ফেসবুকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফেসবুকে প্রকাশিত তাঁর ব্লগে বাংলাদেশ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ আরও কয়েকটি দেশে থাকা অ্যাকাউন্ট থেকে ভুয়া লাইক ও মন্তব্য ছড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার প্রকাশিতশবনম শেখের ব্লগ পোস্টে বলা হয়, গত ছয় মাস ধরে তারা একটি ‘স্প্যাম অপারেশন'এর বিরুদ্ধে লড়ছেন৷ এসব ভুয়া লাইক ও মন্তব্য ঐ স্প্যাম অপারেশনের অংশ৷ ঐ অপারেশনের লক্ষ্য, ফেসবুকে জনপ্রিয় পাতাগুলো ‘লাইক' করে সেখানে মন্তব্য করার নতুন ‘বন্ধু' জোগাড় করা এবং পরে তাদের ‘স্প্যাম' পাঠানো৷
নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ফেসবুক অনেক ভুয়া লাইক মুছে ফেলতে সমর্থ হয়েছে বলেও ব্লগপোস্টে জানানো হয়৷
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রকাশিতআরেকটি ব্লগপোস্টে শবনম শেখ জানান, সম্প্রতি ফেসবুক ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুঁজে বের করার নতুন কিছু উপায় বের করেছে৷
এদিকে, বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম রবিবার জানান, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের ভুয়া ফেসবুক পাতা ও অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ফেসবুক৷ শনিবার সকালে বাংলাদেশের অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ পান বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷
সামাজিক মাধ্যমে অপরাধ সম্প্রচারের ৮ ঘটনা
ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে আজকাল অনেক অপরাধী তাদের অপরাধের ভিডিও আপলোড করছে৷ এর মধ্যে কোনো কোনোটি আবার সরাসরিও সম্প্রচারিত হচ্ছে৷
ছবি: imago/Schöning
‘ফেসবুক লাইভ’- এ নির্যাতন
নতুন বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে এক শ্বেতাঙ্গ তরুণের উপর নির্যাতন চালায় চার কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ-তরুণী৷ পুরো ঘটনা ‘ফেসবুক লাইভ’-এর মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল৷ শ্বেতাঙ্গ ঐ তরুণ মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল৷ পেটানোর পাশাপাশি তার চুল কেটে দেয়া হয়৷ অপরাধ করার সময় নির্যাতনকারীরা ট্রাম্প ও শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছিল৷ পুলিশ ঐ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে৷ ফেসবুক ভিডিওটি মুছে ফেলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Chicago Police Department
টুইটারে ধর্ষণের ভিডিও
২০১৬ সালের মে মাসে ব্রাজিলের রিও ডি জানেরোতে এক তরুণীকে ৩০ জনের বেশি মানুষ ধর্ষণ করে৷ তরুণীটি তার ছেলেবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানে তাকে ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয়৷ তারপর একে একে তার উপর হামলে পড়ে সবাই৷ অপরাধীদের কেউ কেউ টুইটারে ভিডিও আপলোড করেছিল৷ সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলে পুলিশের টনক নড়ে৷
ছবি: DW/J. Weber
লাইভ-এ আত্মহত্যা!
ফ্রান্সের ১৯ বছর বয়সি এক তরুণী ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে৷ এই ঘটনা সে পেরিস্কোপ অ্যাপের সাহায্য সরাসরি প্রচার করেছিল৷ ঘটনাটি ২০১৬ সালের মে মাসের৷
ছবি: periscope.tv
নির্যাতিতার সঙ্গে সেলফি
২০১৪ সালে দুই ইংলিশ তরুণী ৩৯ বছরের অ্যাঞ্জেলা রাইটসনের উপর প্রায় ১৭ ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চালায়৷ এই সময় আহতের সঙ্গে সেলফি তুলে ঐ দুই তরুণী সেই ছবি স্ন্যাপচ্যাটে শেয়ার করেছিল৷ নির্যাতনের এক পর্যায়ে মারা যান রাইটসন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
সেলফির কারণে ধরা পড়া
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় ম্যাক্সওয়েল ম্যারিয়ন মর্টন নামের এক টিনএজার আরেক টিনএজারকে হত্যা করে তার সঙ্গে সেলফি তুলে স্ন্যাপচ্যাটে আপলোড করেছিল৷ সেই ছবির সূত্র ধরে মর্টনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ৷ ঘটনাটি ২০১৫ সালের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বান্ধবীকে ধর্ষণ সরাসরি সম্প্রচার!
যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ বছর বয়সি এক তরুণীকে সম্প্রতি এই অভিযোগে নয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ ২০১৬ সালে মারিনা লোনিনা (ছবি) নামের ঐ তরুণী তার বান্ধবীর সঙ্গে রেমন্ড গেটসের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল৷ সেখানে পান করার পর এক পর্যায়ে গেটস লোরিনার বান্ধবীকে ধর্ষণ করতে শুরু করলে পেরিস্কোপ অ্যাপের মাধ্যমে ঐ ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করেন লোরিনা৷ গ্রেপ্তার হওয়ার পর লোরিনা বলেছিল, অপরাধের প্রমাণ রাখতে তিনি ভিডিও করেছিলেন!
ছবি: picture alliance/AP Photo/Franklin County Sheriff's Office
ধর্ষণ সম্প্রচারের আরেক ঘটনা
২০১৬ সালের ৩০ মার্চ পেরিস্কোপে ‘লাইভ সেক্স’ শিরোনাম দিয়ে একটি ভিডিও দেখানো হয়৷ ভিডিওটি যারা দেখেছে, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ‘বাজফিড’ জানিয়েছে, ভিডিওতে লন্ডনের একটি ফ্ল্যাটে তিন তরুণকে এক তরুণীর সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হতে দেখা গেছে৷ তবে এটি যে বাস্তবে ধর্ষণের ঘটনা ছিল, সেটি বুঝতে কিছুটা সময় লেগেছে বলে বাজফিডকে জানান তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Bonaventure
সরাসরি ‘আত্মহত্যা’
যুক্তরাষ্ট্রের ১২ বছর বয়সি এক মেয়ে তার আত্মহত্যার ভিডিও ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার করেছে৷ কেটলিন নিকোল ডেভিস নামের তরুণীটি গত ৩০ ডিসেম্বর গাছের ডালের সঙ্গে দড়ি বেঁধে আত্মহত্যা করে৷ আত্মহত্যার সময় সে বলে, এক আত্মীয়ের কাছ থেকে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ায় সে আত্মহত্যা করছে৷
ছবি: Fotolia/DW
8 ছবি1 | 8
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তারানা হালিম জানান, ‘‘আমাদের পাওয়া বিভিন্ন ফেইক আইডিগুলো আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি, ওগুলো বন্ধের কাজ চলছে৷ তারা (ফেসবুক) নিজ উদ্যোগেও কিছু করছে৷''
ভুয়া অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি অনেক প্রকৃত অ্যাকাউন্টও বন্ধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী৷ মোহসেনা শাওন লিখেছেন, ‘‘ফেসবুক হাজার হাজার অরিজিনাল আইডি বন্ধ করে দিচ্ছে, এটার কোনো মানে হয়? কী সিস্টেমে তারা ঠিক করছে যে কোনটা ফেক আর কোনটা অরিজিনাল? নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম না মেনে এসবের আসলেই কোনো মানে হয় না... আমার অনেক পরিচিতদের আইডি বন্ধ, যেগুলো অরিজিনাল৷ অথচ ফেকগুলো হয়ত ঠিকই বহাল তবিয়তে আছে৷''
লিটন মিয়া ফেসবুকের ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ আরও আগেই এই পদক্ষেপ নেয়া হলে আরও ভালো হতো বলেও ফেসবুকে লিখেছেন তিনি৷
রাসেল খন্দকার লিখেছেন, ‘‘ফেক আইডি নিধন করতে গিয়ে হয়ত অনেকের রিয়েল আইডিও ব্লক হচ্ছে৷ তবে সেটা একটা নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যেই হচ্ছে৷ সুতরাং নিজের আইডিটা বাঁচাতে হলে সবার নিয়মের মধ্যে আসা উচিত৷'' কীভাবে তা করা যেতে পারে তার কিছু উপায়ও বলে দিয়েছেন তিনি৷
কোন বিশ্বনেতার ফেসবুক ফলোয়ার বেশি?
ফেসবুক ফলোয়ারের তালিকার গোড়াতেই আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ দ্বিতীয় স্থানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে মোদীর চেয়ে ট্রাম্প অনেক পিছিয়ে৷
ছবি: Getty Images/K.Frayer
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান বার্সন-মার্স্টেলারের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত পেজে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা চার কোটি৷ ভারতের ১২০ কোটির জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে তা খুব আশ্চর্যজনক নয়৷ তবুও ফেসবুক প্রধান সাকারবার্গ সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলো কিভাবে সরকারকে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সাহায্য করে, তার দৃষ্টান্ত হিসেবে মোদীর কথা বলেছেন৷
ছবি: Getty Images/K.Frayer
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত পেজের ফলোয়ার দুই কোটি৷ তাঁর বিখ্যাত টুইটার অ্যাকাউন্টে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা আরো বেশি- আড়াই কোটি৷ জরিপে ২০১৬ সালে বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, এছাড়া মন্ত্রীদের ৫৯০টি ফেসবুক পাতা বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে৷ এজন্য ফেসবুকের ক্রাউডট্যাঙ্গল টুল থেকে পাওয়া সামগ্রিক তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
ওবামা প্রতিযোগিতায় থাকলে কী হতো?
বারাক ওবামা আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নন, কাজেই তিনি সেই অর্থে সক্রিয় বিশ্বনেতা নন৷ তবু আজও পাঁচ কোটি চল্লিশ লাখ মানুষ ফেসবুকে তাঁর ফলোয়ার, যা কিনা মোদী আর ট্রাম্পের ফলোয়ারের যোগফলের প্রায় সমান৷
ছবি: picture alliance/dpa/T.Maury
জর্ডানের রানি রানিয়া
জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর রানি রানিয়ার ফেসবুক ফলোয়ারের সংখ্যা এক কোটির বেশি, যা কিনা জর্ডানের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি৷ পশ্চিমি মিডিয়াতেও রানি রানিয়ার জনপ্রিয়তা কিছু কম নয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Balkis Press
তুর্কি প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান
ফেসবুকে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ানের ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় নব্বই লাখ৷ ফলোয়ারের হিসেবে গত বছর তিনি ছিলেন তৃতীয় স্থানে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং এ বছরের বিজয়ী নরেন্দ্র মোদীর ঠিক পরেই৷
ছবি: Reuters/T. Schmuelgen
মিশরের প্রেসিডেন্ট আল সিসি
প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল সিসি’র ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় সত্তর লাখ৷ বিশ্বনেতারা কত ঘন ঘন কন্টেন্ট পোস্ট করেন আর কী পরিমাণ লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার পান, রিপোর্টে সেদিকেও নজর রাখা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. El-Shahed
কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন
নেতারা জনগণের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কী ধরনের আদানপ্রদান করেন, রিপোর্টে তা-ও বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে৷ কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন-এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ইন্টারঅ্যাকশনের সংখ্যা পাঁচ কোটি আশি লাখ৷ এক্ষেত্রে তিনি মোদীর পরেই তৃতীয় স্থানে৷