীড়া না দেয় সেজন্যও সবাইকে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা৷
ছবি: dapd
তৃতীয় নারী রেশমা
১৭ দিন ধরে অন্ধকারে ডুবে থাকা রেশমাকে উদ্ধারের খবরের সঙ্গে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে বিবিসি৷ এতে দেখা যাচ্ছে, এর আগে পাকিস্তানে একই রকম পরিস্থিতিতে নাকাশা বিবি নামক এক নারী পচা খাবার আর পানি খেয়ে টিকে ছিলেন ৬৩ দিন৷ আর হাইতির ইভান্স মোনসিজনাক টিকে ছিলেন ২৭ দিন৷ এই সময়ের পর তাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: Getty Images
পরিবারের সঙ্গে দেখা
রেশমার মা জোবেদা খাতুন, দুই ভাই ও বোন আসমা গত কয়েকদিন ধরেই রয়েছেন সাভারে৷ হাসপাতালে রেশমার সঙ্গে দেখা করেছেন তারা৷ রেশমার বড় ভাই জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘‘বর্তমানে রেশমা ভালো আছে, সুস্থ আছে৷’’
ছবি: Reuters
বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
এদিকে, সাভারে ভবন ধসে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে৷ গত ২৪ এপ্রিল ভবন ধসের পর ১২ মে অবধি উদ্ধার করা হয়েছে ১,১২৭ টি মৃতদেহ৷ নিহতদের মধ্যে ঠিক কতজন নারী আর কতজন পুরুষ – সেই হিসেব এখন আরা জানা যাচ্ছে না৷ অনেক মরদেহ পচে গেছে৷ গোটা বিশ্বে স্মরণকালের মধ্যে ভয়াবহতম ভবন ধস এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তবুও কি সতর্ক আমরা?
সাভার ভবন ধসের পর কতটা সতর্ক হয়েছে বাংলাদেশ? এই প্রশ্ন অনেকর মনে৷ বিশেষ করে, যে পোশাক খাত বাংলাদেশকে গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তুলছে, সেই খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তায় সরকার কতটা সচেষ্ট? সর্বশেষ খবর হচ্ছে, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক শিল্পের যে নেতিবাচক ‘ইমেজ’ তৈরি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতেই এই পদক্ষেপ৷
ছবি: Reuters
‘আমাদের ব্যর্থতার প্রতীক’
শান্তিতে নোবেল জয়ী বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনূস গত ৯ মে একটি নিবন্ধের একাংশে লিখেছেন, ‘‘সাভার ট্র্যাজেডি জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতার প্রতীক৷ রানা প্লাজার ফাটল ফেটে ভবন ধসে দেখিয়ে দিলো আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যে বিশাল ফাটল ধরেছে সেটা আমলে না নিলে জাতিও এরকম ধসের ভেতর হারিয়ে যাবে৷’’
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
মুশকিল এই যে, মুখ্য মার্কিন রিটেইলারদের মধ্যে একমাত্র পিভিএইচ, যারা ক্যালভিন ক্লাইন ব্র্যান্ডের মালিক, তারাই শুধু চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে ঘোষণা করেছে৷ বাকিদের এখনও একটি বিষয়ে আপত্তি থেকে যাচ্ছে: ফ্যাক্ট্রি সুরক্ষা সংক্রান্ত বিরোধ যেভাবে আদালতে নিষ্পত্তি করা হবে, সেখানে তারা কিছু পরিবর্তন চায়৷ যেমন গ্যাপ ইনকর্পোরেটেড বলেছে, ‘‘ঐ একটি পরিবর্তন হলেই এই বিশ্বব্যাপী, ঐতিহাসিক চুক্তিটি সব রিটেইলারদের দ্বারাই স্বাক্ষরিত হতে পারবে, শুধু ইউরোপ ভিত্তিক রিটেইলারদের দ্বারা নয়''৷
বিশ্বের বৃহত্তম পাইকারি বিক্রেতা ওয়ালমার্ট স্টোর্স ইনকর্পোরেটেড বাংলাদেশের প্রতি একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্ট্রি বন্ধ করার ও আরেকটি পরীক্ষা করে দেখার আহ্বান জানিয়েছে৷ ওয়ালমার্টের নিজস্ব পরিদর্শকরা নাকি এই দুটি ফ্যাক্ট্রিতে সুরক্ষার সমস্যা খুঁজে পেয়েছে৷ রয়টার্সের বিবরণ অনুযায়ি ওয়ালমার্ট বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিটাগং-এর স্টিচ টোন্স অ্যাপারেলস ফ্যাক্ট্রিটিতে উৎপাদন বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছে এবং ঢাকায় নাসা গ্রুপের লিজ অ্যাপারেলস লিমিটেডের ফ্যাক্ট্রি কমপ্লেক্স পরীক্ষা করে দেখতে বলেছে৷
যেহেতু বাংলাদেশের গার্মেন্টস রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশই যায় ইউরোপে, কাজেই মার্কিন রিটেইলাররা যোগ না দিলেও ফ্যাক্ট্রি সুরক্ষা চুক্তিটি গার্মেন্টস সেক্টরে কিছু পরিবর্তন আনতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ তবে একটি মূল সমস্যা থেকে যাচ্ছে: দেখা গেছে, একটি পোলো-শার্ট যদি লন্ডনে বিক্রি হয় ৪৬ ডলার পরিমাণ মূল্যে, তাহলে তা রানা প্লাজায় কেনা হতো পাঁচ ডলারের কম দামে৷ রানা প্লাজায় খুঁজে পাওয়া ইনভয়েস থেকেই তা দেখা গেছে৷
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের একজন গার্মেন্টস কর্মীকে তাঁর নিজের হাতে তৈরি পোলো-শার্ট লন্ডনে কিনতে হলে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মজুরি ব্যয় করতে হবে৷ স্পেনের একজন গার্মেন্টস কর্মী যা একদিনের মজুরি দিয়ে কিনতে পারবে৷