‘‘বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট পাবেন’’
১২ জানুয়ারি ২০২১সৌদি আরব সেখানে অবস্থানরত ৫৫ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায়৷ তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ফেরত পাঠাতে নয়, সৌদি আরব এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিতে বলছে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে যে রোহিঙ্গারা সৌদি আরব গেছেন তারা পাসপোর্ট পাবেন৷''
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সৌদি আরব রোহিঙ্গাদের ফেরত দিতে চায় এটা ঠিক না, এই তথ্যটি ভুল৷ তারা সেখানেই থাকবেন৷
তিনি জানান, সৌদি আরব বিভিন্ন সময়ে বহু রোহিঙ্গা নিয়েছে৷ কিছু তারা নিয়েছে এবং কিছু বিভিন্ন উল্টাপাল্টা করে চলে গেছে৷ ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে আসেন, তখন সৌদি বাদশাহ বললেন যে তার দেশে রোহিঙ্গারা থাকবেন৷ ৭০ দশকের শেষে, ৮০ এর দশকের শুরুতে অনেক রোহিঙ্গা সৌদি আরবে গেছেন৷ ওখানে গিয়ে তারা থাকছেন৷ তাদের ছেলে-মেয়ে হয়েছে৷ ৩০-৪০ বছর ধরে তারা ওখানে আছেন৷ ছেলে-মেয়ে জীবনে বাংলাদেশ দেখে নাই৷ তারা বড় হয়েছেন৷ বৃদ্ধ হয়েছেন৷ এখন সৌদি আরব বলছে, তাদের দেশে নাগরিকত্ব বিহীন কাউকে রাখবে না৷ তারা সহজে কাউকে নাগরিকত্ব দেয় না বলে তারা একটা প্রস্তাব করেছে যে, এই লোকগুলোকে তারা পাঠাবে না৷ তাদের যদি নাগরিকত্ব দেয়া হয় তারা ওই দেশেই(সৌদি আরব) থাকবে৷ শুধু যারা জেলে থাকা ৪৫২ জনকে পাঠাবে৷
মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা বলেছি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে কেউ গিয়ে থাকলে তাদের পাসপোর্ট অবশ্যই আমরা রিনিউ করব৷ আর তাদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট না থাকলে আমরা পরীক্ষা করব৷ একদম ওয়ান টু ওয়ান যাচাই বাছাই করে দেখব যে, তারা বাংলাদেশে কোনোকালে কোনোভাবে ছিলো কিনা, তাদের লিগ্যাল স্ট্যাটাস কী? সেটা যদি থাকে তাও আমরা তাদের কনসিডার করব৷ যদি সে আমাদের দেশ থেকে না গিয়ে থাকে তাহলে আমরা তাদের গ্রহণ করব না৷''
পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি হয়েছে৷ কমিটি সৌদি আরবের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছে৷ বাংলাদেশ তার এই অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছে৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও কথা হয়েছে৷ তারাও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন৷
কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছেন তার কোনো সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তবে বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ভুয়া পাসাপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গেছেন বলে জানান তিনি৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা সংবাদমাধ্যমে জানতে পেরেছি যে ২০০১, ২০০২ এবং ২০০৬ সালে বহু রোহিঙ্গা ভুয়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গেছেন৷ চট্টগ্রাম থেকেও বহু রোহিঙ্গা গেছেন৷ বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তা ঘুস খেয়ে তাদের পাসপোর্ট দিয়েছেন৷ দূতাবাসের অফিসারদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে যে তারা পাসপোর্ট দিয়েছেন৷''
তবে তিনি জানান, এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় খুব কড়া৷ কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছেনা৷ এটা নিয়ে তদন্তের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত না, এবার আমরা অভিযোগ পেলে সাথে সাথে তাকে বাদ দিয়ে দিচ্ছি৷ একজনের বিরুদ্ধে শুনেছি, তাকে বাদ দিয়ে দিয়েছি৷ কিন্তু কোথায় যে কে লুকিয়ে থাকে জানা কঠিন৷ এটা যে সব সময় বড় অফিসারেরা করেন তা নয়, অনেক সময় ছোট স্টাফরাও করেন৷ এখানে অনেক দুষ্ট লোক আছে৷ তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি৷''
আর ‘দুষ্ট' লোকদের চিহ্নিত করতে সংবাদমাধ্যমেরও সহায়তা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷